বাংলায় মোগল সুবাহ প্রতিষ্ঠা

সুবাহদার ইসলাম খান চিশতীর সামরিক সাফল্য বর্ণনা করতে পারবেন।
মুখ্য শব্দমালা শাহবাজ খান, সাদিক খান, উজির খান, সাইদ খান, রাজা মানসিংহ
মোগল স¤্রাট আকবর সর্বভারতীয় একটি সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায়
১৫৭২ সালে আকবর সেনাপতি মুনিম খানের নেতৃত্বে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান
পরিচালনা করেন। ১৫৭৫ সালে বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তুকারয়ে মোগল বাহিনীর সাথে বাংলার শাসক দাউদ কররানির
যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মোগল বাহিনী জয়লাভ করে এবং ১৫৭৫ এ কটকের সন্ধি অনুযায়ী বাংলা ও বিহারে মোগল আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু বাংলায় কররানি শাসনের চুড়ান্ত অবসান হয় ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে মোগল বাহিনীর জয় লাভের
মাধ্যমে। এ সময় বাংলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মোগলদের নিয়ন্ত্রণে আসে। আকবরের সময় বাংলার সুবাদার ছিলেন শাহবাজ
খান, সাদিক খান, উজির খান, সাইদ খান এবং রাজা মানসিংহ। এরা সকলেই পূর্ব-বাংলার স্বাধীন জমিদারদের বিরুদ্ধে
একাধিক যুদ্ধ পরিচালনা করেও ব্যর্থ হন। ফলে স¤্রাট আকবরের সময় বাংলার পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরাংশে মোগলরা
আধিপত্য বিস্তার করলেও বাংলার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাংশের বিশাল এলাকা স্বাধীন স্থানীয় শাসকদের হাতে ছিল। এ
সময়ের সুবাহ বাঙলার বিস্তৃতি সমগ্র বাংলা ব্যাপী ছিল না; বাংলার পশ্চিম, উত্তর পশ্চিম ও উত্তরাংশ নিয়ে গঠিত সুবাহ
শাসিত হত আকবরনগর (রাজমহল) রাজধানী থেকে।
স¤্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দীন কোকাকে বাংলার সুবাহদার নিয়োগ দেন। তিনি বর্ধমানে বিদ্রোহী ফৌজদার
আলী কুলীকে দমন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর জাহাঙ্গীর বিহারের সুবাদার জাহাঙ্গীর কুলি খানকে বাংলার
সুবাদার নিয়োগ করেন। ১৬০৮ সালে সুবাদার জাহাঙ্গীর কুলি খানের মৃত্যুর পর স¤্রাট জাহাঙ্গীর বিখ্যাত সুফি সেলিম
চিশতীর দৌহিত্র ইসলাম খান চিশতী বাংলার সুবাদার নিয়োগ দেন। ইসলাম খান তখন বিহারের সুবাদার হিসেবে
দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি পূর্ববাংলার ভুঁইয়াদের দমন করার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার পরিকল্পনার প্রধান
বৈশিষ্ট্য ছিল নি¤œরূপ:
ক. সমগ্র বাংলায় মোগল আধিপত্য বিস্তার।
খ. মোগল আধিপত্যের প্রধান শত্রæ ভাটি অঞ্চলের বার ভ‚ঁইয়াদের নিয়ন্ত্রণ করা।
গ. ভাটি অঞ্চলে যুদ্ধের সহায়ক নওয়ারা বা নৌবহরকে শাক্তিশালী করা।
ঘ. রাজমহল থেকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করা। কেননা রাজমহল সুবাহ বাংলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি
ভাটি অঞ্চল থেকে অনেক দূরে। এখান থেকে অভিযান পরিচালনা করলে সাফল্যর সম্ভাবনা কম। তাই তিনি
বাংলার কেন্দ্রস্থলে এবং যেখান নদী পথে ভাটি অঞ্চলে দ্রæত যোগাযোগের জন্য ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন।
ঙ. পূর্ববর্তী দুর্নীতি পরায়ণ বিশ্বাসঘাতক কর্মকর্তাদের পরিবর্তে সৎ যোগ্য সাহসী কর্মকর্তাদের বাংলার প্রশাসনে
নিয়োগের জন্য স¤্রাটের কাছে প্রস্তাব প্রদান।
ইসলাম খান ১৬০৮ সালে রাজমহল থেকে নদী পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৬১০ সালে তিনি মোগল বাহিনী
সহকারে ঢাকায় প্রবেশ করেন এবং ঢাকার নাম রাখা হয় জাহাঙ্গীরনগর।
ঢাকায় আসার আগেই সামরিক অভিযান ও ক‚টনৈতিক পদক্ষেপে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলাকে তিনি শত্রæমুক্ত
করেছিলেন। বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বীরভ‚ম, পাচেট ও হিজলীর জমিদার যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে সুবাহদারের সাথে সাক্ষাত
করে মোগল শক্তির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ভ‚ষনার রাজা শত্রæজিত ও যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
ইসলাম খান ঢাকায় পৌছে ঢাকা দুর্গে অবস্থান নেন। নৌবাহিনীকে মোতায়েন করা হয় ‘চাঁদনী ঘাটে’ এলাকায়। এ সময়
মুসা খানের নেতৃত্বে বার ভুঁইয়ারা শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করে মোঘল বাহিনীকে প্রতিহত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। দুই
দলের ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ হতে থাকে। ১৬১১ সালে মোগলরা ভ‚লুয়া জয় করলে বার ভুঁইয়ার মানসিকভাবে দুর্বল
হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মুসা খান উপলব্ধি করেন মোগলদের আধিপত্য মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তিনি
সুবাহদারের দরবারে আত্মসমর্পণের জন্য উপস্থিত হলে ইসলাম খান তাকে স সম্মানে গ্রহণ করেন। মুসা খানের পর বাহিনী
সিলেটের খাজা উসমান, বায়জীদ কররানি, বাকলার রামচন্দ্র প্রমুখদের পরাজিত করেন এবং বার ভঁ‚ইয়াদেরকে সুবাহদার
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। ইসলাম খানের প্রচেষ্টায় উত্তরে ঘোড়াঘাট থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে
বীরভ‚ম, পাচেট, হিজলী, পশ্চিমে রাজমহল থেকে উত্তর-পূর্বে সিলেট এবং দক্ষিণ পূর্বে ফেনী নদী পর্যন্ত মোগল আধিপত্য
প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও তিনি বাংলার উত্তর, উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী কোচবিহার, কামরুপ ও কাছাড় অঞ্চলে মোগল নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা করেন।
সুবাহদার ইসলাম খানের প্রতিষ্ঠিত সুবাহ বাংলায় পরবর্তী এক শহক মোগল আধিপত্য বজায় ছিল। বাংলার মোগল
সুবাহদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কাশিম খান জুয়ুনী, শাহ সুজা, মীর জুমলা, শায়েস্তা খান, ইব্রাহীম খান ও স¤্রাট
আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ আজিমউদ্দিন। সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় মোঘলরা চট্টগ্রাম বিজয় করে চট্টগ্রাম সমুদ্র
বন্দরের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া শায়েস্তা খানের সময় বাংলায় ইউরোপীয় আধিপত্য ও প্রভাব বলয় বিস্তৃত হয়।
তাঁর সময় ঢাকায় প্রচুর স্থাপত্যকর্ম নির্মিত হয় লালবাগ কেল্লা, পরিবিবির সমাধি, ছোট কাটরা, বড় কাটরা ও একাধিক
মসজিদ তার সময়ে নির্মিত। শায়েস্তা খানের সময় বাংলার অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে উঠে। রিয়াজুস সালাতীন গ্রন্থের
বর্ণনা অনুযায়ী তার সময় টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত।
মোগল স¤্রাট আকবর সর্বভারতীয় একটি সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা পূর্ণতা পায় জাহাঙ্গীরের আমলে।
১৫৭২ সালে আকবর সেনাপতি মুনিম খানের নেতৃত্বে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা
করেন। ১৫৭৫ সালে বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তুকারয়ে মোগল বাহিনীর সাথে বাংলার শাসক দাউদ কররানির যুদ্ধ
হয়। যুদ্ধে মোগল বাহিনী জয়লাভ করে এবং ১৫৭৫ এ কটকের সন্ধি অনুযায়ী বাংলা ও বিহারে মোগল আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা হয়। তবে বাংলায় মোগলদের আধিপত্য বিস্তারের মূল কৃতিত্ব সুবাদার ইসলাম খানের। সুবাদার ইসলাম খানের
প্রতিষ্ঠিত সুবাহ বাংলায় পরবর্তী এক শতক মোগল আধিপত্য বজায় ছিল। বাংলার মোগল সুবাহদারদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য ছিলেন কাশিম খান জুয়ুনী, শাহ সুজা, মীর জুমলা, শায়েস্তা খান, ইব্রাহীম খান ও স¤্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র
যুবরাজ আজিমউদ্দিন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ১৫৭২ সালে আকবর তার নেতৃত্বে বাংলা বিহার উড়িষ্যায় অভিযান পরিচালনা করেন?
ক) মুমিন খান খ) সাইদ খান গ) উজির খান ঘ) সাদিক খান
২। বাংলায় মুঘল আধিপত্য বিস্তারের মূল কৃতিত্ব কার?
ক) শাহ সুজা খ) ইসলাম খান গ) ইব্রাহীম খান ঘ) শায়েস্তা খান
৩। পূর্ব বাংলার ভ‚ঁইয়াদের দমনে ইসলাম খানের পরিকল্পনা ছিলÑ
র. ভাটি অঞ্চলের ভ‚ঁইয়াদের নিয়ন্ত্রন করা
রর. রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করা
ররর. ভাটি অঞ্চলের নৌবহরকে শক্তিশালী করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]