ওয়ারেন হেস্টিংস

ক্ষমতা লাভ
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শক্তি সুসংহত করণে হেস্টিংসের অবদান
অপরিসীম। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি কলকাতায় কোম্পানির একজন
লেখক বা কেরাণী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং নিজ কর্মদক্ষতা গুণে
অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাশিম বাজারের ‘রেসিডেন্ট’ পদে উন্নীত হন। তিনি
ফরাসি ও বাংলা ভাষা ভাল করে জানতেন, উর্দু ও আরবির সঙ্গে ও তাঁর পরিচয়
ছিল। তাঁর শাসন কালকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, প্রথমপর্ব: ১৭৭২-১৭৭৪
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার গভর্নর হিসেবে আর দ্বিতীয় পর্ব, ১৭৭৪-১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত গভর্নর জেনালের হিসেবে।
সীমান্ত নীতি
গভর্নর পদে নিযুক্ত হয়ে হেস্টিংস সর্ব প্রথমেই সীমান্ত নীতি বিষয়ে কিছু
পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি লক্ষ করেন যে ইতোমধ্যে কোম্পানি বাণিজ্যিক
প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে পড়েছে। সুতরাং
উপমহাদেশে ব্রিটিশ অধিকার স্থায়ী করতে হলে দেশীয় রাজাদের যথাসম্ভব
ব্রিটিশ সাহায্যের উপর নির্ভরশীল করে তোলা প্রয়োজন। এজন্য তিনি
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির সূচনা করেন যা পরবর্তী উত্তরাধিকারীগণ ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেন।
ওয়ারেন হেস্টিংস ইংরেজদের শত্রæ মারাঠাদের আশ্রয়ে বাস করার অজুহাতে সম্রাট শাহ আলমকে দেয় বার্ষিক ছাব্বিশ লক্ষ
টাকা বন্ধ করে দেন এবং সম্রাটের নিকট হতে ‘বারানসীর সন্ধি’ দ্বারা এলাহাবাদ ও কারা জেলা দু‘টি অযোধ্যার নবাবকে
পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রদান করেন। এভাবে হেস্টিংস অযোধ্যার শক্তি বৃদ্ধি করে একে মারাঠা ও ইংরেজদের মধ্যে
একটি শক্তিশালী বাফার স্টেট হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
রোহিলা যুদ্ধ
বর্তমান যুক্ত প্রদেশের অধিবাসীগণ রোহিলা আফগান নামে পরিচিত ছিল। রোহিলাদের সাথে আগে থেকেই অযোধ্যার
নবাব সুজাউদ্দৌলার তেমন সদ্ভাব ছিল না। তিনি রোহিলাখÐ জয়ের জন্য ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে লর্ড হেস্টিংসের সাহায্য
প্রার্থনা করলেন। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বাহিনীর সাহায্যে নবাব সুজাউদ্দোলা মিরণ কাটরার যুদ্ধে রোহিলাদের পরাজিত
করে রোহিলাখÐ দখল করে নেন। যুদ্ধে রোহিলা সর্দার হাফিজ রহমত খান নিহত হন। রোহিলাখÐ নবাবের রাজ্যভুক্ত হয়।
প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ
ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামলে তাঁর সীমান্ত বা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক প্রধান ঘটনা হলো ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৫
খ্রি:)। মারাঠাদের উত্তরাধিকার সংঘর্ষে ইংরেজদের হস্তক্ষেপের ফলেই ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের শুরু হয়। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ
মারাঠা যুদ্ধ শুরু হলে হেস্টিংস ডাইরেক্টর সভার নির্দেশে মারাঠা সর্দার রঘুনাথ রাওয়ের পক্ষে যান। তেলেগাঁও এর যুদ্ধে
ইংরেজ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়াড়গাঁও এর সন্ধি মোতাবেক তাঁরা রঘুনাথ রাওয়ের
পক্ষ ত্যাগ করতে এবং বিজিত রাজ্যগুলো মারাঠাদের নিকট ফেরত দিতে রাজী হয়। কিন্তু লর্ড হেস্টিংস এ সন্ধি অস্বীকার
করে সেনাপতি গর্ডাডের সহায়তায় আহমেদ নগর ও বেসিন দখল করেন। পুনার যুদ্ধে মারাঠাদের নিকট গর্ডাড পরাজিত
হলেও সেনাপতি পপহামের নেতৃত্বে ইংরেজগণ গোয়ালিয়র দুর্গ অধিকার করেন। অবশেষে, সিন্ধিয়ার প্রচেষ্টায় ইংরেজ ও
মারাঠাদের মধ্যে ‘সালবই-এর সন্ধি’ (১৭৮২ খ্রি:) স্বাক্ষরিত হয়।
ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ
ওয়ারেন হেস্টিংসের পররাষ্ট্র নীতির অপর প্রধান ঘটনা ছিল ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ। মহীশূরের রাজা কৃষ্ণ রায়কে নামে মাত্র
ক্ষমতায় রেখে তাঁর অত্যাচারী মন্ত্রী নানরাজ ও ভাই দেবরাজ প্রকৃত ক্ষমতা দখল করেন। অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান হায়দর
আলী নানরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন এবং মহীশূরকে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করেন। হায়দর আলীর
অভ্যুত্থানকে ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম এ তিন শক্তি সন্দেহের চোখে দেখেন। এ তিন শক্তি মহীশূর রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
অবতীর্ণ হলে হায়দর আলী তাঁর ক‚টবুদ্ধির দ্বারা মারাঠা ও নিজামকে ইংরেজপক্ষ ত্যাগ করিয়ে নিজ পক্ষে আনতে সক্ষম
হন। ফলে হায়দরের নিকট বোম্বাই ও মাদ্রাজের ইংরেজ বাহিনী পরাজিত হয়। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মাদ্রাজের সন্ধির’ দ্বারা
ওয়ারেন হেস্টিংস
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় ইতিহাস ১ম পত্র
ইউনিট ৬ পৃষ্ঠা ৮৪
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান ঘটে। উভয়পক্ষ একে অন্যের দখলকৃত রাজ্য ও যুদ্ধবন্দী ফেরত দিতে রাজী হয়।
তদুপরি হায়দর আলী অন্যকোনো শক্তি কর্তৃক আক্রান্ত হলে ইংরেজ বাহিনী তাঁকে সাহায্য করবে বলে ইংরেজদের কাছ
থেকে প্রতিশ্রæতি আদায় করে।
দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধ
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় হায়দর আলী ও ইংরেজদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি পরবর্তীকালে ইংরেজগণ অমান্য করে। এ
বিশ্বাসঘাতকতার জন্য হায়দর আলী ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করতেন। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতা
যুদ্ধের সূত্র ধরে উপমহাদেশে ইংরেজগণ ফরাসি কর্তৃত্বাধীন মাহে বন্দরটি দখল করে নেয় যা মহীশূর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
ছিল। হায়দর আলী এর প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হন। অগত্যা তিনি নিজামের সংগঠনে যোগদান করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করেন।
১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হায়দর আলীর মৃত্যু ঘটলে তাঁর সুযোগ্য পুত্র টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন
এবং বেদনোর ও ব্যাঙ্গলোর অধিকার করেন। অবশেষে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ও টিপু সুলতানের মধ্যে সম্পাদিত
‘ব্যাঙ্গলোরের সন্ধির’ মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু টিপু সুলতানের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানীর দ্ব›েদ্ধর
সমাপ্তি ঘটে নি।
অর্থনৈতিক সংস্কার
উপমহাদেশের ইতিহাসে নানাবিধ সংস্কারমূলক কাজের জন্য হেস্টিংসের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর ক্ষমতা লাভের
আগে এদেশে কোম্পানির শাসনব্যবস্থা নানান সমস্যা ও দুর্নীতিগ্রস্থ ছিল। গভর্নর হিসেবে তিনি এ সকল সমস্যা ও দুর্নীতির
সমাধানে আত্বোনিয়োগ করেন। ওয়ারেন হেস্টিংস যে প্রশাসনিক স্থাপত্যের ভিত্তি স্থাপন করেন তার উপর অপর
প্রশাসকগণ একটি বিশাল সৌধ নির্মাণ করতে সক্ষম হন।
রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং দিউয়ানী বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সাধন হেস্টিংসের অভ্যন্তরীণ শাসন নীতির মূল
উদ্দেশ্য ছিল। তিনি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করে শাসন ও রাজস্ব বিভাগ কোম্পানির অধীনে স্থাপন করেন এবং
অত্যাচারের অভিযোগে রেজা খান ও সেতাব রায়কে পদচ্যুত করেন। নায়েব দিওয়ানের পদ বিলোপ করা হয়। রাজস্ব
বিভাগের দুর্নীতি দূর করতে ও এর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য রাজকোষ মুর্শিদাবাদ হতে কলকাতায় স্থানান্তর করে একটি রাজস্ব
বোর্ড গঠন করেন। রাজস্ব খাতে আয় বৃদ্ধির জন্য তিনি পাঁচ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ মূল্যে জমিদারী ইজারা দেয়ার নিয়ম
প্রবর্তন করেন। যা ‘পাঁচসালা বন্দোবস্তু’ নামে পরিচিত। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জমিদারগণ প্রজাদের উপর জোর জুলুম করে
অর্থ আদায় করতো। ফলে প্রজাদের দু:খ দুর্দশার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তিনি পরে একাসালা বন্দোবস্তও প্রবর্তন করেন।
বাণিজ্য সংস্কার
হেস্টিংস কোম্পানির বাণিজ্য বিভাগে কিছু সংস্কার চালু করেন। তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের বিনা শুল্কে ব্যক্তিগত বাণিজ্য
বন্ধ করে দেন। দস্তক প্রথা আইনত লোপ পায়। তিনি মাল চলাচলের সুবিধার জন্য কলকাতা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা ও
পাটনা ছাড়া সমস্ত শুল্ক চৌকি বন্ধ করে দেন। ফলে জমিদারগণ ইচ্ছামত শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা হারায়। কোম্পানির স্বার্থে
কাপড় তৈরির জন্য তাঁতিদের উপর তিনি জুলুম নিষিদ্ধ করেন। তিনি ভ‚টান ও তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন
করেন।
বিচার সংস্কার
ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার বিভাগের সংস্কার ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মোগল বিচার ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে তাকে
শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ন্যায়বিচারমূলক করার নীতি গ্রহণ করেন। বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি ইউরোপীয় আইন চালু করার
পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি কোম্পানির বাণিজ্য বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করেন যাতে শাসন কাজে হস্তক্ষেপ
করতে না পারে। তিনি বিচার বিভাগকে রাজস্ব বিভাগ হতে পৃথক করে প্রত্যেক জেলায় একটি করে দিওয়ানী ও ফৌজদারী
আদালত স্থাপন করেন। ইংরেজ কালেক্টর ও দেশীয় বিচারকগণ যথাক্রমে দিওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের বিচারক
ছিলেন। তিনি দিওয়ানী ও ফৌজদারী মোকদ্দমার আপীলের জন্য ‘সদর দিওয়ানী আদালত’ ও ‘সদর নেজামত আদালত’
নামে দু’টি উচ্চ আদালত স্থাপন করে বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি করেন। দিওয়ানী আদালত গভর্নর ও তাঁর পরিষদের
দু‘জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। ফৌজদারী আদালতের প্রধান ছিলেন নবাব বা নাজিম। তিনি দেশীয় কাজী বা মুফতীর
সাহায্যে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন এবং হিন্দু ও মুসলিম আইন অনুসারে বিচারের ব্যাখ্যা ও কাজ চালাতেন।
অর্থ সংগ্রহের নীতি
হেস্টিংস এক চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি এদেশের দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণকে বাঁচাতে
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিকট হতে দশ লক্ষ পাউন্ড ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। আর, এ কারণে তিনি ঋণ পরিশোধ ও আর্থিক
উন্নতির জন্য ব্যয়-সংকোচন নীতি গ্রহণ করে গর্হিত ও নীতি বিরুদ্ধ কাজে হাত দেন।
তিনি বাংলার বৃত্তি প্রাপ্ত নবাবের বার্ষিক ভাতা অর্ধেক কমিয়ে দেন। আগেই জেনেছেন, তিনি সম্রাট শাহ্ আলমের বার্ষিক
ভাতা বন্ধ করে দিয়ে তাঁর কাছ থেকে কারা ও এলাহাবাদ জেলাদ্বয় জোরপূর্বক দখল নেন এবং ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে
অযোধ্যার নবাবকে প্রদান করেন। উপরন্তু হেস্টিংস ৫০ লক্ষ টাকা এবং ইংরেজ সৈন্যদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের
বিনিময়ে নিরাপরাধ রোহিলাদের বিরুদ্ধে অযোধ্যার নবাবের পক্ষাবলম্বন করেন। এমনকি তাঁর অর্থ উপার্জনের লালসা হতে
বারানসীর রাজা চৈৎসিংহ ও অযোধ্যার বেগমগণও রেহাই পায় নি।
রেগুলেটিং এ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রি:)
এতদিন উপমহাদেশে কোম্পানির যাবতীয় কাজ প্রথমে ইংল্যান্ডের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস পরিচালনা করত। কালক্রমে
এদেশে রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে শাসন কাজেও নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ বিশৃংখলা দূর করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
সর্বপ্রথম উপমহাদেশের শাসন কাজে হস্তক্ষেপ করে। তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে উপমহাদেশে
শাসন আইন নামে একটি আইন পাস করেন যা ‘রেগুলেটিং এ্যাক্ট’ নামে ইতিহাসে বিখ্যাত। রেগুলেটিং এ্যাক্ট এর দ্বারা
বোর্ড অব ডাইরেকট্রসকে ব্রিটিশ সরকারের নিকট কোম্পানির শাসন ও রাজস্ব সম্পর্কে সকল তথ্য পাঠাতে হতো। বাংলার
গভর্নরকে গভর্নর জেনারেল আখ্যা দেয়া হয়। গভর্নর জেনারেলকে সাহায্য করার জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘কাউন্সিল’
গঠিত হয় এবং সবার সমান অধিকার দেয়া হয়। এই রেগুলেটিং এ্যাক্ট অনুসারে বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথম
গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। এ রেগুলেটিং এ্যাক্ট এর দোষত্রæটি থাকলেও তা উপমহাদেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে
বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অবশ্য কালক্রমে এই এ্যাক্টের
খারাপ দিকগুলো ১৭৮১-১৭৮৪ ও ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে আইন
দ্বারা সংশোাধিত হয়।
চার্টার এ্যাক্ট (১৭৮৪ খ্রি:)
গভর্নর জেনালের হেস্টিংস ও প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থের উদ্যোগে
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে চার্টার এ্যাক্ট পাস হয়। এ আইনে সুপ্রীম
কোর্ট এবং গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের ক্ষমতা
সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছিল।
পিটের ইন্ডিয়া এ্যাক্ট (১৭৮৪ খ্রি:)
রেগুলেটিং এ্যাক্ট-এর ভুলত্রæটি সংশোধনের জন্য ১৭৮৪
খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট একটি আইন
পাস করেন যা ইতিহাসে ‘পিট এর ইন্ডিয়া এ্যাক্ট’ নামে
পরিচিত। এ আইন দ্বারা পার্লামেন্ট উপমহাদেশ শাসনের
সকল ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ আইনের বলে ব্রিটিশ সরকারের
নিযুক্ত ৬ জন এবং ইংল্যান্ডের মন্ত্রী সভার ১ জন সদস্য
সমন্বয়ে গঠিত ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোল’ এর উপর উপমহাদেশ
শাসন ও পর্যবেক্ষণের ভার অর্পিত হয়। গভর্নর জেনারেলের
ক্ষমতা বাড়ানো হয়। সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেয়া
হয়। এছাড়া, কোম্পানির তিনজন ডাইরেক্টর নিয়ে একটি
‘সিক্রেট কমিটি’ও গঠিত হয়।
পদত্যাগ ও ইমপীচমেন্ট
ভারতবর্ষ, ওয়ারেন হেস্টিংসের সময়
হেস্টিংসের কার্যকালের শেষ দিকে ইংল্যান্ডে তাঁর বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযোগ ও অপবাদ প্রকাশ পেতে থাকে। ১৭৮৫
খ্রিস্টাব্দে হেস্টিংস পদত্যাগ করে দেশে ফিরে যান। উইলিয়াম পিট ও লর্ড জান্ডাসের চেষ্টার ফলে হেস্টিংসকে বিভিন্ন
অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। বিশেষ করে চৈৎ সিংহ, অযোধ্যার বেগমদের প্রতি অসদাচারণ ও অত্যাচারের অভিযোগ ছিল
গুরুতর। সাত বৎসর ধরে বিচারের পর হেস্টিংস অভিযোগ হতে মুক্ত হলেন বটে, কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যয় সংকুলান
করতে গিয়ে তিনি একেবারে সর্বস্বান্ত হলেন। পিট ও ডান্ডাসের বিরোধিতার ফলে তাঁর ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক
ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতীয় শিক্ষা-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার আমলে মুসলমানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় (১৭৮১)। গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। হেস্টিংস এর
পৃষ্ঠপোষকতায় চার্লস উইলকিন্স বাংলায় ছাপাখানা (প্রেস) স্থাপন করে।
কৃতিত্ব
হেস্টিংসের জীবনের শেষ পরিণতি দু:খজনক হলেও এ কথা মানতে হবে যে বাংলা যখন দ্বৈত শাসনের ফলে জর্জরিত,
আমেরিকা যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন, পররাষ্ট্র নীতিতে ইংল্যান্ডের গৌরব যখন ক্ষুণœ, ভোঁসলে, নিজাম, হায়দর-এর
আক্রমণে যখন ইংরেজ প্রভুত্বের ভিত্তি প্রকম্পিত, মন্বন্তরে জনপদ যখন বিরান, কোম্পানির কোষাগার যখন শূন্য প্রায়,
তখন হেস্টিংস ইংরেজ কোম্পানির মর্যাদা ও শক্তিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ধৈর্য্য, সাহস ও দৃঢ় মনোবল দ্বারা তিনি
শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা স্থাপন করেন।
উপমহাদেশে বৃটিশ শক্তিকে সুদৃঢ় করার পেছনে হেস্টিংসের অবদান অনস্বীকার্য। ক্লাইভের শাসন ব্যবস্থার ফলে যখন
বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ, ঠিক সে মুহূর্তে হেস্টিংস এদেশের শাসনভার গ্রহণ
করেন। হেস্টিংসের সীমান্ত নীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল কোম্পানির অধীনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান ও বিস্তার।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হেস্টিংসের নীতি ছিল রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা এবং বিচার বিভাগের সংস্কার সাধন করা।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়েও ব্যক্তিগতভাবে হেস্টিংস ছিলেন অসচ্চরিত্র, বিশ্বাসঘাতক, অর্থলোভী ও
প্রতিহিংসাপরায়ন। তবে এ উপমহাদেশে যে সমস্ত শাসক এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে হেস্টিংসের অবদানই ছিল
গুরুত্বপূর্ণ। হেস্টিংস যখন ক্ষমতায় আসেন তখন কোম্পানি ছিল রাজস্ব আদায়কারী একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মাত্র।
তিনি যখন কর্মভার ত্যাগ করে দেশে যাত্রা করেন তখন কোম্পানি এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত
হয়। তাই হেস্টিংসকে উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা চলে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। অধীমতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন কে?
ক) হেস্টিংস খ) কর্নওয়ালিস
গ) ওয়েলেসলি ঘ) বেন্টিংক
২। কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের অবসান হয়?
ক) ১৭৬৮ খ) ১৭৬৯
গ) ১৭৭০ ঘ) ১৭৭১
৩। টিপু সুলতান কত খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন?
ক) ১৭৮০ খ) ১৭৮১
গ) ১৭৮২ ঘ) ১৭৮৩
৪। “ইন্ডিয়া এ্যাক্ট” আইন পাস করেন কে?
ক) লর্ড নর্থ খ) উইলিয়াম পিট
গ) ওয়ারেন হেস্টিংস ঘ) লর্ড কর্নওয়ালিস
৫। কত খ্রিস্টাব্দে হে্িস্টংস পদত্যাগ করে দেশে ফিরে যান?
ক) ১৭৮২ খ) ১৭৮৩
গ) ১৭৮৪ ঘ) ১৭৮৫
সৃজনশীল প্রশ্ন
উইলিয়াম জুনিয়র অল্প বয়সে কেরানী হিসেবে জীবন শুরু করে নিজ কর্মদক্ষতায় অল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানীর রেসিডেন্ট
পদে উন্নীত হয়। পরবর্তীতে তিনিই কোম্পানীর সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করেন। কিন্তু তার জীবনের শেষ পরিণতি দুঃখজনক
হলেও একথা সত্য যে, বিভিন্ন নীতির ফলে কোম্পাণীর গৌরব যখন ক্ষুণœ, দেশীয় রাজাদের আক্রমনে কোম্পাণীর ভীত
যখন প্রকম্পিত, জনপদ যখন বিরান, কোষাগার যখন শূন্য প্রায়, ঠিক তখন উইলিয়াম জুনিয়রই কোম্পাণীর মর্যাদা ও
শক্তিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাই তাকে কোম্পাণীর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
ক. দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেন কে? ১
খ. “রেগুলেটিং ্এ্যাক্ট” কী? ২
গ. উদ্দীপকের উইলিয়াম জুনিয়রের সাথে পাঠ্য পুস্তকের কোম্পাণীর আমলের যে কর্মকর্তার সাদৃশ্য আছে তার বাণিজ্য
সংস্কারের বিবরণ দিন। ৩
ঘ. উক্ত কর্মকর্তাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়Ñ বিশ্লেষণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]