১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হার্ডিঞ্জের পর মাত্র ছত্রিশ বৎসর বয়সে লর্ড
ডালহৌসী এ উপমহাদেশে আসেন। আসার পূর্বে তিনি বোর্ড অফ
ট্রেডের সভাপতি হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রী সভায় ছিলেন। ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত
যত সাম্রাজ্যবাদী শাসক এ উপমহাদেশে প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে লর্ড
ডালহৌসী ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। লর্ড ডালহৌসীর সাম্রাজ্যবাদ নীতির
তিনটি লক্ষ্য ছিল-
ক. পাশ্চাত্য সভ্যতা ও শাসনের প্রসার
খ. ইংরেজ সাম্রাজ্যের সংহতি স্থাপন ও
গ. উপমহাদেশে ব্রিটিশ পণ্যের বাজার সৃষ্টি
এ উদ্দেশ্যসমূহ হাসিলের জন্য যে উপায় অবলম্বন করা হয়েছিল তা এদেশের
জনগণের জন্য কতটা কল্যাণমুখী ছিল, এসব চিন্তা তাঁর কাছে গৌণ ছিল।
ডালহৌসী বৃটিশ রাষ্ট্র বিস্তারে যে নীতিগুলো গ্রহণ করেছিলেন তার তিনটি ভিন্ন
ভিন্ন দিক ছিলো- ১. প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয় ২. স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা রাজ্য জয় ৩. কুশাসন ও অরাজকতার
অজুহাতে পররাজ্য দখল। এর মধ্যে তিনি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করেই সবচেয়ে বেশি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয়
দ্বিতীয় শিখ যুদ্ধ ( ১৮৪৮ - ৪৯ খ্রি:): লর্ড হার্ডিঞ্জের সময়ের প্রথম শিখ যুদ্ধের পরাজয় শিখ জাতি ভুলতে পারে নি।
এছাড়া হার্ডিঞ্জের কিছু পদক্ষেপ শিখদের উত্তেজিত করে তুলেছিল। পাঞ্জাবে নিযুক্ত কোম্পানি কর্মচারীদের অশোভন
আচরণ, শিখ গুরুদুয়ারাগুলোর প্রতি অসম্মান দেখানো, শিখ রমনীদের নির্যাতন, শিখদের ধর্মবিশ্বাস ও সম্মানে আঘাত
দেয়। ইংরেজদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাণী ঝিন্দদের প্রতিবাদ শিখদের আলোড়িত করে।
দেওয়ান মূলরাজ ছিলেন পাঞ্জারের শাসনকর্তা। লাহোরের ইংরেজ রেসিডেন্ট মূলরাজকে হিসাবপত্র দাখিল করতে বলায়
মূলরাজ পদত্যাগের ভান করেন। দুজন ইংরেজ কর্মচারীসহ নবনিযুক্ত শাসকর্তাকে কর্মস্থলে পাঠানো হলে মূলরাজ তাদের
হত্যা করে পুনরায় পাঞ্জাবে প্রভুত্ত স্থাপন করেন। সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাবের অন্যত্র শিখ যোদ্ধারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করে। শের সিংহের নেতৃত্বে কতিপয় শিখ যোদ্ধা ইংরেজদের পক্ষে গেলেও পরে মূলরাজের পক্ষে চলে আসে।
পেশোয়ার পুনরুদ্ধারের আশায় আফগান জাতিও এই শিখ বিদ্রোহে যোগ দেয়। বাধ্য হয়ে লর্ড ডালহৌসী শিখদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ইতিহাসে এই যুদ্ধ দ্বিতীয় শিখ যুদ্ধ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সেনাপতি লর্ড গাফ ঝিলাম নদীর তীরে
চিলিয়ানওয়ালা নামক স্থানে শিখ সেনাপতি শেরসিংহের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলেন। কিন্তু চিনাব নদীর নিকটে
গুজরাটের যুদ্ধে শিখ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। ডালহৌসী ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষের মতামতের অপেক্ষা
না করে পাঞ্জাব অধিকার করে নিলেন। ফলে উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত হলো।
দ্বিতীয় ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ
লর্ড ডালহৌসী
লর্ড ডালহৌসীর রাজত্বকালে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিবাদের ফলে দ্বিতীয় বার্মা (মায়ানমার) যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। ১৮২৬
খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বার্মা পর হতেই বর্মীগণ ইংরেজদের প্রতি শত্রæভাবাপন্ন ছিল এবং ক্রমে তাদের সম্পর্কের এমনি
অবনতি ঘটে যে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মরাজ ইংরেজ রেসিডেন্টকে বার্মা ত্যাগের আদেশ দেন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন
ইংরেজ বণিক বর্মীদের হাতে অপমানিত হয়েছে সংবাদ পেয়ে ডালহৌসী তখনই বার্মার রাজার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে
পাঠান। ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য ডালহৌসী নৌ-সেনাপতি কমোডর ল্যাম্বটিকে রণতরীসহ বার্মায় পাঠান। ব্রহ্মরাজ যুদ্ধের
পক্ষপাতী ছিলেন না বিধায় ডালহৌসীর সমর্থন আদায়ের জন্য দুর্ব্যবহারের দায়ে রেঙ্গুনের গভর্নরকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু
নৌ-সেনাপতি ল্যাম্বার্টি এতে খুশি না হয়ে ব্রহ্মরাজের একটি রণতরী দখল করে নেয়। ফলে বর্মীগণ ল্যাম্বার্টির জাহাজে
গোলাবর্ষণ শুরু করলে দ্বিতীয় বার্মা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
ডালহৌসী ল্যাম্বাটিকে সাহায্যের জন্য জেনারেল গডউইনকে প্রেরণ করেন। অল্পকালের মধ্যেই রেঙ্গুন প্রোম ও পেগু
অধিকৃত হলো। ব্রহ্মরাজ সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে ডালহৌসী সমগ্র পেগু প্রদেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
এভাবে বার্মার উপক‚ল অঞ্চল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম হতে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সমগ্র উপক‚ল অঞ্চল যেমন ব্রিটিশ
অধিকারভুক্ত হলো তেমনি বার্মা সমুদ্রের সাথে সংযোগ পথের জন্য ব্রিটিশের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। এছাড়া
ডালহৌসী ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে সিকিম রাজ্য বৃটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
স্বত্ববিলোপ নীতির সংজ্ঞা: প্রাচীন হিন্দু রীতির উচ্ছেদ ঘটিয়ে বৃটিশ শক্তির উপর নির্ভরশীল দেশীয় রাজ্যগুলো কুক্ষিগত
করার জন্য যে নতুন নীতি উদ্ভাবিত হয়েছিল তাই স্বত্ব বিলোপ নীতি নামে পরিচিত। এ নীতির অর্থ হলো এই যে, ইংরেজ
আশ্রিত ও অনুগৃহীত কোনো দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁর রাজ্য বৃটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে; কোনো
পালিত পুত্রের অধিকার স্বীকার করা হবে না। প্রাচীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী অপুত্রক রাজা রাজবংশ ও রাজ্য রক্ষা করার জন্য
পুত্র পালক নিতে পারতেন। আগে এ ধরনের ক্ষেত্রে ইংরেজের কাছে থেকে রাজারা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দত্তক গ্রহণ
করতে পারতেন। কিন্তু ডালহৌসী কঠোরতার সাথে আগের রীতি বন্ধ করে দিয়ে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রিটিশ
সাম্রাজ্য প্রসারের পথ আরও প্রশস্ত করে তোলেন।
স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ
যুদ্ধের দ্বারা সাম্রাজ্য বিস্তার ছাড়াও লর্ড ডালহৌসী স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে রাজ্য প্রসারে উদ্যোগ নেন।
মনেপ্রাণে সাম্রাজ্যবাদী ডালহৌসী সর্বপ্রথম সাঁতারা রাজ্যের উপর তার স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ করেন। সাঁতারার রাজা
ইংরেজের বিনা অনুমতিতে দত্তক পুত্র গ্রহণ করেছিলেন। ফলে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা মারা গেলে ডালহৌসী দত্তক পুত্রের
দাবি অগ্রাহ্য করে সাঁতারা রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এরপর সম্বলপুর রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে
ডালহৌসী সম্বলপুর রাজ্যটিও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন (১৮৫০ খ্রি:)।
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভোঁসলে বংশের শেষ রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে ডালহৌসী নাগপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
কারণ নাগপুর ইংরেজের প্রত্যক্ষ অধিকারে আসায় কোন দেশীয় রাজ্যের এলাকায় না ঢুকে কলকাতা থেকে বোম্বাই (মুম্বাই)
যাতায়াতের পথ ইংরেজদের জন্য সোজা হয়ে গেল। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির রাজা মারা গেলে তাঁর দত্তক পুত্রের দাবি
অস্বীকার করে ডালহৌসী ঝাঁসীকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ঐ ভাবে শতদ্রæ নদীর নিকট ভগৎ রাজ্য, মধ্যপ্রদেশে
উদয়পুর, রাজস্থানে করৌলি প্রভৃতি রাজ্যগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
ইংরেজ প্রদত্ত ভাতা ও খেতাবের স্বত্ব লোপ: অতঃপর ডালহৌসী ইংরেজ প্রদত্ত দেশীয়দের ভাতা ও খেতাবের ক্ষেত্রেও স্বত্ব
বিলোপ নীতি প্রয়োগ করেন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও মারা গেলে ডালহৌসী বাজীরাও এর দত্তকপুত্র
নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করে দেন। একইভাবে তাঞ্জোরের রাজা মারা গেলে তাঁর দু’কন্যা সন্তান থাকলেও তাঁদের
উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং সে সঙ্গে তাঞ্জোরের রাজপদ ও ভাতা বন্ধ করা হয়। ডালহৌসী মোগল সম্রাট
দ্বিতীয় বাহাদূর শাহের খেতাব ও ভাতা লোপ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিচালক সভা বাধা দেয়ার ফলে তিনি সফল হন
নি।
কুশাসনের অজুহাত: এরপর লর্ড ডালহৌসী কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। রাজ্য
শাসনের দায়িত্ব নবাবের হাতে থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে। ফলে রাজ্য শাসনে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
তাই তাঁকে অযোধ্যা ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুরে বারো লক্ষ টাকা নিয়ে বাস করতে বাধ্য করা হয়। ঠিক কুশাসনের কারণে
না হলেও হায়দ্রাবাদের নিজাম ইংরেজ সেনাবহিনীর ব্যয়ভার বহনের জন্য যে অর্থ দিতেন তা বাকি পড়ায় ডালহৌসী
নিজামের নিকট হতে বেরার প্রদেশটি কেড়ে নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
স্বত্ত¡বিলোপ নীতির ফলাফল
ডালহৌসীর পূর্ববর্তী শাসকগণের নীতি ছিল যেখানে পারতপক্ষে ইংরেজ শাসন সম্প্রসারণ না করা, সেখানে ডালহৌসীর
নীতি ছিল যতদূর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যায় ততদ‚র পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। তিনি তাঁর উদ্ভাবিত স্বত্ববিলোপ নীতি
প্রয়োগের মাধ্যমে এদেশীয় নবাব-রাজা ও জমিদার এবং প্রজার মনে ভীতি ও অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিলেন। কেননা তাঁরা
প্রত্যেকেই তাঁদের রাজ্যের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। এ নীতি প্রয়োগের দ্বারা তিনি বিভিন্ন
অজুহাতে একের পর এক রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ছলে বলে কৌশলে না হলে তিনি যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য দখল
করতেন। উপরন্তু, ডালহৌসী এ নীতি প্রয়োগের সময় এদেশের প্রচলিত রীতিনীতি ও ধর্মীয় মনোভাব এবং জনমতকে
সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। এ ধূমায়িত ইংরেজ বিরোধী অসন্তোষই ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ছিল।
সংস্কার
লর্ড ডালহৌসী শুধু একজন সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন না রবং তিনি একজন শ্রেষ্ঠ শাসকও ছিলেন। ডালহৌসীর কর্মশক্তি ছিল
অসাধারণ। প্রশাসনিক ক্ষেত্রের প্রত্যেক বিভাগেই তিনি সংস্কার সাধন করেন।
শাসন সংস্কার: তিনি গভর্নর জেনারেলের কাজের চাপ কমানোর লক্ষ্যে বাংলার জন্য একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (ছোট
লাট) নিযুক্ত করেন। সমগ্র ব্রিটিশ ভারতকে বিভিন্ন জেলায় ভাগ করা হয়। ফলে রাজ কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে
যায়। তিনি বার্ষিক সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং বে-সামরিক কর্মচারীদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ
করেন। তিনি কেন্দ্রীয় আইনসভার স্বাধীনতা রক্ষায় চেষ্টা করেন। তৎকালীন বাংলার সেনাদের সামরিক যোগ্যতার অভাব
লক্ষ করে তিনি প্রত্যেক সুস্থ সবল লোকের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যাতে ভবিষ্যতে সামরিক বাহিনীতে
যোগ দিতে পারে। সবশেষে তিনি বন্দীদিগকে ইন্সপেকটরদের অধীনে রাখার একটি নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
সামাজিক সংস্কার: সমাজ সংস্কারক হিসেবে ডালহৌসী অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। ডালহৌসী আট বছরের মধ্যে বহু সংস্কার
প্রবর্তন করে আধুনিক যুগের সূচনা করেন। যেমন: তিনি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিধবা বিয়েকে আইনসঙ্গত
করেন। এ বিষয়ে পÐিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ডালহৌসীকে সাহায্য করেন। ডালহৌসী এমন একটি আইন পাস করান
যাতে এদেশীয়গণ ধর্মান্তরিত হলেও তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করতে পারে।
ডালহৌসীর শাসনকাল বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য বিখ্যাত। তিনি পূর্তবিভাগের প্রতিষ্ঠিত গঙ্গা খাল খনন ও জল সেচ
ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। তিনি রাজপথ ও সড়কগুলোর উন্নয়ন করেন। তাঁরই সময়ে কলকাতা হতে পেশোয়ার পর্যন্ত
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড পুনরায় চালু হয়। এদেশীয় রেলপথ ব্যবস্থার জনক ছিলেন ডালহৌসী। তাঁর সময়ে বোম্বাই হতে টানা
পর্যন্ত রেললাইন চালু হয় ( ১৮৫৩ খ্রি:)।
ডালহৌসি ডাক বিভাগের সংস্কার, কলকাতা হতে আগ্রা পর্যন্ত প্রথম টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ও পেনী পোস্টকার্ড ব্যবস্থা চালু
করেন। তিনি বনভ‚মি সংরক্ষণ নীতি প্রবর্তন করেন এবং চা ও কফি বাগানের প্রসার সাধন করেন। তাঁর আমলে মেরিয়া
নামক এক সমাজ বিরোধী দল বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। তিনি এই মেরিয়া উপদ্রপের অবসান ঘটান।
শিক্ষা সংস্কার: ডালহৌসী এদেশে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে শিক্ষার উন্নয়নে মনোযোগ দেন। এ সময় বোর্ড অব
কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড একটি শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করেন যা উডের ডেসপ্যাচ নামে বিখ্যাত। এই ব্যবস্থা বর্তমান
শিক্ষা পদ্ধতির ভিত্তি গঠনে সাহায্য করে। এ পরিকল্পনা অনুসারে ডালহৌসী ‘শিক্ষা বিভাগ’ সৃষ্টি করেন এবং তাঁরই প্রচেষ্টায়
এদেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। জনসাধারণের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রান্ট-ইন-এইড দেয়ার ব্যবস্থা
করা হয়। উডের ডেসপ্যাচে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ে তিনটি ইউনিভারসিটি স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
ডালহৌসী নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করেন এবং তাঁর ও কাউন্সিল সদস্য বেথুন সাহেবের প্রচেষ্টায় বেথুন
কলেজ স্থাপিত হয়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার কথাও ভাবেন। তিনি রুরকির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও স্থাপন করেন। এ সকল
উন্নতি সাধন করে ডালহৌসী এদেশে ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ় করেন।
একজন সাম্রাজ্যবাদী শাসক হিসেবে ডালহৌসীর উদ্দেশ্য ছিল এদেশীয় প্রজাবর্গের কল্যাণ সাধন করা। সে কারণে তিনি
মনে করতেন যে দেশীয় শাসন অপেক্ষা ইংরেজ শাসন ব্যবস্থা অধিকতর উন্নত ও মঙ্গলজনক। ফলে এ সাম্রাজ্যবাদী
দৃষ্টিভঙ্গি বশত তিনি ছলে বলে কৌশলে দেশীয় রাজ্য দখলের নীতি গ্রহণ করেন। এভাবে স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগের
মাধ্যমে তিনি সাতারা সম্বলপুর, নাগপুর, ঝাঁসি, উদয়পুর, জৈন্তাপুর ও ভগৎপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। সিন্ধু নদ
হতে বার্মার (মায়ানমার) ইরাবতীর তীর পর্যন্ত ডালহৌসী ব্রিটিশ পতাকা উড়িয়ে দেন।
অবশ্য অভ্যন্তরীণ সংস্কারেও তাঁর অবদান কম নয়। আট বছরের মধ্যে তিনি বহু সংস্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক
যুগের সূচনা করেন। তিনি রেলপথ, টেলিগ্রাফ ও পূর্তবিভাগ ও জনশিক্ষা ব্যবস্থার জনক ছিলেন। তিনি যোগাযোগ,
বিধবা বিবাহ প্রথা, জলসেচ ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনন্য। তাঁর সময়ে বিদ্যালয় ও
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার অগ্রদূত। তাই শাসক ও সংস্কারক হিসাবে ডালহৌসী অবশ্যই
প্রশংসা পেতে পারে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। স্বত্ত¡বিলোপনীতি প্রবর্তন করেন কে?
ক) লর্ড কর্নওয়ালিস খ) লর্ডওয়েলেসলি
গ) লর্ড ডালহৌসি ঘ) লর্ড বেন্টিংক
২। লর্ড ডালহৌসি ছিলেনÑ
ক) সাম্রাজ্যবাদী খ) সমাজ সংস্কারক
গ) দক্ষ প্রশাসক ঘ) গণতন্ত্রমনা
৩। সমগ্র উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয় কার সময়ে?
ক) লর্ড হার্ডিঞ্জ খ) লর্ড জলহৌসি
গ) লর্ড কর্নওয়ালিস ঘ) লর্ড অকল্যান্ড
৪। ভারতীয় উপমহাদেশে রেল ও ট্রেলিগ্রাফ প্রথার প্রবর্তন করেন কে?
ক) লর্ড ডালহৌসী খ) লর্ড হেস্টিংস
গ) লর্ড ওয়েলেসলি ঘ) লর্ড হার্ডিঞ্জ
সৃজনশীল প্রশ্ন
মহাদেব চন্দ্র ছিলেন সাঁতারা রাজ্যের রাজা। নিসন্তান রাজা রাজপদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ইংরেজদের অনুমতি ছাড়াই
দত্তকপুত্র গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের নিয়ম ছিল ইংরেজ আশ্রিত ও অনুগৃহিত কোনো দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক
অবস্থায় মারা গেলে তার রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে। কোনো পালিত পুত্রের অধিকার স্বীকার করা হবে না, ১৮৪৮ সালে
রাজা মহাদেব চন্দ্র মারা গেলে ইংরেজরা তার পালিত পুত্রের দাবী অগ্রাহ্য করে সাঁতারা রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন;
এমন কি তার পালিতপুত্রের ভাতাও বন্ধ করে দেয়।
ক. বিধবা বিবাহ আইন পাস করেন কে? ১
খ. স্বত্ববিলোপ নীতি কী? ২
গ. উদ্দীপকের নিয়ম-নীতির সাথে পাঠ্য পুস্তকের কোম্পানি আমলের যে শাসকের নিয়ম-নীতির সাদৃশ্য পাওয়া যায় তা
ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে উক্ত শাসকের অবদান মূল্যায়ন করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র