ইংরেজরা এদেশে এসেছিল ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে। কিন্তু ধীরে ধীরে বণিকের মানদন্ড রাজদন্ডে
পরিণত হয়। এক এক জায়গায় এক এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটেছে। তাই সাম্রাজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে
স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের দায়িত্বও এসে পড়ে। বস্তুত কোম্পানিকে যখন এদেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়
তখন তাকে নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছিল। এদেশীয় ব্যবস্থা, প্রথা, ভাষা, নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতা,
যাতায়াত ও যোগাযোগের অসুবিধার মধ্য দিয়ে কোম্পানি একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। যেহেতু
বাংলায় ইংরেজরা প্রথম রাজ্য বিস্তার করেছিল, সেহেতু বাংলার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা উপমহাদেশের অন্যান্য স্থানেও
তাদের প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিল।
ক্লাইভের শাসন ব্যবস্থা
দীউয়ানী লাভের পর ক্লাইভ এদেশ শাসনের জন্য যে শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। এ
ব্যবস্থায় কোম্পানির হাতে ছিল ‘রাজস্ব-আদায়’ ও ‘দেশ রক্ষার ভার’ আর নবারের হাতে ছিল বিচার ও শাসনের ভার।
এভাবে ধীরে ধীরে এদেশে ইংরেজ শাসন ব্যবস্থার পথ সুগম হতে থাকে। ক্লাইভই ছিলেন ইংরেজ শাসনের প্রথম
প্রতিষ্ঠাতা।
হেস্টিংসের যুগে শাসন ব্যবস্থা
অতঃপর হেস্টিংস এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। নানা বাধা ও বিপত্তির মধ্যেও হেস্টিংস শাসন ব্যবস্থার সংস্কারে তাঁর
উদ্ভাবনী প্রতিভার পরিচয় রেখে গেছেন। প্রথমেই হেস্টিংস, ক্লাইভের প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার বিলোপ করেন। তিনি
শাসন ও রাজস্ব বিভাগ কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসেন। গভর্নর ও কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে তিনি একটি ‘বোর্ড অব
রেভিনিউ’ গঠন করে তার উপর রাজস্ব ব্যবস্থার পুরো দায়িত্ব দেন। তিনি ইংরেজ ‘সুপার ভাইজরদের’ স্থলে ‘কালেকটর’
নিয়োগ করেন। পূর্বে যেখানে উচ্চপদে শুধু ইংরেজদের নিয়োগ করা হতো, এখন সেখানে এদেশীয়দের নিয়োগ করা হলো।
দুর্নীতি বন্ধের জন্য তিনি কোম্পানির কর্মচারিদের মোটা বেতনের ব্যবস্থা করেন।। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য হেস্টিংস
পাঁচ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ মূল্যে জমিদারি ইজারা দেয়ার নিয়ম প্রবর্তন করেন যা ‘পাঁচসালা বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত।
পাঁচসালা বন্দোবস্তের ভুলত্রæটি লক্ষ করে হেস্টিংস জমিদারদের সঙ্গে একটা স্বল্প মেয়াদী বন্দোবস্ত করেন যা ‘একসালা
বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত।
অতঃপর হেস্টিংস বাণিজ্য ক্ষেত্রে দস্তক প্রথা তুলে দেন এবং সে সঙ্গে কোম্পানির কর্মচারিদের বিনা শুল্কে ব্যক্তিগত
ব্যবসাও বন্ধ করে দেন। দেশের অভ্যন্তরে মালামাল চলাচলের সুবিধার জন্য তিনি শুল্ক চৌকিগুলো বিলুপ্ত করে দেন।
কোম্পানির স্বার্থে কাপড় তৈরির জন্য তাঁতীদের উপর অত্যাচার করা নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক
স্থাপন করেন এবং দূত প্রেরণ করেন।
হেস্টিংস মুগল বিচার ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেন। তিনি কোম্পানির বাণিজ্য বিভাগকে শাসন বিভাগ হতে পৃথক করেন যাতে
কোম্পানি প্রশাসন কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। হেস্টিংস বিচার বিভাগকে রাজস্ব বিভাগ হতে পৃথক করে প্রতি জেলায়
একটি করে ফৌজদারী ও দিওয়ানী আদালত স্থাপন করেন। তিনি এদেশীয় কাজী বা মুফতীর দ্বারা বিচার কাজ সম্পন্ন
করতেন। হেস্টিংসই সর্বপ্রথম উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা মোকদ্দমা হিন্দু মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অনুসারে বিচারের
নিয়ম প্রবর্তন করেছিলেন। এদেশীয় শিক্ষার উন্নতির জন্য তিনি কলকাতায় মাদ্রাসা, বারানসীতে সংস্কৃত কলেজ ও
এশিয়াটিক সোসাইটি স্থাপন করেন।
কর্ণওয়ালিসের সময়ে শাসন ব্যবস্থা
হেস্টিংসের পদত্যাগের পর লর্ড কর্ণওয়ালিস এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। ফলে তাঁর উপর দায়িত্ব পড়ে হেস্টিংসের
অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার। তাই লর্ড কর্ণওয়ালিস একটি দক্ষ প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা তৈরিতে মনোযোগ দেন।
প্রথমেই কর্ণওয়ালিস প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার কাজে হাত দেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল এক সৎ, দক্ষ কার্যকরী সিভিল সার্ভিস
গঠন করা। তিনি প্রদেশগুলোকে জেলায় এবং জেলাগুলোকে থানায় বিভক্ত করেন। তাঁর সময় ২৩টি জেলা ছিল।
কর্ণওয়ালিস কলকাতাকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেন। এ
সময় গ্রামাঞ্চলে জমিদারগণ পুলিশী দায়িত্ব থেকে মুক্ত হন।
প্রশাসনকে আইনের পথে পরিচালনার জন্যে কর্ণওয়ালিস তাঁর ‘আইন বিধি কোড’ প্রবর্তন করেন যা ‘কর্ণওয়ালিস কোড’
নামে পরিচিত। কর্ণওয়ালিসই সর্বপ্রথম কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে ব্যক্তিগত ব্যবসা কিংবা অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন
সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কর্ণওয়ালিস কোম্পানির কর্মচারির সংখ্যা হ্রাস করেন এবং তাদের সার্বক্ষণিক কাজ
করার নির্দেশ দেন। কর্ণওয়ালিস রাজস্ব ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পৃথক করে পৃথক কর্মচারিদের উপর এর দায়িত্বভার ন্যস্ত
করেন।
কর্নওয়ালিসই বিচার বিভাগের উচ্চ পদগুলোতে ইংরেজ বিচারকদের নিয়োগের নিয়ম চালু করেন। তাছাড়া তিনি ফৌজদারী
আইনকে আধুনিক করার চেষ্টা করেন। ফলে হিন্দু মুসলিম উভয়েই নিজ নিজ পক্ষে উকিল নিয়োগের অধিকার লাভ করে।
কর্ণওয়ালিস সরকারি কর্মচারিদের দুর্নীতি ও বে-আইনী কাজের জন্য তাঁদের বিচার বিভাগের কাছে অভিযুক্ত করার ব্যবস্থা
করে আইনের শাসন প্রবর্তন করেন।
ভ‚মি রাজস্ব: ওয়ারেন হেস্টিংসের ভ‚মি রাজস্ব ব্যবস্থায় ভুলত্রæটি থাকার কারণে লর্ড কর্ণওয়ালিস তা সংস্কারের প্রতি
মনোযোগী হন। ওয়ারেন হেস্টিংসের পাঁচসালা ও একসালা বন্দোবস্তের ফলে কোম্পানির প্রাপ্য রাজস্ব বহুল পরিমাণে
অনাদায়ী থাকে ও চাষীদের উপর শোষণ বেড়ে যায়। পাঁচসালা ও একসালা বন্দোবস্তের ভুলত্রæটি নিরসনের জন্য লর্ড
কর্ণওয়ালিস জমির ‘দশসালা বন্দোবস্ত’ প্রবর্তন করেন, যা ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে’ পরিণত হয়। এ ব্যবস্থার
ফলে জমিদারগণ জমির স্থায়ী মালিক হন এবং তাঁদের দেয় করের পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যবস্থার ফলে
কৃষকদের দুর্দশা বেড়ে যায় ও জমির উন্নয়ন কমে যায়। এ ব্যবস্থায় সূর্যাস্ত আইনের বলে বহু জমিদারি নিলামে উঠে।
জমিদারি কেনার মধ্য দিয়ে নতুন জমিদারশ্রেণি গড়ে উঠে। এভাবে এদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও উদ্ভব ঘটে।
লর্ড ওয়েলস্লির সময়ে শাসন ব্যবস্থা
১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কোম্পানির গভর্নর হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। তিনি রাজ্য শাসনের পরিবর্তে রাজ্য
বিস্তারের দিকেই বেশি আগ্রহী র্ছিলেন। রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় তাঁর অবদান নিতান্তই সামান্য। সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব থাকা
সত্তে¡ও তিনি বেশকিছু সংস্কার করে গেছেন। তিনি ইংরেজ অধিকৃত স্থানে জমি জরিপ করার জন্য বুকাননকে নিযুক্ত করেন।
তিনি এদেশের কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত সরকার এসব সংগৃহীত তথ্য থেকে
কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভে সক্ষম হয়। ওয়েলেসলি বিচার ব্যবস্থার বেশকিছু সংস্কার করেন।
লর্ড ওয়েলেসলি ভারতবর্ষে নবাগত ইংরেজ কর্মচারিদের শিক্ষার জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে একটি কলেজ স্থাপন
করেন।
বেন্টিংকের সময় শাসনব্যবস্থা
১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড উলিয়াম বেন্টিঙ্ক এদেশের বড়লাট হয়ে আসেন। প্রথমেই তিনি বিচার বিভাগের সংস্কার সাধনে
মনোযোগী হন। বেন্টিঙ্কই সর্বপ্রথমে এদেশীয়দের শাসন ও বিচার সংক্রান্ত উচ্চপদে নিয়োগ করেন। তিনি কর্ণওয়ালিস
প্রবর্তিত প্রাদেশিক আদালতগুলো তুলে দিয়ে জেলা কালেকটরের উপর ফৌজদারী মামলার বিচারের দায়িত্ব দেন। তিনি
কয়েকটি জেলাকে একত্রিত করে একটি বিভাগ গঠন করেন। প্রতিটি বিভাগে একজন করে কমিশনার নিযুক্ত করেন। ডেপুটি
ও জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদও সৃষ্টি করা হয়।
অতঃপর বেন্টিঙ্ক সমাজ সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি দেন। প্রথমেই তিনি ‘সতীদাহ প্রথা’ ও ‘অনুমরণ’ প্রথার বিলোপ সাধন
করেন। এছাড়াও বেন্টিংক আরও অনেক অমানবিক প্রথা বাতিল করেন। তিনি ঠগী দস্যুদেরও দমন করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রেও তাঁর সংস্কার অন্যকারও চেয়ে কম নয়। অনেক আগে থেকেই এদেশে সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা প্রচলিত ছিল।
১৮১৩ সনের সনদ আইন দ্বারা কোম্পানি এদেশীয়দের শিক্ষা বিস্তারের জন্য বৎসরে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করতে বাধ্য ছিল।
এ অর্থ শুধু প্রাচ্য ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয়িত হতো। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে বেন্টিঙ্কের চেষ্টার ফলে পাশ্চাত্য ধারায় শিক্ষাদানের
জন্য কলকাতায় একটি মেডিকেল কলেজ ও বোম্বাইয়ে এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি স্মরণীয় হয়ে
থাকেন এদেশের জনগণের নিকট।
বেন্টিঙ্ক কোম্পানির আর্থিক উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছিলেন। তাই তিনি ব্যয় সংকোচন ও রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন।
বেন্টিঙ্ক কোম্পানির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য মালবে উৎপন্ন আফিমের উপর কর ধার্য করেন। যেসব জমি অবৈধভাবে নিষ্কর
বলে দেখানো হয়, সেসব জমির উপর তিনি কর বসান।
মাদ্রাজ ও আগ্রায় ‘রায়তওয়ারী প্রথার’ প্রবর্তন করে তিনি কোম্পানির আয় বৃদ্ধি করেন। তিনি সিন্ধুর আমীর ও পাঞ্জাবের
রনজিৎ সিংহের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করেন। বেন্টিঙ্কের এসব ব্যবস্থা নেয়ার ফলে কোম্পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে উদ্বৃত্ত থাকে।
এছাড়া বেন্টিঙ্ক এদেশের ভেতরে মাল চলাচলের উপর শুল্ক লোপ করেন। নদী ও সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে উৎসাহ প্রদান
করেন। চা ও কফি উৎপাদনের জন্য চা বাগান ও কফি বাগান স্থাপনে উৎসাহ প্রদান করেন।
বৈদেশিক নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে বেন্টিঙ্ক নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করার পক্ষপাতী ছিলেন। তবে প্রয়োজনবোধে এ নীতি
ছাড়তেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন। এই নীতির মধ্য দিয়ে বেন্টিঙ্ক দেশীয় অনেক রাজ্যের উপর দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে
সক্ষম হন।
ডালহৌসীর সময়ের শাসন ব্যবস্থা
লর্ড ডালহৌসী ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি শুধু সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন না, বরং একজন শ্রেষ্ঠ
শাসকও ছিলেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রের প্রতি বিভাগেই তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। প্রথমেই তিনি বড়লাটের
কাজের চাপ কমানোর জন্য বাংলায় একজন ছোটলাট নিয়োগ করেন। বড়লাটের নির্দেশে ছোটলাট বাংলা শাসন করতেন।
তাঁর সময়ে পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। ডালহৌসী রাজ্যটির প্রশাসন ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নিজেই করেন। তিনি
পাঞ্জাবের শাসনভার একজন কমিশনারের উপর ন্যস্ত করেন।
ডালহৌসী সামরিক বিভাগেও সংস্কার প্রবর্তন করেন। তিনি বেঙ্গল আর্টিলারী সেনার সদর দপ্তর কলকাতা হতে মীরাটে
স্থানান্তর করে উত্তরভারতে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেন। তিনি গুর্খাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের নীতি নেন। তিনি
বন্দীদেরকে ইন্সপেক্টরের অধীনে রাখার একটি নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
লর্ড ডালহৌসী জনহিতকর কাজের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি পূর্তবিভাগ (চ.ড.উ) গঠন করেন এবং এ দপ্তরকে
সামরিক বোর্ড থেকে পৃথক করেন। এ দপ্তরের হাতে রাস্তাঘাট, পুল তৈরি ও জলসেচ ব্যবস্থা পরিচালনা দায়িত্ব দেয়া হয়।
এ দপ্তরের উদ্যোগ গঙ্গাখাল খনন করা হয়। পাঞ্জাবেও বারি দোয়াব খালের কাজ আরম্ভ হয়। তাঁরই সময়ে কলকাতা হতে
পেশোয়ার পর্যন্ত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করা হয়।
উপমহাদেশে রেলপথ নির্মাণের জন্য ডালহৌসীকে রেলপথের জনক বলা হয়। তাঁর সময়ে বোম্বাই হতে টানা পর্যন্ত
রেললাইন চালু হয় (১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ)। রেলের জন্য জমি বেল কোম্পানিকে বিনামূল্যে দেয়া হয়।
ডালহৌসী এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করেন। কলকাতা থেকে আগ্রা পর্যন্ত প্রথম
টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয় (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ)। পরে এ লাইন লাহোর ও পেশোয়ার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সব মিলে ৪
হাজার মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়।
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ ডাক বিভাগীয় আইন দ্বারা ডালহৌসী ডাক ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি করেন। তিনি পেনী পোস্ট কার্ড প্রথা চালু
করেন। এদেশে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ডালহৌসী শিক্ষা সংস্কারে হাত দেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য বেথুন -এর প্রচেষ্টায় বেথুন কলেজ
স্থাপিত হয়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার কথাও ভাবেন।
সমাজ সংস্কারক হিসাবে ডালহৌসী অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তিনি বিধবা বিবাহ আইন পাস করে হিন্দু বিয়েকে
আইনসঙ্গত করেন। ডালহৌসী এমন একটি আইন পাস করেন যাতে এদেশীয়গণ ধর্মান্তরিত হলেও তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি
ভোগ করতে পারে। বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ডালহৌসী ছিলেন অত্যন্ত সফল শাসক। যদিও তিনি ছিলেন ঘোর
সাম্রাজ্যবাদী তবুও উপমহাদেশে তিনিই এর স্থায়িত্ব ও দান করেন। ইংরেজ ক্ষমতার স্থায়িত্বের জন্য তিনি তিনটি ভিন্ন পথ
অবলম্বন করেন- প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয়, স্বত্ববিলোপ
নীতির দ্বারা রাজ্য জয়, কুশাসন ও অরাজকতার অজুহাতে
রাজ্য দখল।
পাশ্চাত্য ভাষা শিক্ষা
বাংলায় যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত ও
সুদৃঢ় হয়, তখন এদেশের কোনো কোনো ইংরেজ শাসকদের
মধ্যে এ ধারণা জšে§ছিল যে এদেশের মানুষকে ইংরেজী
শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে এবং তার মাধ্যমে
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করতে না পারলে এদেশে
তাঁদের শাসন ব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে
পারবে না। তাঁরা আরও মনে করতেন যে, পাশ্চাত্য ভাষা ও
শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে এদেশীয়দের মঙ্গল নিহিত। ফলে
কোম্পানি আমলে এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এক অভাবনীয়
পরিবর্তন এসেছিল।
কিন্তু ইংরেজ শাসন এদেশে যে আধুনিক যুক্তিবাদ ও
পাশ্চাত্য ভাবধারার অনুপ্রেবেশ ঘটিয়েছে তার ফল ছিল
সুদূরপ্রসারী। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পাশ্চাত্য
জ্ঞানবিজ্ঞানে শিক্ষিত এদেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়কে আধুনিক
উদার চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে নতুন চেতনার
উšে§ষ ঘটে। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় মধ্যযুগীয় সংকীর্ণতা,
গোঁড়ামী ও অন্ধবিশ্বাস পরিত্যাগ করে যুক্তিবাদী হয়ে উঠে।
ফলে, সমাজ, সাহিত্য, ধর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে নবযুগের সৃষ্টি
হয়। বাংলার কলকাতা হয়ে উঠে পাশ্চাত্য শিক্ষা চর্চা ও
প্রসারের কেন্দ্র।
কোম্পানির শাসন উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনকে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ইংরেজ গভর্নরগণ ধীরে ধীরে
একটি স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। তাদের শাসননীতিতে একদিকে যেমন ইংরেজ ক্ষমতা বিস্তারের
ব্যাপারে লক্ষ্য ছিল- অন্যদিকে জনকল্যাণের ব্যাপারেও ছিল তাদের দৃষ্টি। উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষার পথ প্রশস্ত
হয়েছিল কোম্পানির শাসনামলেই।
পাক ভারতে বৃটিশ রাজত্বের প্রসার
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ইংরেজ শাসনের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কে?
ক) লর্ড ক্লাইভ খ) ওয়ারেন হেস্টিংস গ) কর্নওয়ালিস ঘ) লর্ড ওয়েলেসলি
২। কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা বা অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন কে?
ক) লর্ড ক্লাইভ খ) ওয়ারেন হেস্টিংস গ) লর্ড কর্নওয়ালিস ঘ) লর্ড ওয়েলেসলি
৩। জমি জরিপ করার জন্য বুকাননকে নিযুক্ত করেন কে?
ক) লর্ড ক্লাইভ খ) ওয়ারেল হেস্টিংস গ) লর্ড কর্নওয়ালিস ঘ) লর্ড ওয়েলেসলি
৪। মুম্বাইয়ে এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেনÑ
ক) ওয়ারেন হেস্টিংস খ) লর্ড কর্নওয়ালিস গ) লর্ড ওয়েলেসলি ঘ) লর্ড বেন্টিংক
৫। কত খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৮৫৫ খ) ১৮৫৬ গ) ১৮৫৭ ঘ) ১৮৫৮
৬। ইংরেজ ক্ষমতার স্থায়ীত্বের জন্য ডালহৌসি অবলম্বন করেনÑ
র. প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয়
রর. স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা রাজ্য জয়
ররর. কুশাসন ও অরাজকতার অজুহাতে রাজ্যগ্রাস
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র