ভ‚মিকা
বাংলা ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে শেরশাহের রাজসিক উত্থান বস্তুত এ অঞ্চলের ইতিহাস নতুনভাবে লিখতে বাধ্য করেছিল।
মোগল স¤্রাট হুমায়ুনকে সিংহাসন চ্যুত করে উত্তর ভারত ও বাংলায় আফগান শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। তখন
আফগানদের মধ্যে দুটি গোত্রের অস্তিত্ব ছিল। তার একটি শূর আফগান আর অন্যটি কররানি আফগান। শেরশাহ শূর
আফগান গোত্রভুক্ত ছিলেন। বিহার ও বাংলায় পরাজিত মোগল স¤্রাট হুমায়ুন শেষ পর্যন্ত তার কাছেই আগ্রার সিংহাসন
হারিয়েছিলেন। হুমায়ুনের দিল্লির সিংহাসন পুনরুদ্ধার পর্যন্ত শেরশাহ ও তাঁর উত্তরাধিকারীগণ ভারতবর্ষে তাঁদের রাজত্ব
টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। এদিকে শেরশাহের ছেলে ইসলাম শাহের রাজত্ব পর্যন্ত বাংলা দিল্লির শাসনাধীনে ছিল।
বাংলার অন্যান্য শাসনকর্তা ও কররাণী আফগানগণ স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। দাউদ খান কররাণীকে পরাজিত করে সম্রাট
আকবর বাংলার অধিকার নিয়েছিলেন। এ ইউনিটের সংশ্লিষ্ট পাঠে শেরশাহের উত্থান, তাঁর রাজ্য বিজয় ও কৃতিত্ব, বাংলায়
শূর আফগান এবং কররাণী আফগান শাসনের ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে।
শেরশাহের বাল্যজীবন
পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট বাবর আফগান শক্তিকে পরাজিত করলেও সম্পূর্ণরূপে
ধ্বংস করতে পারেন নি। পরবর্তীকালে যাঁর নেতৃত্বে আফগানরা নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয়
করে তিনি হচ্ছেন শেরশাহ। বাল্যকালে তার নাম ফরিদ। তাঁর পিতা হাসান খান শূর
বিহারের অন্তর্গত সাসারামের জায়গীরদার ছিলেন। শেরশাহের জš§ ১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে।
সম্রাট বাবর ও তার ছেলে হুমায়ুনের মত শেরশাহও ভাগ্য বিড়ম্বিত ছিলেন। তিনি
বিমাতার ষড়যন্ত্রে একাধিকবার সাসারামের জায়গীর হারিয়েছিলেন। তবে নিজ সক্ষমতা,
প্রতিভা ও নিষ্ঠায় তিনি একদিন জায়গীরদার থেকে দিল্লির স¤্রাট হয়েছিলেন। তিনি
বিহারের শাসনকর্তা বাহারাম খানের অধীনে কর্মরত থাকাকালীন নিজগুণে তাঁর আস্থা
অর্জনে সক্ষম হন। এ সময় একটি বাঘ হত্যা করে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিলে
ফরিদ ‘শের খান’ উপাধিতে ভ‚ষিত হন। পরবর্তীকালে চৌসার যুদ্ধে সম্রাট হুমায়ুনকে
পরাজিত করে ‘শেরশাহ’ উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন তিনি ।
শেরশাহ
ক্ষমতা অর্জনের পটভ‚মি
অন্য ভাইদের চেয়ে যোদ্ধা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন ফরিদ তথা শেরখান। তার বাবা হাসান খান শূরের
জীবদ্দশাতে তিনি সাসারামের জায়গীর লাভ করেন। তাঁর একুশ বছরের শাসনামলে সাসারামের অনেক উন্নতি হতে দেখা
যায়। এতে তাঁর ঈর্ষান্বিত বিমাতা যড়যন্ত্রে এক পর্যায়ে এসে সাসারাম ত্যাগে বাধ্য হন ফরিদ। কিন্তু কিছুদিন ব্যবধানে তার
বাবা হাসান খানের মৃত্যু হলে পুনরায় জায়গীর লাভ করেন ফরিদ। এবার বৈমাত্রেয় ভাই সুলায়মান নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
হয়। ফরিদ আবার সাসারাম ত্যাগ করে বিহারের শাসনকর্তা বাহার খানের অধীনে চাকরী গ্রহণ করেন।
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে শেরখান বিহার ত্যাগ করে আগ্রায় চলে যান। সেখানে মোগল স¤্রাট বাবরের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন।
অতঃপর ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে বাবরের বিহার যাত্রাকালে শেরখান তাঁকে সহযোগিতা দেন এবং বাবরের সাহায্যে সাসারামের
জায়গীর পুনরুদ্ধার করেন। ইতোমধ্যে বিহারের শাসনকর্তা বাহার খান মৃত্যুবরণ করেন এবং শেরখান তাঁর শিশু পুত্র
জামাল খানের অভিভাবক নিযুক্ত হন এবং উপ শাসনকর্তা হিসেবে বিহার শাসন করেন। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে শেরখান চুনার
অধিপতি তাজখানের বিধবা স্ত্রী মালেকা জাহানকে বিয়ে করে চুনার দুর্গের কর্তৃত্ব লাভ করেন।
জামাল খান তাঁর অভিভাবক শেরখানের ক্ষমতা বিস্তৃতিতে সন্দিহান হয়ে পড়েন। তাই তিনি শেরখানের কর্তৃত্ব বিলোপের
জন্য বাংলার শাসনকর্তা সুলতান মাহমুদ শাহের সাহায্য প্রার্থনা করেন। সুরজগড়ের যুদ্ধে শেরখান উভয়ের সম্মিলিত
বাহিনীকে পরাজিত করে বিহারের আধিপত্য লাভ করেন। অতঃপর তিনি বাংলায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হন। কিন্তু
বাংলার শাসনকর্তা মাহমুদ শাহ শেরখানের সাথে অর্থের বিনিময়ে মিত্রতা স্থাপন করেন। অবশ্য পরের বছর অর্থাৎ ১৫৩৭
খ্রিস্টাব্দে শেরখান বাংলা আক্রমণ করে গৌড় অবরোধ ও অধিকার করেন।
ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে শেরখানের ক্রমাগত ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে দিল্লির মোগল সম্রাট হুমায়ুন অত্যধিক শংকিত হয়ে
পড়েন। তাই তিনি গুজরাটে বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান প্রত্যাহার করেন। পরে শেরখানকে দমন করার
উদ্দেশ্যে বাংলা অভিমুখে যাত্রা করেন তিনি। বাংলার পরিবর্তে চুনার দুর্গ আক্রমণ করে দখল করেছিলেন হুমায়ুন। এরপর
১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন বাংলার রাজধানী গৌড়ও নিজের দখলে নিয়েছিলেন।
শেরখান ছিলেন দূরদর্শী যোদ্ধা। তাই তিনি হুমায়ুনের বিরুদ্ধে অকারণে কোনো সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন নি। বরং হুমায়ুন
যখন গৌড় দখল করে সেখানে অবস্থান করছিলেন তখন শেরখান পিছু হটেছিলেন। তবে এ সময় তিনি বিহার ও
জৌনপুরের মোগল অধিকৃত অঞ্চল দখল করে কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হন। তিনি দিল্লির সাথে বাংলার যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন
করে দিয়েছিলেন। এতে হুমায়ুন আতংকিত হয়ে পড়েন এবং আগ্রার দিকে যাত্রা করেন। কুশলী যোদ্ধা শেরখান বক্সারের
কাছে চৌসা নামক স্থানে স¤্রাট হুমায়ুনের গতিরোধ করেন। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের এ যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হন এবং তিনি
অতি কষ্টে আগ্রা ফিরে যান।
শেরখান বাংলা, বিহার, জৌনপুরের একচ্ছত্র অধিপতি হন এবং ‘শেরশাহ’ উপাধি ধারণ করেন। হুমায়ুন চৌসার যুদ্ধের
গøানি ও ব্যর্থতা সহ্য করতে না পেরে পুনরায় কনৌজের পথে অগ্রসর হন। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কনৌজের অদূরে বিলগ্রামে
উভয়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে হুমায়ুন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। শেরশাহ কনৌজ, দিল্লি ও আগ্রা
অধিকার করেন। এভাবে মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে দিল্লির সিংহাসনে শেরশাহের অভ্যুত্থান ঘটে।
শিক্ষার্থীর কাজ শেরশাহের উত্থানের উপর একটি নিবন্ধ লেখার চেষ্টা করবেন।
সামান্য একজন জায়গীরদার থেকে শেরশাহ দিল্লির স¤্রাট হন। তিনি নিজ প্রতিভা ও সমর কৌশল ব্যবহার করে
হুমায়ুনের পরাজয় ঘটান। তিনি প্রথমে বিহার, পরবর্তী কালে বাংলা এবং সবশেষে উত্তর ভারতে নিজ আধিপত্য বিস্তার
করে এ দেশে শূর আফগান বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। শেরশাহের পিতার নাম কী?
ক) জামাল খান খ) জালাল খান
গ) হাসান খান সুর ঘ) সোলায়মান খান সুর
২। শেরশাহ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
ক) ১৪৭০ খ) ১৪৭২ গ) ১৪৭৫ ঘ) ১৪৮০
৩। ফরিদ কার বাল্য নাম?
ক) শেরশাহ খ) হাসান খান সুর
গ) সোলায়মান খান সুর ঘ) বাহার খান
৪। যে মোগল সম্রাটকে শের শাহ যুদ্ধে পরাজিত করেন, তার নামÑ
ক) বাবর খ) হুমায়ুন গ) আকবর ঘ) জাহাঙ্গীর
৫। কত খ্রিস্টাব্দে বিল গ্রামের যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
ক) ১৫৩৭ খ) ১৫৩৮ গ) ১৫৩৯ ঘ) ১৫৪০
সৃজনশীল প্রশ্ন
মুরাদের পিতা ছিলেন জমিদার। পিতার জীবতকালেই তিনি জমিদারীর দায়িত্ব পান; কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর বিমাতা ও
আপনজনদের ষড়যন্ত্রে একাধিকবার পিতৃ জমিদারী থেকে বিতাড়িত হন। পরবর্তীকালে নিজ প্রতিভা দুরদর্শিতা ও
সাহসিকতার গুণে ক্ষমতাশীনদের পরাজিত করে সামান্য একজন জমিদার থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
ক. শেরখান কার উপাধী? ১
খ. চৌসার যুদ্ধে হুমায়নের পরাজয়ের কারণ কী? ২
গ. উদ্দীপকের মুরাদের সাথে পাঠ্য পুস্তকের কোন সুর আফগান শাসকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. উক্ত শাসকের দিল্লির স¤্রাট হওয়ার পটভূমি বিশ্লেষণ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র