১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের বিপ্লবের ফলাফল

কোম্পানি শাসনের অবসান
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব বৃটিশ ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। নানাবিধ কারণে সে গণবিপ্লব ব্যর্থ
হলেও এর ফলে ভারতবর্ষে ইস্ট ইÐিয়া কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। কোম্পানি থেকে বৃটিশ রাজের হাতে ক্ষমতার
পরিবর্তনের পর ইংরেজদের ভারত শাসন নীতি ও শাসন ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন সূচিত হয়। বৃটিশ সরকার স্পষ্টত
অনুধাবন করে যে, একটি বণিক সম্প্রদায়ের হাতে ভারতের ন্যায় এত বড় সাম্রাজ্যের শাসনভার ছেড়ে দেয়া নিরাপদ নয়।
সে কারণে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট বৃটিশ পার্লামেন্ট এক আইন পাশ করে ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রাণী
ভিক্টোরিয়ার হাতে অর্পণ করে। কোম্পানির ডাইরেক্টর সভার কর্তৃত্ব বিলোপ করা হয়। পূর্বেকার বোর্ড অব কন্ট্রোলের স্থলে
বৃটিশ কেবিনেট মন্ত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে ভারত সচিবের পদে নিযুক্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তিনি পনের সদস্য নিয়ে
গঠিত একটি কাউন্সিলের সাহায্যে ভারত শাসন করবেন। ভারত সরকারের নির্বাহী প্রধান গভর্নর জেনারেল এখন থেকে
রাজ প্রতিনিধি হিসেবে ভাইসরয় উপাধি লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, তদানিন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন।
রাণি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র
ভারতীয়দের মনে ইংরেজ সরকারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর মহারাণি ভিক্টোরিয়ার
এক রাজকীয় ঘোষণা প্রচারিত হয়। রাণির ঘোষণায় দেশীয় রাজাদের আশ্বাস দেয়া হয় যে, বৃটিশ সরকার আর কোনো
ভারতীয় রাজ্য গ্রাস করবে না। পূর্বেকার রাজ্য বিস্তার নীতি সরকার বর্জন করবে। দেশীয় রাজণ্যবর্গের মর্যাদা, অধিকার
এবং প্রচলিত রীতিনীতি রক্ষা করা হবে। দত্তকপুত্র গ্রহণের রীতি প্রচলিত থাকবে এবং স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত হবে।
বৃটিশ সরকার দেশীয় রাজ্যগুলোর অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা রক্ষার জন্য দায়ী থাকবেন।
মহারাণির ঘোষণাপত্রে এ কথাও বলা হলো যে, একমাত্র বৃটিশ নাগরিক ও প্রজাদের হত্যাকাÐের সংগে সরাসরি জড়িত
ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলকে বিদ্রোহে অংশ গ্রহণের দায় থেকে মুক্তি দেয়া হবে। যোগ্যতা অনুসারে জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে ভারতীয়দেরকে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ করা হবে। বৃটিশ সরকার ভারতবাসীর সামাজিক প্রথা ও ধর্মে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবেন। শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন
ভারত শাসনের জন্য আরও কিছু শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন আনা হয়। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ মাদ্রাজ ও বোম্বে কাউন্সিলের
আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রহিত করে তা কলকাতা কাউন্সিলের উপর অর্পণ করে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরে এই কেন্দ্রীয়করণ
নীতি পরিত্যক্ত হয়। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল এ্যাক্টের মাধ্যমে বোম্বাই ও মাদ্রাজ কাউন্সিলকে আইন প্রণয়নের অধিকার
প্রত্যর্পণ করা হয়। নতুন কোনো প্রদেশ গঠিত হলে ঐ প্রদেশের জন্য আইন সভা এবং সেখানে ভারতীয় সদস্য
মনোনয়নের বিধানও গৃহীত হয়।
সেনাবাহিনী ও অর্থনীতির উপর প্রভাব
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ভারতের সেনাবাহিনী ও অর্থনীতির উপর। হাজার হাজার বিদ্রোহী
সিপাহীদের হত্যা করে ও প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বৃটিশ সরকার বিদ্রোহের চরম প্রতিশোধ নেয়। ভবিষ্যতে
সৈন্যবাহিনীতে যেন আর কোনো বিদ্রোহ ঘটতে না পারে সে জন্য কতিপয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির
সেনাবাহিনী অবলুপ্ত করে তা পুনর্গঠন করা হয়। গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয় এবং উচ্চপদে
তাদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়। অযোধ্যা ও বেনারস থেকে সৈনিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করে এর পরিবর্তে বিপ্লবকালে
অনুগত অঞ্চল পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও নেপাল থেকে সামরিক জাতি বলে চিহ্নিত শিখ, পাঠান ও গুর্খাদের সেনাবাহিনীতে
নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া শুরু হয়। সেনাবাহিনীতে ইউরোপীয় সৈন্যের সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং দেশীয় সৈন্য
সংখ্যা যাতে তাদের দ্বিগুণের বেশি না হয় সে দিকেও সরকার মনোযোগী হন। তাছাড়া সেনাবাহিনীর মধ্যে জাতিগত ও
সম্প্রদায়গত বিভেদ বজায় রাখার কৌশল অবলম্বন করা হয়। এ সবের ফল হিসেবে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে নতুন
নতুন করের বোঝা এদেশবাসীর উপর চাপানো হয়। ঔপনিবেশিক নীতির প্রয়োগ হিসেবে ভারতবর্ষে বৃটিশ পণ্যের অবাধ
বাজার তৈরি হওয়ায় এ দেশের কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
মোগল সম্রাটের আইনানুগ অধিকার বিলুপ্ত
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পরে মোগল সম্রাটের আইনানুগ অধিকারের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে। বিদ্রোহী সিপাহীরা যাঁকে নেতা
বলে ঘোষণা করেছিল, সেই দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর বন্দি হয়ে রেঙ্গুনে নির্বাসিত হলেন এবং তাঁর পুত্র ও পৌত্রদের
নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়।
পরোক্ষ প্রভাব
বিপ্লবের একটা পরোক্ষ প্রভাব ছিল শাসক-শাসিতের সম্পর্কের উপর। বিদ্রোহের সময় উভয় পক্ষ চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয়
দেয়। ফলে উভয়ের মধ্যে অবিশ্বাস ও দূরত্ব বাড়ে। সহযোগিতার পরিবর্তে বৃটিশের বিরুদ্ধে ক্রমশ ভারতবাসীর বিরোধিতা
শুরু হয়। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাকুরীসহ দেশ শাসনে অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হতে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধ।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পরে ভারতে এক বছরের (১৭৫৭-১৮৫৭) কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। উপমহাদেশের
শাসনভার বৃটিশ রাজ ও পার্লামেন্টের হাতে অর্পিত হয়। বৃটিশ কেবিনেটের একজন সদস্য ভারত সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
করেন। সিদ্ধান্ত হয় শাসনকার্যে তাঁকে সাহায্য করবে ১৫ সদস্যের একটি কাউন্সিল। বৃটিশ সরকার সাম্রাজ্য বিস্তার
নীতির অবসান ঘোষণা করে। দেশীয় রাজ্যের নৃপতিগণের অধিকার ক্ষুণœ না করে ভারতীয়দের প্রতি ন্যায় বিচারের পূর্ণ
আশ্বাস প্রদান করা হয়। বিদ্রোহের ঝুঁকি এড়াবার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করে ইউরোপীয় সৈন্যের সংখ্যা
বাড়ান হয়। ভারতে মোগল সম্রাটের আইনানুগ কর্তৃত্বের পরিপূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটেÑ
ক) ১৮৫৭ খ্রি. খ) ১৮৫৭ খ্রি. গ) ১৮৫৯ খ্রি. ঘ) ১৮৬০ খ্রি.
২। ভারতবর্ষের প্রথম ভাইসরয় কে?
ক) লর্ড কার্জন খ) লর্ড ক্যানিং গ) লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘ) লর্ড আমহাস্ট
৩। ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানির উপর অর্পিত হয়
ক) ১৮৫৭ খ্রি. খ) ১৮৫৮ খ্রি. গ) ১৮৫৯ খ্রি. ঘ) ১৮৬০ খ্রি.
৪। মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজকীয় ঘোষণা প্রচারিত হয়Ñ
ক) ১৮৫৭ খ্রি. খ) ১৮৫৮ খ্রি. গ) ১৮৫৯ খ্রি. ঘ) ১৮৬০ খ্রি.
৫। ভারত সচিবকে সাহায্য করার জন্য কত সদস্যের কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়?
ক) ১২ খ) ১৪ গ) ১৩ ঘ) ১৫
সৃজনশীল প্রশ্ন
প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে সেনাবাহিনী ও অর্থনীতির উপর। হাজার হাজার বিদ্রোহী সৈন্যদের
হত্যা করে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিদ্রোহের প্রতিশোধ নেয়া হয়। ভবিষ্যতের বিদ্রোহ দমনের জন্য ভারতীয়দের গোলন্দাজ
বাহিনীতে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতীয় সৈন্য হ্রাস করে বিদেশি সৈন্য দ্বিগুণ করা হয়। ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নতুন
নতুন করের বোঝা এ দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বিদেশি পণ্যের অবাধ বাজার তৈরি হওয়ায় দেশের কৃষি শিল্প ও
ব্যবসায় অপুরণীয় ক্ষতি হয়।
ক. কত খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়? ১
খ. ভারত বর্ষের শাসনভার মহারানীর হাতে অর্পণ করা হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকের সাথে পাঠ্য পুস্তকের যে বিদ্রোহের সাদৃশ্য আছে তার প্রভাব আলোচনা করুন। ৩
ঘ. ‘সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল ছিল সুদুরপ্রসারী’Ñ বিশ্লেষণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]