তিতুমীরের আন্দোলন

পূর্ব বাংলায় (আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ) যখন ফরায়েজি আন্দোলন গড়ে উঠে, প্রায় একই সময়ে পশ্চিম বাংলায়ও আরেকটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। তিতুমীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘তরীকায়ে মোহাম্মদীয়া’
আন্দোলন ছিল উত্তর ভারতের সৈয়দ আহমদ শহীদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। এ আন্দোলনেরও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল
প্রচলিত কুসংস্কার এবং অনৈসলামিক রীতিনীতি দূর করে ইসলামের আদর্শে বাংলার মুসলিম সমাজকে নিয়ন্ত্রিত করা। কিন্তু
কৃষক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার কারণে জমিদারদের সাথে সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত এটি সরকার বিরোধী
আন্দোলনের রূপ নেয়।
মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জš§ গ্রহণ করেন। বাল্যকালে
তিনি গ্রামের এক মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন এবং সে গ্রামের ব্যায়ামাগারে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে একজন কুস্তিগীর
হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। কিছুদিন তিনি নদীয়ার এক জমিদারের লাঠিয়ালের চাকরি করেন। পরে মক্কা শরীফে হজ্জ
করতে যান। সেখানে তিনি বিখ্যাত আলেম ও বিদ্রোহী নেতা সৈয়দ আহমদ শহীদের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮২৭
সালে দেশে ফিরে তিতুমীর ধর্ম সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
ঐ যুগে বাংলার মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। তিতুমীর মুসলমানদেরকে
পীরের কাছে নত হওয়া, মাজার তৈরি করা, মৃতের উদ্দেশ্যে কিছু নিবেদন করা, মহররম অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ইত্যাদি বন্ধ
করার জন্য নির্দেশ দেন। হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বসবাস করার ফলে মুসলমানদের সংস্কৃতি ও সমাজ
জীবনে যে ভিন্ন প্রভাবের অনুপ্রবেশ ঘটে, সে সমস্ত দূর করে ইসলাম ধর্মের আদি বিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি
প্রচেষ্টা চালান। অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকশ মুসলমান তিতুমীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। তারা দাঁড়ি রাখত এবং বিশেষ
পোশাক পরত। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে এমন গোঁড়ামী সৃষ্টি হয় যে, অন্য মুসলমানদের সঙ্গেও তাদের বিরোধ বাঁধে। তবে
এর চেয়ে বেশি তীব্র হয়েছিল হিন্দু জমিদারদের প্রতিক্রিয়া।
চব্বিশ পরগনা এবং নদীয়া জেলার বহু কৃষক ও তাঁতী তিতুমীরের আন্দোলনে সাড়া দেয়। মুসলমান প্রজাদের সংঘবদ্ধ
হতে দেখে স্থানীয় হিন্দু জমিদারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা তিতুমীরের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পথ বন্ধ করার
উপায় খুঁজতে থাকে এবং প্রজাদের উপর অযথা উৎপীড়ন শুরু করে। তারাগুনিয়ার জমিদার রাম নারায়ণ, পূঁড়ার জমিদার
কৃষ্ণদেব রায় এবং আরো অনেকে তাদের জমিদারিতে মুসলমান রায়তদের প্রত্যেকের দাঁড়ি রাখার উপর আড়াই টাকা হারে
কর ধার্য করেন। সরফরাজপুরের প্রজাগণ এই অন্যায় কর প্রদানে অস্বীকার করলে তাদের উপর নেমে আসে অমানবিক
অত্যাচার ও নির্যাতন। তিতুমীর এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার চেয়ে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে
অত্যাচারের প্রতিকার না হওয়ায় অবশেষে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ বেছে নেন।
১৮৩১ সালের অক্টোবর মাসে তিতুমীর ও তাঁর সমর্থকরা তাদের প্রধান ঘাঁটি নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে
একটি মজবুত বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করা হয়। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে উঠে একটি সুদক্ষ লাঠিয়াল ও প্রতিরোধ
বাহিনী। এবার তিতুমীরের অনুসারীরা জমিদারদের অন্যায়ের প্রতিকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। লাউঘাটায় এক সংঘর্ষে
জমিদার দেবনাথ রায় নিহত হন। পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো গ্রামের উপর তিতুমীরের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জমিদারদের প্ররোচনায় মুলাহাটির নীলকুঠির পক্ষ থেকে তিতুমীরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেয়ায় তাঁর বাহিনী
নীলকুঠি আক্রমণ করে তা লুন্ঠন করে কুঠির তত্ত¡াবধায়ককে বন্দি করে নিয়ে যায়। ভীত সন্ত্রস্ত জমিদার ও নীলকররা ইংরেজ
সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন পাঠায়।
বৃটিশ সরকার শীঘ্রই তিতুমীরের বিরুদ্ধে বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তারা
শোচনীয় পরাজয়বরণ করে এবং তাদের ১৫ জন নিহত ও বহু আহত হয়। আলেকজান্ডারকে সহায়তা দানের অভিযোগে
তিতুমীরের সমর্থকরা কয়েকটি নীলকুঠি লুণ্ঠন করে। কৃষ্ণনগরের ম্যাজিস্ট্রেট ৩০০ সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে তাদের
বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু এবারও ইংরেজ সৈন্যরা পরাজিত ও বিতাড়িত হয়। পরিশেষে ১৮৩১ সালের নভেম্বর মাসে
মেজর স্কটের অধীনে এক বিরাট ইংরেজ বাহিনী নারিকেলবাড়িয়া আক্রমণ করে। তিতুমীরের সমর্থকরা সাহসের সাথে
তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। কিন্তু ইংরেজদের কামানের গোলার আঘাতে তিতুমীরের বাঁশের কেলা সহজেই ধ্বংস হয়। যুদ্ধে
তিতুমীর ও তাঁর বহু অনুগামী শহীদ হন। সেনাপতি গোলাম মাসুমসহ প্রায় আড়াইশ জন বন্দি হন। বৃটিশ সরকার
গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেয় এবং অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদÐ প্রদান করে। এভাবে তিতুমীরের ধর্ম সংস্কার
আন্দোলন যা পরিণতিতে জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার এবং ইংরেজ শাসন বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ নিয়েছিল তার
পরিসমাপ্তি ঘটে।
তিতুমীরের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মুখ্যত ধর্ম সংস্কার করা। যেসব অনৈসলামিক রীতিনীতি ও কুসংস্কার মুসলিম
সমাজে অনুপ্রবেশ করে সেসব বর্জন করার জন্যই তিনি আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে জমিদার ও
নীলকরদের স্বার্থের দ্ব›েদ্বর ফলে এ আন্দোলন কৃষক আন্দোলনের রূপ নেয় এবং ইংরেজদের সাথেও বিরোধ সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। তিতুমীর জন্মগ্রহণ করেন
ক) নদিয়ায় খ) চব্বিশ পরগনায় গ) বারাসাতে ঘ) দিল্লিতে
২। তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন
ক) উলুবেড়িয়ায় খ) চাঁদপুরে গ) নারকেল বাড়িয়ায় ঘ) সরফরাজপুরে
৩। তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন
ক) ১৮২৮ খ্রি. খ) ১৮২৯ খ্রি. গ) ১৮৩০ খ্রি. ঘ) ১৮৩১ খ্রি.
৪। তিতুমীরের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলÑ
ক) ধর্ম সংস্কার খ) রাজনৈতিক খ্যাতি লাভ গ) জনকল্যাণ ঘ) ইংরেজ শাসন উৎত্থাত
৫। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয়?
ক) ১৮৩০ খ্রি. খ) ১৮৩১ খ্রি. গ) ১৮৩২ খ্রি. ঘ) ১৮৩৩ খ্রি.

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]