ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস

ঔপনিবেশিক ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা একটা
যুগান্তকারী ঘটনা। যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ সে সময়টা ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদ
বিকাশের ঊষালগ্ন। বৃটিশ নীতি ও শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত ভারতবাসীর মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠে।
ফলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে ও পরে কয়েকটি ছোট ছোট রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে। এ সবের উদ্যোগ নিয়েছিলেন
প্রায় সব ক্ষেত্রেই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে
প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বৃটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’। ভারতীয় জনগণের নায্য অধিকার আদায়ের জন্য জনমত গঠন ছিল এই সংগঠনের
লক্ষ্য। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বৃটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন’। কিন্তু এসব সমিতি শিক্ষিত অভিজাত ও
জমিদারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকায় মধ্যবিত্ত বা সাধারণ জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। বৃটিশ ইন্ডিয়ান
এসোসিয়েশনের অনুকরণে বোম্বে ও মাদ্রাজে অনুরূপ সংগঠন গড়ে উঠে। শাসন সংস্কারের মাধ্যমে দেশ শাসনে
ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি ও তাদের নায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান জনমত গঠনের চেষ্টা করে।
বাংলার নেতা সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতায় ‘ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন’ বা ভারত সভা নামে আরেকটি
সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষিত মধ্যশ্রেণির মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব বজায় রাখা এবং জাতীয়
ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কাজ করেন। উল্লেখ্য, এ সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত কলকাতায় হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি
চাকুরীসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করে।
ভারত উপমহাদেশে এরূপ পরিস্থিতিতে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন ভাইসরয় হয়ে আসেন। তাঁর সময়কালের বিভিন্ন
প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের দরুন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার
বয়সসীমা একুশ থেকে উনিশে আনা হলে সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে আগ্রা, দিল্লী, আলীগড়, লাহোর, কানপুর, বেনারস
ও অমৃতসরসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রতিবাদ সভা হয়। এ বিক্ষোভের পরপরই শুরু হয় ১৮৭৮
খ্রিস্টাব্দের ভার্নাকুলার প্রেস এ্যাক্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এ আইনের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার দেশীয় সংবাদপত্রের
কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছিলেন। সরকারের বর্ণ বৈষম্যমূলক অস্ত্র আইন, সাম্রাজ্যবাদী আফগান যুদ্ধ, ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের
জাঁকজমকপূর্ণ দিল্লী দরবার ইত্যাদিও অসন্তোষের মূলে ছিল।
এসবের রেশ মুছে যেতে না যেতেই দেখা দেয় লর্ড রিপনের সময়কার ইলবার্ট বিল নিয়ে বিতর্ক। এ বিতর্কের ফলে ইংরেজ
ও ভারতীয়দের মধ্যে এক নিদারুন বর্ণ বৈষম্যের সূত্রপাত হয়। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের এক আইন বলে ভারতে ইংরেজ কর্মকর্তা
ও কর্মচারীদের বিচারকার্যে শুধু ইউরোপীয় ম্যাজিস্ট্রেটগণ ক্ষমতা পাবেন বলে স্থির হয়। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভাইসরয়ের
কাউন্সিলের আইন সদস্য সি.পি. ইলবার্ট প্রস্তাব করেন যে, ভারতের প্রেসিডেন্সি শহরগুলোর ন্যায় অন্যান্য স্থানেও ভারতীয়
সেসন জজরা ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন। এটা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত। এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে
ভারতীয় ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা সারা ভারতবর্ষে চরম বিক্ষোভ শুরু করে। সরকার শেষ পর্যন্ত কিছুটা আপোষ
করেন এবং স্থির হয় যে ইউরোপীয় আসামীদের বিচারের ক্ষেত্রে জুরী মÐলীর উপস্থিতি লাগবে এবং তাদের অর্ধেক হতে
হবে সাদা চামড়ার লোক।
কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভ‚মি
ইউরোপীয়ানদের বিক্ষোভ ভারতীয়দের মর্যাদা ও জাতীয় চেতনায় আঘাত করে। শিক্ষিত হিন্দুরা সুরেন্দ্রনাথ ও আনন্দ
মোহন বসুর নেতৃত্বে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতায় এলবার্ট হলে এক সম্মেলনে মিলিত হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে
আগত প্রতিনিধিরা একটি সর্বভারতীয় সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ দিকে ভারতীয়দের মধ্যে বিক্ষোভ এবং
অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন শিক্ষিত মধ্যবিত্তের আন্দোলনের চাপে বৃটিশ সরকার কিছুটা ভীত হয়। ভারতীয়দের দাবি
ও আন্দোলনকে নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করার এবং তাদের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য সরকার
মনোযোগী হয়। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের জনৈক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার এলান অক্টেভিয়ান হিউম
ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের সহযোগিতায় ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বে শহরে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’
(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) প্রতিষ্ঠা করেন। দুজন মুসলমানসহ সত্তর জন প্রতিনিধি কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে যোগ দেয়
এবং এর সভাপতি নির্বাচিত হন বাঙালি ব্যারিস্টার উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জী। বক্তৃতায় তিনি কংগ্রেসের চারটি উদ্দেশ্যের কথা
ব্যক্ত করেন:
১. ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যাঁরা দেশ সেবায় ব্রতী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব স্থাপন করা;
২. জাতি ধর্ম আঞ্চলিকতার সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম করা;
৩. শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যেমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথে বের করা এবং
৪. রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য পরবর্তী বছরের কর্মসূচী নির্ধারণ করা।
উল্লেখ্য যে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হচ্ছে বৃটিশ শাসনাধীনে ঐক্যবদ্ধ ভারতের প্রথম জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন। প্রথম দিকে
অল্প কয়েকজন মুসলমান এতে যোগদান করেন। কিন্তু এর কর্মসূচি মুসলমানদের স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় পরবর্তী সময়ে
স্যার সৈয়দ আহমদ খান এবং কিছু মুসলিম নেতারা মুসলমান সম্প্রদায়কে কংগ্রেসের সাথে জড়িত হতে নিষেধ করেন।
প্রথম দিকে কংগ্রেস নেতারা প্রায় সবাই ছিলেন মধ্যপন্থী। ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে
নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিকারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান হতো। কিন্তু সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ও
সহযোগিতার এ নীতি অচিরেই পরিবর্তিত হতে থাকে। কংগ্রেস পরবর্তী সময়ে ভারতের জন্য স্বরাজ বা স্বাধীনতার
আন্দোলন করে এবং সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বিরোধী দলে পরিণত হয়।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হচ্ছে ঔপনিবেশিক ভারতের প্রথম জাতীয় ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন। এ প্রতিষ্ঠানের জš§
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম দিকে বৃটিশ সরকারের প্রতি অনুগত থাকা এবং আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে দাবি আদায় এর
লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভ‚মিকা অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠে এবং বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামে
সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ব্রিটিশ ভারতের সর্বপ্রথম বিধিবদ্ধ রাজনৈতিক দল কোনটি?
ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস খ) নিখিল ভারত মুসলিমলীগ
গ) ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ঘ) ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া সোসাইটি
২। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কী ছিল?
র. দেশ সেবকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব স্থাপন
রর. ধর্মীয় সংকীর্ণতা পরিহার করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা
ররর. আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৩। ভারতীয় কংগ্রেসের ব্যাপারে বিরোধী ব্যক্তিত্ব কে?
ক) সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী খ) উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জী
গ) স্যার সৈয়দ আহমদ খান ঘ) এলান অক্টাভিয়ান হিউম
সৃজনশীল প্রশ্ন
বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতি ক্রমশই অধিকার সচেতন হয়ে উঠে। এহেন অধিকার সচেতনতা যাতে বিপথগামী না
হয় এজন্য শাসকগোষ্ঠী উক্ত জাতির শিক্ষিত সমাজকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করে। এ সময় শাসকগোষ্ঠীর
সহযোগিতায় সর্বপ্রথম একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিছু কাল এ দলটি স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হলেও
একটি সম্প্রদায় কোনো অধিকার না পেলে তারাও একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে। ইতিহাসে এ নতুন দলটির
প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ব্যাপক।
ক. বর্ণিত প্রথম রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠার পটভূমি আপনার পাঠ্য বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করুন। ১
খ. নতুন রাজনৈতিক দলটি প্রথমদিকে কেন সরকারের অনুগত ছিল এবং কেন পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধী হয়ে উঠে তা বিশ্লেষণ করুন। ২

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]