সিমলা ডেপুটেশন

ভারতীয় মুসলমানদের কাছে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের সিমলা ডেপুটেশনের গুরুত্ব অত্যধিক। ঐ বছর একটি মুসলিম
প্রতিনিধিদল বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সাথে দেখা করে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার
দাবি জানান। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লি-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার মুসলমানদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের
সে দাবি পূরণ করে।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জনের পদত্যাগের পর লর্ড মিন্টো তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তাঁর ক্ষমতা
গ্রহণের পরপরই বৃটেনে একটি উদারনৈতিক সরকারের আবির্ভাব ঘটে এবং জন মর্লি ভারত সচিব নিযুক্ত হন। জাতীয়
কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতে তখন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন চলছিল। বঙ্গভঙ্গ বাতিলের কংগ্রেসী দাবি সরাসরি
মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না বিধায় বৃটিশ সরকার কিছুটা সমঝোতামূলক মনোভাব নিয়ে কংগ্রেসকে অন্যভাবে খুশী করার চেষ্টা
করে এবং আইন পরিষদের গঠনকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক করার কথা বিবেচনা করে। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে এ
ব্যাপারে আরও পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের কমন্স সভায় বাজেট বক্তৃতাকালে মর্লে ঘোষণা করেন যে, ভারতের
আইন পরিষদের গঠনকে আরেকটু বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য ভাইসরয় শীঘ্রই একটি ছোট কমিটি নিয়োগ করবেন।
উক্ত কমিটি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা প্রদান করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মর্লির শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের ঘোষণা প্রকাশিত হবার সাথে সাথে বিভিন্ন মুসলিম পত্র-পত্রিকা ও নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সাথে
মত প্রকাশ করেন যে, প্রস্তাবিত সংস্কারে আইন-পরিষদের গঠন-প্রকৃতি সম্পর্কে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি
সরকারের সামনে তুলে ধরা উচিত। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের অধীনে বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানে
জনসংখ্যানুপাতে মুসলমানদের যতগুলো আসন প্রাপ্য ছিল, নিজেদের প্রার্থী দেয়া সত্তে¡ও মুসলমানরা তার অর্ধেক আসনও
লাভ করতে পারে নি। তারা অনুভব করে যে, প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে নিলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
আলীগড় কলেজের সেক্রেটারী নবাব মহসীন-উল-মুলকের অনুপ্রেরণা ও উদ্যোগে মুসলমানরা তখন একটি প্রতিনিধিদলের
মাধ্যমে তাঁদের মতামত বৃটিশ সরকারের কাছে পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আলীগড় কলেজের অধ্যক্ষ আর্চবোল্ড বড়লাটের
সাথে প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। মহামান্য তৃতীয় আগা খান দলের নেতা নির্বাচিত হন।
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ৩৫ জনের মুসলিম প্রতিনিধিদল সিমলায় ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সাথে দেখা করতে যান।
পূর্ববঙ্গের মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে একমাত্র নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিমলা ডেপুটেশনে যোগদান করেন।
এটাই ঐতিহাসিক সিমলা ডেপুটেশন। প্রতিনিধিবর্গ একটি স্মারকলিপিতে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দাবিসমূহ ভাইসরয়ের
সামনে তুলে ধরেন। তাঁরা মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার্থে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি
করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল যে, পূর্বের কাউন্সিলসমূহে মুসলমানদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তা ছাড়া মুসলিম
প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত অনেকেই মুসলমান সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। তাঁরা বড়লাটের কাছে দাবি
করেন যে, মুসলমানদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও রাজনৈতিক ভ‚মিকার প্রতি লক্ষ রেখে তাদেরকে জনসংখ্যার শক্তির চেয়েও
বেশি প্রতিনিধি পাঠাবার সুযোগ দিতে হবে। স্থানীয় সরকার এবং প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে মুসলমান প্রতিনিধিগণ
তাদের পৃথক মুসলিম নির্বাচকমÐলী দ্বারা নির্বাচিত হবেন। তাছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিক সংখ্যক মুসলমানদের
নিয়োগ দান এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনে তাদের প্রতিনিধি রাখার জন্য ডেপুটেশনের সদস্যরা দাবি করেন।
বড়লাট মিন্টো সহানুভ‚তির সঙ্গে মুসলিম প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শোনেন। তিনি তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, ভারতবর্ষের
শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যতদিন তাঁর কিছু করার থাকবে ততদিন তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার
বিষয়ে বিবেচনা করবেন। তিনি আরও বলেন যে, ভারতীয় জনসাধারণের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের পার্থক্যের
প্রতি লক্ষ না রেখে ভোটাধিকার ভিত্তিক যেকোন নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হলে তা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হবে।
উল্লেখ্য যে, মুসলমান প্রতিনিধিদেরকে দেয়া বড়লাটের প্রতিশ্রæতি কোনো মিথ্যা আশ্বাস ছিল না। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-
মিন্টো সংস্কারে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং জনসংখ্যার তুলনায় তারা অধিক সংখ্যক
প্রতিনিধি পাঠাবার সুযোগ পায়।
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের সিমলা ডেপুটেশন ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন পরিষদের সংস্কারের উদ্যোগের মুখে মুসলমানদের একটি প্রতিনিধিদল বড়লাট লর্ড মিন্টোর সাথে সিমলায় সাক্ষাত করেন এবং
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব আরও বৃদ্ধিসহ মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচকমÐলীর মাধ্যমে নিজস্ব প্রতিনিধি
নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান। বড়লাট তাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন এবং ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লি-মিন্টো সংস্কারে তা বাস্তবায়িত হয়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মর্লি-মিন্টো সংস্কারের সময়কাল কোনটি
ক) ১৯০৬ খ) ১৯০৭ গ) ১৯০৯ ঘ) ১৯১১
২। মর্লি-মিন্টো সংস্কার মুসলমান সম্প্রদায়Ñ
র. স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ লাভ করে
রর. চাকুরির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রাপ্ত হয়
ররর. জনসংখ্যার তুলনায় বেশি প্রতিনিধি পাঠাবার সুযোগ পায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৩। সিমলা ডেপুটেশনে মূখ্য প্রতিনিধি কে ছিলেন?
ক) তৃতীয় আগা খান খ) নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী
গ) নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঘ) মহসীন-উল-মুলক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]