শেরশাহের কৃতিত্ব

শেরশাহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি মাত্র পাঁচ বছর (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি.) বাজত্ব করেন। অথচ
এই স্বল্প সময়ের তিনি বিজেতা, শাসক, সংস্কারক হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
বিজেতা হিসেবে কৃতিত্ব: শেরশাহ একজন দক্ষ সমরনায়ক ছিলেন। তিনি সামান্য একজন জায়গীদার থেকে নিজ প্রতিভা
বলে দিল্লির স¤্রাট হয়েছিলেন। মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ বীরত্ব ও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
বাংলা, মালব, রাজপুতনা বিজয় তাঁর সামরিক সাফল্যের পরিচয় বহন করে। তিনি সম্রাট হুমায়ুনকে রণকৌশলে পরাস্ত করেছিলেন।
সরকার ও পরগণায় বিভক্তি: শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা স্বেচ্ছাচারী ছিল না। তিনি জনগণের সাহায্য ও সমর্থনের ভিত্তিতে
ভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নিয়েছিলেন। শাসনকাজের সুবিধার্থে তিনি পুরো সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে বিভক্ত
করেন। প্রতিটি সরকার কয়েকটি পরগণা নিয়ে গঠিত হতো। প্রতিটি সরকার ও পরগণায় বিভিন্ন ধরণের কর্মচারি নিয়োজিত
ছিল। তবে শেরশাহ স্বয়ং শাসন ব্যবস্থার প্রতিটি বিভাগ তত্ত¡বধায়ন করতেন।
রাজস্ব সংস্কার: রাজস্ব সংস্কার শেরশাহের অন্যতম সফলতা। তার আগে রাজস্ব নির্ধারণের জন্য কোনো ভ‚মি জরিপের
ব্যবস্থা ছিল না। প্রথমবারের মতো শেরশাহই ভ‚মি জরিপের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি জমির উর্বরা শক্তির তারতম্য
অনুসারে রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে শস্য কিংবা নগদ অর্থে রাজস্ব আদায় করা যেত। শেরশাহ প্রথম ‘পাট্টা’ ও
‘কবুলিয়ত’ প্রথা চালু করেন। সরকারের পক্ষ থেকে জমির উপর কৃষকের সত্ত¡ স্বীকার করে পাট্টা দেয়া হতো। কৃষকরা
তাদের অধিকার, দায়িত্ব ও দাবি বর্ণনা করে কবুলিয়ত নামক দলিল সম্পাদন করে দিত। শেরশাহের রাজস্ব নীতি শুধু
পরবর্তীকালে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছিল।
মুদ্রা নীতি: ভারতবর্ষের মুদ্রানীতিতে প্রথম উপযুক্ত সংস্কার সাধিত হয় শেরশাহের শাসনকালে। তিনি বিশেষ ধরনের রৌপ্য
মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি স্বর্ণ মুদ্রারও প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি ‘দাম’ নামে নতুন তাম্র মুদ্রার বহুল
প্রচলন করেন। সিকি, আধুলি, দুয়ানি প্রভৃতি শেরশাহের প্রবর্তিত মুদ্রার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। শেরশাহের মুদ্রাগুলো
উপাদানে নির্ভেজাল, ওজনে নির্ভেজাল ও গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনন্য ছিল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: শেরশাহের শাসনকালে ভারতবর্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপযুক্ত উন্নতি সাধিত হয়। এজন্য
তিনি সাম্রাজ্যের নানা স্থানে প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর নির্মিত এসব চওড়া রাস্তার মধ্যে ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’
অন্যতম। বিখ্যাত এই গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তখনকার
দিকে যাতায়াত ও পরিবহনে এই পথের গুরুত্ব ছিল অনেক। তিনি এপথে গমনকারী পথচারীদের সুবিধার জন্য রাস্তার
উভয় পার্শ্বে বৃক্ষরোপণ ও সরাইখানা স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ডাক ব্যবস্থা: শেরশাহ প্রথম বারের মতো ভারতবর্ষে ডাক ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি
ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেছিলেন। এর ফলে সহজেই এক স্থান হতে অন্যস্থানে সংবাদ আদান প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত
হয়েছে সবাই। বিশেষ করে সামরিক নানা সংবাদের পাশাপাশি বেসামরিক তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও শেরশাহ প্রবর্তিত
এই ডাক ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।
নতুন সামরিক নিয়ম: শেরশাহ সামরিক বাহিনীকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। এক্ষেত্রে কাজের
সুবিধার জন্য তিনি সেনাবহিনীর সদস্যদের নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা করেন। জায়গীরের পরিবর্তে নগদ টাকায় সৈন্যদের
বেতন দেয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে নিয়মিত বেতন পাওয়ায় সৈন্যরা তার প্রতি অনুগত ছিল। পাশাপাশি
ঘোড়া চিহ্নিত করার প্রথা ও সৈন্যদের বিবরণমূলক তালিকা রাখারও ব্যবস্থা ছিল তখন। একজন স¤্রাট হয়েও শেরশাহ
স্বয়ং সেনাবাহিনী তদারকি করতেন। ফলে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা তাকে শক্তিশালী প্রশাসন নিশ্চিতকরণে সহায়তা করেছিল।
তাঁর অধীনে ১ লক্ষ অশ্বারোহী, ৫০ হাজার পদাতিক বাহিনী ও পাঁচ হাজার রণহস্তী ছিল।
সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা: একজন ন্যায়বান সম্রাট হিসেবে শেরশাহের আমলে ধনী, দরিদ্র, উঁচু-নিচুর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা
হয় নি। প্রায় প্রত্যেক পরগণাতে কাজী ও মীর আদিল ফৌজদারী মোকদ্দমা এবং মুনসীফ-ই-মুনসিফান দেওয়ানি মামলা
পরিচালনা করতেন। কাজী-উল-কুজ্জাত বা প্রধান কাজী
ফৌজদারী বিচার তদারক করতেন। সম্রাট নিজেও বড়
বড় মোকদ্দমার বিচার করতেন। তাঁর ন্যায় বিচারের
খ্যাতি তখনকার সময়ে ছিল সর্বজন স্বীকৃত। বিশেষ করে
ধর্মীয় নানা আইন কানুনে বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি।
শিল্প-সাহিত্য : একজন কৃতি শাসকের পাশাপাশি শেরশাহ
শিল্প সাহিত্যের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শিল্প,
সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর অগাধ পাÐিত্য ছিল। তিনি
কোনোভাবেই ধর্মান্ধ ছিলেন না। বরং সকল ধর্মের প্রতি
তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শেরশাহের শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে
অনেকে তাঁকে যেকোনো মোগল স¤্রাটের থেকে শ্রেষ্ঠ বলে
ঘোষণা দিয়েছেন।
বহু প্রতিভার অধিকারী শেরশাহ সামান্য একজন জায়গীরদার থেকে দিল্লির সম্রাট হয়েছিলেন। সাম্রাজ্যের উন্নতিকল্পে
এবং প্রজা সাধারণের সুবিধার্থে তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ভ‚মি রাজস্ব ক্ষেত্রে কবুলিয়ত ও
পাট্টা প্রবর্তন এক যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ সুলতানদের মধ্যে অন্যতম।
সাসারামে অবস্থিত শেরশাহের সমাধি
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। শেরশাহ মোট কত বছর রাজত্ব করেন?
ক) ৪ খ) ৫ গ) ৬ ঘ) ৭
২। শাসন কাজের সুবিধার জন্যে শেরশাহ সমগ্র সাম্রাজ্যকে কতটি সরকারে বিভক্ত করেন?
ক) ৪৫ খ) ৪৬ গ) ৪৭ ঘ) ৪৮
৩। পাট্টা ও কবুলিয়াত প্রথা চালু করেন কে?
ক) বাবর খ) হুমায়ুন গ) শেরশাহ ঘ) আকবর
৪। শেরশাহের শাসনামলে ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার করতেনÑ
ক) কাজী খ) কাজী ও মীর আদিল
গ) মুনসীফ-ই-মুনসিফান ঘ) শিকদার-ই-শিকদারান
৫। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য শেরশাহÑ
র. গ্রান্ড ট্ট্যাংক রোড নির্মাণ করেন
রর. রাস্তার উভয় পাশে ছায়াদার বৃক্ষ রোপন ও সরাইখানা নির্মাণ করেন
ররর. ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]