মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লীগের জš§ উপমহাদেশের ইতিহাসের
অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। উনিশ শতকে স্যার সৈয়দ আহমদ খানসহ বিশিষ্ট মুসলিম নেতৃবৃন্দের স্বাতন্ত্র্যবাদী
রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার ফল হিসেবে একদিকে যেমন মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হয়,
তেমনি কংগ্রেসের রাজনীতি হতে দূরে থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থেও এগিয়ে আসে। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা
এ রূপ স্বাতন্ত্র্যবাদী রাজনৈতিক ধারারই ফল।
মুসলমানদের চরম দুর্দিনে ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গনে সৈয়দ আহমদ খানের আবির্ভাব ঘটে। ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ না করে
এবং ইংরেজ বিদ্বেষ পোষণ করে এ সময় মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা এবং চাকুরি সহ সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে ছিল। স্যার
সৈয়দ ও বাংলার নেতা নবাব আবদুল লতিফ মুসলমানদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন করে তোলার জন্য
আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে আবদুল লতিফ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মোহামেডান লিটারারী সোসাইটি’ নামে একটি
প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সৈয়দ আহমদ ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে গাজীপুরে ‘বিজ্ঞান সমিতি’, ১৮৭৫ সলে আলীগড়ে ‘মোহামেডান
এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল’ এবং ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিকভাবে
মুসলমানদের সচেতন ও সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে বাংলার আরেক নেতা সৈয়দ আমির আলী প্রতিষ্ঠা করেন ‘সেন্ট্রাল
ন্যাশনাল মোহামেডান এসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর সৈয়দ আহমদ
মুসলমানদেরকে কংগ্রেসে যোগ দিতে নিষেধ করেন।
সৈয়দ আমির আলী প্রথমে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন দিয়ে কিছুদিন পর তা প্রত্যাহার করেন। তাঁর মতে কংগ্রেসের কর্মসূচীর
প্রতি সর্বাংশে সমর্থন মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সর্বনাশ ডেকে আনবে। নেতৃবৃন্দের স্বাতন্ত্র্যবাদী নীতি মুসলমানদের
মধ্যে স্বতন্ত্র চেতনার উšে§ষ ঘটায়।
উনিশ শতকের শেষের দিকে আরো কতিপয় ঘটনা মুসলমানদের মধ্যে পুনর্জাগরণের চেতনাকে শাণিত করে। বেনারসে
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দী-উর্দু বিতর্ক, হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উৎসবাদির আয়োজন, যেমন নবগোপাল মিত্রের
হিন্দু-মেলা ও শিবাজী উৎসব, উত্তর ভারত জুড়ে গো-জবাই নিবারণ সমিতি ইত্যাদি ভারতীয় মুসলমানদের ধর্মীয় ও
সম্প্রদায়গত চেতনাকে আহত করে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সরকারি চাকুরীতে মুসলমানদের দৈন্য-দশা তাদেরকে অস্তিত্ব
রক্ষায় অনুপ্রাণিত করে। যুক্ত প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলের দিকে কতিপয় বিশেষ সরকারি
কাজে উর্দুর বদলে দেবনাগরী হরফে হিন্দী ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দিলে সেখানকার মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিবাদ
স্বরূপ ১৮ আগস্ট লক্ষৌতে মুসলমান প্রতিনিধিরা একটা সভা ডাকে। আলীগড় কলেজের সেক্রেটারী মহসীন-উল-মুল্কের
নেতৃত্বে ‘উর্দু প্রতিরক্ষা সমিতি’ গঠিত হয়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে লক্ষেèৗতে অরেকটি সভায় মুসলমানদের স্বার্থ ও
অধিকার রক্ষাকল্পে একটি জাতীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পুনরায় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে উত্তর
প্রদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিলে সাহারানপুরের এক জনসভায় ভারতের
মুসলমানদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের সংখ্যগরিষ্ঠ মুসলমানরা অধিকতর সুযোগ সুবিধার আশায় নতুন
প্রদেশ গঠনের সরকারি পদক্ষেপকে সমর্থন জানায়। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় ও কংগ্রেসের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সর্বাতœক আন্দোলন
এ অঞ্চলের মুসলমান নেতৃবৃন্দকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা নিজেদের জন্য একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা এ সময়
আরো বেশি করে অনুভব করে। বিশেষ করে বঙ্গভঙ্গ পক্ষের নেতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহ এবং নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী
চৌধুরী জাতীয় কংগ্রেসের বিপরীতে একটি রাজনৈতিক দলের তাগিদ তীব্রভাবে অনুভব করেন।
পরবর্তী বছরের জুলাই মাসে বৃটিশ পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় ভারত সচিব লর্ড মর্লে ভারতের জন্য শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের
উদ্যোগের কথা ব্যক্ত করেন। বৃটিশ সরকার এ বিষয়ে কোনো চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বেই মুসলমান সম্প্রদায়ের অনুভ‚তি
ও বক্তব্য সরকারের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা মুসলিম নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেন। মহসীন-উল-মুল্কের উদ্যোগে
ভারতের বড়লাট লর্ড মিন্টোর সাথে সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ৩৫ সদস্যের মুসলিম
প্রতিনিধিদল আগা খানের নেতৃত্বে সিমলায় ভাইসরয়ের সাথে দেখা করে মত বিনিময় করেন। ইতিহাসে এটি সিমলা
ডেপুটেশন নামে খ্যাত। নওয়াব সলিমুল্লাহর অনুরোধে সমবেত নেতৃবৃন্দ ভারতীয় মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র একটি
রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য সিমলায় পরস্পর মত বিনিময় করেন। সিন্ধান্ত হয় যে, ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয়
মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্সের বার্ষিক সভায় দল গঠনের ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে ভারতীয় মুসলমান নেতাদের মধ্যে নব উদ্দীপনা ও আশা-আকাক্সক্ষা জেগে উঠে এবং শীঘ্রই তাঁরা
একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ‘অল
ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেসী’ নামে একটি দলের প্রস্তাব দেন। ১৯০৬ সালে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয় ‘মোহামেডান
এডুকেশনাল কনফারেন্সে’র বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের শেষ দিনে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর ভারতের বিভিন্ন স্থান
থেকে আগত মুসলিম প্রতিনিধিগণ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ নামে মুসলমানদের জন্য একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা
করেন। নবগঠিত দলের যুগ্ম-আহবায়ক নির্বাচিত হন নবাব মহসীন-উল-মুল্ক ও ভিকার-উল-মুল্ক। প্রাথমিকভাবে
মুসলিম লীগের উদ্দেশ্যসমূহ ছিল নিæরূপ :
ক. ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বৃটিশ সরকারের প্রতি সহযোগিতা ও আনুগত্যের মনোভাব বজায় রাখা।
খ. মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং তাদের আশা আকাক্সক্ষা সরকারের কাছে তুলে
ধরা।
গ. উপরিউক্ত লক্ষ্যের কোনো ক্ষতি না করে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে সদ্ভাব গড়ে তোলা।
মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় মুসলমানদের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা নতুন দিগন্ত তৈরি করে। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছিল
সুদূরপ্রসারী। তবে উল্লেখ্য যে, অভিজাত সম্প্রদায় তথা নাইট, নবাব ও ভ‚স্বামী জমিদার জোতদারদের প্রাধান্যের কারণে
বহুদিন পর্যন্ত গণমানুষের সাথে মুসলিম লীগের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত-বিভক্তির মাত্র
কিছুদিন পূর্বেই এটি মুসলমানদের প্রকৃত সংগঠনে পরিণত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র নেতৃত্বে ঐ সময় মুসলিম লীগ পাকিস্তান অর্জন করে।
মুসলিম লীগের আবির্ভাব উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা। ভারতের মুসলমানদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবাদী মনোভাব
থেকেই এর প্রতিষ্ঠা। উনিশ শতকের উগ্র হিন্দুবাদী কার্যকলাপ ও মুসলিম স্বার্থবিরোধী তৎপরতা মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যের
দিকে ঠেলে দেয় এবং ক্রমশ নিজেদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার তাগিদে তারা পৃথক
রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করে। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এ দলের প্রতিষ্ঠা এরই পরিণতি মাত্র। কিন্তু ব্যাপক ভিত্তিক জনসমর্থিত দল রূপে গড়ে উঠতে এর অনেক সময় লাগে এবং ১৯৪০ দশকের পূর্বে তা সম্ভব হয় নি। মুসলিম লীগই
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেছিল।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সিলমা ডেপুটেশনে অংশ নেয়া ভারতীয় প্রতিনিধি কত জন?
ক) ১৮ খ) ৩০ গ) ৩৫ ঘ) ৪০
২। মুসলিম লীগ কার স্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তার ফসল?
র. স্যার সৈয়দ আহমদ খান
রর. সৈয়দ আমীর আলী
ররর. নওয়াব আবদুল লফিত
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৩। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা কোথায় হয়েছিল?
ক) দিল্লী খ) লাহোর গ) লহ্মে ঘ) ঢাকা

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]