লর্ড কার্জনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলায় প্রচÐ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়।
প্রথম দিকে ভারত সরকার এ বিষয়ে অনমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করে ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। তদানিন্তন
ভারত সচিব মর্লে বঙ্গ বিভক্তিকে মীমাংসিত বিষয় বা ‘ঝবঃঃষবফ ঋধপঃ’ বলে ঘোষণা করেন এবং তা বাতিলের দাবিকে নাকচ
করে দেন। কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের উগ্রতা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও হত্যাকাÐ বৃটিশ সরকারকে ক্রমশ ভাবিয়ে
তোলে। সামগ্রিকভাবে ঔপনিবেশিক স্বার্থ এবং সামাজ্যের আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা
আপোসের পথ বেছে নেয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে দিল্লী দরবারে সম্রাট পঞ্চম জর্জ বঙ্গভঙ্গ রহিত করার ঘোষণা দেন।
বংলার ভৌগোলিক সীমানা আবার পুনর্বিন্যস্ত হয় এবং একই সঙ্গে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত
হয়।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে বৃটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ ভারত ভ্রমণে আসেন। এ সময় বঙ্গভঙ্গের কারণে তিনি হিন্দুদের
মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা লক্ষ করেন। কিন্তু তখন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে তিনি এগিয়ে যান নি। ঢাকার নবাব
সলিমুল্লাহ্র নেতৃত্বে পূর্ব বঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায় নবগঠিত প্রদেশের পক্ষে সমর্থন প্রদান করে। ঐ সময়ে ভারত সচিব মর্লে
ও বড়লাট মিন্টো তাদের আশ্বাস দেন যে, বঙ্গভঙ্গ একটি বাস্তবতা এবং এর কোনো পরিবর্তন হবে না। অপর দিকে বৃটিশ
প্রধানমন্ত্রী যুক্তিযুক্ত কারণ থাকলে বঙ্গ বিভাগের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা করবেন বলায় মুসলমান নেতারা আশংকা প্রকাশ
করেন। তাঁরা স্মারকলিপির মাধ্যমে সরকারকে তাদের আশংকার কথা জানান। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর নেতাগণ
বঙ্গভঙ্গের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তাঁরা মত দেন যে, বঙ্গভঙ্গ রহিত করা হলে মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি
হবে।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে লর্ড মিন্টোর স্থলে লর্ড হার্ডিঞ্জ নতুন ভাইসরয় নিয়োজিত হন। তাঁর আসার পর পরই বঙ্গভঙ্গ
রদের বিষয়ে গোপন যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গভঙ্গের কারণে ব্যাপক অসন্তোষ ও সন্ত্রাসমূলক রাজনৈতিক
কর্মকাÐের তাৎপর্য বিবেচনা করে তখন সম্রাট পঞ্চম জর্জ অনুভব করলেন যে, বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থায় পরিবর্তন করা দরকার। ঐ
বছরের ডিসেম্বরে তিনি তদানিন্তন ভারত সচিব লর্ড ক্রু এবং বড়লাট হার্ডিঞ্জের সঙ্গে পত্রালাপ করেন। সম্রাট বড়লাটকে
জানান যে, বঙ্গভঙ্গের বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হলে বাংলায় বিরাজমান অসন্তোষ ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসবাদী
কার্যকলাপের অবসান ঘটবে। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের বোঝা হ্রাসে উক্ত পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে
বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রথম দিকে ভারত সচিব এবং ভাইসরয়ের মনে হয়েছিল যে, কার্জনের ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে কোনো মতেই পূর্ববর্তী
অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। পরে বড়লাটের শাসন পরিষদের অন্যতম সদস্য জেনকিন্স নতুনভাবে বাংলা
পুনর্গঠনের ও ভারতের রাজধানী স্থানান্তরের এক পরিকল্পনা প্রদান করেন। হার্ডিঞ্জের নিকট উক্ত পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য বলে
বিবেচিত হয়। শাসন পরিষদের অনুমোদনের পর সেটি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট ভারত সচিবের নিকট প্রেরিত হয়।
উল্লিখিত পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি ও বর্ধমান-এ পাঁচটি বাংলা ভাষাভাষী বিভাগ নিয়ে একজন
গভর্নরের অধীনে বাংলা প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। বিহার, উড়িষ্যা ও ছোট নাগপুর নিয়ে আরেকটি প্রদেশ গঠিত হবে
এবং একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর এই প্রদেশের দায়িত্বে থাকবেন। শ্রীহট্টসহ আসামকে পূর্বের ন্যায় কমিশনারের অধীনে
ন্যস্ত করা হয়। নভেম্বর মাসে ভারত সচিব লর্ড ক্রু উক্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর সম্রাট
পঞ্চম জর্জ ও রানি মেরীর ভারত আগমন উপলক্ষে দিল্লীতে এক ঐতিহাসিক দরবারের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজা
জর্জ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ রদের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। ফলে কার্জনের বঙ্গ বিভক্তির ব্যবস্থা বাতিল হয় এবং
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। নতুন ব্যবস্থাটি ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদ করায় বর্ণ হিন্দু ও কংগ্রেস নেতারা উল্লসিত হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। স্বাভাবিক কারণে
মুসলমানরা এতে ভীষণভাবে আহত হয় এবং তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। এটিকে তারা সত্যিকার অর্থে ব্রিটিশ
সরকারের একটি বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যায়িত করে। সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রæতি ভঙ্গের দরুন অনেক মুসলমানই
ইংরেজদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা রাজার অনুগত থাকার নীতি ত্যাগ করে।
রাজনৈতিকভাবে এর প্রভাব পড়ে মুসলিম লীগের নীতি ও কর্মধারায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে লক্ষেèৗতে মুসলিম লীগের বার্ষিক
অধিবেশনে ভারতের জন্য স্বরাজের দাবি দলের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতার
ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ভারতের জন্য স্বায়ত্তশাসন আদায়ের সংগ্রাম মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ঘোষিত
হয়।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে বড়লাট হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এলে নবাব সলিমুল্লাহ্র নেতৃত্বে মুসলমানদের একটি প্রতিনিধিদল তাঁর
সাথে দেখা করেন। তাঁরা মুসলমানদের গভীর হতাশা এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে বড়লাটকে অবহিত করেন। তিনি
এ অঞ্চলের শিক্ষার উন্নতির জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দেন। অবশেষে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বড়লাটের সে আশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে।
বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বর্ণহিন্দুদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন সত্তে¡ও প্রথমদিকে বৃটিশ সরকার কোনো পরিবর্তন না
করার ব্যাপারে অটল ছিল। কিন্তু শেষে ইংরেজগণ চাপের মুখে নতি স্বীকার করে। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী দরবারে সম্রাট
পঞ্চম জর্জ এক ঘোষণায় বঙ্গভঙ্গ রদ করেন। এতে কংগ্রেস ও হিন্দুরা খুশি হলেও মুসলমানদের মনে আঘাত লাগে।
তারা ইংরেজদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। বঙ্গভঙ্গ রদ কার্যকর করা হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
ক) ১৯০৯ খ) ১৯১০
গ) ১৯১১ ঘ) ১৯১২
২। কে বঙ্গভঙ্গ রদ করার ঘোষণা দেন?
ক) রাজা পঞ্চম জর্জ খ) রানি মেরি
গ) লর্ড মিন্টো ঘ) লর্ড হার্ডিঞ্জ
৩। বঙ্গ বিভক্তিকে মীমাংসিত বিষয় বা ‘ঝবঃঃষবফ ঋধপঃ’ বলে অভিহিত করেন কে?
ক) ব্রিটেনের রাজা খ) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
গ) ভারতের ভাইসরয় ঘ) ভারত সচিব
৪। বঙ্গভঙ্গ রদে মুসলমানদের ক্ষতি কিছুটা লাঘব কয়েছিল কীভাবে?
ক) চাকুরিতে মুসলমানদের অধিক সুবিধা দিয়ে
খ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে
গ) মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার বাড়িয়ে
ঘ) ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তর করে
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র