১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইন

স্বাধীন বাংলা ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতীয়দের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে এই হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়। এটিই ইতিহাসে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ নামে পরিচিত।
ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রেক্ষাপট
মন্ত্রীমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেমে আসে। এ সময়ের বিশৃঙ্খল অবস্থার ভিতর
থেকেই জš§ নিয়েছিল ভারত স্বাধীনতা আইনটি। কংগ্রেস মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করার জন্যই ব্যর্থ হয়েছিল এই
পরিকল্পনা। এই ঘটনা মুসলিম লীগেকে আহত করে। লীগ দাবি করে যেহেতু তারা পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেছে, তাই
সরকারের উচিত লীগকে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনে সম্মতি দেওয়া। কিন্তু বিষয়টি একদলীয় হয়ে যাচ্ছে বলে বড়লাট
ওয়াভেল লীগের দাবির প্রতি সম্মতি জানাতে পারেন নি। লীগের কাছে সরকারের এই মনোভাব চুক্তি ভঙ্গ বলে মনে হলো। লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে সৃষ্টি হলো দূরত্ব।
মুসলিম লীগ এবার নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বোম্বাইয়ে
একটি সম্মেলন ডাকে। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় পাকিস্তান অর্জনের জন্য মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম (ডাইরেক্ট এ্যাকশন) শুরু
করবে। এই উদ্দেশ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের ডাক দেয়া হয়। মুসলিম লীগ
নেতা অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ব্রিটিশ সরকারকে এই বলে সতর্ক করে দেন যে কংগ্রেস যদি
ক্ষমতায় বসে তবে বাংলা স্বাধীনতা ঘোষণা করবে এবং পাল্টা সরকার গঠন করবে। তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনো
রাজস্ব দেবে না এবং কেন্দ্রের সাথে কোনো সম্পর্কও রাখবে না।
এদিকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের দিন ঘনিয়ে আসে। বোম্বাই থেকে কোলকাতায় ফিরে আসেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী
সোহরাওয়ার্দী ও মুসলিম লীগের সেক্রেটারি আবুল হাশেম। তাঁরা জনমত গঠন করতে থাকেন। প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের
দিন কলকাতায় হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধে যায়। দাঙ্গায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ
হারায়। দাঙ্গা কলকাতায় শুরু হলেও ক্রমে তা বাংলার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থার মারাত্মক অবনতি হতে থাকলে
ব্রিটিশ সরকার শেষ রক্ষার চেষ্টা করে। তারা ভারতীয়দের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা ঘোষণা করে। সুতরাং কিভাবে
দেশ বিভক্ত করা হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে তার জন্য একটি নীতি নির্ধারণের প্রয়োজন উপস্থিত হয়। এ উদ্দেশ্যে
ব্রিটিশ সরকার লর্ড ওয়াভেল এর পরিবর্তে ভারতের বড়লাট করে পাঠান লর্ড মাউন্ট ব্যাটনকে। লর্ডমাউন্ট ব্যাটন ও কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গী
বড়লাটের ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথম দিল্লীতে আসেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটন। তিনি ঘোষণা দেন ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে
মধ্যেই বৃটিশ সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। মাউন্ট ব্যাটনের সহানুভ‚তি ছিল কংগ্রেসের প্রতি। কংগ্রেসের সমর্থক হিসেবে
তিনি অখÐ ভারতের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এভাবে লীগের সাথে আপোস করা সম্ভব হয় নি। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস লীগের দাবি
মেনে নিয়ে ভারত বিভাগ করতে রাজি হয়। কিন্তু এতে বেশকিছু শর্ত আরোপ করে যা লীগের পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি।
এরকম ভিন্ন মত ও চিন্তা রাজনৈতিক আকাশকে আবার অন্ধকার করে ফেলে।
বসু-সোহ্রাওয়ার্দীর অখÐ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলা প্রস্তাব
কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য যখন তীব্র হচ্ছিল তখনই বাংলার কয়েকজন নেতা অখÐ বাংলা গড়ার
প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসেন। অখÐ বাংলার প্রস্তাব প্রথম উত্থাপন করেন হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। বেশ ক’জন
প্রাদেশিক কংগ্রেস নেতাও এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। তাঁরা হচ্ছেন- শরৎবসু, কিরণ শংকর রায় প্রমুখ। মুসলিম লীগ নেতা
আবুল হাশেমও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। শরৎবসুর সক্রিয় সমর্থনের কারণে প্রস্তাবটি ‘বসু-সোহ্রাওয়ার্দী প্রস্তাব’ নামে
পরিচিত হয়। বাংলার এই দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দ বুঝেছিলেন, কংগ্রেস ও লীগের কাছে দলীয় স্বার্থই বড়। বাংলার স্বার্থের
কথা কখনই তারা বিশেষ বিবেচনায় রাখবে না। তাই অখÐ বাংলার প্রস্তাব ঘোষণা ও বিশ্লেষণ করেন শরৎবসু ও
সোহ্রাওয়ার্দী। তাঁদের মতে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা সম্ভব। এই
প্রস্তাবের ভিতর হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ মহৎ প্রচেষ্টা
বাস্তবায়িত হতে পারে নি। এবারও প্রথম বিরোধিতা আসে কংগ্রেসের পক্ষ থেকেই। কংগ্রেসের অবাঙালী ও রক্ষণশীল
সদস্যরা প্রচÐ বিরোধিতায় মেতে ওঠে। কংগ্রেস এবার অখÐ বাংলার বদলে পাকিস্তান দাবিকেই মেনে নেয়। এভাবে ভারত
বিভাগের প্রসঙ্গটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
ভারত স্বাধীনতা আইনের ফলাফল
ভারত স্বাধীনতা আইনের মধ্যে দিয়ে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি রাষ্ট্রের
জš§ হয়। আপনারা পাঠ-১১ এ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের কথা জেনেছেন। এই ভারত শাসন আইনকেই
অনেক পরিবর্তন ও সংস্কার করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইনে রূপান্তর করা হয়। এ আইনের তিনটি ফলাফল
লক্ষ করা যায় 
ক. পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি ভিন্ন ডোমিনিয়ন স্থাপন করা হয় এবং এই ডোমিনিয়ন দুটি ছিল সমান মর্যাদা সম্পন্ন ও
স্বায়ত্তশাসিত
খ. পাকিস্তানের মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ডোমিনিয়ন আইন সভায় যে
সব আইন গৃহীত হতো তাতে স্বাক্ষর দানের পূর্ণ অধিকার থাকতো গভর্নর জেনারেলের।
গ. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুযায়ী গঠিত আইনসভা গণপরিষদের মর্যাদা লাভ করে। এই গণপরিষদের উপর দায়িত্ব
ছিল দেশের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা।
বৃটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ ও ১৪ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টো রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ভারত
স্বাধীনতা আইন হঠাৎ করেই তৈরি হয় নি। মন্ত্রী মিশনের ব্যর্থতার পর যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা বাংলার
নেতাদের আতঙ্কিত করে তোলে। তাই বসু-সোহ্রাওয়ার্দী প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে অখÐ বাংলার চিন্তা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের তীব্র বিরোধিতার মুখে এই প্রচেষ্টা ভেঙ্গে যায় মধ্য দিয়ে। অবশেষে শেষরক্ষা করতে হয়
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন করে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। “কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় বসে তা হলে বাংলা স্বাধীনতা ঘোষণা করবে।” উক্তিটি কার?
ক) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খ) শরৎ বসু
গ) কিরন শংকর রায় ঘ) আবুল হাশেম
২। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইনটি হলোÑ
ক) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের সংস্কার
খ) বসু সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাবের সংস্কার
গ) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর প্রস্তাবের সংস্কার
ঘ) মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার সংস্কার
৩। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ঘোষণা দেয় কারা?
ক) দেশিয় রাজ্যসমূহ খ) কংগ্রেস
গ) মুসলিম লীগ ঘ) হরিজন সম্প্রদায়
সৃজনশীল প্রশ্ন

ক. লাহোর প্রস্তাব কে কত খ্রিস্টাব্দে পেশ করেন? ১
খ. জিন্নাহ কেন ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেন? ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. বর্ণিত অঞ্চল দুটি আপনার পাঠ্য বইয়ের কোন আইনের বাস্তব রূপ? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. উক্ত অঞ্চল দুটির জন্ম যে প্রস্তাবের প্রভাবে সম্পন্ন হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করুন। ৪
ভারতীয় উপমহাদেশ
‘ক’ সম্প্রদায় অধ্যুষিত
অঞ্চল ১৫ আগষ্ট
‘খ’ সম্প্রদায় অধ্যুষিত
অঞ্চল ১৪ই আগষ্ট <

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]