ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে
ভাষা, নৃতত্ত¡, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসসহ সকল ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান
ছিল। কিন্তু এত ব্যবধান থাকা সত্তে¡ও শুধু ধর্মের ভিত্তিতে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারের অধিক ব্যবধানে অবস্থিত পশ্চিম
পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়। ফলে পাকিস্তান নামক এই নতুন
রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী প্রথমেই বাঙালিকে শোষণ করার কৌশল হিসেবে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালি জাতি
মাতৃভাষার ওপর আঘাতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী
নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান এবং একই বছর জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণের পক্ষে মত দেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন বাঙালি লেখক,
বুদ্ধিজীবী এর প্রতিবাদ করেন এবং বাংলার পক্ষে বক্তব্য দেন। পূর্ব বাংলায় ছাত্র ও শিক্ষিত সমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে
পত্র-পত্রিকায় মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেন।
বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি এসময়ে পূর্ব বাংলায় গঠিত বিভিন্ন সংগঠনও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তান রাষ্ট্র
সৃষ্টি হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ
গঠিত হয়। এটিই ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভাষা
আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ প্রকাশিত হয়। এই পুস্তিকাটিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার
দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল বাঙালির সংস্কৃতি, রাজনৈতিক এবং
অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন যা এই আন্দোলনের পটভূমি হিসেবে কাজ করেছে।
ভাষা আন্দোলনের সাংস্কৃতিক পটভূমি
ভাষার ওপর আঘাত একটি জাতি এবং তার সংস্কৃতির ওপর আঘাতেরই শামিল। বাঙালি জাতিসত্তাকে ধ্বংস করে দেয়ার
জন্যই বাংলা ভাষার ওপর আঘাত করা হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রথম থেকেই পূর্ব বাংলার সাথে বৈষম্যমূলক
আচরণ শুরু করে। ফলে জনগণকে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় সাংস্কৃতিক প্রশ্ন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলো পরের দিকে গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি। বাংলা
ভাষার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন প্রতিরোধ আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ভাষার মধ্যে ইসলামী রূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের পর মুসলিম লীগের রক্ষণশীল অংশ পূর্ববাংলার ক্ষমতায় বসে ‘রেনেসাঁ সোসাইটি’
ও ‘সাহিত্য সংসদ’ গঠন করে সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরনের নীতি গ্রহণ করে। প্রথমেই তারা বাংলা ভাষার
মধ্যে একটি ইসলামী রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রচুর আরবি-ফার্সি শব্দ ব্যবহারে উৎসাহ দিতে থাকেন। আরবি হরফে
বাংলা লেখার ইচ্ছাও তারা তখন ঘোষণা করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষায় আরবি হরফ চালুর
চেষ্টা করে। এরপর আরবিতে বাংলা শিক্ষা দেয়া শুরু হয়। চালু হয় এ ধরনের অনেকগুলো শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে বয়স্ক
ছাত্রদের বিনামূল্যে আরবি হরফের বই দেওয়া হতে থাকে। পূর্ববাংলার জনগণ কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানিদের অসাধু
উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। ফলে সরকারের
অসৎ উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত সৃষ্টি হতে থাকে। প্রথমে এগিয়ে আসে পূর্বপাকিস্তান মুসলিম লীগের ‘ভাষা কমিটি’।
এই কমিটির বক্তব্য ছিল, পূর্ববাংলার মানুষকে অশিক্ষিত বানানোর জন্যই শাসকদের এই ষড়যন্ত্র। প্রবল নিন্দা জানায়
‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিশ’। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।
বাংলা ভাষা সংস্কার কমিটি
পূর্ব বাংলার জনগণের আন্দোলনের মুখে প্রাদেশিক সরকার ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলা ভাষা সংস্কারের জন্য
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁকে সভাপতি এবং কবি গোলাম মোস্তফাকে সম্পাদক করে একটি সংস্কার কমিটি গঠন
করে। দেড় বছর ব্যাপক আলাপ আলোচনার পর কমিটি সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে বাংলা ভাষা,
ব্যাকরণ ও বর্ণমালার প্রচুর সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়। নতুন ভাষার নামকরণ হয় ‘সহজ বাংলা’। কমিটি রোমান বা উর্দু
হরফে বাংলা লেখার প্রশ্নকে কমপক্ষে বিশ বছরের জন্য স্থগিত রাখার পরামর্শ দেয়। এ সময়ের মধ্যে উর্দু ভাষাকেও
প্রয়োজনীয় সংস্কারের আহŸান জানায়। এই রিপোর্টটি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পছন্দ হয় নি বলেই তা শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নি। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা
ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে শুরু থেকেই যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তার মধ্য থেকে জন্ম নিতে থাকে অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে গঠিত হয় প্রথম
‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। এর আহŸায়ক মনোনিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া। ১৯৫১ সালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংস্কৃতি সংসদ’ নামে আরেকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। এই সংগঠনটি ক্রমে পূর্ববাংলার
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের শেষদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত
হয় ‘পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’। সংসদের নিয়মিত পাক্ষিক সাহিত্য সভা বসত। এ সমস্ত সংগঠনের তৎপরতার মধ্য দিয়ে
ভাষা প্রশ্নের গুরুত্ব মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। তারা বুঝতে পারে রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হলে পূর্ববাংলায় সব ধরনের
উন্নতি থেমে যাবে। তমুদ্দুন মজলিশ পুস্তিকা প্রকাশ করে জানিয়ে দেয় পূর্ববাংলার শিক্ষার বাহন, আইন আদালত ও
অফিসের ভাষা বাংলা করতে হবে। এভাবে ভাষা আন্দোলনের একটি সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে যায়। যার শক্তির
উপর দাঁড়িয়ে রূপলাভ করে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারিতে চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে।
শিক্ষার্থীর কাজ তমদ্দুন মজলিস সম্পর্কে একটি রচনা লিখুন।
সারাংশ
পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই একটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ থেকে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ববাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু করে। এ দেশের রাষ্ট্রভাষা
বাংলার পরিবর্তে তারা উর্দু করতে চায়। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করতে থাকে। এদেশের মানুষের
কাছে এই অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের
তৎপরতায় মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। এরই পরিণতিতে সংঘটিত হয় ভাষা আন্দোলন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণের পক্ষে মত দেয় কে?
র. চৌধুরী খালিকুজ্জামান
রর. ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ
ররর. মুহম্মদ আলী জিন্নাহ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
২। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন কোনটি?
ক) তমদ্দুন মজলিশ খ) রেনেসাঁ সোসাইটি
গ) সাহিত্য সংসদ ঘ) রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ
৩। কার নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়?
ক) অধ্যাপক নুরুল হক ভূইয়া খ) অধ্যাপক আবুল কাশেম
গ) মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ ঘ) কবি গোলাম মোস্তফা
৪। আরবি হরফে বাংলা লেখার অপচেষ্টা করা হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
ক) ১৯৪৭ খ) ১৯৪৮
গ) ১৯৫১ ঘ) ১৯৫২

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]