বাংলায় কররানি আফগান শাসন

কররানি উপাধিধারী আফগানরা হচ্ছে একটি আফগান গোত্র। এ বংশের সর্দার তাজ খান কররানি বাংলায়
কররানি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন (১৫৬৪ খ্রি.)। তিনি এক সময় শেরশাহের অধীনে চাকরি করতেন। আদিল শাহের
আমলে তাজ খান বাংলার তাÐায় জায়গীরদার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলার অধিপতি হওয়ার এক বছরের
মধ্যে মারা যান (১৫৬৫ খ্রি.)।
সুলেমান কররানি (১৫৬৫ - ১৫৭২ খ্রি.)
তাজ খানের তাঁর ভাই সুলেমান কররানি প্রায় সাত বছর বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি
বাংলাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। তাঁর আমলে বাংলায় অপেক্ষাকৃত সুশাসন ও শান্তি বিরাজ
করেছে। পাশাপাশি তিনি তাঁর রাজ্যসীমাও বেশ বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন। প্রধান উজির লোদী খানের পরামর্শে সুলেমান
কররানি ক‚টনৈতিক বিষয়গুলোতে সফলতার মুখ দেখেন। নেহায়েত প্রয়োজন দেখা না দেয়া পর্যন্ত তিনি মোগলদের বিরুদ্ধে
তেমন বিপজ্জনক কোনো অভিযানে লিপ্ত হন নি। এ সময় গৌড় নগরী বাসযোগ্যতা হারালে সুলেমান কররানি তান্ডাতে
রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
সুলেমান কররানির সময় উড়িষ্যা শাসন করতেন রাজা হরিচন্দন মুকুন্দদেব। তিনি উড়িষ্যা আক্রমণ করে তাঁর অধিকারে
নিয়ে আসেন। সুলেমানের বিখ্যাত সেনাপতি কালাপাহাড় পুরি অধিকার করেন। সেনাপতি কালাপাহাড় কুচবিহার রাজ্য
আক্রমণ করে তেজপুর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। সব মিলিয়ে সুলেমান কররানি বাংলার শাসক হিসেবে এখানে
শান্তি নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসৃত হওয়া তাঁর সময় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ন্যায়
বিচারক হিসেবেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। অনেক বিজ্ঞ আলেম ও দরবেশ তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। রাজ্যে শরিয়তের
বিধান কার্যকর করার পাশাপাশি তিনি নিজেও তা নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন। সবমিলিয়ে সুলেমান ছিলেন দূরদর্শী
শাসক। রাজ্যের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি মোগলদের সাথে মিত্রতা নিশ্চিত করেন। বিপুল সামরিক শক্তির
অধিকারী সুলেমান কররানি একঅর্থে সফল শাসকই ছিলেন। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে সুলেমান কররানির মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর
বড় ছেলে বায়জিদ কররানি কিছুকাল রাজত্ব করেন। তিনি আফগান অভিজাতদের দ্বারা নিহত হলে তাঁর ভাই দাউদ খান কররানি বাংলার সিংহাসনে বসেন।
দাউদ কররানি
বায়াজিদ কররানির পর ক্ষমতায় আসেন দাউদ। তবে তার মতো দাউদও ছিলেন সুলতান পদের অযোগ্য। তাঁর নৈতিকতা
নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা দিক থেকে। বিশেষ করে তিনি তাঁর মন্ত্রী লোদী খানের জামাতাকে নিহত করে লোদী খানের আস্থা
নষ্ট করেছিলেন। পাশাপাশি ক্ষমতার লোভে উš§ত্ত হয়ে তার ভাই বায়াজিদের ন্যায় তিনিও নিজ নামে খুৎবা পাঠ শুরু
করান। অন্যদিকে মুদ্রা জারি করে বসলে সম্রাট আকবরের সাথে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। আফগান সেনাপতি গুজর
খান দাউদের ভাই বায়াজিদের পুত্রকে বিহারে স্বাধীন সুলতান রূপে ঘোষণা করলে তাঁকে দমনের জন্য দাউদ খান তার মন্ত্রী
লোদী খানকে বিহারে পাঠান। সম্রাট আকবরও তাঁর বিখ্যাত সভাসদ মুনিম খানকে বিহার অধিকারের জন্য পাঠান। কিন্তু
লোদী খান ও গুজর খান মুনিমের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
এদিকে দাউদ খান লোদী খানের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠান এবং লোদী খানকে হত্যা করে পাটনার দুর্গ অধিকার করেন। মুনিম
খান এ পরিস্থিতিতে পাটনা অধিকারে ব্যর্থ হন। তবে আকবর নিজে পাটনা অবরোধে মুনিম খানের সাথে যোগ দেন। শেষ
পর্যন্ত পাটনা অধিকার করে মোগল বাহিনী। ফলে দাউদ কররানি বাংলায় পালিয়ে যান। মোগল বাহিনী দাউদের পিছু নিলে
তিনি উড়িষ্যায় চলে যান। এর পরপর বাংলা অধিকার করে মোগলরা। তখন সম্রাট আকবরের নির্দেশে রাজা টোডরমল
মুনিম খানের সঙ্গে যোগ দিলে মোগল বাহিনীর শক্তি বেড়ে যায়। তারা উড়িষ্যায় দাউদকে আক্রমণের জন্য এগিয়ে যায়।
বালেশ্বরের তুকরাইয়ের যুদ্ধে ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে দাউদ খান চরমভাবে পর্যুদস্ত হন। প্রথম দিকে তিনি মোগলদের কাছে
আত্মসমর্পণ করলেও সেনাদল দিল্লি ফিরে গেলে নতুন ভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
আকবর বাংলার বিপর্যয়ের সংবাদ পেয়ে খান-ই-জাহানকে সুবেদার নিযুক্ত করেন। তাঁকে বাংলার হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের
জন্য পাঠানো হয়। খান-ই-জাহান ও টোডরমল তেলিয়াগর্হি অধিকার করেন। তারপর মোগল বাহিনী রাজমহলের দিকে
এগিয়ে যান। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলে মোগল বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে হয় দাউদ কররানির। এ যুদ্ধে দাউদ পরাজিত
ও বন্দি হন। পূর্ববর্তীকালে সন্ধি ভঙ্গের অপরাধে দাউদ খান কে প্রাণদÐ দেওয়া হয়। এভাবে কররানি শাসনের অবসান
ঘটার পাশাপাশি বাংলার একাংশে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে তখনো পূর্ব বাংলায় ঈসা খাঁর নেতৃত্বে বার ভ‚ইয়াদের শাসন চলছিল।
শেরখানের মৃত্যুর পর তাজখান কররানি বাংলায় কররানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সুলেমান কররানি বাংলার
শাসনকর্তা হন। তার আমলে বাংলা উত্তর-পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিকে পরিণত হয়। বাংলায় তখন শান্তি বিরাজমান
ছিল। সুলেমান কররানি উড়িষ্যা ও কুচবিহারে সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী শাসকগণ বাংলার
সিংহাসনের জন্য যোগ্য ছিলেন না। কররানি বংশের শেষ শাসনকর্তা দাউদ খান কররানি মোগলদের হাতে বন্দি ও নিহত
হলে বাংলায় কররানি বংশের শাসনের অবসান ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। বাংলায় কররানি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
ক) সুলেমান কররানি খ) তাজ খান কররানি
গ) দাউদ কররানি ঘ) বায়াজিদ কররানি
২। কত খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কররানি বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৫৬২ খ) ১৫৬৩
গ) ১৫৬৪ ঘ) ১৫৬৫
৩। সুলেমান কররানির প্রধান উজির ছিলেনÑ
ক) লোদী খান খ) বায়াজিদ কররানি
গ) দাউদ কররানি ঘ) হরিচন্দন
৪। দাউদ কররানির আমলে দিল্লির সম্রাট ছিলেন কে?
ক) বাবর খ) হুমায়ুন
গ) আকবর ঘ) জাহাঙ্গীর
৫। রাজ মহলের যুদ্ধ সংঘটিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
ক) ১৫৭৫ খ) ১৫৭৬
গ) ১৫৭৭ ঘ) ১৫৭৮
৬। দাউদ খান ক্ষমতার লোভে উম্মত্ত হয়েÑ
র. নিজ নামে খুৎবা পড়ান
রর. নিজ নামে মুদ্রা চালু করেন
ররর. সম্রাট আকবরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]