রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন
১৯৩৭ সাল থেকে ভাষা বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। তমদ্দুন মজলিসের
উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এর আহŸায়ক মনোনীত হন নূরুল হক
ভূঁইয়া। পরবর্তীকালে এ উদ্দেশ্যে আরও কয়েকটি কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে তমদ্দুন মজলিসের গঠিত প্রথম
সংগ্রাম পরিষদটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রæয়ারি সংগ্রাম পরিষদের সাথে আলোচনার পর
শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান আশ্বাস দেন যে, মানি অর্ডার, ফরম, ডাকটিকিট ও মুদ্রায় ইংরেজি-উর্দুর পাশাপাশি বাংলায় লেখা
হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া বক্তৃতায় সুকৌশলে উর্দুকে একমাত্র
রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ছাত্রদের মধ্যে হতে ‘না’ ‘না’ ধ্বনি সম্বলিত প্রতিবাদ ওঠে।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন
১৯৪৮ সালের ফেব্রæয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এক অধিবেশনে নিম্নপর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার
মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ২৩ ফেব্রæয়ারি গণপরিষদের অধিবেশনে কংগ্রেস দলীয় সদস্য
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহারের দাবি উত্থাপন
করেন। কিন্তু মুসলিম লীগের সদস্যদের ভোটে তা অগ্রাহ্য হয়। এই সংবাদ ঢাকায় পৌছুলে এদেশের ছাত্র ও শিক্ষিত
সমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে হলে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রয়োজন। ২৬ ও
২৯ ফেব্রæয়ারি ঢাকার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মার্চ ছাত্রসমাজ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের
উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এ পরিষদের আহŸায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম।
শুরু হয়ে যায় একের পর এক আন্দোলনের কর্মসূচি। নবগঠিত পরিষদ ১১ মার্চ হরতাল আহŸান করে। হরতাল চলাকালে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল আলমসহ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৩-১৫ মার্চ ঢাকার
সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। আন্দোলন তীব্রতর হলে নাজিমুদ্দিন ১৫ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৮
দফা চুক্তিতে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার মাধ্যম বাংলা ও ব্যবস্থাপক সভায় রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত বিষয়
উত্থাপনে রাজি হন। কিন্তু ৬ এপ্রিল পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশনে নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ১৫
মার্চের চুক্তি ভঙ্গ করে উর্দুকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব করেন। পরিষদের বিরোধী দলের
প্রতিবাদের ফলে প্রস্তাবটি পরিষদে উত্থাপিত হলেও বাস্তবায়ন হয় নি।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কঠোর নীতি
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ রমনার রেসকোর্স
ময়দানে এক জনসভায় এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন ‘উর্দুই
এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। উপস্থিত ছাত্ররা ‘না না’ ধ্বনি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়।
আন্দোলনকারীদের তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। জিন্নাহর এ ঘোষণা পূর্ব বাংলার জনমনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
এ সময়ে সারা পূর্ব পাকিস্তানেই ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলী খান ঢাকায় এসে
বক্তৃতাকালে আবার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। তখনও ছাত্ররা ‘না না’ বলে প্রতিবাদ করে উঠে।
সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন কর্মসূচি
১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সময়কে ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্ব বলা যায়। এই সময়ে আরবি হরফে বাংলা
লেখার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে আকরাম খানকে সভাপতি করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ‘পূর্ববাংলা ভাষা
কমিটি’ গঠন করে। এই কমিটি গঠনের প্রতিবাদ জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ আবদুল মতিনকে
আহŸায়ক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সেপ্টেম্বর মাসে গণপরিষদ কর্তৃক গঠিত মূলনীতি
কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। দেশ জুড়ে এর প্রতিবাদে সভাসমাবেশ চলতে থাকে। ১৯৫১
সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হন। তখন তাঁর স্থলে প্রধানমন্ত্রী হন খাজা
নাজিমুদ্দিন। ১৯৫২ সালে ঢাকায় খাজা নাজিমুদ্দিনের এক উক্তিকে কেন্দ্র করে ভাষা আন্দোলন নতুন মাত্রা ও সর্বাত্মক
রূপলাভ করে।
একুশে ফেব্রæয়ারির চূড়ান্ত আন্দোলন
খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয়
প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকা সফরে আসেন। ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায়
তিনিও জিন্নাহর মতো ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ এর প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন নতুন
করে শুরু হয়ে যায়। এবার প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্র জনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি
সভা ও ছাত্র ধর্মঘট আহŸান করে। সংগ্রাম পরিষদের আহŸানে ৪ ফেব্রæয়ারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট আহŸান
করা হয়। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। কাজী গোলাম মাহবুবকে
আহŸায়ক করে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই সভায় ২১ ফেব্রæয়ারি পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের
বাজেট অধিবেশনের দিন দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সরকার আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমন করার কৌশল গ্রহণ করে। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন
আন্দোলন দমন করার জন্য ২০ তারিখ থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করেন। এর
মাধ্যমে ঢাকায় যেকোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্ররা সরকারি এই
সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নিতে পারে নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে সভা করে তাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করে। ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা
সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক বসে। এই বৈঠকে আবদুল মতিন, ওলি আহাদ, গোলাম মাহবুব প্রমুখ নেতারা ১৪৪ ধারা অমান্য
করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে জোড়ালো মত দেন। অবশেষে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ২১ ফেব্রæয়ারি সকাল
১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চত্বর) ছাত্রদের সমাবেশে ঢাকা শহরের স্কুলকলেজের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী যোগ দেয়। সভায় ছোট ছোট দলে ছাত্ররা মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়।
ছাত্র-ছাত্রীরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে
গ্যাস ব্যবহার করে। ফলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিকেলে ব্যবস্থাপক পরিষদের সভার দিকে প্রতিবাদ মিছিল
অগ্রসর হতে গেলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। মাতৃভাষার দাবি
জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হনÑ আবুল বরকত,
আবদুস সালাম, রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার এবং
আহত হন কয়েকজন ছাত্রীসহ অনেকে। সে সময়ে
গণপরিষদের অধিবেশন চলছিল। গুলির খবর পেয়ে আবদুর
রশীদ তর্কবাগীশসহ আইন পরিষদের কয়েকজন সদস্য
অধিবেশন ত্যাগ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ২১
ফেব্রæয়ারির ঘটনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
২২ ফেব্রæয়ারি ছাত্র-জনতা শহীদদের জন্য শোক মিছিল বের
করে। আবারও মিছিলের ওপর পুলিশ ও মিলিটারি লাঠি,
গুলি ও বেয়োনেট ব্যবহার করে। এতে শফিউর রহমানসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
আরও কয়েকজন শহীদ হন। অনেকে গ্রেফতার হন। যে স্থানে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেই স্থানে ছাত্ররা
সারারাত জেগে ২৩ ফেব্রæয়ারিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয়। ২১ ফেব্রæয়ারির
হত্যাকাÐ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা শহরে ২৩ ফেব্রæয়ারি হরতাল পালিত হয়। ২৩ ফেব্রæয়ারি পুলিশের গুলিতে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফুলার রোডে একজন কিশোর নিহত হয়। ২৪ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় হরতাল পালিত হয়। ডা. সাঈদ
হায়দারের নকশা অনুসারে রাতে মেডিকেল কলেজের গেইটের সামনে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং ২৪ ফেব্রæয়ারি তা
উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৩ সালে অস্থায়ী শহীদ মিনারের স্থলে শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা ও পরিকল্পনায় শহীদ মিনার
নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয়। ১৯৭২ সালে
পূর্বের নকশা অনুযায়ী বর্তমান শহীদ মিনারটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে এটি ছিল
বাঙালি জাতির প্রথম বিদ্রোহ। ভাষা আন্দোলন তৎকালীন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে
সক্ষম হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরের বছর থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রæয়ারি দিনটি বাঙালির শহীদ দিবস
হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ ফেব্রæয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘোষিত হয়। নিম্নে এর
গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করা হলো।
প্রথমত, ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংগঠিত গণআন্দোলন। এটি শুধু ভাষার মর্যাদার
জন্যই গড়ে ওঠে নি। ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায়
হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠাকে বাঙালিরা বেছে নেয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাই ষাটের দশকে স্বৈরশাসন বিরোধী
ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়।
দ্বিতীয়ত, ভাষা আন্দোলনের ফলে অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে। এই আন্দোলন দ্বিজাতি তত্তে¡র ধর্মীয় চেতনার
মূলে আঘাত হানে। পাকিস্তান সৃষ্টির সা¤প্রদায়িক ভিত্তি ভেঙ্গে বাঙালিরা অসা¤প্রদায়িক চেতনার আন্দোলন শুরু করে। এর
ফলে ধীরে ধীরে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি গড়ে ওঠে।
তৃতীয়ত, ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগ জনগণের মানসিকতা ও স্বার্থ উপেক্ষা করে জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলটি শোচনীয়ভাবে পরাজয় ঘটে। এরপর আর কোনো নির্বাচনে মুসলিম লীগ জয়ী হয় নি।
চতুর্থত, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী
প্রতিশ্রæতি মোতাবেক ২১ ফেব্রæয়ারি শোক দিবস
হিসেবে ছুটি ও শহীদ দিবস ঘোষণা করে। ১৯৫৬
সালের সংবিধানে বাংলা ভাষা সাংবিধানিক স্বীকৃতি
পায়। ১৯৬২ সালে সংবিধানে তা বহাল থাকে।
পঞ্চমত, যুক্তফ্রন্ট পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে
বৈষম্য, ভাষা বৈষম্য তুলে ধরে। যা ষাটের দশকে
আওয়ামী লীগের ৬ দফায় পরিস্ফুটিত হয়।
স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা
আন্দোলনে রূপ নেয় যার প্রেরণা ছিল ভাষা
আন্দোলন।
ষষ্ঠত, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর স্বীকৃতি দান আন্তর্জাতিক
স¤প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলার জনগণের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাতৃভাষাকে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য
এ সময় পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজজীবন বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করে নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হতেই শাসকদের কাছ
থেকে পূর্ব বাংলার জনগণ কোনো সহানুভূতি পায় নি। তাই তাদেরকে প্রতিবাদ করতে হয়েছে। তারা হয়েছে সংঘবদ্ধ।
শেষ পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে। মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে বুকের রক্ত দিয়ে। এই ঘটনা
পূর্ববাংলার জনগণের মনের শক্তিকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনে
একুশের চেতনা সরাসরি ভূমিকা রেখেছে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন কোথায়?
র. রমনার রেসকোর্স ময়দানে
রর. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে
ররর. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
২। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
ক) নূরুল আমিন খ) খাজা নাজিমুদ্দিন
গ) লিয়াকত আলী খান ঘ) চৌধুরী খালিকুজ্জামান
৩। বর্তমান শহীদ মিনারের নকশা ও পরিকল্পনা কার?
ক) হামিদুর রহমান খ) ডা. সাঈদ হায়দার
গ) আবুল হাশিম ঘ) গোলাম মাহবুব
৪। কত খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর স্বীকৃতি দেয়া হয়?
ক) ১৯৫২ খ) ১৯৫৬
গ) ১৯৬২ ঘ) ১৯৯৯
সৃজনশীল প্রশ্ন
অ, আ, ক, খ আমার দুঃখীনি বর্ণমালা
অ, আ, ক, খ আমার রক্তাক্ত বর্ণমালা
অ, আ, ক, খ আমার গর্বিত বর্ণমালা
অ, আ, ক, খ আমার অহংকারী বর্ণমালা
ক. ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কে ছিলেন? ১
খ. যুক্তফ্রন্ট কী? ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অংশটুকু আপনার পাঠ্য বইয়ের কোন ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. আপনি কী মনে করেন যে আমার বর্ণমালা অহংকারী ও গঠিত? আপনার মতের স্বপক্ষে যুক্তি দিন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র