১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা। স্বাধীন
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর এটি ছিল মাত্র দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজয়ী হবার মাধ্যমে
আওয়ামীলীগ যে জনগণের দলে পরিণত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়। এই নির্বাচনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে একাধিক
রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করলেও কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ বিজয় লাভ করে। নানা কারণে
এই বিজয় ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে একদিকে পাকিস্তানি শাসকবর্গ পূর্ব পাকিস্তানের উপর
তাঁদের কর্তৃত্বের বৈধতা হারায় অপরদিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ প্রশস্ত হয়।
বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনি প্রচারণা
নির্বাচনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম। এই লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই জন্ম নেয় স্বাধীন
সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ১৯৪০ সালের প্রস্তাবনার একটি ধারায় প্রাদেশিক
স্বায়ত্বশাসনের কথা উল্লেখ থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে সবসময়ই ধীরনীতি অবলম্বন
করে। এমনকি দেশ পরিচালনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবিধান প্রণয়ন করতেও তারা দীর্ঘ এক দশক সময়
নেয়। পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় মুসলিম লীগের
ভরাডুবির পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। নির্বাচনের ফলাফলে হতাশ হলেও যুক্তফ্রন্টকে মন্ত্রিসভা গঠনের
সুযোগ দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু অল্পকাল পরেই গভর্নর জেনারেল কর্তৃক মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে পূর্ব
বাংলা আবার কেন্দ্রীয় গভর্নরের শাসনাধীনে চলে যায়। ১৯৫৬ সালে রচিত হয় পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান। এতে
প্রদেশসমূহের স্বায়ত্বশাসন নামমাত্র দেয়া হয়। কিন্তু অনেক প্রত্যাশিত এই সংবিধান কার্যকরের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই
অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল আইয়ূব খান ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করেন এবং সংবিধান
ও সকল রাজনৈতিক কর্মকাÐ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলে সামরিক শাসন। এই
সময়কালে দুইবার (১৯৬০ ও ১৯৬২ সালে) বিরোধী দলবিহীন এবং ১৯৬৪ সালে সর্বদলীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছিল
আইয়ূব খান সরকার। কিন্তু সে নির্বাচনে সকলের ভোটাধিকার ছিল না। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সকল প্রকার
বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা দাবী ঘোষণা করেন। এই দাবিগুলো
জনগণের প্রাণের দাবি হওয়ায় সর্বস্তরের জনগণ এতে ব্যাপক সমর্থন জানায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি
জনসমর্থনের ব্যাপকতা দেখে ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে তাঁকে দমন করতে সরকার মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নাটক মঞ্চস্থ
করে। কিন্তু জনগণ সরকারের কুমতলব বুঝতে পারে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তির
দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে আইয়ুব খান সরকার পদত্যাগ করতে
বাধ্য হয়। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেই ঘোষণা দেন যে, ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন
করা হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। তিনি ১৯৭০ সালের ৩১ মার্চ এসংক্রান্ত একটি
দিকনির্দেশনামূলক আইন জারি করেন। যেখানে উল্লেখ করা হয়১. প্রাদেশিক ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২. এক ব্যক্তি এক ভোট নীতিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় ও প্রাদেশিক প্রতিনিধি নির্বাচন দেওয়া হবে।
৩. পাকিস্তানের উভয় অংশের আইন ও অর্থনীতি বিষয়ক সম্পর্ক নির্ধারণ করবেন নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ। তবে জাতীয়
ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ১৯৭০ সালের জুন মাসের মধ্যেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে।
৫. জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন থেকে ১২০ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। এসময় অতিক্রান্ত
হলে পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে ছয়টি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যথা:
(ক) ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
(খ) রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে ইসলামী আদর্শ।
(গ) নির্বাচনে প্রতিটি প্রদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধি প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে
নির্বাচিত হবে।
(ঘ) নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
(ঙ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিটি প্রদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য
দূরীকরণে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
(চ) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. নববর্ষের দিন থেকে রাজনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনা করা যাবে এবং আচরণবিধি দু‘দিন পর ঘোষিত হবে।
৭. জাতীয় পরিষদের নির্বাচনী আসন হবে সর্বমোট ৩১৩ টি। যেখানে ১৩ টি মহিলা আসন থাকবে। আর পাঁচটি প্রাদেশিক
পরিষদ গঠিত হবে। যেখানে ৬২১ টি আসনের বিপরীতে প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে। যার বিস্তারিত বিবরণ নি¤œরূপ:
অঞ্চল
জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক পরিষদ
সাধারণ মহিলা মোট সাধারণ মহিলা মোট
পূর্ব পাকিস্তান ১৬২ ৭ ১৬৯ ৩০০ ১০ ৩১০
পাঞ্জাব ৮২ ৩ ৮৫ ১৮০ ৬ ১৮৬
সিন্ধু ২৭ ১ ২৮ ৬০ ২ ৬২
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ১৮ ১ ১৯ ৪০ ২ ৪২
বেলুচিস্তান ৪ ১ ৫ ২০ ১ ২১
কেন্দ্র শাসিত এলাকা ৭ - ৭ - - -
সর্বমোট ৩০০ ১৩ ৩১৩ ৬০০ ২১ ৬২১
সূত্র: ... ...
৮. প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে সাধারণ আসনগুলোর সদস্যগণ তবে মহিলা আসনগুলোতে মহিলা প্রার্থী
নির্বাচিত হবেন শুধু সাধারণ আসনের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে।
৯. কেন্দ্র শাসিত এলাকার নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রনয়ন করার ক্ষমতা থাকবে রাষ্ট্রপতির হাতে।
১০. জাতীয় পরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকবে সংবিধান বিল পাশ করার ক্ষমতা।
তবে জাতীয় নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে একটু বেশি সময় লেগে যায় এবং ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের
এবং ১৭ ডিসেম্বর তারিখে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ৯ আসন (এই
আসনগুলোতে ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়) ব্যতীত সমগ্র পাকিস্তানে নির্ধারিত দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য কার্যাবলি:
আপাত:দৃষ্টিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দেশে বিরাজমান অস্থিরতা দূরীকরণে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং একটি
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে ১৯৬৯
সালের ২৮ জুলাই একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। কমিশনের প্রধান নিযুক্ত হন তৎকালীন পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের
একজন বাঙালি বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মতৎপরতা:
১৯৭০ সালে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে সমগ্র পাকিস্তানে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানে
আওয়ামী লীগের সমমনা কিছু দল ঐক্যজোটের মাধ্যমে নির্বাচনে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
তা প্রত্যাখ্যান করায় ঐ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফলে নতুন এবং পুরাতন সব রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রার্থীর মাধ্যমে
নির্বাচনে যায়। নির্বাচনে মোট ২৪ টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো রেডিও
টেলিভিশনে প্রচারকার্য চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে জনমত গঠনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ব্যাপক
প্রাধান্য লাভ করে। এদলটি ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে তাদের প্রচারাভিযান শুরু করে। এ দলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ছয়
দফার প্রতি সর্বসাধারনের দৃষ্টি আকর্ষণ। দলটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতায় বারংবার উচ্চারিত হয়
এদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান পিপল্স
পার্টির জনপ্রিয়তা পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যাপক ছিল। প্রচারাভিযানে তাদের ¯েøাগান ছিল, “ইসলাম হচ্ছে আমাদের বিশ্বাস,
গণতন্ত্র আমাদের নীতি এবং সমাজতন্ত্র হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।” এদলটির প্রধান ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা দেখে ভীত হন এবং হটকারী কৌশলের মাধ্যমে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা
করেন। তিনি নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে থাকেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রচারণা ছিল, ‘ছয়দফা হলো
পাকিস্তানের জাতীয়তার প্রল্য়ঙ্কারী এ জাতীয় সংহতির জন্য আঘাত স্বরূপ’।
নির্বাচনের প্রাক্কালে অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে জলচ্ছ¡াসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দিক বিবেচনা করে
মাওলানা ভাসানীসহ অন্যান্য নেতারা নির্বাচন পেছানোর দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল যথা
সময়ে নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রচার করেন যে, এই নির্বাচন এখন বাতিল করা হলে
পশ্চিম পাকিস্তানিরা আবার অন্য কুটকৌশল চালাতে পারে। তাঁরা আরো বলে যে, যে সমস্ত এলাকায় নির্বাচন আয়োজন
সম্ভব নয় সেখানে পরিবর্তিত তারিখে নির্বাচন হতে পারে কিন্তু সারাদেশে নির্বাচন হতে হবে। ফলে নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে বন্যা কবলিত ৯ টি আসনে ১৭ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের শুধু পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র দুটি আসন বাদে (ডেমোক্রাটিক পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র
১টি) অন্য ২৮৮টি সব আসনে জয়ী হয় তবে কোথায়ও এদলটি জয়ী হতে পারে নি। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন জয়ী
দল পাকিস্তান পিপল্স পার্টি পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন না পেলেও পাঞ্জাবে ৬৪ টি, সিন্ধুতে ১৮ টি এবং উত্তর পশ্চিম
সীমান্ত প্রদেশে ১টি আসনে জয়ী হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুলভোটে বিজয়ের কারণ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল আওয়ামী লীগের বিজয়ের নেপথ্য কারণ। কেননা নির্বাচনের আগে
থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের সাধারণ মানুষের আশাÑআকাক্সক্ষা পূরণের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। এ কারণেই
আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোর সাথে কোয়ালিশন না করে পৃথকভাবে সবকয়টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবার
দুরদর্শীতা দেখাতে পেরেছিল। নির্বাচনে ছয় দফা ভিত্তিক ইশতেহার প্রণয়ন ছিল সফলতার কারণ যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের
জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শোষন নির্যাতন ও নিপীড়ণের হাত থেকে মুক্তির সুবাতাস দেখতে পাচ্ছিল। ইতিপূর্বে
ছাত্রদের এগারো দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সমর্থিত হওয়ায় ছাত্ররাও এই মহান নেতার নেতৃত্ব মেনে নেয়
এবং প্রচারাভিযানে তাঁরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বিজয় সময়ের দাবিতে
পরিণত হয়।
নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
ক. এই নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এ দেশের
সিংহভাগ জনগোষ্ঠী অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইতিপূর্বে তার ঘোষিত ঐতিহাসিক ছয় দফা
প্রকৃত অর্থেই এদেশের মানুষকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শোষনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছিল যার
প্রতিফলন এই নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
খ. গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জনগণের ভূমিকা আরেকবার জোরালোভাবে প্রতিফলিত হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে জানান দেয় যে, তাঁরা তাঁদের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের
মাধ্যমেই আদায় করে নিতে প্রস্তুত আছে। পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ দল বিশেষ করে
পি. পি. পি কে একটি আসনেও জয়ী হতে দেয় নি এটি তার বড় প্রমাণ।
গ. এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালিরা জাতীয়তাবোধে দারূণভাবে উজ্জীবিত হয়। দিন মজুর থেকে শুরু করে সরকারী
কর্মকর্তাদের মাঝেও সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির কামনা প্রবলভাবে জেগে ওঠে।
এভাবে তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন এবং তাঁদের প্রিয় রাজনীতিক দল এদেশের মানুষের দুঃখ দূর্দশা
দূরীভূত করতে পারবেন তাঁদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে।
ঘ. এই নির্বাচন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে সংগঠিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ উপাদান হিসেবে
ভূমিকা পালন করেছিল। নির্বাচনে বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে কালক্ষেপন করতে দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানিদের হীন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পেরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন
যাতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ঙ. বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই নির্বাচনের প্রভাব অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। কেননা জনগণ
শাসনতান্ত্রিকভাবেই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় নির্বাচনে বিপুলভোটে আওয়ামী লীগকে জয়ী করে।
কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সে আশা পূরন হতে দেয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে
ক্ষমতা ছাড়তে গড়িমসি করে এবং নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তাঁরা নানা কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন।
উপায়ন্তর না দেখে ১৯৫২ সালের ভাষা সংগ্রামের জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং ছয় দফা, ১১ দফা ও উনসত্তুরের
গণঅভ্যুত্থানের দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়ে অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
শিক্ষার্থীর কাজ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করুন।
সারসংক্ষেপ :
১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই নির্বাচনের জন্য ইয়াহিয়া
খান ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের একজন বাঙালি
বিচারকের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। এই নির্বাচনে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে। নির্বাচনে
তাঁর দল প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ছয় দফার পক্ষে প্রচারে নামেন। নির্বাচনে আওয়ামী
লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকবর্গ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না
করলে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই বিজয় হয়।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মোট কতটি দল অংশ গ্রহণ করে?
ক) ২৩ খ) ১৮ গ) ২৪ ঘ) ১০
২. এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন?
ক) বিচারপতি আবদুস সাত্তার খ) মো.নুরুল আমিন গ) মোনায়েম খান ঘ) এম এন হুদা
৩. এই নির্বাচনে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে?
ক) আওয়ামী লীগ খ) মুসলিম লীগ গ) পিপিপি ঘ) মুসলিম লীগ( কনভেনশন)
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
‘ক’ সদ্য স্বাধীন একটি মুসলিম দেশ। দেশটির মধ্যে দুটি প্রধান জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলমান। একটি পর্যায়ে
শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। নির্বাচনে বাঙালি
জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
ক. সত্তর সালের নির্বাচন কী? ১
খ. নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম লিখুন। ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সত্তর সালের নির্বাচনের পটভূমি ও ঘটনা লিখুন। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সত্তর সালের নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র