সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকে ভারতে মোগল সাম্রাজ্য স্থিতিশীল অবস্থায় পৌছায়। স¤্রাট আকবরের সময় থেকে সম্রাট
আওরঙ্গজেবের শাসনকাল পর্যন্ত (১৫৫৬-১৭০৭ খ্রি.) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তার লাভ করে। এ
সময়ের মোগল শাসকদের জনহিতকর বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মোগল সাম্রাজ্য উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে।
তা সত্তে¡ও এক সময় সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মোগল সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে
স¤্রাট আকবরের রাজ্য বিস্তার, তাঁর প্রশাসনিক নীতি, ভ‚মি শাসন ব্যবস্থা, পরবর্তী সম্রাটগণের কৃতিত্ব, মোগল আমলে
ভারতের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
ইউনিট সমাপ্তির সময় ইউনিট সমাপ্তির সর্বোচ্চ সময় ২ সপ্তাহ
আকবরের ক্ষমতা গ্রহণ
মুখ্য শব্দমালা আকবর, পানিপথ, রাজপুতনা, কাবুল, কান্দাহার
১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রæয়ারি পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর
মাত্র ১৩ বছর বয়সে জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ আকবর নাম ধারণ করে
দিল্লির মোগল সিংহাসনে আরোহণ করেন। মধ্যযুগের মুসলিম শাসকদের মধ্যে
সাম্রাজ্যের সংগঠক ও বিজেতা হিসেবে সম্রাট আকবর অনন্য স্থান দখল করে
আছেন। ইতিপূর্বে সুলতানি আমলে একমাত্র আলাউদ্দীন খলজী সর্বভারতীয়
সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্রাট আকবর ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬০১ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত তাঁর রাজ্য জয় ও সা¤্রাজ্য বিস্তৃতি নীতি অব্যাহত রাখেন। এ সময়ের মধ্যে
তিনি উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদী এবং পশ্চিমে হিন্দুকুশ থেকে পূর্বে
ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সম্রাট আকবর যখন ক্ষমতা গ্রহন করেন তখন মোগল সাম্রাজ্য পাঞ্জাব, দিল্লি ও
আগ্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবর
আফগান শাসক আদিল শাহ সুরের সেনাপতি হিমুকে পরাস্ত করেন। মোগল
শাসনের ইতিহাসে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল চ‚ড়ান্ত মীমাংসাত্মক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে
জয়ের ফলে ভারতে মোগল শক্তি স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভারতে
আফগানদের আধিপত্যের অবসান হয়। এর ফলে মোগল
সাম্রাজ্যের প্রকৃত ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয় এবং মোগল সাম্রাজ্য
বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়।
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর সম্রাট আকবর ভারতের পূর্বাঞ্চলে
রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন। তিনি বৈরাম খানের সাহায্যে
গোয়ালিয়র, আজমীর ও জৌনপুর অধিকার করেন। ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে
আকবরের সেনাপতি আদম খান ও পীর মুহম্মদ মালবরাজ
রাজবাহাদুরকে পরাজিত করে মালব জয় করেন।
গন্ডোয়ানা অধিকার- ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর কারা প্রদেশের
শাসনকর্তা আসফ খানকে গন্ডোয়ানা জয় করার জন্য প্রেরণ করেন।
কারার বীরাঙ্গনা রাণিমাতা দুর্গাবতী দেশ রক্ষার্থে যুদ্ধেক্ষেত্রে প্রাণ
বিসর্জন দেন। গন্ডোয়ানা থেকে হলে বহু ধনরতœ মোগলদের হস্তগত
হয়।
রাজপুতনা অভিযান- সম্রাট আকবর ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে খাজা
মঈনউদ্দিন চিশতীর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আজমীর যাত্রার
সময় কৌশলী নীতি অবলম্বন করে অম্বর বা জয়পুরের রাজা
বিহারীমলের বশ্যতা লাভ করেন। তিনি বিহারীমলের কন্যাকে
বিবাহ করেন করেন এবং বিহারীমলের পুত্র ভগবান দাস ও পৌত্র
মানসিংহকে মনসবদার রূপে নিয়োগ করেন। আকবর ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ
সম্রাট। তিনি রাজপুতদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে আফগানদের ধ্বংসের
কৌশল গ্রহণ করেন। তাঁর এই মৈত্রী নীতি ফলপ্রসূ হয়েছিল। ইতোমধ্যে
যোধপুরও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে। কিন্তু মেবারের রানা উদয়সিংহ
কিছুতেই মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না। এছাড়া
উদয়সিংহ পলাতক মালবরাজ রাজবাহাদুরকে আশ্রয় দান করে আকবরের
বিরাগভাজন হয়েছিলেন। ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে আকবর মেবারের রাজধানী
চিতোর আক্রমণ করেন। উদয়সিংহ নিকটবর্তী পর্বতে গিয়ে আত্মগোপন
করেন। উদয়সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র প্রতাপসিংহ ও পৌত্র অমরসিংহ
মোগলদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালান। প্রতাপসিংহ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের
যুদ্ধে এবং ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে অমরসিংহ মানসিংহের নিকট পরাজয় বরণ
করেন। আকবর তাঁর জীবদ্দশায় সমগ্র মেবার মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
করতে পারেন নি। পরবর্তীতে আকবর রনথম্ভোর, কালিঞ্জর, বিকানী প্রভৃতি
রাজ্য জয় করেন। রাজপুতনা এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে আকবর
গুজরাট ও সুরাট অধিকার করেন।
বাংলা অধিকার- ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শেষ আফগান শাসক দাউদ খান
কররানি মোগল সেনাবাহিনীর হাতে রাজমহলের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত
হলে বাংলা মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। তবে ঢাকাসহ পূর্ব বাংলার কয়েকজন
প্রভাবশালী জমিদার মোগল বাদশার আনুগত্য অস্বীকার করে সতের শতকের
প্রথম দশক পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন।
কাবুল ও কান্দাহার জয়- আকবরের বৈমাত্রেয় ভাই কাবুলের শাসনকর্তা মির্জা
মুহম্মদ হাকিম উত্তর ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়া কিছু বিদ্রোহীদের
প্ররোচনায় ভারত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সম্রাট আকবর এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে কাবুল আক্রমণ করেন। তিনি
আকবরের রাজদরবার
আকবরের সাম্রাজ্য
বিদ্রোহী ভাইকে পরাজিত করে কাবুল অধিকার করেন। তিনি ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার দখল করে রাজ্যের উত্তর পশ্চিম
সীমান্তে নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম হন। পরবর্তীকালে তিনি কাশ্মীর, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান জয় করে সমগ্র উত্তর ভারতের
একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে বলখ ও বদখশান অধিকার করে আফগান উপজাতি উজবেগ ও
ইউসুফজাইদেরকে নিয়ন্ত্রন করেন।
দাক্ষিণাত্যে রাজ্য বিস্তার- সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যে আহমদনগর, বিজাপুর, গোলকুন্ডা, বিদর এবং খান্দেশ
এই পাঁচটি স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিল। এদের মধ্যে আহমদনগর ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। আকবর প্রথমে দূত পাঠিয়ে
এসব রাজ্যের সুলতানদের মোগল আধিপত্য মেনে নেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু একমাত্র খান্দেশের সুলতান স¤্রাট আকবরের
আনুগত্য স্বীকার করে। ফলে আকবর সমরাভিযানের প্রস্তুতি মনোনিবেশ নেন। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে মোগল বাহিনী আহমদনগর
অভিযানে বের হয়। আহমদনগরের রাণী চাঁদ সুলতানা আকবরকে বেরার প্রদেশ দান করে তাঁর সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন।
১৬০০ খ্রিস্টাব্দে চাঁদ সুলতানার মৃত্যুর পর আহমদনগর আকবরের সা¤্রাজ্যভুক্ত হয়।
ইতোমধ্যে খান্দেশের নতুন সুলতান মীরন বাহাদুর মোগল আনুগত্য অস্বীকার করেন। আকবর স্বয়ং খান্দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
যাত্রা করেন এবং রাজধানী বুরহানপুর অধিকার করেন। মীরন বাহাদুর আত্মরক্ষার্থে সুরক্ষিত আসিরগড় দুর্গে আশ্রয় নেন।
১৬০১ খ্রিস্টাব্দে আকবর দুর্ভেদ্য দুর্গ আসিরগড় অধিকার করেন। আসিরগড়ই ছিল আকবরের সর্বশেষ রাজ্য জয়। তিনি
আহমদনগর, বেরার ও খান্দেশ নিয়ে একটি সুবাহ গঠন করেন এবং যুবরাজ দানিয়েলকে এই সুবাহর শাসনকর্তা নিযুক্ত
করেন। এভাবে দক্ষিণে কৃষ্ণানদী পর্যন্ত আকবরের সাম্রাজ্য বিস্তৃত হলো।
সম্রাট আকবরের ক্ষমতা গ্রহণের সময় মোগল রাজত্ব পাঞ্জাব, দিল্লী ও আগ্রার মধ্যে সীমিত ছিল। আকবর দীর্ঘ ৪০ বছর
সমরাভিযান পরিচালনা করে তাঁর রাজ্য উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণানদী এবং পশ্চিমে হিন্দুকুশ থেকে পূর্বে
ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেন। এই বিশাল সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সম্রাট আকবর সম্মুখ সমরের পাশাপাশি কখনও
কখনও ক‚টনীতিরও আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সম্রাট আকবর কত বছর বয়সে দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন?
ক) ১২ খ) ১৩ গ) ১৪ ঘ) ১৫
২। বাংলা কত খ্রিস্টাব্দে মোগল সাম্রাজ্যেভুক্ত হয়?
ক) ১৫৭৬ খ) ১৫৭৭ গ) ১৫৭৮ ঘ) ১৫৭৯
৩। আকবরের শেষ সমরাভিযান কোনটি?
ক) হলদিঘাটের যুদ্ধ খ) বাংলা বিজয়
গ) আসির গড়ের যুদ্ধ ঘ) কাবুল ও কান্দাহার বিজয়
৪। রানী চাঁদ সুলতানা কোন মুসলিম রাজ্যের রানী ছিলেন?
ক) আহমদ নগর খ) বিজাপুর
গ) গোলকুন্ডা ঘ) খান্দেশ
৫। বাংলার শেষ আফগান শাসক ছিলেনÑ
ক) সুলেমান কররানি খ) তাজখান কররানি
গ) দাউদ খান কররানি ঘ) বায়জিদ কররানি
সজৃনশীল প্রশ্ন
সেলিম অল্প বয়সে পিতৃ সিংহাসনে আরোহন করেন। তার রাজ্যের রাজপুত ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল বীর ও
স্বজাত্যবোধে সচেতন যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত। রাজ্যের স্থায়ীত্ব ও সম্প্রসারনের জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
আতœীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ কর। উচ্চ রাজপদে নিয়োগ প্রদান, সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা করা, সর্বোপরি বশ্যতা স্বীকার না
করলে সমরাভিযান পরিচালনা করা প্রভৃতির মাধ্যমে তিনি দীর্ঘস্থায়ী এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. কত খ্রিস্টাব্দে পানি পথের দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়? ১
খ. মোগলদের সাম্রাজ্য সীমার বিবরণ দিন। ২
গ. উদ্দীপকের সেলিমের গৃহিত নীতির সাথে পাঠ্য পুস্তকের মোগল আমলের কোন সম্রাটের গৃহীত নীতির সাদৃশ্য পাওয়া
যায়? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. উক্ত সম্রাটের সা¤্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি বিশ্লেষণ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র