জারদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের যুগের নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে রাশিয়ার ইতিহাস। সেদিক
থেকে দেখলে এ বিপ্লবের সামাজিক পটভূমি তৈরি হয়েছিল ১৯ শতকে এসে। তখনকার ইউরোপে সমাজতন্ত্রবাদের উদ্ভব
ও বিকাশ পরিস্থিতি বদলে দেয়। পাশাপাশি ফ্রান্সে বুর্জোয়াদের সফল বিপ্লব নতুন করে ভাবতে শেখায় রাশিয়ানদের।
তাদের অনেক তাত্তি¡ক ও সমালোচকের পাশাপাশি বলশেভিক বিপ্লবের নেতারাও ফরাসি বিপ্লবের নানা ত্রæটি শনাক্ত করে
তাদের বিপ্লবকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়। তারা পরিস্থিতির দায় মেনে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হওয়ায় বিপ্লব
সফল করতে তেমন বেগ পায়নি। তবে ঐতিহাসিক এ বিপ্লবের কারণগুলোকে নানা দিক থেকে বিশ্লেষণের প্রয়োজন
রয়েছে। যেমন এর গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হচ্ছেÑ
সমাজতান্ত্রিক মতবাদ : ইউরোপের নানা স্থানে পুঁজিপতিদের শোষণ অতিক্রম করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নিরন্তর
সংগ্রাম, শ্রমিক কল্যাণ, বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও দ্রæত নগরায়নের সমস্যা মোকাবেলা করা হয়ে ওঠে অনেক বড়
চ্যালেঞ্জ। শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে দেখা যায় বহুমুখী উত্থান পতন। তখনকার সমাজ পরিবর্তনের
মুখে মানুষের অধিকার রক্ষা, শ্রমিক শ্রেণির কাজের সময়, বেতন ভাতা, ছুটি এবং সর্বোপরি পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে দানা
বেঁধে ওঠে তীব্র সামাজিক আন্দোলন যা সমাজতান্ত্রিক মতবাদ প্রতিষ্ঠার পথ করে দেয়। বিশেষ করে ব্রিটিশ সমাজতন্ত্রী
চার্লস ওয়েন, ফরাসি সমাজতন্ত্রী সেন্ট সাইমন, চার্লস ফুরিয়্যর, লুই বøাঙ্ক, প্রæধোঁ প্রমুখের পাশাপাশি রাশিয়ার সমাজতন্ত্রীরা
হয়ে ওঠেন সর্বেসর্বা। তখনকার রাশিয়ায় মিখাইল বাকুনিন কিংবা ক্রপোৎকিন প্রবর্তিত মতাদর্শ রাজনৈতিক পরিসরে
অনেক গুরুত্ব লাভ করে।
তত্ত¡ ও কাজের সমন্বয় : বিভিন্ন তাত্তি¡কের সফল উদ্যোগে তখনকার রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র সহজেই রাজনৈতিক মতাদর্শে
পরিণত হয়। তবে ইউরোপের সমাজ ও রাজনীতিতে সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করার পাশাপাশি এর
প্রয়োগ করাটা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পরিসর ও রাজনীতির মতাদর্শের দিক থেকে এর প্রয়োগ, লক্ষ্য নির্ধারণ
ও উপযোগিতা নিশ্চিত করাটা সফল বিপ্লবের জন্য জরুরি হয়ে দেখা যায়। বিশেষ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এসময় অগ্রণী
ভূমিকা পালন করে তত্ত¡ ও কাজের সমন্বয় করে দিয়েছিলেন যা বলশেভিক বিপ্লবকে সফল করতে পথ দেখায়।
তাত্তি¡ক উন্নয়ন : অনেক সীমাবদ্ধতা হেতু তাত্তি¡কদের পক্ষে বিপ্লবের পদ্ধতিগত দিক ও পরিসীমা নির্ধারণ সম্ভব হয়ে
ওঠেনি। ফলে প্রাথমিক দিকের সমাজতন্ত্রীদের কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী বলা হয়। তাদের সমাজতান্ত্রিক মতবাদের নানা ক্ষেত্রে
বাস্তব ও পরিপূর্ণ রূপরেখা, যৌক্তিক প্রয়োগ পদ্ধতি এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে সফলতা অর্জনের পথ পরিক্রমা নিশ্চিত
করেন কার্ল মার্কস। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক খ্যাত কার্ল মার্কসের নির্দেশিত পথকে সামনে রেখেই ১৯ শতকের
শেষদিকে ইউরোপের নানা দেশে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের সমাজতান্ত্রিক দল। বলতে গেলে রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি
তেমনিভাবেই গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে লেনিন মার্কসের নির্দেশিত পথে কাজ করেন বলেই সফলতার
মুখ দেখে বলশেভিক আন্দোলন।
রাশিয়ার ভঙ্গুর সমাজ কাঠামো : ১৮ শতক থেকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোয় আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে নানা
পরিবর্তন ঘটে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নত জীবনধারা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিকাশের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এ এলাকা।
সেদিক থেকে বিচার করতে গেলে রাশিয়ায় জারদের নানা দমননীতি তাদের উন্নয়ন ব্যহত করে। নানা দিক থেকে পিছিয়ে
পড়ে তাদের সমাজ কাঠামো একটি ভঙ্গুর অবস্থানে চলে যায়। তারা ইউরোপের সামাজিক বাস্তবতায় একেবারে তলানিতে
পড়ে থাকে। উদারনৈতিক চিন্তাধারা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি, কল্যাণমুখী প্রশাসন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিনির্ভর শিক্ষা
ব্যবস্থার কোনো ছাপ ছিল না তখনকার রাশিয়ায়। জারের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, শোষণ আর অত্যাচার থেকে
মুক্তি পেতে সব মানুষের মনে তখন কাজ করে বিশেষ তাড়না। তারা চলমান সামন্ত সমাজ কাঠামো এবং জারের
স্বৈরতান্ত্রিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতেই সংগ্রাম করেছে। সেদিক থেকে ধরলে রাশিয়ার ভঙ্গুর সমাজ কাঠামো বলশেভিক
বিপ্লবের পথকে সুগম করেছিল।
জারতন্ত্রের অযোগ্য শাসন : জারতন্ত্রের অযোগ্যতাই রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পথ সুগম করেছিল। দেশাভ্যন্তরে
অত্যাচারী শাসনের বিপরীতে ১৮৫৪-৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ে জারতন্ত্র জনগণের আস্থা হারায়। মানুষ
তখন থেকে মনেপ্রাণে জারদের ঘৃণা করতে শুরু করে। পক্ষান্তরে ১৯০৫ সালে জাপানের সাথে যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়
জারদের অবস্থান ভুলুণ্ঠিত করে। অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয় আর অনেক সৈনিকের প্রাণহানিও
বিচলিত করে সবাইকে। এসব ঘটনাপ্রবাহ ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে জারতন্ত্রের অযোগ্যতাকে প্রকট
করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার মানুষ দুর্বল হওয়া সত্তে¡ও অত্যাচারী ও অযোগ্য জারতন্ত্রের অবসানকল্পে বিপ্লবী
বলশেভিকদের স্বাগত জানাতে সময় নেয়নি।
শ্রমিক অসন্তোষ : রাশিয়ায় দ্রæত শিল্পায়ন ঘটতে থাকে উনিশ শতকের সত্তরের দশকে এসে। সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের
শিল্পনীতি এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার ভূমিদাস শ্রেণি শিল্পায়নের সাথে সাথে শ্রমিকে রূপান্তরিত হলেও
তাদের জীবন ছিল খুবই নি¤œমানের। বেতন ভাতা এবং কাজের সময় নিয়ে কোনো সরকারি নীতিমালা ছিল না। পক্ষান্তরে
রাশিয়াতে শ্রমিক ধর্মঘট এবং ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ থাকার ফলে এরা ছিল চরমভাবে শোষিত এবং নির্যাতিত। ঠিক এমনি
পটভূমিতে সমাজতান্ত্রিকরা তাদের সাম্যবাদী মতাদর্শ নিয়ে শ্রমিক শ্রেণিকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখায়। তারা সরাসরি
প্রলেতারিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠা, ভূমির উপর সামাজিক মালিকানা আরোপ, কলকারখানা জাতীয়করণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খুব
সহজেই নির্যাতিত শ্রমিকের মনকে দোলা দিতে সক্ষম হয়। বাগ্মী নেতা লেনিনের উপযুক্ত উপস্থাপনা ও নেতৃত্ব শ্রমিক
শ্রেণিকে সহজেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলে অসন্তুষ্ট শ্রমিকরাই বিপ্লবী শ্রেণিতে পরিণত হয়ে বলশেভিক
বিপ্লবে মূল ভূমিকা পালন করে। এদিক থেকে বিচার করতে গেলে শ্রমিক অসন্তোষই বলশেভিক বিপ্লবের পথ করে দেয়।
সার্ফদের পুনর্বাসন জটিলতা : ভূমিদাসদের দুর্গতি লক্ষ করে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এ প্রথার বিলোপ সাধনে কার্যকর
পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা শেষ অবধি ফলপ্রসূ হয়নি। এদিকে ভূমিদাস শ্রেণির দুর্দশা, তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন
প্রভৃতি বেড়ে যায় নানা দিক থেকে। রাশিয়ায় বিদ্যমান সুদীর্ঘ সামাজিক অস্থিরতার এটাও অন্যতম কারণ হয়েছিল।
ভূমিদাসরা সামন্ত প্রভুর হাত থেকে গ্রামীণ সংস্থা মীর এর অধীনে ন্যস্ত হলেও তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন
ঘটেনি। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে সামন্তবাদ পতনের পটভূমিতে ভূমিদাসরা স্বাধীন কৃষকে পরিণত হয়। তবে রাশিয়ার
সমাজে ভূমিদাসরা কৃষকে পরিণত না হয়ে পত্তন করে ভূমিহীন শ্রেণির। আর এজন্যই ১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের
গোড়ার দিকে রাশিয়ায় শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি আত্মপ্রকাশে ব্যর্থ হয়। রাশিয়ার সমাজে একটি অভিজাত, অপরটি ভূমিহীন
বরাবরই এ দুটি শ্রেণি বিদ্যমান ছিল। এক্ষেত্রে ১৯ শতকের শেষদিকে একটি সামাজিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় রাশিয়ার প্রতি
এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র সতেরো জন অভিজাত শ্রেণির, আর বাকি সবাই ভূমিহীন। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রায় পুরো
জমিই ছিল রাজপরিবার এবং সামন্ত অভিজাতদের দখলে। এক্ষেত্রে ভূমিহীন শ্রেণির সামাজিক অসন্তোষ, বিদ্রোহ ইত্যাদি
বলশেভিক বিপ্লবের পটভূমি প্রস্তুত করে।
লেখক দার্শনিকদের ভূমিকা : বলশেভিক বিপ্লবের বেলায় ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের মতই কিছু বিষয় মিলে যায়।
সেক্ষেত্রে ফরাসি কবি, লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও অধ্যাপকগণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তেমনি বিষয়
লক্ষ করা যায় রাশিয়ার ক্ষেত্রে। জার্মান লেখক কার্ল মার্কসের লেখা বলশেভিক বিপ্লবে বেশ প্রভাব
বিস্তার করে। অন্যদিকে রুশ সাহিত্যিক পুসকিন, লিও টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি, ইভান তুর্গনেভও জারদের প্রতিবাদ জানাতে থেমে
থাকেননি। তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীতে জার শাসনের অক্ষমতা, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব, রাষ্ট্রযন্ত্রের আগ্রাসী রূপ, গণমানুষের
উপর শোষণ-নির্যাতন আর নানা অন্যায়ের চিত্র ফুটে উঠতে দেখা যায়। এতে সহজেই সাধারণ মানুষের মাঝে জারবিরোধী
মনোভাব বিস্তার লাভ করে। সমকালীন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কবি, দার্শনিক ও সাহিত্যিক রাশিয়ার উদারপন্থী অভিজাত
স¤প্রদায়কে সমাজ পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত করে। তারাও বলশেভিক বিপ্লব সংগঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র