মহামন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিস শান্তি সম্মেলন প্রকৃত অর্থে ইউরোপের শান্তি আনতে পারেনি। জার্মানির ওপর জোরপূর্বক
চাপিয়ে দেয়া ভার্সাই চুক্তির অপমানজনক শর্তগুলোকে সামনে রেখে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। ইতিহাস
জয়ীর পক্ষে, পরাজিত শক্তির ক্ষেত্রে সবকিছু হয় নেতিবাচক এ কথাটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম
মহাসত্য। বিশেষ করে প্রচলিত ইতিহাসে জার্মান নেতা হিটলার এবং তার মিত্র ইতালি ও জার্মানির ভূমিকাকে যেভাবে
উপস্থাপন করা হয় সেখানে মূল ঘটনা অনেকটাই বাদ পড়ে যায়। পরস্পর আক্রমণ প্রতি আক্রমণের প্রচলিত রীতি বাদ দিলে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিছক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এক্ষেত্রে প্রচলিত ঐতিহাসিক কাহিনীগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে
অক্ষশক্তি ও জার্মান নেতা হিটলারের পৈশাচিক রুদ্রমূর্তি নানা ঘটনার ঘনঘটায় বার বার উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব ঘটনার
প্রায় প্রতিটিই পরিস্থিতি বিচারে অর্ধসত্য এবং অনেক ক্ষেত্রে অসত্যও বটে। তাই প্রচলিত ইতিহাসের এ বর্ণনাগুলোকে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনায় পুনঃপাঠ ও তার কার্যকারণ সম্পর্কভিত্তিক আলোচনা করা জরুরি। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
প্রাক্কালে বিশ্বজুড়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা নতুন করে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে প্রণোদিত করে বিশ্বনেতাদের। বিশেষ করে
জার্মানির জন্য অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির পাশাপাশি প্যারিস শান্তি সম্মেলনের ব্যর্থতা আরেকটি যুদ্ধের পথ করে দেয়। দুটি
বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে গ্রেট ডিপ্রেশন তথা মহামন্দাকেও। তাই
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ও কারণ বোঝার ক্ষেত্রে দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীর ইউরোপের ইতিহাসও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মহামন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ১৯২৯ সালের অক্টোবর থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি ছন্দপতন লক্ষ করা গেছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বড় আকারের এই ছন্দপতনকে মহামন্দা তথা দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রথম
বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে জার্মানির ধ্বংসস্তূপের বিপরীতে বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিমান রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
তারা সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে অন্যদের ওপর দাপট দেখাতে শুরু করে। একইসাথে রেনেসাঁ-পরবর্তীকালে
পশ্চিমা বিশে^ ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে পুঁজিবাদ। আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিয়মই হচ্ছে এখানে মাঝে মাঝে মন্দাভাব
দেখা দেয়। তবে ঝড়ের বেগে এসে এই মন্দাভাব ও পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে গ্রাস করবে, তা ছিল কল্পনাতীত।
হঠাৎ করে সংকট উপনীত হওয়ার অনেকগুলো শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে বেড়ে যায় বেকার ও চাকরি
প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা। ১৯২৯ সালের এই মন্দা অতীতে ঘটে যাওয়া সব ধরনের রেকর্ড ভঙ্গ করে। আর সেদিক থেকে
ধরতে গেলে এর মহামন্দা নামকরণ স্বার্থক। এর প্রমাণ হিসেবে এক যুক্তরাষ্ট্রেই ১৯২৯-৩৫ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার
দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। য্ক্তুরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল
মোটরস প্রতিবছর পাঁচ মিলিয়ন গাড়ি তৈরি করত। তবে ১৯৩২-এ দেখা যায় এর গাড়ি নির্মাণের সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস
পেয়েছে। বিশ্ব বাজারে গাড়ির চাহিদা না থাকায় এমনটি হয়েছিল। আর তা থেকেই ধরে নেয়া যায় মহামন্দার প্রভাব পুরো
বিশ্বে পড়েছিল।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা কারণে মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছিল। শিল্পখাতের প্রসার ও এর সাথে পাল্লা দিয়ে পুঁজিবাদের
সংকট চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শিল্পখাতের গুরুত্ব অনেক ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এসময় শিল্পখাতে
উন্নয়নকাজ অনেক বিস্তৃত পরিসরে শুরু করে। এদেশের নীতিনির্ধারকগণ শিল্পখাতের বিপর্যয় চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে
আরো নানা বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে কৃষিজাত পণ্যের অনর্থক দাম কমানোও মহামন্দার মত ঘটনাকে প্রণোদিত
করতে পারে। তবে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রভাবে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুই দশক না পেরোতেই ধরা পড়ে ভার্সাই চুক্তির সারশূন্যতা আর লীগ অব নেশনসের অকর্মণ্য অবস্থান।
১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নতুন করে কেঁপে ওঠে আরেক দফা আক্রমণ আর হত্যাযজ্ঞের মর্মন্তুদ ঘটনায়। এরপর ২
সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ৬ বছর ১ দিন। তারপর আবার শান্ত হয়ে আসে ইউরোপের বিভিন্ন
রণাঙ্গন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা কিংবা আটলান্টিক অঞ্চলের পাশাপাশি আফ্রিকার নানা স্থান।
সেই অক্ষশক্তি জার্মানের পক্ষে এবার যোগ দিয়েছে ভিন্ন মিত্র ইতালি, জাপান, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া আর বুলগেরিয়া। আর
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মিত্রবাহিনীতে এবারের বড় আকর্ষণ রাশিয়া। রুশপন্থী ইতিহাসবিদদের ক্রমাগত পুঁজিবাদ ভর্ৎসনা আর
অতিরঞ্জিত বিবরণ থেকে বোঝা কঠিন হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসলে অক্ষশক্তি-মিত্রশক্তির মধ্যে হয়েছে, নাকি রুশ
বনাম পুরো বিশ্ব হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয় অক্ষশক্তি আর মিত্রশক্তির মধ্যে। আর এবারে
মিত্রশক্তির পুরোভাগে ছিল রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল। ফলাফলটা শেষ পর্যন্ত
এবারও বিপক্ষে গেছে অক্ষশক্তির।
মিত্রশক্তির ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাশিয়ার নেতৃত্বে জোসেফ স্ট্যালিন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান,
যুক্তরাজ্যের উইনস্টন চার্চিল, চীনের চিয়াং কাইশেক, ফ্রি ফ্রান্স আন্দোলনের নেতা দ্য গল ফরাসিদের নেতৃত্বে রয়েছেন।
থার্ড রাইখ সরকারের প্রধান, নাৎসি বাহিনীর পুরোধা, এসএস এবং এসএ ফোর্সের উদ্ভাবক, জার্মানির বহুল আলোচিতসমালোচিত নেতা অ্যাডলফ হিটলার ছিলেন অক্ষশক্তি তরফে নেতৃত্বের পুরোভাগে। ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টি নেতা বেনিতো
মুসোলিনি এবং জাপানের সম্রাট হিরোহিতো ও প্রধানমন্ত্রী তোজো ছিলেন স্ব স্ব বাহিনীর নেতৃত্বে। ১৯৩৯ সালের ১
সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যে দিয়ে বলতে গেলে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে
বিশ্বজনীন রূপ লাভ করে যখন জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে বসে। এরপর হিরোশিমা নাগাসাকিতে বর্বর আক্রোশে
যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক বোমা নিক্ষেপ ১৯৪৫ সালে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরই মাঝে জার্মানি আত্মসমর্পণ
করলে একটি গোপন বাংকারে আত্মহননের মাধ্যমে জীবনের সব গøানি মুছতে চেষ্টা করেন অ্যাডলফ হিটলার। ১৯১৯ সালে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ক্যালেন্ডারের পাতায় দুই দশকের বেশি সময় পার হয়নি; ঠিক ১৯৩৯ সালেই শুরু হয়ে যায়
আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ। আর ফলাফল হিসেবে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মিত্রবাহিনীর প্রায় ১৬ লক্ষ সৈন্য নিহত হয়। এর বাইরে ৪৫
লাখের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]