ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলাফল হয়েছিল ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী।

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলাফল হয়েছিল ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। ব্যাপক হয়েছিল এই অর্থে যে, দেশের অর্থনৈতিক,
রাজনৈতিক, সামাজিক, বৈদেশিক সম্পর্কে, মানুষে জীবন এবং চিন্তা-চেতনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ বিপ্লবের প্রভাব
অনুভ‚ত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, শিল্প বিপ্লবের এ প্রভাব ইংল্যান্ড তথা পৃথিবীরঅন্যান্য দেশে এখনও ক্রিয়াশীল রয়েছে। সে
অর্থে এ প্রভাব হয়েছে সুদূরপ্রসারী। প্রভাবগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোÑ
অর্থনৈতিক প্রভাব
কায়িক পরিশ্রমের পরিবর্তে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উৎপাদনের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় কারখানা
প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর ফলে আগের তুলনায় শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধিপায়। এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের হাতে যে পরিসংখ্যান
রয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায় যে ১৮০১ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত শিল্পোৎপাদন বার্ষিক শতকরা চার ভাগেরও বেশি হারে
বৃদ্ধি পায়। ফলে উক্ত সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ডের মোট জাতীয় উৎপাদনে শিল্পখাতের অবদান শতকরা ২৩.৪ ভাগ থেকে
৩৬.৫ ভাগে বৃদ্ধি পায়। অপরপক্ষে কৃষিখাতের উৎপাদনের অবদান শতকরা ৩২.৫ ভাগ থেকে কমে শতকরা ২২ ভাগে
দাঁড়ায়। অনুরূপভাবে শিল্পখাতে নিয়োজিত জনসংখ্যা উক্ত সময়ে যখন শতকরা ৩০ ভাগ থেকে ৪৩ ভাগে বৃদ্ধিপায়
কৃষিকাজে নিয়োজিত জনসংখ্যা শতকরা ৩৬ ভাগ থেকে ২২ ভাগে নেমে আসে। এভাবে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড
কৃষিপ্রধান দেশ থেকে শিল্প প্রধান দেশে রূপান্তরিত হয়। সংগে সংগে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিপায়। ১৭৬০ ও ১৮৫০
সালের মধ্যে আমদানি বৃদ্ধিপায় ১২ গুণ, আর রপ্তানি বৃদ্ধিপায় ১৩ গুণ। আমদানী হতো কাঁচামাল এবং খাদ্যশস্য, আর
রপ্তানি হতো শিল্পজাত পণ্য। ইংল্যান্ডের শিল্পপণ্য পৃথিবীর সব দেশে রপ্তানি হতো এবং এজন্য ইংরেজদের বলা হতো
দোকানদার জাতি। একই সংগে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এভাবে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি, খনিজ
সম্পদের উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণও বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডে এক নতুন
যুগের সূচনা হয়। এর প্রধানতম প্রমাণ হলো মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি। এক কথা আয়ের বন্টনের ক্ষেত্রে দারুণ বৈষম্যের
সৃষ্টিহয়; কিন্তু মাথাপিছু আয় যে বৃদ্ধিপেয়েছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রসংগে উল্লেখ্য যে, তখনকার দিনে
ইংল্যান্ডের কৃষিখাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলছিল।
পুঁজিবাদের উদ্ভব
ব্যপক শিল্পায়ন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। এই ব্যবস্থায় যে মূলধনের প্রয়োজন হয় তা সংগৃহীত হয় পুঁজিপতি
কর্তৃক। এভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার সবটায় পুঁজিপতিদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে বিক্রি করে
তারা লাভবান হয় এবং এভাবে সঞ্চিত মূলধনদ্বারা আরও নতুন শিল্প গড়ে তোলে। একই সংগে নতুন পুঁজিপতিরা কারখানা
স্থাপনে এগিয়ে আসে। এভাবে শিল্পোৎপাদন ব্যবস্থার পূর্ণ মালিকানা পুঁজিপতিদের হাতে চলে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় কারখানা গড়ে উঠে এবং এসব কারখানায় গ্রাম থেকে আগত বিপুলসংখ্যক মানুষ শ্রমিক
হিসেবে নিয়োজিত হয়। ফলে দেশে নতুন নতুন শহর গড়ে উঠে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরাতন শহরের জনসংখ্যা
বৃদ্ধি পায়। এসব শহরের মধ্যে ম্যানচেস্টারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এ শহরটি ছিল বয়নশিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এভাবে
দেশের মোট জনসংখ্যায় শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যা আনুপাতিকভাবে বেড়ে যায়। এক হিসেব মতে আঠার শতকের
মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ শহরে বসবাস করত। জনসংখ্যা বৃদ্ধিপেয়ে ১৮০১ এবং ১৮৪১ সালে
দাঁড়ায় যথাক্রমে ২৫ ও ৬০ ভাগে। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী জনসংখ্যা দ্রæত কমে যায়, কোনো কোনো এলাকা প্রায়
জনশূন্যহয়ে পড়ে।
সামাজিক প্রভাব
আমরা লক্ষ্য করেছি যে ইতোপূর্বে সমাজে বুর্জোয়াবা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এবার শিল্প
বিপ্লবের ফলে বুর্জোয়াশ্রেণী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। কেননা ধনী ব্যবসায়ী এবং উঠতি শিল্পপতিদের প্রায় সবাই ছিল
বুর্জোয়াশ্রেণীভ‚ক্ত। অভিজাত শ্রেণী এতদিন যে ক্ষমতা ভোগ করে আসছিল তা লোপ পায় নি সত্য, কিন্তু আগের
তুলনায়তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়। একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে বুর্জোয়াশ্রেণী প্রাধান্য
বিস্তার করে। ইংল্যান্ডে অনুরূপঘটনা ঘটেছিল শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে।
শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব
শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব শিল্প বিপ্লবের অন্যতম একটি দিক। নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠলে গ্রাম ছেড়ে অনেকে শহরে এসে
শ্রমিক হিসেবে জীবনযাত্রা শুরু করে। এভাবে ভ‚মিহীন, চাকুরি-সম্বল শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়। এরা কারখানায় কঠোর
পরিশ্রম করে কম মজুরিতে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারে একার উপার্জনে সংসার চলতো না বলে নারী
ও শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হতো। কারখানাগুলো নোংরা, অস্বাস্থ্যকর এবং যন্ত্রপাতিগুলো এমনভাবে রাখা
হতো যে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘিœত হতো। এ অবস্থায় শিশু ও নারী শ্রমিকদের ১৬-১৭ ঘন্টা পরিশ্রম করতে
হতো। শ্রমিকদের বাসস্থানও ছিল একইভাবে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বলা যেতে পারে তারা বস্তিতে বসবাস করতো। শিল্প
বিপ্লবের প্রাথমিক যুগে শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশারকথা সমকালীন অনেক লেখায়, এমনকি সরকারি প্রতিবেদনেও পাওয়া
যায়। এভাবে শিল্প বিপ্লবের ফলে একদিকে যেমন ধনী পুঁজিপতিও ব্যবসায়ী শ্রেণীর উদ্ভব হয় অপর দিকে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিক
শ্রেণী ও গড়ে উঠে।
সমাজতান্ত্রিক মতবাদ
চিন্তাবিদ ও দার্শনিকরা সমাজে সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্য এবং শ্রমিকদের দারিদ্র্যের কথা ভেবে এর প্রতিকারের
চিন্তা করেন। তাঁরা এ মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, শ্রমই হলো সম্পদের উৎস, আর কাঁচামাল প্রাকৃতিক সম্পদ। এতে
সকলের সমান অধিকার রয়েছে। শ্রমিক কাঁচামালকে ভিত্তি করে তার শ্রমের দ্বারা যা উৎপাদন করে তার মুনাফা শ্রমিকেরই
প্রাপ্য। কারখানার মালিক প্রকৃতপক্ষে মুনাফার দাবিদার হতে পারে না। রাষ্ট্রের উচিত শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্ত¡করণের মাধ্যমে
শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এভাবে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের বিকাশ ঘটে, আর এ মতবাদের প্রধান তাত্তি¡ক প্রবক্তা হলেন কার্ল মার্কস।
রাজনৈতিক প্রভাব
শিল্প বিপ্লবের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। এক্ষেত্রে অনেকগুলো দিক শনাক্ত করা যায় যার দ্বারা
বিশেষে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হওয়ার দাবি রাখে। প্রথমত, রাজনৈতিক অঙ্গনেও শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব ও প্রভাব
অনুভ‚তহয়। শিল্পপতি ও বণিকদের যে শ্রেণী শক্তিশালী হয় তার ফলে ভ‚স্বামীও হুইগ রাজনীতিকদের একচেটিয়া অধিকার
লোপ পায়। রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমে পুঁজিপতিদের হাতে চলে যায়। দ্বিতীয়ত, নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্যে শ্রমিক
শ্রেণী সংঘবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে এবং ফলে ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন শুরু হয়। একই লক্ষ্যে শ্রমিক দল
গঠিত হয়। শ্রমিক শ্রেণী ধর্মঘট প্রভৃতির মাধ্যমে মালিকের নিকট তাদের দাবি পেশ করে। ফলে নি¤œতম মজুরী, কর্মক্ষেত্রে
শ্রম ঘন্টা, বাসস্থান, বীমা প্রভৃতি আইন পাশ হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিক শ্রেণী ভোটাধিকার লাভ করে। তৃতীয়ত, শিল্প
বিপ্লবের ফলে পার্লামেন্টের সংস্কারের আশু প্রয়োজন দেখা দেয়। কারণ এর ফলে অনেক নতুন শহর গড়ে উঠে এবং
অনেক পুরাতন শহর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে জনসংখ্যার ঘনত্বে ব্যাপক রদবদল হয় এবং এজন্যে পার্লামেন্টের সংস্কারের
প্রয়োজন দেখা দেয়। চতুর্থত, বেশি মুনাফারলোভে শিল্পপতিরা দেশের প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি পণ্য উৎপাদন করে। এ
বাড়তি পণ্য বিক্রির জন্যে বিদেশে বাজার দখলের প্রয়োজন দেখা দেয়। শিল্প বিপ্লবের আগেই ইউরোপীয় দেশগুলোর
মধ্যে উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। এবার সে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
প্রসংগক্রমে উল্লেখ্য যে, ইরোপের অন্যান্য দেশেও শীঘ্রই শিল্পোন্নয়ন শুরু হয়েছিল।
সারাংশ
অনেক বিশ্লেষক শিল্পবিপ্লবের কারণগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক কারণসমূহকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাদের মতে অর্থনৈতিক
কারণগুলো অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছিল। অনেকে চাহিদা বৃদ্ধিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।
পাশাপাশি সঞ্চয় বৃদ্ধির কারণে মূলধনের প্রাচুর্য এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি শিল্প বিপ্লবের পথ করে দেয়। এক্ষেত্রে
প্রয়োজনীয় সবগুলো কারণ ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে মিলে যাওয়ায় সেখানেই ঘটেছিল শিল্প বিপ্লব।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]