জাতিসংঘে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুধু একটি মুক্তি আন্দোলন নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার দলনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতিসংঘ মূলত যুক্ত হয়েছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ; এবং শরণার্থীদের
সহায়তা দানের মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনে
অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা চেয়ে তারবার্তা
পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্টের কাছে। সে সময়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ঢাকাস্থ প্রতিনিধির
সঙ্গে একটি বিশেষ বৈঠকও করেছিলেন তাঁরা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের উপর যে গণহত্যা সংঘঠিত হয়, তা
সারা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে সেদিন জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্ট এই গণহত্যাকে নিন্দা
করে একে ‘মানব ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সরকার গঠনের পর এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বের
জনমত ও রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায় করা। এ উদ্দেশ্যে মুজিবনগর সরকারের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদলকে
১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে জাতিসংঘ প্লাজায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে আপোষ
সম্ভাবনার পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ
প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্য পাঠানো হয় এবং এটি নিরাপত্তা পরিষদের অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই
প্রথম জাতিসংঘে বাংলাদেশের মানুষের বক্তব্য বাংলাদেশের প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপিত হয়।
দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রটিতে জাতিসংঘ সক্রিয় ছিল সেটা হচ্ছে শরণার্থীদের সাহায্য প্রদান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অমানবিক
নির্যাতন ও গণহত্যার কারণে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। এই
শরণার্থীদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে ব্যবস্থাপনা ও অর্থবলের প্রয়োজন ছিল, তা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে এককভাবে মেটানো
সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই ক্রান্তিকালে ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে জাতিসংঘ
ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালায়। শরণার্থীদের সহায়তার কাজে জাতিসংঘের এ সম্পৃক্তির ফলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম
কৌশলগতভাবেও লাভবান হয়। পাকিস্তান এবং আরো কিছু দেশ এ সংগ্রামকে পাকিস্তানের ‘আভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং ভারত
পাকিস্তান দ্ব›দ্ব বলে চিত্রিত করার যে অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল, জাতিসংঘের এই সাহায্যের ফলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত হাইকমিশনার সদরুদ্দিন আগা খান সহ উচ্চপদস্থ জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বিভিন্ন শরণার্থী
শিবির পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী,
ইউনিসেফ প্রভৃতি জাতিসংঘ-সংস্থা শরণার্থীদের জন্য কাজ শুরু করে।
অন্যদিকে, তৎকালে অধিকৃত-বাংলাদেশেও জাতিসংঘ ত্রাণ তৎপরতা শুরু করে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে জন আর
কেলির নেতৃত্বে ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ অপারেশন (ইউএনইপিআরও) ত্রাণ তৎপরতা শুরু করে। পরে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে
এই দায়িত্ব নেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদমর্যাদার পল ম্যাক্কি হেনরি। এ সময়ে মুজিবনগর সরকার অভিযোগ করে
যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা এ ত্রাণ কার্যক্রমের অপব্যবহার করছে। ১৬ নভেম্বর এ কার্যক্রমকে ‘পাকিস্তানী নিয়ন্ত্রণ মুক্ত’ করে
জাতিসংঘ নিজেই এর সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। এটি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রশাসনের উপর একটি নৈতিক
আঘাত।
১৯৭১ সালের জুন মাসে বিশ্ব ব্যাংকের উদ্যোগে প্যারিসে পাকিস্তান এইড কনসোর্টিয়ামের যে বৈঠক হয় তাতে তৎকালীন
পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত নতুন সাহায্য দিতে দাতাগোষ্ঠী অস্বীকার করে। ‘পূর্ব পাকিস্তান কার্যত
সরকারবিহীন রয়েছে’ বিশ্ব ব্যাংকের এ মন্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) আলোচ্যসূচিতেও বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা গুরুত্বপূর্ণভাবে উত্থাপিত
হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ বৃহৎ আকারের ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেয়। ১৯৭১ সালের
২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম জাতিসংঘ রিলিফ অপারেশনস ঢাকা (আনরড) নামে পরিচিত জাতিসংঘ
ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এবং একজন আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেলকে এর দায়িত্বভার দেয়া
হয়। স্যার রবার্ট জ্যাকসনের পরিচালনায় শুরু হয় এই জাতিসংঘ ত্রাণকার্য। এই কার্যক্রমের ব্যাপ্তির মুখে আনরডের নাম
কিছুদিনের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হল আনরব-এ, যার পুরো নাম বাংলাদেশে জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রম। ১৯৭৩
সালে ৩১ ডিসেম্বর যখন পরিকল্পনা অনুযায়ী আনরব তার জরুরী ত্রাণ এবং পুনর্বাসন তৎপরতা শেষ করে তখন এক
সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ওই সময় পর্যন্ত জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণকার্যের মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিল আনরবের ত্রাণকার্য।
বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্ক আরো জোরদার হয় যখন ১৯৭৩সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম
বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের
অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সফর দ্বারা জাতিসংঘ বাংলাদেশের জাতিগঠন প্রক্রিয়ায়
সমর্থন দান করে। এ সময়ে জাতিসংঘের সহায়তায় যুদ্ধকালীন সময়ে বিধ্বস্ত চালনা পোর্টে ডুবে যাওয়া জাহাজসমূহও
অপসারন করা হয়। এছাড়া ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফিরিয়ে আনতেও জাতিসংঘ
উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদান স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন
প্রচেষ্টা চালায়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদের আদর্শ ও নীতিমালার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। স্বাধীনতার
পরে বাংলাদেশের যে সংবিধান গৃহীত হয় তাতে এমন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও বাক্য রয়েছে যা সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘের
সনদ ও ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশের সংবিধানে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে: ‘আন্তর্জাতিক আইন
এবং জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা, এই সকল নীতি হবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি’
(অনুচ্ছেদ-২৫)। বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত এমন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও বাক্য রয়েছে যা
সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘের ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়টি সার্বজনীন
মানবাধিকারের ঘোষণার আলোকে প্রণীত হয়েছে, যা আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা,
স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রির নেতৃত্বে
একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির লক্ষ্যে তৎপরতা চালায়। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্রোর সময়ে
পাকিস্তান সরকারের প্ররোচনায় নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো প্রয়োগের কারণে পর পর দু’বার বাংলাদেশ জাতিসংঘের
সদস্য হতে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬ তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে
যোগদান করে। যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর
রহমান বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ করলেও এর পূর্ব
থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থায় সদস্যপদ লাভ করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে প্রথম জাতিসংঘ
সংস্থায় সদস্যরূপে স্বাগত জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। এর পর পরই বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেশিরভাগ
বিশেষায়িত অঙ্গ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র