আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয় স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয় স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠাÐা লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে এর
শুরু হয়েছিল এবং এর শেষ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে সে
সময়কার আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ এবং নেতৃস্থানীয় সামরিক ব্যক্তিরা প্রচÐ চাপের মধ্যে ছিলেন। তখন সরাসরি কোনো যুদ্ধ
হয়নি তবে এক রকম যুদ্ধের মহড়া চলতে থাকে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে স্নায়ুযুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়।
রণাঙ্গনে কোন যুদ্ধ না হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আরেকটি যুদ্ধ ঘটার আশঙ্কায় তটস্থ ছিল পুরো বিশ্বের
মানুষ। এক অর্থে তখনকার তৎকালীন বিশ্ব দুটি পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রায় দুভাগ হয়ে
গিয়েছিল । এ বিভাজনের মূলমন্ত্র হিসেবে মনে করা যেতে পারে পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের দ্ব›দ্ব। পুঁজিবাদী শিবিরের
নেতৃত্বে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গুলোর নেতৃত্ব দিত সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাদের অনুসরণকারী
দেশগুলোর মধ্যে এই দ্ব›দ্ব ছড়িয়ে পড়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন বিশ্বের নানা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে
হস্তক্ষেপ শুরু করে। এই একই পথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পা বাড়ালে ভয়াবহ এক যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যায় বিশ্ব। স্নায়ুযুদ্ধ ধারণা
আভিধানিকভাবে ধরতে গেলে স্নায়ুযুদ্ধ কথাটির উদ্ভব আজ থেকে অনেক দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১৩ এপ্রিল। কূটনৈতিক
ব্যক্তিত্ব বার্নাড বালুচ কলম্বিয়ার এক ভাষণে সর্বপ্রথমে প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি তার ভাষণে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন পুরো
বিশ্বের মানুষ এখন আর প্রতারিত হতে চায় না তারা এক ভয়াবহ স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে আছে। তবে তিনি স্নায়ুযুদ্ধ বলতে কোন
যুদ্ধাবস্থা বোঝাননি। এক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, কিন্তু কোথাও কোন যুদ্ধ হচ্ছে না কিংবা
রক্তপাত ঘটছে না।
¯œায়ুযুদ্ধ এমন একটি কৌশল যেখানে বিবাদমান পক্ষগুলো ভয়াবহ স্নায়বিক উত্তেজনার মধ্যে থাকবে একে অন্যের উপর
চাপ বৃদ্ধি করতে থাকবে কিন্তু সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি নেবে না। এক্ষেত্রে কোন দেশ সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি না নিলেও এমন
একটি পরিস্থিতি তৈরি করে রাখবে যা যুদ্ধ পরবর্তী কিংবা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দেবে।
সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি না থাকলেও এক্ষেত্রে এমন একটি যুদ্ধের আবহ তৈরি হবে যা এক অর্থে যুদ্ধ নয়, শান্তিও নয়।
বিভিন্ন জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের উত্থান পতন টানাপোড়েন এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কূটনৈতিক দ্ব›দ্ব সম্পর্কে তিক্ততা
কিংবা মতবিরোধ এ যুদ্ধকে প্রণোদিত করে। সম্পর্কের তিক্ততা, উত্তেজনা নিরসনে সরাসরি অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধ
নিষ্পত্তির চেষ্টা চালানো হলে তাকে আমরা সরাসরি যুদ্ধ বলি। কিন্তু ছায়া যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাস্তবতা হচ্ছে-বিবদমান প্রত্যেকটি
পক্ষ যুদ্ধ শুরু করতে চায়, কিন্তু করে না। তারা প্রত্যেকেই যুদ্ধের মহড়া দিতে থাকে কিন্তু সরাসরি রণাঙ্গনে নাম আর ঝুঁকি
নিতে চায় না। সশস্ত্র সংঘাতের ভয়ে প্রত্যেকে তটস্থ থাকলেও রণসমাবেশ এবং অস্ত্রের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কেউ কার্পণ্য
করেনি। ফলে যুদ্ধ না হলেও এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে যা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিবদমান
শক্তিশালী দুটি রাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ মনোবৃত্তি এক অর্থে বিশ্ববাসীর শান্তি বিনষ্টের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। পুরো
পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ না হলেও অনভিপ্রেত অর্থ একে এক ধরনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বলা যেতেই পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় দুটি বিবাদমান পক্ষ ছিল তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন
এবং যুক্তরাষ্ট্র। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় সোভিয়েত ইউনিয়নের
সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্ব›েদ্ব লিপ্ত হয়েছিল। এ দ্ব›েদ্বর নিরসনে কোন ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ তখন দেখা যায়নি তবে
সর্বক্ষণ এক রকম রণাঙ্গনের পরিবেশ বিরাজ করেছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সামরিক এবং অর্থনৈতিক জোট
গঠনের মাধ্যমে একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মহড়া দিতে থাকে তবে বিশ্বের বেশিরভাগ রণাঙ্গন তখন ছিল শান্ত।
রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মানসিকতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের নিরন্তর চেষ্টা তাদের
সামরিক মহড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেও একে অন্যের উপর আক্রমণের সাহস করেনি। ফলে রণাঙ্গনে যুদ্ধ না হলেও
আদর্শগত এবং মতাদর্শিক ক্ষেত্রে সংঘাত চলতে থাকে যা ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা ইতিহাসের
পাতায় ঠাঁই নিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রাংকেল মনে করেন, গণতান্ত্রিক মতাদর্শ এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এবং সমাজতান্ত্রিক
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচেষ্টার যে দ্ব›দ্ব তার ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীর সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল
স্নায়ুযুদ্ধ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রিডম্যান মনে করেন স্নায়ুযুদ্ধ যুদ্ধের একটি নতুন কৌশল যেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও
রণাঙ্গনে কোন সংঘাত ঘটে না। এ দুটি ধারণা থেকে বলা যায় যে, সম্মুখ যুদ্ধকে এড়িয়ে বিরোধপূর্ণ পরিবেশে কূটনৈতিক
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় স্যার যুদ্ধের আরেক রূপ হল ¯œায়ুযুদ্ধ। এই যুদ্ধকে আরেক অর্থে যুদ্ধহীন যুদ্ধ বলা যায়,
যেখানে শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের উপর চাপ প্রয়োগ করলেও সরাসরি আক্রমণে অংশ নেয় না।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]