বার্লিন প্রাচীরের অবসান ও একত্রিত জার্মানি

পশ্চিমাবিশ্ব বার্লিন প্রাচীরকে একটি সময় নাম দিয়েছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরক্ষা দুর্গ। পশ্চিম জার্মানি এবং পূর্ব
জার্মানিকে বিভক্তকারী এ প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মানির জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক
সরকার এ প্রাচীর নির্মাণ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্র শক্তি জার্মানিকে চারটি অংশে বিভক্ত করেছিল। ফ্রান্স,
ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই চারটি অংশ অধিকার করে নিয়েছিল। এ সময় জার্মানির রাজধানীকেও বিভিন্ন
অংশে বিভক্ত করা হয়। পূর্ব বার্লিন কে কেন্দ্র করে জার্মানির পূর্বাংশে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা
করেছিল। অপরদিকে পশ্চিম জার্মানিতে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইংল্যান্ড কমিউনিস্ট শাসনের প্রসার রোধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ
হওয়ার চেষ্টা চালায়। বিশেষত, ১৯৪৮ সালে লন্ডন সম্মেলনে একত্রিত হয়ে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে
যে সমগ্র জার্মানির জন্য ঐক্যবদ্ধ একটি সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত মিত্রশক্তি অধিকৃত পশ্চিম জার্মানিতে জার্মান
গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে। তখন এই জার্মানির রাজধানী করা হয় ‘বন’ শহরকে।
অন্যদিকে জার্মান গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রুশ অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে গঠন করা হয় হয়েছিল
আরেকটি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক। শুধু তাই নয় ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত সরকার হঠাৎ পশ্চিম বার্লিনের সাথে
সংযোগকারী সড়কপথ রেলপথ এবং খালের উপর দিয়ে পশ্চিম জার্মানির অধিবাসীদের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর
ফলে পশ্চিম বার্লিনের ২ মিলিয়ন মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। মিত্রপক্ষ এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য
বিমানের মাধ্যমে খাদ্য অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ অব্যাহত রাখে। পাাশাপাশি সংকট নিরসনের জন্য
নানাভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চলতে থাকে। এ অবস্থায় প্রায় ১১ মাস অবরোধ জারি রাখার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন
অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
হঠাৎ করে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। বিশেষ করে মিত্র পক্ষের উদ্যোগে পশ্চিম জার্মানিতে বিকাশ লাভ করে মুক্ত
গণতন্ত্র। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিপরীতে পূর্ব জার্মানিতে ছিল সমাজতন্ত্রের নামে রাশিয়ার স্বার্থ সিদ্ধির উপযোগী
কঠোর শৃঙ্খলা। এই পরিস্থিতি আঁচ করে পূর্ব জার্মানি থেকে মানুষ পশ্চিম জার্মানিতে পালিয়ে যেতে শুরু করে। অন্যদিকে
পশ্চিম জার্মানি থেকে পূর্ব জার্মানিতে সমাজতন্ত্র বিরোধী প্রচারণা-প্রপাগান্ডা অব্যাহত থাকে। তখন সমাজতন্ত্রের নামে
রাশিয়ার সার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার সরকার বার্লিন শহরের মাঝ দিয়ে একটি ইটের দেয়াল নির্মাণ করে। এ দেয়াল
নির্মাণের পূর্ব সময়কালে পূর্ব জার্মানি থেকে প্রায় ৩ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মানুষ পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হয়েছিল।
১৯৬১ সালে দেয়াল নির্মাণের পর এ ধরনের অভিবাসন কঠোরভাবে বন্ধ করা হয়। ১৯৬১-১৯৮৯ সময়কালে প্রায় ৫০০০
পূর্ব বার্লিনের মানুষ পশ্চিম জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে ৬০০ জনকে গুলি করে হত্যা করা
হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের এ হত্যাযজ্ঞ থেকে নারী-পুরুষ-শিশু কেউই রেহাই পায়নি।
এই সব দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন প্রাচীর হয়ে উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন
রক্ষার জন্য নামধারী সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বিভেদ চিহ্ন। ১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু
হলে পোল্যন্ডে রাশিয়ার আধিপত্যবাদের পতন ঘটে। সোভিয়েত গর্বাচেভ সরকার এসব দেশে অস্ত্র প্রয়োগ করার নীতি
পরিত্যাগ করলে তার প্রভাব পড়েছিল জার্মানিতেও। ফলে পূর্ব জার্মানির সরকারও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পশ্চিম
জার্মানির সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এর অংশ হিসেবে পূর্ব জার্মান সরকার ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর
ঘোষণা করেছিল যে পূর্ব জার্মানির সব নাগরিক নিজের ইচ্ছামত পশ্চিম জার্মানি ও পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশ করতে পারবে।
এর ফলে দলে দলে লোক বার্লিন প্রাচীর টপকে পশ্চিম জার্মানিতে গমন করে। পশ্চিম জার্মানির জনগণ তাদের উষ্ণ
অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে। উৎফুল্ল জনতা পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বার্লিন প্রাচীরের অনেকাংশ নিজেদের উদ্যেগে ভেঙ্গে
ফেলেছিল। তারপর নভেম্বর ঘোষণার পর পূর্ব জার্মান সরকার বার্লিন প্রাচীরের মধ্যে আরও দশটি পথ প্রাচীর ভেঙে উন্মুক্ত
করার প্রতিশ্রæতি দেয়। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকগুলো নতুন পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বার্লিন প্রাচীরের
মধ্যে দিয়ে। এরপর ১৩ ই জুন ১৯৯০ থেকে পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলতে শুরু করে। ১৯৯১
সালের নভেম্বরের শেষ নাগাদ এ প্রাচীর ভাঙার কাজ সমাপ্ত হয়। পাশাপাশি উৎসুক জনতা এই প্রাচীরের অনেকাংশ নিজের
উদ্যোগে গায়েব করে দিয়েছিল। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীর উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়েই শুরু হয় দুই জার্মানি
একত্রীকরণ প্রক্রিয়া। তবে ৩ অক্টোবর জার্মানি একত্রীকরণ দিবস হিসেবে পালিত হয়।
সারাংশ
¯œায়ু যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলা যেতে পারে সোভিয়ে ইউনিয়নের পতনকে। এরপর বিশ্বের
নানা দেশে বিদ্যমান রাজনীতির মেরুকরণে একটি বদল লক্ষ করা যায়। বিশেষত, যে দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রভাব ছিল
বেশি তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে কেউকেউ পতনের পরেও রাশিয়ার উপর আস্থা রাখতে
গিয়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। রাশিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেও অনেক দেশ শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ
আস্বাদন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। বিশেষ করে এসব দেশ সন্ত্রাসবাদের মদদ দিচ্ছে এমন অযুহাতে সেখানে যুদ্ধ শুরু করে
আমেরিকা। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে এক পর্যায়ে এসে ভেঙ্গে দেয়া হয় বার্লিন প্রাচীর। তারপর
নতুনভাবে একত্রিত হয় জার্মানি। তাদের পতাকা এবং সংবিধান নতুনভাবে নির্ধারিত হয়।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]