দাস ব্যবসা থেকে শুরু করে শ্রমের দিক থেকে নিগ্রহ কিংবা আরও নানা কারণে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ বিগ্রহের জন্ম
দিয়েছে বর্ণবাদ। ঔপনিবেশিক যুগের বর্ণবাদ ছিল ইউরোপ থেকে বিশ্বের নানা দেশ দখলকারীদের হাতিয়ার। তারা তাদের
দখলদারিত্ব বৈধ প্রমাণের পাশাপাশি সেই হাতিয়ারের ব্যবহারকে সাধারণের চোখে সিদ্ধ করেছে নানাভাবে। বিশেষ করে
এর জন্য নানাবিধ যুগোপযোগী ব্যাখ্যাও তারা প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছিল তারা। এক্ষেত্রে বর্ণবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে
কখনও দ্বারা ব্যবহার করেছে ধর্মকে। পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে কাজে লাগিয়েছে বিজ্ঞানকেও। আব্রাহাম লিংকনকে সবাই
গণতন্ত্রের জনক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা অবলুপ্তির নায়ক হিসেবেই জানেন। তবে তিনিও যখন বর্ণবাদের পক্ষে
কাজ করেছেন বলে জানা গেছে তখন অনেকে বিস্মিত হন। তাই আমেরিকার দাসপ্রথা বাতিলের পেছনে লিংকনের যে
সিদ্ধান্ত তাকে সবাই মানবিক থেকে রাজনৈতিক দিকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে তুলে ধরেছেন। তবে কেউ কেউ দাবি করেছেন
লিংকন বর্ণবাদী ছিলেন না। তিনি যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতেন তার আলোকেই তাকে বিচার করতে হবে, বর্তমানের
প্রেক্ষিতে বিচার করলে তার গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবতা বোঝা সম্ভব হবে না। তখনকার উগ্র বর্ণবাদী সমাজের প্রেক্ষিতে
বিবেচনা করতে গেলে লিংকনের সিদ্ধান্তকেই যথার্থ বলে মনে হতে পারে। ফলে তিনি যে বর্ণবাদ জৈব ভিত্তি থেকে মুক্তি
দিয়ে একটি মুক্ত চিন্তার পথ করে দিয়েছেন সেটা বোঝা সম্ভব হবে।
এদিক থেকে ধরতে গেলে ভারতবর্ষের বর্ণবাদের ইতিহাসও অনেকদিনের প্রাচীন। ভারতবর্ষে যেভাবে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়বৈশ্য-শুদ্র বিভাজনের মাধ্যমে বৈদিক যুগ থেকে বর্ণবাদ চলে এসেছে তার থেকে মুক্তি মেলেনি এই একুশ শতকে এসেও।
তবে ভারতবর্ষে বর্ণবাদের মুখ্য কারণ ছিল সামাজিক মর্যাদা চামড়ার বর্ণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। সেদিক
থেকে চিন্তা করলে গাত্রবর্ণ দিয়ে বর্ণবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়। উনিশ শতকের
শেষার্ধে এই বর্ণবাদকে দেয়া হয় বৈজ্ঞানিক রূপ। বিবর্তনবাদের জনক খ্যাত চার্লস ডারউইনের চাচাত ভাই বিখ্যাত ইংরেজ
পÐিত ফ্রান্সিস গল্টন এ ধারণাকে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি মনে করেছিলেন মানুষের
ক্রমাবনতি ঘটবে। তিনি ইউজেনিক্স নামে একটি নতুন মত প্রচার করতে শুরু করেছিলেন যার মূলকথা হচ্ছে- ‘শুধু জৈব
বৈশিষ্ট্য নয়, মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক গুণাবলিও বংশগতীয়, সুতরাং তা গোত্রে গোত্রে বা বর্ণে বর্ণে আলাদা। সকল
বর্ণের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা সমান নয়। এজন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত যৌন নির্বাচন। অর্থাৎ পরীক্ষা নিরীক্ষার
মাধ্যমে উপযুক্ত বাবা-মা নির্বাচন করা হলে তাদের সন্তান অপেক্ষাকৃত বেশি বুদ্ধিমান হবে এবং এভাবেই মানুষের
ক্রমাবনতি ঠেকানো যাবে’। তার হিসেবে যথারীতি উন্নত বর্ণের মানুষের সাথে কোনভাবেই অনুন্নত বর্ণের মানুষের প্রজনন
ঘটতে দেয়া যাবে না। আর এক্ষেত্রে তার হিসেবে সাদারা ছিল উন্নত আর কালোদের ধরা হত অনুন্নত।
গ্যাল্টনের বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ১৮৬৯ সালে তার কুখ্যাত ‘হেরেডিটারি জিনিয়াস’ বইটি
প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তিনি বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী মানুষের সংজ্ঞা দিতে চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী
বিভিন্ন গোত্রকে বিভক্ত করার একটা চেষ্টাও চালিয়েছেন তিনি। অদ্ভুতভাবে তার গোত্রীয় যোগ্যতার স্কেলটি গিয়ে শেষ
হয়েছিল একটি পশুতে। তার হিসেবে এই ক্রমটি ছিল প্রাচীন গ্রিক-ইংরেজ- এশীয়-আফ্রিকান-অস্ট্রেলীয় আদিবাসী-কুকুর
পর্যন্ত। এক্ষেত্রে তার হিসেবে বর্ণপ্রথার শেষ স্তর কুকুর। অনেকে ধারণা করেন গল্টন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ দ্বারা
প্রভাবিত হয়েই এমনটি ভেবেছিলেন। তিনি মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পেছনে প্রাকৃতিক নিয়মের বিশাল প্রভাব রয়েছে
এটা জেনে দাবি করেছিলেন নিজেদের ইচ্ছামত ভবিষ্যৎ সাজানোর। এই ভবিষ্যত সাজানোর কাজে বংশগতির ধারার
প্রত্যক্ষ প্রভাব আমলে নিয়ে একটা বৈজ্ঞানিক ধারণার জন্ম দিয়ে তার অপব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। তার এই বিজ্ঞানবেশী
বর্ণবাদ সে সময় অনেক ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানিতে এই ভয়ংকর ব্যাপারই তার
চূড়ান্ত ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
জার্মান সেনানায়ক হিটলার গ্যাল্টনের সেই ইউজেনিক্স মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি হয়ত
ভেবেছিলেন বংশগতীয়ভাবে যারা বিশুদ্ধ জার্মানদের সমকক্ষ হতে পারবে না তাদের জার্মান ভূখÐ থেকে নির্মূল করে দিতে
হবে। তবে এক পর্যায়ে এসে বর্ণবাদের এই ধারা থেকে পৃথিবীর মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। সবাই বর্ণ বা
গোত্রের বিভাজনকে জীববিজ্ঞানে গুরুত্ব দেয়া বন্ধ করে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল মানুষকে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত বলে
মনে করা হয়। মনুষ্য প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স দিয়েছিলেন শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার জনক কারোলাস
লিনিয়াস। পরে হোমো স্যাপিয়েন্সের আক্ষরিক অর্থ করা হয় বিজ্ঞ মানুষ। প্রখ্যাত প্রতœতাত্তি¡ক গবেষক ইউভাল নোয়াহ
হারারি মানুষকে নিয়ে লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত বই ‘স্যাপিয়েন্স-এ ব্রিফ হিস্টরি অব হিউম্যানকইন্ড’। তিনি অন্য প্রাণি থেকে
ভিন্ন আঙ্গিকে বিশেষ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মানুষের বেড়ে ওঠার নানা দিক বর্ণনা করেছেন তাঁর এই গ্রন্থে।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র