বিশ শতকের দিকে এক্স বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ব্যাপকতা পায়। তখন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে জোরদার হয়ে ওঠে
বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন নেতা। তাঁরা
জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। এক্ষেত্রে ভারতের মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিণ
আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটু, আমেরিকার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র প্রমুখের নাম বলা যেতে পারে। এর মধ্যে
কিংবদন্তী রাষ্ট্রনায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, যিনি বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু
বর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ত¡, প্রখর রসবোধ এবং প্রতিপক্ষের দিকে
বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত বিশাল মন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনকে পথ দেখায়। তিনি তাঁর এসব গুনের জোরেই
বিশ্বের জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় নেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । বর্ণবাদের অবসানের পর ১৯৯৪ সালের ১০ই মে নতুন
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এর মাত্র এক দশক আগেও
সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনের
পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি
প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ভূমিকা রাখেন। বিশ্বের নানা দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন সফল করার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ।
১৯১৮ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের থেম্বো রাজকীয় পরিবারের কাউন্সিলর।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তার গোত্রের দেয়া ‘মাদিবা’ নামে বিশ্বব্যাপী বেশি পরিচিত। এই সফল আন্দোলনের নেতা ও
কিংবদন্তীর রাষ্ট্রনায়কের শৈশব কেটেছিল তার নানাবাড়িতে। তিনিই তাঁর পরিবাবের প্রথম সদস্য যিনি কোনা স্কুলে গিয়ে
পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন। স্কুলে পড়ার সময় একজন শিক্ষিকা ইংরেজিতে তাঁর নাম রাখেন ‘নেলসন’। স্কুল পাস করার
পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস কোর্সে ভর্তি হন। এখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় অলিভার
টাম্বোর সাথে তার পরিচয় হয়। এই টাম্বো আর ম্যান্ডেলা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ম্যান্ডেলার আরেক বন্ধু ছিলেন ট্রান্সকেইয়ের
সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কাইজার মাটানজিমা। এই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের
রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হয়েছিলেন। তবে একটা পর্যায়ে এসব নীতিমালার কারণেই ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার
মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।
ম্যান্ডেলা তাঁর শিক্ষাজীবনের এক পর্যায়ে এসে ফোর্ট হেয়ার ছাড়েন। এরপর অল্পদিন পরে জানতে পারেন, জোঙ্গিন্তাবা তাঁর
সন্তান জাস্টিস এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঠিক করার ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস এভাবে বিয়ে করতে রাজি
ছিলেননা। তাই তাঁরা দুজনে জোহানেসবার্গে চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর ম্যান্ডেলা শুরুতে একটি খনিতে প্রহরী
হিসেবে কাজ নেন। তবে অল্পদিন পরেই খনির মালিক জেনে যান যে, ম্যান্ডেলা বিয়ে এড়াতে জোঙ্গিন্তাবার কাছ থেকে
পালিয়ে এসেছেন। এটা জানার পর খনি কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলাকে ছাঁটাই করেন। পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের
আইনি প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেলস্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসেবে যোগ দেন। ম্যান্ডেলার বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী
ওয়াল্টার সিসুলু এই চাকরি পেতে ম্যান্ডেলাকে সাহায্য করেছিলেন।
এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময়েই ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি
লাভ করেন। এর পরে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটার্সব্রান্ডে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ শুরু করেন। এ পর্যায়ে
তাঁর সঙ্গে জো ¯েøাভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্টের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাঁরা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়
কর্মী হিসেবে অংশ নেয়ার কথা জানা গেছে। তবে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাÐ ও বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয়
হয়ে থাকার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৪৮ সালের নির্বাচন। এ নির্বাচনে আফ্রিকানদের দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করলেও
দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা চালায়। তবে এই ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায়
আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২
খ্রিস্টাব্দের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ১৯৫৫ সালের জন সম্মেলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে ম্যান্ডেলা মহাত্মা গান্ধির দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিশেষ সফলতার মুখ দেখেননি। তিনি
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কর্মীদের নিয়ে প্রথম দিকে গান্ধির অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের
বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ
সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেফতার
করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) এই মামলা চললেও সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত
হয়েছিলেন। এরপর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসি-র সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়েতে প্রধান হিসেবে
যোগদান করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও
চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেছিলেন তিনি। এসময় সেখানকার বর্ণবাদী সরকার পিছু না-হটলে
প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি বিদেশে এমকে-র জন্য অর্থ সংগ্রহ ও
সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের কাজ শুরু করেন। প্রায় ১৭ মাস ধরে ফেরারি থাকার পর ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে
গ্রেপ্তার করে জোহানেসবার্গের দুর্গে আটক রাখা হয়।
অনেকে মনে করেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ম্যান্ডেলার গতিবিধি ও ছদ্মবেশ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা
পুলিশকে জানিয়ে দেয়াতেই তিনি তখন ধরা পড়েছিলেন। গ্রেফতারের পর শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেওয়া এবং
বেআইনিভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৬২ সালের ২৫ অক্টোবর ম্যান্ডেলাকে এই
দুই অভিযোগে ৫ বছরের কারাদÐ দেয়া হয়। এর দু-বছর পর ১৯৬৪ সালের ১১ জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসি-র সশস্ত্র
সংগ্রামে নেতৃত্বদানের অভিযোগ এনে শাস্তি দেওয়া হয়। তারপর থেকে ম্যান্ডেলার কারাবাস শুরু হয় রেবন দ্বীপের
কারাগারে। তিনি তাঁর ২৭ বছরের কারাবাসের প্রথম ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন এখানেই। তবে জেলে থাকার সময়ে
বিশ্বজুড়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি
লাভ করেন তিনি। সশ্রম কারাদÐের অংশ হিসেবে রেবন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহবন্দিরা একটি চুনাপাথরের
খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। তাকে আটক রাখা সেই কারাগারের অবস্থা ছিল বেশ শোচনীয়। সেই
কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের সবচেয়ে কম খাবার দেয়া হত। সাধারণ অপরাধীদের থেকে
রাজনৈতিক বন্দিদের আলাদা রাখা হত। তবে রাজনৈতিক বন্দিরা সাধারণ অপরাধীদের চেয়েও অনেক কম সুযোগসুবিধা
পেত। তার পরেও কারাগারে থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়ালেখা চালিয়ে
যেতে থাকেন। তিনি এই কারাগারে থেকেই আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে তাঁকে লন্ডন
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে
হেরে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের এক পর্যায়ে এসে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রæয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডবিøউ ডি
ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসেরসহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে তিনি ঘোষণা করেন, ম্যান্ডেলার মুক্তিদানের কথা। ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে ১৯৯০ সালের ১১
ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয়। কারামুক্তির পর তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪
পর্যন্ত তিনিই এই দলের নেতা ছিলেন। এই সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে
আলোচনায় বসেন। তাঁর উদ্যোগে সংঘটিত এ শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দেশের ইতিহাসে
প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের
সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফ ডবøু ডি ক্লার্ককে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নোবেল শান্তি
পুরস্কার দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তী ছয় সপ্তাহ
তিনি হাসপাতালেই কাটান। ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ম্যান্ডেলাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ৫
ডিসেম্বর নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ণবাদ বিরোধী এই নেতা।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি দিলে প্রথমেই বলতে হয় মহাত্মা গান্ধির নাম। তাঁর নেতৃত্ব আর দর্শন পাল্টে
দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে। তাঁর চেষ্টাতেই ভারতবর্ষের বিভ্রান্ত মানুষ খুঁজে পেয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। তার জীবনাচরণ,
আদর্শ ও নীতিগত দিক পথ দেখিয়েছে অনেক মানুষকে। তিনি গহীন অন্ধকারে এসেছিলেন আলোর মশাল নিয়ে। তিনি
মানুষকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে নতুন করে ভাবতে হয় এবং নিজেদের অধিকার আদায় করতে হয় এই মন্ত্র। গান্ধীর বাবা
ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান বা প্রধানমন্ত্রী করমচাঁদ। করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী পুতলিবার গর্ভে জন্ম নেন মোহনদাস করমচাঁদ
গান্ধী। মা প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন। মা প্রণামীর প্রভাবে গান্ধী তাঁর শৈশব থেকে জীবের প্রতি অহিংসা,
নিরামিষভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও স¤প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয়
আয়ত্ব করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে বিয়ে করেন।
এই দম্পতির চার ছেলে হরিলাল গান্ধী, মনিলাল গান্ধী, রামদাস গান্ধী এবং দেবদাস গান্ধীর জন্ম হয়।
করমচাঁদ গান্ধীর ছাত্রজীবনের অনেকটা সময় কাটে পোরবন্দর ও রাজকোটে। শিক্ষার্থী হিসেবে অতটা মেধার না হওয়ায়
গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে নামমাত্র ফল নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮ বছর বয়সে
১৮৮৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে চলে যান। রাজকীয় রাজধানী লন্ডনে তাঁর
জীবন-যাপন ছিল ভারতে থাকতে তাঁর মায়ের কাছে করা শপথ প্রভাবিত। বলে রাখা ভাল যে জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জির
সামনে তিনি তাঁর মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন যে, তিনি মাংস, মদ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ত্যাগ করার হিন্দু নৈতিক উপদেশ
পালন করবেন। তবে তিনি নিজেকে কোনো গুণের চর্চা থেকে বিরত রাখেননি। ব্যারিস্টারি পড়ার পাশাপাশি নাচের শিক্ষায়
নিজেকে পারদর্শী করেন। তখনকার সময়ে লন্ডনের গুটিকয়েক নিরামিষভোজি খাবারের দোকানের একটিতে নিয়মিত
যেতেন। আমিষভোজি প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার পর্যন্ত এড়িয়ে যেতেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্যের শিকার হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন মহাত্মা গান্ধি।
শুধুমাত্র বর্ণবাদী আচরণের কারণে একদিন তাঁকে পিটার মরিসবার্গের একটি ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরা থেকে তৃতীয়
শ্রেণির কামরায় যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। একইভাবে স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় একজন চালক তাকে ধরে পিটিয়েছিল।
কারণ একটাই তিনি এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা দিতে ফুট বোর্ডে চড়তে রাজি হননি। যাত্রাপথে তাকে আরও কষ্ট
করতে হয়েছিল। একবার একটা হোটেল থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাকে। এই ঘটনাগুলো ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ,
কুসংস্কার এবং অবিচার দূরীকরণের আন্দোলনে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না।
এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপনের জন্য তিনি আরও কিছুদিন দেশটিতে থেকে যান। বিলের উদ্দেশ্য সাধন না হলেও
এই আন্দোলন সেদেশের ভারতীয়দের অধিকার সচেতন করে তুলেছিল। ১৮৯৪ সালে গান্ধী ‘নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস’
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সেখানকার ভারতীয়দের রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হন। তারপর
১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতে এক সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ফিরে আসার পর এক শ্বেতাঙ্গ মব তাকে হত্যার চেষ্টা করে।
তার পরও গান্ধী তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন কারও ব্যক্তিগত ভুলের জন্য পুরো
দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়াটা ঠিক নয়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই অহিংসাবাদী নেতাকে ১৯৪৮ সালের ৩০
জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন তিনি নয়াদিল্লিতে পথসভা করছিলেন। তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন
একজন হিন্দু মৌলবাদী। নাথুরামের সঙ্গে চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল। গডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ
আপতেকে পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর শাস্তি কার্যকরের
উদ্দেশ্যে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
সারাংশ
মানব সভ্যতার ইতিহাসে বর্ণবাদ সেই নিকৃষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা এবং ক্রিয়াকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয় মানুষ
বৈজ্ঞানিকভাবে অনেকগুলো গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং একই সাথে বিশ্বাস করা হয় কোন কোন গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে
নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু। এখানে তার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারও নির্দিষ্ট করা হয় গাত্রবর্ণ দিয়ে।
পাশাপাশি বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য হওয়ার মানদÐও এখানে গ্রোথিত। তবে বর্ণবাদের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা
কঠিন। গবেষকদের মধ্যে এই গোষ্ঠী ধারণা নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। এই বর্ণবাদের ধারণা কখোনো গায়ের চামড়ার
রং দিয়ে হতে পারে, অন্যদিকে কখোনো আঞ্চলিকতার উপর ভিত্তি করেও হতে পারে। বিশ্বের বর্ণবাদ বিরোধী
আন্দোলনের ক্ষেত্রে পথিকৃত নেতৃত্ব হিসেবে বলা যেতে পারে মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটু এবং মার্টিন
লুথার কিং জুনিয়রের নাম।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র