ফরাসি বিপ্লবের জ্ঞানতাত্তি¡ক কারণ

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বৈষম্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক অধিকার হরণ মানুষকে নানাদিক থেকে হতাশ ও বিদ্রোহী
করে তোলে। মানুষের মাঝে বিদ্যমান চাপা ক্ষোভ আর এই বিদ্রোহকে বৃহৎ ও কার্যকর বিপ্লবে রূপ দিতে সহায়তা করে
জ্ঞানতাত্তি¡ক জাগরণ। বলতে গেলে ফরাসি বিপ্লব শুরুর অনেক আগে থেকেই ভাবজাগতিক বিপ্লব শুরু হয়েছিলো। ১৮
শতকে ফরাসি সাহিত্য ও দর্শনে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিলো তা ফরাসি বিপ্লবকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে
ফরাসি বিপ্লবের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলো মধ্যবিত্ত শ্রেণি তারা ছিলো শিক্ষিত ও জ্ঞান অনুরাগী ফলে নানা দার্শনিকের
অভিমত খুব সহজেই ফরাসি বিপ্লবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলো। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রজীবনের
থাকা নানা অন্যায়, অসমতা ও দুর্গতি নিয়ে রচিত এই লেখাগুলো মানুষের মনে বিপ্লবী ভাবতরঙ্গের সঞ্চার ঘটায়। এর
থেকে মানুষ খুঁজে নেয় তাদের প্রতিবাদের ভাষা, ধীরে ধীরে একত্রিত হতে থাকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে
ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে সংঘটিত গৌরবময় বিপ্লব ও জন লকের (ঔড়যহ খড়পশব) রাজনৈতিক দর্শন ফরাসি বিপ্লবের
প্রেক্ষাপট তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলো বলে ধারণা করা হয়। এই বিষয়টি নিচে অলোচনা করা হলোÑ
১. মন্টেস্কু: ফরাসি বিপ্লবকে যাঁরা সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন তাত্তি¡ক মন্টেস্কু
কিছুদিন ইংল্যান্ডে বাস করে সেখানকার নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন। তিনি ফ্রান্সের
অনিয়ম, দুর্নীতি ও জনদুর্ভোগ দেখে অনেক হতাশ হয়েছিলেন। তবে ইংল্যান্ড থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিপ্লব বিমুখ
ও রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী এই ফরাসি তাত্তি¡ক অনেক সরকার বিরোধী কথা বলে ফেলেন যা ফরাসি বিপ্লবকে আরো
তুঙ্গে নিয়ে যায়। বিশেষ করে ধর্মের নামে মঠ কেন্দ্রিক ব্যবসার পাশাপাশি শাসনতান্ত্রিক নানা অনিয়ম ও
লাগামহীন স্বৈরতন্ত্রের তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। ‘দি পার্সিয়ান লেটার্স (ঞযব চবৎংরধহ খবঃবৎং)’ গ্রন্থে তিনি
ঐ সময়ের সামাজিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে জ্ঞানগর্ভ সমালোচনা করে গেছেন। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র, বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা, প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের দাবি নিয়ে তিনি রচনা করেন দি স্পিরিট অব ল’জ
(ঞযব ঝঢ়ৎরঃ ড়ভ খধংি) আরেকটি বিখ্যাত বই। পরবর্তীকালে বিপ্লবীরা যে বিধান জারি করেছিলো সেখানেও
যথেষ্ঠ প্রভাব রেখেছিলেন মন্টেস্কু।
২. ভলতেয়ার: ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে প্রতিবাদী সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন ভলতেয়ার। তিনি
১৮ শতকের সংস্কারবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ভলতেয়ার মহান
ফ্রেডারিখের দরবারের একজন আমন্ত্রিত অতিথি হওয়ার পাশাপাশি রুশ রাণী দ্বিতীয় ক্যাথরিনের সাথেও পত্র
যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। তিনি একাধারে দার্শনিক, কবি, ইতিহাসবিদ, নাট্যকার, রম্যলেখক, রাজনৈতিক
বিশ্লেষক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি চার্চের বিভিন্ন দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি মুক্তমত
প্রকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সমর্থক ছিলেন। রাজতন্ত্রের ঘোর সমর্থক হওয়া সত্তে¡ও তিনি প্রচলিত শাসন
কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য সংস্কারের পক্ষে তীব্র সমর্থন জ্ঞাপন করেন। যুক্তিবাদী এই লেখক ফ্রান্সের স্বৈরচারী
শাসনকে নানাদিক থেকে সমালোচনা করে তুলোধুনো করেন। বিশেষত বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সের জনগণকে কেবলমাত্র
লেখনী শক্তির মাধ্যমে বিদ্রোহী করে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিলো।
৩. রুশো: ফরাসি বিপ্লব নিয়ে যে সকল লেখক ও তাত্তি¡ক উদ্দীপনামূলক রচনাগুলো তৈরি করেছেন তাদের মধ্যে
সবথেকে গুরুত্বের সাথে রুশোর অবদানকে স্মরণ করতে হয়। তিনি বিপ্লবপূর্ণ ফ্রান্সে এক অভূতপূর্ব চেতনা ও
প্রতিরোধের বাণীর সঞ্চারণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুদ্ধের মন্ত্রণা দিয়ে তিনি ইউরোপীয়দের মাঝে শক্তিশালী
প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে প্রতিবাদই ছিলো প্রথম প্রতিরোধ যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে
যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে। রুশোর লেখালেখি ফরাসি বিপ্লব-পূর্ব সময়ে মানুষকে প্রতিবাদের চেতনায় উদ্দীপ্ত
করে। একজন লেখক কিংবা দার্শনিক হিসেবে ভলতেয়ার যেমন বিপ্লবের সমর্থক ছিলেন রুশো চাইতেন সামাজিক
সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশের শাসনতন্ত্র পুনর্গঠিত হোক। রুশো মনে করতেন মানুষ স্বাধীন সত্তা নিয়ে জন্ম গ্রহণ
করেও চারপাশের নানা দায়িত্বও নিয়মের মধ্যে পড়ে পরাধীন হয়ে পড়ে। তাই মানুষের জন্মগত দায়িত্ব সকল
পরাধীনতার জিঞ্জির ছিড়ে মুক্ত স্বাধীন জন্মগত সত্তাকে সমুন্নত করা। প্রচলিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি
পুরোপুরি আস্থাহীন রুশো ছিলেন গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি সব জনগণের একনিষ্ঠ সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী
ছিলেন। তিনিই প্রথম মতামত প্রদান করেন রাষ্ট্র যদি জনগণের কথা মতো পরিচালিত না হয় তবে সেই রাষ্ট্রের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জনগণের অধিকার এমনকি নৈতিক দায়িত্বও বটে। তিনি বিখ্যাত সোসিয়েল কন্টাক্ট
গ্রন্থে এই কথাই স্পষ্ট করে বলেছেন। তিনি আরো বলেন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার ত্রæটিই
মানব সভ্যতার বিকৃতি ও অবনমনের জন্য দায়ী। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন যে সকল মানবাধিকার
সম্পর্কিত বাণীর প্রথম পরিচয় মেলে সেগুলোর একটি পরিপূর্ণ রূপ দেখা যায় রুশোর রচনাগুলোতে।
৪. অর্থনীতিবিদদের প্রভাব: ফ্রান্সের অর্থনীতিতে ক্রমাগত ধ্বস আর মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমাবনত অবস্থা থেকেই
ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিলো। তুর্গোর মতো একজন গুণী অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করার মধ্য
দিয়েই বলতে গেলে ফরাসি রাজতন্ত্র একটি বিপ্লবের সম্মুখীন হওয়ার পথ করে নেয়। বিখ্যাত ইংরেজ
অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের নীতিতে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদগণ তখনকার ফ্রান্সে ফ্রিজিওক্র্যাট
নামে পরিচিত ছিলেন। অর্থনৈতিক সংস্কারের ব্রত নিয়ে আন্দোলন পরিচালনাকারী এই গ্রæপের মুখপাত্র হিসেবে
পরিচিত হয়েছিলেন সে (ঝধু), কুইজনে (ছঁবংহধু) ও মির‌্যাবুঁ (গরৎধনবধঁ)। তবে এঁদের মধ্যে সবথেকে
চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কুইজনে। তাঁর নেতৃত্বে ফিজিওক্র্যাটরা অর্থনীতির নতুন নতুন ব্যখ্যা
দাঁড় করিয়েছিলেন। তাঁদের দৃষ্টিতে মূল উৎপাদনকারী শ্রেণি হিসেবে কৃষক, শ্রমিক ও বিভিন্ন মজুর হচ্ছে সম্পদের
প্রকৃত মালিক কিন্তু তারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত। পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ঘোর বিরোধী
ছিলেন তাঁরা। তাঁরা সবসময় চাইতেন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরভাগ ও বাইরে বাণিজ্য সুবিধা অবাধ ও অরারিত করা
হোক। শিক্ষা মানুষের জীবনকে পরিশীলিত, মার্জিত ও উন্নত করে এই বিশ্বাস থেকে শিক্ষাকে শ্রেণি-ধর্ম
নির্বিশেষে অবারিত করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁরা।
৫. বিশ্বকোষ বা এনসাইক্লোপিডিয়া রচনাকারী: আলোকময়তা পরবর্তীকালের ইউরোপে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা
চর্চায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিলো। এই সময়ের ফ্রান্সে একদল চিন্তাশীল গোষ্ঠীর উদ্ধব ঘটে যাঁরা বিশ্বের নানা
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে একত্রিত করে গ্রন্থিত করার মহান ব্রত গিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। এঁদের মধ্যে দিদেরো, দ্য
এলেম্বার্ট প্রমুখ ব্যক্তি অনেক খ্যাতি অর্জন করেন। এঁদের নেতৃত্বাধীন বিশ্বকোষ প্রণেতাগণ লেখনীতে ফ্রান্সের
স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও চার্চের অনৈতিক নির্যাতনের কঠোর সমালোচনা করেন। পাশাপাশি সামাজিক অনাচার,
দুর্বলের উপর অভিজাতদের চড়াও হওয়ার নীতি, বিচারব্যবস্থার কলুষিত দিক, অসম রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে শুরু
করে আর্চ বিশপের নেতৃত্বাধীন ধর্মাধিষ্ঠানভিত্তিক ষড়যন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করা হয়। শিল্প সাহিত্যের
পৃষ্ঠপোষক এই গোষ্ঠী লেখনীর দ্বারা বিভিন্ন অনৈতিকতা ও অসমতা জনগণের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে
সক্ষম হয়েছিলেন যা বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢালে এবং ফরাসি বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।
ফরাসি বিপ্লবের অন্যান্য কারণগুলো
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি কিছু বিচ্ছিন্ন কারণ ছিলো যেগুলো ফরাসি বিপ্লব
সংঘটিত হওয়ার পটভূমি রচনা করেছিলো। বিশেষত ফ্রান্সের অসমতা ও অসঙ্গতির সময়ে আমেরিকার স্বাধীনতা
আন্দোলনকারীদের সফলতা, ইংল্যান্ডে গৌরবময় বিপ্লব, কিছুদিন আগে সংঘটিত হওয়ার দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা থেকে শুরু করে
ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসমতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিলো। এই বিষয়গুলো মানুষকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে বাধ্য
করে। মানুষ আমেরিকার বিপ্লবীদের দেখে প্রতিবাদ করতে আগ্রহী হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন লেখকের রচনা পড়ে তারা
বাইরের দেশগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছিলো। বাইরের দেশগুলোতে কিভাবে বিপ্লবীরা সফল হয়েছে তা জানতে পেরে
তারাও অনেক সাহস নিয়ে ফ্রান্সের স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পেরেছিল।
১. ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লবের প্রভাবঃ দ্বিতীয় জেমসের অত্যাচারে অতীষ্ঠ ইংরেজরা হল্যান্ডের অরেঞ্জ পরিবারের
রাজকুমারী মেরির স্বামী উইলিয়ামকে ইংল্যান্ডের সিংহাসন লাভের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। প্রথমত ইংল্যান্ডের
মানুষ ভেবেছিল দ্বিতীয় জেমসের পর রাণী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন মেরি। কিন্তু জেমসের এক পুত্র
সন্তান জন্ম নেয়াতে মানুষের মনে আশংকা জন্ম নেয়। তারা ভাবতে থাকে প্রোটেস্ট্যান্ট মেরির বদলে দ্বিতীয়
জেমসের পুত্র ক্যাথলিক হবেন তাদের শাসনকর্তা। ফলে তিনিও পিতার মতোই অত্যাচারী হয়ে উঠতে সময়
নেবেন না। ইংরেজদের আমন্ত্রণে অরেঞ্জ পরিবারের উইলিয়ামের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসনকর্তাকে রাজি করানো
যায়নি। ইংরেজরা মেরিকে রাণী হিসেবে সিংহাসন প্রদান করে উইলিয়ামকে সহচর রাজা হিসেবে ক্ষমতায় বসাতে
রাজি হয়। উইলিয়াম স্ত্রীর সহচর রাজা হিসেবে ইংরেজ সিংহাসনকে অবহেলায় ফিরিয়ে দিলেন। পরে তাঁকে যুগ্ম
রাজা ঘোষণা করায় তিনি ইংল্যান্ডের সিংহাসন গ্রহণ করতে রাজি হন। ১৬৮৮ সালের নভেম্বর মাসে বিশাল
বাহিনী নিয়ে ডেভনশায়ারের টোরে নামক স্থানে উপস্থিতি হন উইলিয়াম। বীরবিক্রমে উইলিয়ামের মতো একজন
কুশলী যোদ্ধা ও জনপ্রিয় সেনানায়কের আগমনে দ্বিতীয় জেমসের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। তিনি উইলিয়ামকে
বাধা দেয়ার সাহস হারিয়ে ফ্রান্সে পলায়ন করেন। এই সময় দ্বিতীয় জেমসের পদচ্যুতি ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’ বা
‘গৌরবময় বিপ্লব’ নামে পরিচিত। উইলিয়ামের সিংহাসন লাভের সাথে সাথে রাজার সর্বময় ক্ষমতার দর্শন
ইংল্যান্ডের ইতিহাস থেকে আপাতত বিদায় নেয়। উইলিয়ামের সময় থেকে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট চাইলে
যেকোনো ব্যক্তিকে সিংহাসন প্রদান করার অধিকার লাভ করে। ইংল্যান্ডের এই বিপ্লব ফরাসি বিদ্রোহীদের
প্রভাবিত করে।
২. আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ: আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ফরাসি বিপ্লবকে নানা দিক থেকে প্রণোদনা যোগায়।
বিশেষ করে আমেরিকায় ফ্রান্সের অনেকগুলো উপনিবেশ ছিলো। অন্যদিকে লাফায়েত (খধভধুবঃঃব) নামে
একজন বিপ্লবী আমেরিকায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে দেশে ফিরে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে
থাকেন। উপনিবেশের যুদ্ধে আমেরিকাকে সহায়তাকারী ফরাসি সৈন্যবাহিনী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সফল হয়ে দেশে
ফিরে আসে। তাদের অনেকেই বেকার হয়ে গিয়েছিল। দেশে ফিরে তারা স্বৈরাচারী শাসকদের নানামুখী শোষন
নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত হয়। যুদ্ধে পারদর্শী এই সকল বরখাস্ত সৈনিকদের উপর যখন
অভিজাতশ্রেণি সাধারণ কৃষকদের মতো অত্যাচার চালাতে শুরু করে তখন তারা চুপ করে থাকেনি। লাঙল
কোদাল দিয়ে নরম মাটি চাষ করা নিরীহ কৃষকদের মতো এদের হৃদয় সহনশীল ছিলো না। বলতে গেলে
রাজতন্ত্রের প্রয়োজনে যুদ্ধকারী এসব সৈনিক অস্ত্র জমা দিলেও তাদের ট্রেনিং জমা দিতে হয়নি। ফলে শত্রæপক্ষের
রক্তঝরিয়ে যুদ্ধজয়ী এসব সৈনিক সময় সুযোগ বুঝে নিজ দেশে প্রশাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ
দেয়। এই দিক থেকে বলতে গেলে ফরাসি বিপ্লবের একটি সফল পরিণতির বীজ প্রোথিত রয়েছে আমেরিকার
স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে।
৩. দুর্ভিক্ষ:সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনিতে ফ্রান্সের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিলো যেসব শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ
মানুষ তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন একটি সময় সীমা ছাড়ায়। রাষ্ট্রের অসহনীয় কর, অভিজাতদের শোষণ
নিপীড়নের সাথে যুক্ত হয় গির্জার বিশপদের ধর্মনির্ভর ষড়যন্ত্র। একটি সময় এসব সাধারণ মানুষের দিন পার হতে
থাকে জীবন্মৃত অবস্থায়, পুরো দেশজুড়ে দেখা যায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষের ফলে ফরাসিদের জীবনে দুঃখ
দুর্দশার অন্ত ছিলো না। এই সময় মানুষ স্পষ্ট দেখতে পায় ফরাসি রাজতন্ত্র ও গির্জার ধর্মীয় ষড়যন্ত্রের সকল
নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করলে তাদের না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। অন্যনিকে এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে
যদি মৃত্যুও আসে তা হবে অনেক শান্তির। পাশাপাশি আমেরিকার বিপ্লবীদের সাফল্য তাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
জয়ের স্বপ্ন দেখায়। এদিক থেকে বলতে গেলে ১৭৮৮-৮৯ খ্রি. সংঘটিত এই দুর্ভিক্ষ ফ্রান্সের মানুষকে শুধু যন্ত্রণাই
দেয়নি পাশাপাশি বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে।
৪. ধর্মীয় প্রভাব:ক্যাথলিক মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি প্রতিবাদী ধর্মগুলোর প্রতি ভয়াবহ দমননীতি ছিলো
ইউরোপের যেকোনো দেশের মতো ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে চার্চের মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মীয়
নীতি নির্ধারক ও বিশপরা রাজতন্ত্রকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে রাজারাও নিজেদের প্রয়োজনে ধর্মকে
কাজে লাগাতে পেরে ধন্য হয়ে চার্চ ও বিশপদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। মার্টিন লুথার, জন কেলভিন থেকে
শুরু করে এমনি কিছু ধর্ম সংস্কারকের ভূমিকায় ক্যাথলিকবাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। চার্চ ও পোপের ক্ষমতা
হ্রাস পেতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সম্রাট থেকে শুরু করে গির্জা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মারাত্মকভাবে
চড়াও হয় প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদে দীক্ষিত মানুষের উপর। ইনকুইজিশনের মতো বর্বর বিধান চাপিয়ে মানুষকে
নির্যাতন এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এই অবস্থায় ধর্মের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার প্রতিবাদী মানুষ ফরাসি
বিপ্লবের হাতিয়ারে পরিণত হতে সময় নেয়নি।
৫. রাজবংশের ভূমিকা: ফরাসি বিপ্লবের জন্য সেখানে শাসনরত বুরবোঁ রাজবংশকে সবার আগে দায়ী করতে হয়।
ফ্রান্সের রাজাগন নিজেদের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে মনে করতেন। চতুর্দশ লুইয়ের সময় ক্ষমতার
অবস্থান এমন স্তরে উপনীত হয় যেখানে তিনি সরাসরি ঘোষণা দিয়ে বসেন ‘আমিই রাষ্ট্র’। আর এই ঘোষণা
থেকে ফরাসি রাজতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা সম্ভব হয়েছিলো। এই সময়
থেকেই ফরাসিদের পতন শুরু হয় কিন্তু তা বুঝতে অনেক সময় পায় হয়ে যায়। ফ্রান্স একাধারে নিজ দেশ ও
পৃথিবীর নানা স্থানে স্থাপিত উপনিবেশগুলো থেকে বিদ্রোহে টালমাটাল অন্যদিকে শুরু হয়ে যায় রাজাকে
অপসারণের আয়োজন। চতুর্দশ লুইয়ের সময় ফ্রান্সের রাজ্যসীমা সবথেকে বেশি বিস্তৃতি লাভ করলেও তখন
থেকেই ফরাসিদের পতন শুরু হয়। বিশালায়তনে বর্ধিত এই রাষ্ট্রের জন্য যেমন সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক অবকাঠামো
গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিলো বুরবোঁ রাজাগণ সেক্ষেত্রে পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছিলেন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]