ইউরোপের বিভিন্ন দেশ শ্রেণি সংঘাত, শ্রমিক অসন্তোষ থেকে শুরু করে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ছিল। এই অবস্থায় কেবলমাত্র
ফ্রান্সেই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। অন্য কোথাও না হয়ে ফ্রান্সে বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার উপযুক্ত কারণ নিয়ে ইতিহাসবিদদের
মধ্যে মতভেদ লক্ষ্য করা গেছে। ফিশার মনে করেন ‘ফ্রান্সে উপরের শ্রেণির মানুষের অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধার বিপরীতে
নিম্ন শ্রেণির সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার ফলে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল’। ফ্রান্সের রাজশক্তি যদি সামন্ত প্রথার নিপীড়নমূলক
নীতিগুলোর সংস্কার সাধন করে এর ত্রæটি দূর করতে সমর্থ হত, তবে ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা কমে যেত। কিন্তু ফ্রান্সের
রাজশক্তি সামন্তবাদ নিয়ন্ত্রণে তো আনেইনি, উপরন্তু তারাও সামন্ত প্রভুদের সাথে মিলেমিশে দেশের সাধারণ জনগণ, কৃষক
ও শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। জীবন বাঁচানোর দায়টা যেখানে বড়, সেখানে আর কোনো সহজ বিষয় কাজ
করবে না। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ফরাসি জনগণ বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি বিদ্রোহ
ঘটায়। দুর্নিবার প্রতিরোধ গড়ে তুলে পতন ঘটায় দুর্ভাবনার বাস্তিল দুর্গের।
তবে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মোর্স স্টিফেন্স মনে করেন ইউরোপের অন্য দেশে না ঘটলেও ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটে যাওয়ার অন্যরকম
কারণ ছিল। তিনি মনে করেন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা দার্শনিক কারণে ফরাসি বিপ্লব ঘটেনি।
তাঁরা দৃষ্টিতে ফ্রান্সে তেজদীপ্ত বিপ্লবী সাহিত্য রচিত হয়েছিল প্রচুর, সেগুলো মানুষকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। এর
থেকেই অনেকটা আশাবাদী হয়ে ওঠে নিপীড়িত মানুষ বিদ্রোহ করে। ঐতিহাসিক হার্নস মনে করেন বুর্জোয়া শ্রেণি সমাজের
অসন্তোষের কথা জানতো। পক্ষান্তরে এই সব সাহিত্য পাঠ ও চর্চা করে তারা বুঝতে পারে খুব সহজেই ফরাসি রাজতন্ত্রের
সমাধি রচনা করা সম্ভব। পক্ষান্তরে শ্রমিক ও জনতার অসন্তোষকে উস্কে দিতে পারলেই ক্ষমতার বদল ঘটবে। আর সে
সময় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে জ্ঞানী বুর্জোয়ার পক্ষে অনেক সুযোগ আসবে। বিশেষ করে একটি সরকারের পতনের পর নতুন
সরকার গঠনকালীন সময়ে বুর্জোয়াদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। ঐতিহাসিক মদেলা মনে করেন , ফ্রান্সের রাজশক্তি
সময়মত তার অভিজাতদের দমন করতে সক্ষম না হওয়ার পাশাপাশি তাদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা বন্ধ করতে ব্যর্থ
হওয়ায় বিপ্লব আসন্ন হয়ে পড়েছিল। ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটার বিশেষ কিছু কারণ ছিল। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলÑ
১. অর্থনৈতিক সংস্কারজনিত কারণে ফ্রান্স ক্রমশ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে পড়েছিল। চরম অর্থনৈতিকস
দুরাবস্থার মধ্যে মানুষের মনে ভর করে তীব্র হতাশা। এই সময় খুব সহজেই বলে দেয়া যায় ফ্রান্সের
রাষ্ট্রক্ষমতায় একটি বদল সময়ের দাবি। এখানে একটি বিপ্লব আসন্ন সে বিপ্লবে কারা জিততে যাচ্ছে তার থেকে
বড় বিষয় হয়ে পড়ে জনমত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে জনগণের রায় চলমান রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধেই শুধু
যায়নি তারা লিপ্ত হয়েছে এক দুর্ধর্ষ সংগ্রামে। এই সংগ্রাম ইউরোপের আর কোথাও না ঘটায় বিপ্লব ফ্রান্সেই
সংঘটিত হয়।
২. বিপ্লবীদের সব থেকে বড় সাফল্য এ-যাবৎ অবহেলিত প্রান্তিক ও নিপীড়িত গোষ্ঠীর সমর্থন আদায় করা। বিশেষ
করে শ্রমিকদের মনে বদ্ধমূল ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সীমাহীন দু:শাসন চালিযে ফ্রান্সের রাষ্ট্রক্ষমতা যেটাই
তুলে ধরুক না কেনো এই শক্তিশালী রাজতন্ত্র আর তার দানবীয় অভিব্যক্তি তাদের প্রান্তিক করে দিয়েছে।
মানুষের মনে বিশ্বাস দাঁড়িয়েছেÑ এবারের প্রতিরোধ সংগ্রাম শুধু একটি আন্দোলনই নয়, এবার তাদের সামনে
রাজতন্ত্রের অত্যাচার, লুন্ঠন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ এসেছে। তারা মনে করেছেন,
বিপ্লবীরা বিজয়ী হলে প্রতিটি শ্রেণির আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। র বিপ্লবীদের পক্ষে কাজ করে
কয়েকজন দার্শনিক তার জ্ঞানতাত্তি¡ক ভিত্তিও মজবুত করে দিতে পেরেছিলেন। ফলে নৈতিক, জ্ঞানগত ও
অবস্থানগত প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটানোর একটি প্রেক্ষাপট প্রস্তুত হয়ে যায় ফ্রান্সে যা ইউরোপের আর
কোথাও হয়নি।
৩. ফরাসি বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী চেয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর নি¤œ শ্রেণী তাদের যন্ত্রণায় ভরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি। পক্ষান্তরে ধনী
শ্রেণী তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে চেয়েছে। কিন্তু রাজা ও তাদের আজ্ঞাবহ নাইট এবং
সামন্ত প্রভুদের নিষ্পেষণে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল বেশ কঠিন। ফলে ফ্রান্সের বিপ্লবপূর্ব পরিস্থিতিতে
শ্রেণি সংঘাত উৎরে গিয়ে একটি প্রতিরোধের মত প্রেক্ষাপট প্রস্তুত হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের শাসনে
রাজাদের কীর্তিকলাপ জনগণের সামনে উপস্থিত থাকায় প্যারিস থেকে লিঁও প্রায় সবখানেই এক ধরনের
রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব বিরাজ করছিল। তারা ক্ষমতায় কে আসবে তার থেকে বেশি আগ্রহী হয়েছিলেন
রাজতান্ত্রিক দস্যুবৃত্তির হাত থেকে মুক্তি ও একটি পরিবর্তনের জন্য। এক্ষেত্রে বিপ্লবীদের যৌক্তিত অবস্থান ও
জনসংযোগের স্বার্থকতার পাশাপাশি জনমত তাদের পক্ষে কাজ করায় বিপ্লব ঘটানো অনেক সহজ হয়ে যায়
তাদের পক্ষে। এই দিক থেকে বিচার করতে গেলে ইউরোপের অন্য যেকোন স্থানের থেকে ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটার
সুযোগ ছিল সব থেকে বেশি।
৪. রাজতান্ত্রিক শাসনামলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ছন্দপতন ঘটেছে তার তাদের দুরদর্শিতার অভাবের
কারণেই হয়েছিল। ফলে ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনরোষ এবং বিপ্লবীরা সংশ্লিষ্ট যে মিথগুলোর জš§
দিয়েছিল, সেগুলোকেও বাস্তব প্রমাণ করে দেয়। তাদের বিশ্লেষণে ছিল প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সঞ্চয়, সরাসরি
বৈদেশিক বিনিয়োগ, বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মতো বিষয়। এ ধরনের
কয়েকটি প্রকল্প সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় জনগণ রাজতন্ত্রের প্রতি বিষিয়ে ওঠেন
এবং বিপ্লবীদের পক্ষে প্রবল শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়ে যায়।
৫. ফরাসি রাজাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ সাধারণ মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে যায়। এর বিপরীতে বিপ্লবীদের
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস প্রদান এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় দাবি সকলের কাছে অনেক বেশি
জোরালো ও যুগোপযোগী হওয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতাও বেড়ে যায়। অন্যদিকে উপযুক্ত প্রচারণায় বেশিসংখ্যক
মানুষের কাছে তাদের উদ্যোগের সংবাদ নিয়ে পৌঁছে যাওয়াটাও ছিল অনেক বড় একটি বিষয়। বিপ্লবীরা
অনেক দিন আগে থেকেই অবহেলিত মানুষকে সাথে নিয়ে সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। অন্যদিকে
ফ্রান্সের লিঁও কিংবা প্যারিস থেকে প্রচারিত রাজতন্ত্রের স্তুতিকে মানুষ নিছক রাজতন্ত্রের পক্ষে দালালি এবং
অন্তঃসারশূন্য প্রচারণা হিসেবে বিবেচনা করেছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে বিপ্লবীদেরই জয় হয়েছে। শক্তিশালী
ফরাসি রাজতন্ত্র জনতার প্রতিরোধে স্রোতের মুখে পড়া দুর্বল বালির বাঁধের মত ধ্বসে গেছে।
৬. সীমাহীন ক্ষমতা নিয়ে দেশ শাসনে বুরবোঁ রাজাদের নানা অপকর্ম ফরাসিদের বিক্ষোভে ফেটে পড়তে বাধ্য
করে। ১৮ শতকের ইউরোপে অন্য দেশের রাজতন্ত্র যেখানে আস্তে আস্তে মানুষের জন্য কল্যাণকামী হয়ে উঠছে
ঠিক তখন বুরবোঁদের স্বেচ্ছাচারীতা সীমা ছাড়িয়েছিলো। এর ফলে ফ্রান্সের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। ফলে
সেখানেই বিপ্লব ঘটেছিল।
৭. ফ্রান্সে বিদ্যমান ৪০ টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে রাজা কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী
হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে নানামুখী প্রভাব খাটালেও মূল ক্ষমতা ছিল স্থানীয় সরকারের প্রশাসকদের
হাতে। এই সমস্ত স্থানীয় সরকারের প্রধান ইনটেনডেন্ট ও তার কর্মচারীরা জনগণের উপর নানামুখী অত্যাচার
চালাতো। অন্যদিকে প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগ্রহণের দীর্ঘসূত্রিতা, অনিয়ম ও বেআইনি কার্যকলাপের
আধিক্য থেকে শুরু করে নানা অনাচার দেখা দেয়। এই অনাচারে অতিষ্ঠ ফ্রান্সের মানুষ বিপ্লব ঘটাতে বাধ্য
হয়েছিল।
৮. ১৮ শতকে এসেও মধ্যযুগীয় বর্বর সামন্তপ্রথা ফ্রান্স থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়নি। সামন্তপ্রভুদের নারকীয়
অত্যাচার নির্যাতন আর অনৈতিক কর্মকাÐ মানুষকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক মানবেতর অবস্থানে এনে দাঁড়
করায়। সময়ের দাবি মেটাতে তাদের সামনে বিপ্লবী হয়ে ওঠা বাদে দাবি আদায়ের আর কোনো বিকল্প পথ
ছিলো না। তাই ইউরোপের অন্যদেশে না ঘটে বিপ্লব ফ্রান্সেই ঘটেছিল।
৯. ফ্রান্স এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছিল যেখানে ক্ষমতার বিভিন্নতায় একই আইন প্রায়োগিক দিক থেকে ভিন্ন
ভিন্ন আঙ্গিক লাভ করেছিলো। আইন প্রয়োগের এই অসম অবস্থান প্রশাসনযন্ত্রকে নিয়মতান্ত্রিক ষÐাতন্ত্রের রূপ
দিয়েছিলো। বিশেষ করে রোমান আইনে পরিচালিত দক্ষিণ ফ্রান্সের সাথে উত্তর ও মধ্য ফ্রান্সের আইনের
পার্থক্য থাকায় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা স্থান বদল করতো। এভাবে দোষী ব্যক্তিরা খুব সহজেই উপযুক্ত শাস্তি
থেকে বেঁচে যেতো। অন্যদিকে প্রচলিত কঠোর আইনে মামুলি অপরাধেও মানুষের অঙ্গচ্ছেদ করার পর্যন্ত বিধান
রাখা হয়েছিলো। এভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষ একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন চেয়েছিল।
১০. ১৮৫৫ সালে সাক্ষরিত গুরুত্বপূর্ণ অগসবার্গের সন্ধির পর রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম এমন নীতি প্রতিষ্ঠা পায়।
অনেক ক্ষেত্রে প্রজাদের বাধ্যতামূলক ক্যাথলিক কিংবা প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মমতে দীক্ষিত করা হয়। ধর্ম বিশ্বাস যার
যার আর দেশটা সবার এমন ধারণা তখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। মানুষ তার চিন্তাজাগতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলো। বারংবার সংস্কার, পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টধর্ম ততোদিনে একটি নতুন
রূপ লাভ করেছে। কিংবা ক্যাথলিকদের অত্যাচারের অতিষ্ট অনেক প্রজা চাইছে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদে দীক্ষিত
হবে। এক্ষেত্রে উভয় চিন্তার মানুষের উপরেই নেমে আসে বিভীষিকাময় নির্যাতনের ঘটনাগুলো। তখন দেখা
গেছে তাদের সামনে ব্রিদ্রোহ ছাড়া অন্যকোন পথ খোলা নেই।
১১. অর্থনৈতিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে একটি কারণ ছিল ফ্রান্সের কর সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার খাতটি। অযৌক্তিক,
বিভ্রান্তিকর ও ত্রæটিপূর্ণ এই ব্যবস্থায় অভিজাত শ্রেণি বলতে গেলে ফ্রান্সের বেশিরভাগ ভূমি তাদের দখলে
রেখেও করের আওতার বাইরে থেকে যায়। তারা করের বাইরে থাকায় রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য অতিরিক্ত
অর্থের যোগান নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো। এই ত্রæটিপূর্ণ কর পদ্ধতির কারণে রাজকর্মচারী ও জমিদার
এমনকি চার্চের রক্ষীদের হাতে পর্যন্ত নির্যাতিত হতো অসহায় কৃষক। আর এই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীই
পরবর্তীকালে ফরাসি বিপ্লবের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলো যা স্পষ্টতই বোঝা যায়।
১২. চতুর্দশ লুই অযৌক্তিকভাবে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধগুলোর ফলে ফরাসি রাজকোষ প্রায়
শূন্যের কোটায় গিয়ে দাঁড়ায়। তিনি তাঁর পরবর্তী রাজা পঞ্চদশ লুইকে অর্থনৈতিক সংস্কারে মনোযোগী হতে
নির্দেশ দিলেও তিনি তার কথার পরোয়া করেননি। পঞ্চদশ লুই অনিয়ন্ত্রিত বিলাস-ব্যাসনের পাশাপাশি আরো
কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ফরাসি রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়।
১৩. ডেভিড থমসন দেখিয়েছেন প্রায় ৬৫ ভাগ মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও সেই অনুপাতে মানুষের আয় একদম বাড়েনি যা
ফরাসি বিপ্লবের আগমণ ত্বরান্বিত করে। ফ্রান্সের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য রুটির মূল্য শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ
বৃদ্ধি পাওয়াতে সাধারণ শ্রমিক ও চাকুরীজীবীদের পক্ষে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। অর্ধাহার, অনাহার ও
আর রুটিদাঙ্গা হয়ে ওঠে তখনকার ফ্রান্সের নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার। ফলে মানুষের সামনে প্রবল বিদ্রোহের
মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
১৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি ১৭৮৮ সালের ফ্রান্সে ভয়াবহ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে। জীবন বাঁচানোর জন্য
হাজার-হাজার বুভুক্ষু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে পাড়ি দেয় এবং প্যারিসে এসে সমবেত হতে থাকে।
ক্ষুধার্ত মানুষ শহরে এসে বাকিদের বিলাস ব্যসনের জীবন দেখে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তারা এখানে এসে
একইসাথে দেখতে পায় নিজেদের দৈন্য আর তাদেরই হাতে উৎপাদিত ফসলে শহুরেদের অযৌক্তিক
বিলাসিতা। তখন বেশিরভাগ ফরাসি গ্রামবাসী প্রতিবাধ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজকর্মচারীরা তাদের দমন
করার চেষ্টা করলে সাধারণ বিদ্রোহ রূপ নেয় রাজতন্ত্রবিরোধী এক স্বশস্ত্র সংগ্রামে।
রাজতন্ত্রের অত্যাচারের মুখে প্রতিবাদী জনগণ যখন ফুঁসে ওঠে ঠিক তখনি তাদের সাথে যোগ দেয় বুর্জোয়া শ্রেণি বা নতুন ধনিক
শ্রেণি। আরেকটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায় ফরাসি বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করে দেয় অধিকারবঞ্চিত বুর্জোয়া শ্রেণি।
তাদের সক্রিয় কর্মকাÐে অনেক বেগবান হয় আন্দোলন। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রচার ও প্রণোদনায় একসময় সাধারণ জনগণের
সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে বিদ্রোহ সর্বাত্মক রূপ নিয়ে সূচনা হয় ফরাসি বিপ্লবের। বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করলে ফরাসি বিপ্লবকে
তিনটি ধাপে আলোচনা করা যেতে পারে। কালপরিসর বিবেচনায় প্রথমত উন্মেষ পর্ব, সক্রিয়করণ পর্ব, পরিণতি পর্ব এই তিনটি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র