সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাস বর্ণনা কর সংখ্যা পদ্ধতির ধারণা ব্যাখ্যা কর বিভিন্ন প্রকার সংখ্যা পদ্ধতি বর্ণনা কর

মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ হিসাব ও গণনার কাজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে
আসছে। কালের বিবর্তনে কিছু সংখ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু হারিয়ে গেছে। যেমন- দৈনন্দিন জীবনে আমরা দশমিক
সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করি। আবার কম্পিউটার কাজের জন্য বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই ইউনিটে বহুল প্রচলিত সংখ্যা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সংখ্যা আবিষ্কারের ইতিহাস
সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে হিসাব বা গণনা করার ধারণা সৃষ্টি হয়। শুরুতে গণনার কাজে মানুষ
হাতের আঙ্গুলকে ব্যবহার করত। পরবর্তীতে আঙ্গুলে গণনার সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে পড়ে এবং শুরু হয় কাঠি, নুড়িপাথর, দড়ির গিট ইত্যাদি উপকরণের ব্যবহার। উন্নতির ধাপে ধাপে গণনার জগতে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন বা
প্রতীক ব্যবহার করে। সাথে সাথে বিভিন্ন উপায়ে গণনার পদ্ধতিও চালু হয়।
অনুমান করা হয় খৃস্টপূর্ব ৩২০০ সালে হায়ারোগিøফিক্স (ঐরবৎড়মষুঢ়যরপং) চিহ্ন বা সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে
সর্বপ্রথম গণনার কাজে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের প্রচলন শুরু হয়। এরপর শুরু হয় মেয়ান (গধুধহ) পদ্ধতি। তারা
ব্যবহার করতো ২০ ভিত্তিক সংখ্যা এবং ৫ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। খৃস্টপূর্ব ৩৪০০ সালে রোমানরা তাদের নিজস্ব বর্ণমালা
ব্যবহারের মাধ্যমে রোমান (জড়সধহ) সংখ্যা পদ্ধতি চালু করে। খৃষ্টপূর্ব ৪০০০ সালের দিকে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক সংখ্যার
প্রচলন হয় এবং আরবের পÐিতেরা তাদের এ পদ্ধতির উপর ব্যাপক গবেষণা করে দশভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের কৌশল ও
গণনার প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে তা আরব থেকে ইউরোপে প্রবেশ করে। খৃষ্টপূর্ব ৪০০ সালে গ্রিসে ২৭টি গ্রিক
আলফাবেট নিয়ে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি চালু হয়।
মিশরীয়রা হিসাবে ব্যালেন্স না থাকলে তাকে ‘নফর’ বা ‘শূন্য’ দিয়ে প্রকাশ করে। কোন কিছু নাই এরূপ বোঝাতে
ভারতীয়রা সংস্কৃত শব্দ ‘শূন্য’ ব্যবহার করতো। ৬০০ সালের দিকে ঋণাত্বক সংখ্যা ব্যবহার করা হয় কারো ঋণ
বোঝানোর জন্য। ভগ্নাংশ সংখ্যা প্রথম প্রবর্তন হয় মিশরে। তবে গ্রিক ও ভারতীয় গণিতবিদরা খৃষ্টপূর্ব অর্ধশতাব্দীতে
ভগ্নাংশ সংখ্যার তত্ত¡ ও উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম অসীম () এর সংকেত প্রচলন করেন।
প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ পিংগালা (Pingala)) শূন্য (“০”) আবিষ্কারের মাধ্যমে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে প্রথম বাইনারি
সংখ্যা পদ্ধতির ধারণা দেন। সতের শতাব্দীতে গটফ্রেইড লিবনিজ (Gottfried Leibiz) একটি আর্টিকেলে আধুনিক
চিত্র ৫.১ : গণনার জন্য মিশরীয়দের দ্বারা ব্যবহৃত হায়ারোগিøফিক্স (Hieroglyphics) ( প্রতীক
বাইনারি সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ এবং ১ ব্যবহার করেন। প্রখ্যাত ইংরেজ
গণিতবিদ জর্জ বুল (George Boole) 1 ১৮৫৪ সালে সত্য এবং মিথ্যা এ দুই যুক্তি বা লজিকের উপর ভিত্তি করে বুলিয়ান
বীজগণিত রচনা করেন। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর সত্য এবং মিথ্যাকে যথাক্রমে বাইনারি ১ ও ০ দিয়ে
পরিবর্তন করার মাধ্যমে কম্পিউটারে সমস্ত গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির
লজিক গেটে এ সংখ্যা পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। তাছাড়া সকল আধুনিক কম্পিউটারে বইনারি সংখ্যা পদ্ধতি
ব্যবহার করা হয়।
৫.১.২ সংখ্যা পদ্ধতি
কোন সংখ্যা লেখা বা প্রকাশ করার পদ্ধতিকেই সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়। সংখ্যা তৈরি করার বিভিন্ন প্রতীকই হচ্ছে অংক।
অংক ব্যবহার করে সংখ্যা পদ্ধতির সাহায্যে যে কোন পরিমাণকে (ছঁধহঃরঃু) প্রকাশ করা যায়। যেমন- দশমিক পদ্ধতিতে
১২৩ সংখ্যাটি ১, ২ ও ৩ আলাদা তিনটি অংকের দ্বারা গঠিত হয়েছে।
সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি
কোনো সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো ঐ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মোট মৌলিক চিহ্নসমূহের বা সাংকেতিক চিহ্নগুলোর
মোট সংখ্যা। আমাদের অতি পরিচিত দশমিক পদ্ধতিতে মোট দশটি মৌলিক চিহ্ন বা প্রতীক রয়েছে। যথা ০, ১, ২, ৩,
৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। সে কারণে দশমিক পদ্ধতির ভিত্তি হলো ১০। আবার বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে মোট মৌলিক চিহ্ন
আছে দুইটি (০ এবং ১)। সে কারণে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো ২।
স্থানীয় মান
কোন একটি সংখ্যার যে স্থানে কোন অংক বা প্রতিকটির অবস্থান তাকে স্থানীয় মান বলে। আমাদের হিসাব-নিকাশে
সবচেয়ে বেশি পরিচিত দশমিক পদ্ধতির ৪২৫ সংখ্যাটিতে ৪ অংকটি তৃতীয় অবস্থানে (অর্থাৎ শতকের ঘরে) আছে এবং
এখানে বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ১০। সুতরাং এই তিনটি অংকের ভিত্তিতে বলা যায় এখানে ৪টি শতক আছে। গাণিতিক
ভাষায় তা হলো
৪  ১০০ + ২  ১০ + ৫  ১ বা ৪  ১০২
+ ২ ১০১
+ ৫  ১০০
উল্লেখ্য, শূন্য ছাড়া যে কোনো সংখ্যার ঘাত (চড়বিৎ) শূন্য হলে তার মান হয় ১।
কোনো একটি দশমিক সংখ্যা প্রকাশের জন্য একক, দশক, শতকের ঘর অর্থাৎ ১০০
, ১০১
, ১০২
ইত্যাদি ঘর আছে।
এখানে প্রত্যেকটি স্থানকেই ১০ এর পাওয়ার (চড়বিৎ) হিসাবে দেখানো হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, কোনো একটি সংখ্যা
পদ্ধতির পরপর ছোট থেকে বড় স্থানীয় মানের মানকে ঐ সংখ্যা পদ্ধতির বেজের ০, ১, ২, ৩,৪ ..... ইত্যাদি পাওয়ার
সম্বলিত মান দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
৫.১.৩ সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ
সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তির উপর নির্ভর করে চার ধরনের সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। যেমনÑ
১. দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System)
২. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System)
৩. অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)ও
৪. হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System)।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি
মানুষ দৈনন্দিন জীবনে গণনা কিংবা হিসাব-নিকাশের জন্য যে সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে তাই দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ
পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ১০। কারণ এই পদ্ধতিতে মোট ১০ টি মৌলিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যথাÑ ০, ১, ২, ৩, ৪,
৫, ৬, ৭, ৮ এবং ৯। (১০১)১০ , ১২৩১০, (৯৮.৭৩)১০ ইত্যাদি হলো দশমিক সংখ্যার উদাহরণ। উল্লেখ্য, সাধারণ হিসাব-
নিকাশের জন্য দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন থাকলেও কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যায় না।
বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি
যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ এবং ১ এই দু’টিমাত্র সংখ্যা বা অংক ব্যবহার করা হয় তাকে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বলে। মোট
দু’টি অংক ব্যবহারের কারণেই এই সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ২। যেমন- (১০১)২ , ১০০০১২, (১০০০.১১১)২
ইত্যাদি হলো বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির উদাহরণ। এই পদ্ধতির ০ এবং ১ এই অংক দু’টিকে সংক্ষেপে বিট (ইরহধৎু থেকে
ইর এবং উরমরঃ থেকে ঃ নিয়ে ইরঃ) বলা হয়। ০ এবং ১-কে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে যে কোন সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যা
পদ্ধতিতে লেখা সম্ভব। যেমনÑ দশমিক সংখ্যা ১২৭ বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ১০০০০০১১।
অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতি
অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ৮। এই পদ্ধতিতে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এবং ৭ এই ৮টি মৌলিক অংক ব্যবহৃত
হয়। (১০১)৮ , (৭৩১)৮, (৬৪৫.১০৩)৮ ইত্যাদি হলো অক্ট্যাল সংখ্যার উদাহরণ।
হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি
এই পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ১৬। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ১৬ টি মৌলিক অংক রয়েছে। এই সংখ্যাসমূহ ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭,
৮, ৯ এবং অতঃপর অ, ই, ঈ, উ, ঊ ও ঋ। বর্ণ (অষঢ়যধনবঃ) এবং সংখ্যা (ঘঁসনবৎ) উভয়ের ব্যবহার থাকার কারণে
হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির আরেক নাম আলফানিউমেরিক সংখ্যা পদ্ধতি। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির অ, ই, ঈ,
উ, ঊ এবং ঋ-এর সমতুল্য দশমিক হচ্ছে যথাক্রম ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫। (১৫১)১৬ ,(১ই)১৬,(অইঈ. ই)১৬ ইত্যাদি
হলো হেক্সাডেসিমেল সংখ্যার উদাহরণ।
বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মৌলিক, প্রতিক, বেজ উদাহরণসহ লিখুন।
সারসংক্ষেপ
সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে হিসাব বা গণনা করার ধারণা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে গণনার জন্য মূলত বাইনারি,
অক্ট্যাল, দশমিক ও হেক্সাডেসিমেল ইত্যাদি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত কোন সংখ্যা লেখা বা
প্রকাশ করার পদ্ধতিকেই সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়। সংখ্যা তৈরি করার বিভিন্ন প্রতীকই হচ্ছে অংক। আর কোনো সংখ্যা
পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো ঐ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মোট মৌলিক চিহ্নসমূহের বা সাংকেতিক চিহ্নগুলোর মোট সংখ্যা।
যেমন- দশমিক পদ্ধতিতে মোট দশটি মৌলিক চিহ্ন বা প্রতীক রয়েছে (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯)। সে কারণে
দশমিক পদ্ধতির ভিত্তি হলো ১০।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন
১। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ভিত্তি কত?
ক) ২ খ) ৪
গ) ৮ ঘ) ১৬
২। সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তির উপর নির্ভর করে কত ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি আছে?
ক) ৩ খ) ৪
গ) ৫ ঘ) ৬

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]