হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের সময় আল্লাহর বিধান ভুলে গিয়ে আরবসহ সমগ্র পৃথিবীর মানুষ ছিল
অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। অত্যাচার, অনাচার, শোষণ, বর্বরতা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে ছেয়ে গিয়েছিল তৎকালীন
সমাজব্যবস্থা। মানবতার এ চরম দুর্দিনে পথহারা মানবজাতিকে সত্য, ন্যায় ও মুক্তির পথ দেখালেন হযরত মুহাম্মাদ
(সা.)। নবুওয়্যাত লাভের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর স্বজাতির লোকেরা তাঁকে আল আমীন বা সত্যবাদী ব্যক্তি বলে মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু নবুওয়্যাত লাভের পর থেকে স্বার্থবাদী লোকেরা তাঁর বিরোধীতা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে এ বিরোধীতা রাসূল
(সা.) ও তাঁর সাথীদের জীবন অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও প্রাথমিক জীবন মহানবী (সা.)-এর শৈশব ও যৌবনকাল সম্পর্কে জানতে পারবেন।
মুখ্য শব্দ মরুভূমি, কুরাইশ, সাদ গোত্র, হারবুল ফুজ্জারে, আল আমীন, বুহায়রা ও হালিমা
রাসূল (সা.)-এর আরবে আগমনের প্রেক্ষাপট
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল প্রেরণের জন্য করুণাময় আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টি আরবের মক্কাভূমির ওপর পতিত
হলো কেন, এর কারণ অনুসন্ধান করলে একাধিক উত্তর পাওয়া যাবে। যেমন- মক্কা নগরী মোটামুটিভাবে ভূমন্ডলের
মধ্যভাগে অবস্থিত, আরব দেশ থেকে যত সহজে অন্যান্য দেশে যাতায়াত করা যায়, অন্য কোনো দেশ থেকে তা আদৌ
সম্ভব হয় না। সারা জগতের মুক্তির কান্ডারির ভূমন্ডলের মধ্যস্থলে অবস্থিত মরুময় আরব দেশে আবির্ভূত হওয়াই সঙ্গত
ছিল। আরব জাতি ব্যতীত অন্য প্রত্যেক জাতিই মানুষের রচিত এক একটা ধর্মপদ্ধতির অনুসারী ছিল। তাছাড়া পৃথিবীর
সকল অনাচারের প্রতিকার ও সকল অবিচারের প্রতিবিধান করার জন্য যিনি আসবেন তাঁকে এমন দেশে আবির্ভূত হওয়াই
সঙ্গত, যেখানে তিনি অল্প চেষ্টাতেই নিজের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য কতিপয় উপযুক্ত সহচর পাবেন। আরব ছাড়া আর
কোথাও মনে হয় এটা সম্ভব ছিল না। অন্য সকল দেশ ও অঞ্চলে তখন পুরোহিতদের প্রচন্ড প্রতাপে মানুষের জ্ঞান-বিবেক
সম্পূর্ণরূপে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই মানবজাতির ত্রাণকর্তা, সর্বশেষ রাসূলকে প্রেরণের জন্য সর্বজ্ঞ আল্লাহ
তায়ালার রহমতের দৃষ্টি আরব মরুভূমির মক্কা নগরীকেই মনোনীত করে।
বংশ পরিচিতি
হযরত ইবরাহীম (্অ)-এর সুযোগ্য পুত্র ইসমাঈল (আ)-এর অধস্তন বংশধরদের থেকে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুপ্রসিদ্ধ
কুরাইশ বংশের গোড়াপত্তন হয়। ‘কুরাইশ’ উপাধি সর্বপ্রথম ফিহর গ্রহণ করেছিলেন। ফিহরের অধস্তন বংশধররাই কুরাইশ
নামে পরিচিত। ‘কুরাইশ’ শব্দের অর্থ ‘একত্র করা’। কেননা কুসাই মক্কার লোকদের একই সম্পর্কে সম্পৃক্ত করেছিলেন।
এজন্য তাঁর গোত্রের নাম ‘কুরাইশ’ রাখা হয়েছে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ফিহরের স্বনামধন্য অধস্তন ‘কুসাই’ মক্কা
নগরীসহ সমগ্র হিজাযে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে পবিত্র কাবা ঘরকে সমগ্র আরব দেশ থেকে মক্কা নগরীতে আগত লোকদের
একত্র হওয়ার স্থানে পরিণত করেন।
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল মুত্তালিব হিজাযের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকাকালে আবিসিনিয়ার রাজা আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার
উদ্দেশে বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কা শরীফে আসে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আবাবিল নামক ক্ষুদ্র পাখির দল পাঠিয়ে তাদের
সমূলে ধ্বংস করেন। পবিত্র কুরআনে সূরা ফীল-এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। আবরাহা হস্তিবাহিনী নিয়ে এসেছিল
বলে এ বছরকে ‘আমুল ফীল’ বা হস্তির বছর বলা হয়। আবদুল মুত্তালিবের দ্বাদশ পুত্র আবদুল্লাহর সাথে ইয়াসরিব
(মদিনা)-এর বনু যুহরা গোত্র প্রধান আবদুল ওহাবের কন্যা আমিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি আমিনাকে নিয়ে মক্কায়
ফিরে আসেন এবং কিছুদিন পর বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেন। বাণিজ্য শেষে প্রত্যাগমনের সময় মদিনায় অসুস্থ
হয়ে পড়েন এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল্লাহ মৃত্যুর পূর্বে ৫টি উট, স্বল্পসংখ্যক বকরি ও ভেড়া এবং
উম্মে আয়মান নাম্নী এক দাসী রেখে যান। এ সময় বিবি আমিনা সন্তানসম্ভবা ছিলেন।
জন্ম
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মতারিখ নির্ধারণে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহাসিক তাবারি, ইবনে
খালদুন, ইবনে হিশাম প্রমুখ ১২ রবিউল আউয়াল নির্দেশ করেছেন, কিন্তু ঐতিহাসিক আবুল ফিদা বলেন, দশ তারিখে
হযরত (সা.)-এর জন্ম হয়েছিল। মিসরের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও ভূগোলবিদ মাহমুদ পাশা আল-ফালাকী গাণিতিক
যুক্তিতর্কের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মতারিখ ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল মোতাবেক ৯ রবিউল
আউয়াল সোমবার। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। জন্মের সপ্তম দিনে আব্দুল
মুত্তালিব আরবের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনকে আকিকা উৎসবে করে, তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’, অর্থ- পরম
প্রশংসিত। আর বিবি আমিনা পুত্রের নাম রাখেন ‘আহমদ’, অর্থাৎ পরম প্রশংসাকারী। মুহাম্মদ ও আহমদ ও উভয় নামই
বাল্যকাল থেকে প্রচলিত ছিল। কুরআন মাজীদে রাসূল (সা.) এর দুটি নামেরই উল্লেখ আছে।
ধাত্রীগৃহে অবস্থান
জন্মের পর প্রথম দু’তিন দিন শিশু (সা.) মাতৃদুগ্ধ পান করেন। তার পর আবু লাহাবের সুওয়াইবা নাম্নী দাসী তাঁকে দুগ্ধ
পান করান। তখনকার দিনে আরবে প্রচলিত প্রথানুযায়ী সম্ভ্রান্ত পরিবারে কোনো শিশু জন্ম নিলে তার স্তন্যদান ও লালনপালনের ভার ধাত্রীর ওপর ন্যস্ত হতো। অবশ্য এজন্য ধাত্রীমাতা যথাযথ পুরস্কার ও সম্মানী পেত। মুহাম্মদ (সা.)-এর
লালন-পালনের ভার মার্জিত রুচিবোধসম্পন্ন, উন্নতমনা, বিশুদ্ধভাষী বনু সাদ গোত্রের হালিমার হাতে পড়ে। রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেন, “আমি কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছি এবং সাদ গোত্রে প্রতিপালিত হয়ে তাদের বিশুদ্ধ ভাষা রপ্ত করেছি,
এজন্যই আমি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বাগ্মী।” ধাত্রীর মাতা হালিমার কাছ থেকে মাতৃসদনে স্থানান্তরিত হওয়া ষষ্ঠ বছরে
শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মা আমেনা মদিনায় গিয়ে পিতৃকুলের সকলের সঙ্গে শিশু মুহাম্মদের সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং স্বামীর
কবর যিয়ারত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এজন্য উম্মে আয়মান নাম্নী পরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা যাত্রা করেন।
মদিনায় পৌঁছে আমিনা শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্বামীর কবর যিয়ারত করেন ফিরার পথে মক্কা মদিনার
মধ্যবর্তী ‘আবওয়া’ নামক স্থানে পৌঁছে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট তিন পৃষ্ঠা-৫০
দাদা ও চাচার তত্ত¡াবধানে
মাতৃবিয়োগের দুই বছর যেতে না যেতেই কালের কঠোর হস্ত তাঁকে পিতামহ আবদুল মুত্তালিব স্নেহপূর্ণ বক্ষ থেকে
অপসারিত করে। আবদুল মুত্তালিব ৮২ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান। দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু
তালিব মুহাম্মদ (সা.)-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর তত্ত¡াবধানে কিশোর মুহাম্মদ পারিবারিক ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন
কাজে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সিরিয়া গমন
আনুমানিক ৫৮২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বয়স যখন বারো বছর দু’মাস, তখন পিতৃব্য আবু তালিবের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে
শামদেশে (সিরিয়া) যাত্রা করেন। এ সময় সিরিয়ার বসরা নগরের এক গির্জায় বুহায়রা নামক এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক
অবস্থান করতেন। এ যাত্রায় কুরাইশ প্রধানের অনেকেই আবু তালিবের সঙ্গী হয়েছিলেন।
আল আমীন উপাধি
বাল্যকাল থেকেই রাসূলুল্লাহ্ (সা.) দুর্দশাগ্রস্ত ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংবেদনশীল ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি
ধ্যানে চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। নম্রতা, বিনয়, সত্যবাদিতা, সাধুতা ও সৎস্বভাবের জন্য আরববাসী তাঁকে ‘আল আমীন’ বা
বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করে। অবশেষে ‘মুহাম্মদ’ (সা.) নামের পরিবর্তে ‘আল-আমীন’ নামই বেশি পরিচিত হয়ে
ওঠেন। দেখা হলেই লোকেরা বলত, “এই যে আমাদের আল-আমীন আসছেন।” বস্তুত আল-আমীন উপাধি লাভের মধ্যে
আমরা এ সত্যই উপলব্ধি করি, ভবিষ্যৎ জীবনের সার্থকতা নির্ভর করে বাল্যজীবনের চরিত্র মাধুর্যের ওপর। সত্যবাদিতা সে
চরিত্র গঠনের প্রথম এবং প্রধান উপরকরণ।
হিল্ফুল্ ফুযুল গঠন
মহানবী (সা.)-এর জন্মের পূর্বে আরবে যেসব যুদ্ধ-সংঘাত একাধারে চলে আসছিল, তন্মধ্যে ‘হারবুল ফিজ্জার’ বা
ফিজারের যুদ্ধই ছিল সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ। কুরাইশ এবং কায়িস্ গোত্রের মধ্যে এ যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। উকায মেলায়
জুয়াখেলা, ঘোড়দৌড় ও কাব্য প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্য করে এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। এমন বিরতিহীন দ্ব›দ্বসংঘর্ষ, যুদ্ধ,
হত্যা ও ধ্বংসলীলা, প্রলয় তাÐব, সামাজিক বিশৃঙ্খলা থেকে মানুষকে মুক্তিদান ও সমাজে চুরি ডাকাতি, খুনাখুনি, লুণ্ঠন,
সন্ত্রাস, রাহাজানি বন্ধে রাসূল (সা.) এক সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিরাজমান অসহনীয় সামাজিক পরিস্থিতি
থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তিনি একটা সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির তীব্র প্রয়োজন উপলব্ধি করেন। রাসূল (সা.) ফেজারের
যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে পিতৃব্য ও গোত্রনেতা যোবায়ের ইবনে আবদুল মুত্তালিবের নেতৃত্বে হাশিম ও যুহরা প্রভৃতি
বংশের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ আবদুল্লাহ ইবনে জায়দানের গৃহে সমবেত হন এবং একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এ
প্রতিজ্ঞার উদ্যোক্তাদের অনেকের নামের মধ্যে ‘ফযল’ ধাতু ছিল বিধায় প্রতিজ্ঞাটির নাম ‘হিলফুল-ফুযুল’ বা ফযলদের
প্রতিজ্ঞা নামে খ্যাত হয়। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, প্রতিজ্ঞাগুলো ছিল নিম্নরূপ১. আমরা দেশের অশান্তি দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
২. বিদেশী লোকদের ধনপ্রাণ ও মানসম্মান রক্ষা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
৩. বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে স¤প্রীতি সদ্ভাব স্থাপনের চেষ্টা করব।
৪. জনসাধারণকে অত্যাচারীর কবল থেকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব।
এ প্রতিজ্ঞা অনুসারে কিছুদিন পর্যন্ত বেশ কাজ হয়েছিল। তবে কালক্রমে ইসলামের বিস্তৃতি হওয়ার পর কুরাইশ দলপতিরা
এ প্রতিজ্ঞার শর্ত ও হলফনামার কথা ভুলে যান। সবচাইতে বড় কথা হলো, ইসলামের আগমনে তা ম্রিয়মাণ হয়ে যায়।
অন্যদিকে পৌত্তলিকরা রাসূল (সা.) বিরোধী ছিল বলে হিলফুল ফুযুলের প্রতিজ্ঞা আর কার্যকর থাকেনি।
বৈবাহিক জীবন
আল-আমীন চাচা আবু তালিবের অনুমতি নিয়ে খাদিজা (রা:)-এর প্রতিনিধিরূপে সিরিয়ায় যাত্রা করেন। সঙ্গে ছিল খাদিজা
(রা:)এর বিশ্বস্ত কর্মচারী মায়সারা এবং একজন আত্মীয়। সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বাণিজ্য করে প্রচুর লাভবান হয়ে আল
আমিন মক্কায় ফিরে আসেন এবং হযরত খাদিজা (রা:)-কে হিসাবপত্র ও অর্থকড়ি বুঝিয়ে দেন। প্রচুর লাভ হওয়ায় খাদিজা
(রা:) যুবক মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে উপযুক্ত পারিতোষিক দেন। ধীরে ধীরে আল-আমীনের প্রতি
হযরত খাদিজা (রা:)-এর শ্রদ্ধা বেড়ে যায় এবং সে শ্রদ্ধা অনুরাগে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব
করেন। তখন আল-আমীন মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ২৫ বছর আর হযরত খাদিজার ৪০ বছর। এ বয়সের একজন যুবকের
পক্ষে এমন এক প্রৌঢ়া মহিলাকে বিয়ে করার বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল না। চাচা আবু তালিবের অনুমতিক্রমে বিবি খাদিজা ও
রাসূল (সা.)-এর শুভ পরিণয় সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ পঁচিশ বছর তাঁদের এ দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল। হযরত খাদিজার
জীবদ্দশায় তিনি অন্য কোনো নারীকে স্ত্রীত্বে গ্রহণ করেননি। খাদিজা বিয়ের পর পরই তাঁর সকল সম্পদ সম্পত্তি প্রিয়
স্বামীকে দান করে দেন।
হাজ্রে আসওয়াদ পূন:স্থাপন
কাবার স্থাপনা পাশ্ববর্তী পাহাড়ের তুলনায় নিম্নভূমিতে অবস্থিত থাকায় বর্ষার পানিতে স্রোত প্রবল বেগে তার মধ্যে প্রবেশ
করে প্রায়ই ক্ষতিগ্রহস্ত হয়ে পড়ত। এ সমস্যার সমাধানকল্পে কাবার চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু একদা
পানির স্রোতের বেগে তা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য কাবা গৃহ নতুন করে নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
কুরাইশ বংশের সকল গোত্রের লোকজন একত্রে মিলে-মিশে কাবা গৃহের নির্মাণকার্য সমাপ্ত করে, কিন্তু ‘হাজ্রে আসওয়াদ’
বা কালো পাথর কারা যথাস্থানে স্থাপন করবে, তা নিয়ে মহাবিতÐার সৃষ্টি হয়। প্রস্তরখানি স্থাপনের সাথে সামাজিক মর্যাদা
ও বংশগত প্রাধান্যের সম্পর্ক ছিল। প্রত্যেক গোত্রের লোকরাই দাবি করতে লাগল, আমরাই প্রস্তর স্থাপনের একমাত্র
অধিকারী। প্রথমে বচসা, তারপর তুমুল দ্ব›দ্ব-কোলাহল আরম্ভ হয়। এ কোন্দল-কোলাহলে চার দিন কেটে গেল, কিন্তু
মীমাংসার কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। তখন চিরাচরিত প্রথানুসারে সকলেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। যুদ্ধ যখন
একেবারে অনিবার্য হয়ে উঠল, তখন জ্ঞানবৃদ্ধ আবু উমাইয়া সকলকে আহবাান করে বললেন, “আমার প্রস্তাব হচ্ছে, যে
ব্যক্তি আগামীকাল ভোরে সর্বপ্রথম কাবাঘরে প্রবেশ করবে, তার ওপরই এ বিবাদ ফয়সালার ভার অর্পণ করা যাক। সে যে
সিদ্ধান্ত করবে তাই আমরা মেনে নেব।” বৃদ্ধের এ সমীচীন প্রস্তাবে সকলেই সম্মত হয়। পরদিন ভোরে দেখা গেল, মুহাম্মদ
(সা.) সকলের আগে কাবাঘরে প্রবেশ করছেন। তখন সম্মিলিত কণ্ঠে আনন্দের রোল ওঠে- “এই তো আমাদের আলআমীন। আমরা সকলেই তাঁর মীমাংসায় সম্মত আছি।” আল-আমীন তাদের মুখে সব ব্যাপার অবগত হয়ে একখানা চাদর
বিছিয়ে নিজে প্রস্তরখানা তার মধ্যস্থলে স্থাপন করেন এবং নির্বাচিত গোত্র প্রতিনিধিদের বললেন, “এবার আপনারা
প্রত্যেকেই এ চাদরের এক এক প্রান্ত ধরে পাথরখানা যথাস্থানে নিয়ে চলুন।” সকলেই রাসূলের অনুসরণ করলেন।
যথাস্থানে উপনীতি হয়ে মুহাম্মদ (সা.) পুনরায় পাথরখানা নিজ হাতে তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করেন। এভাবে
বিবাদমান গোত্রগুলোর মধ্যে এক জটিল সমস্যার ফয়সালা হয়ে গেল।
অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, সূ² বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বসহ ব্যাপক সুনামের ফলে আল-আমীন একটি আসন্ন ভয়াবহ
রক্তপাতের আশংকা থেকে আরব গোত্রগুলোকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী, এ সময় আলআমীনের বয়স ছিল পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি।
শিক্ষার্থীর কাজ মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও শৈশবকালীন ঘটনাসমূহ চিহ্নিত করুন।
বিশুদ্ধমতানুযায়ী মহানবী (সা.)
এর জন্ম তারিখ কোন্টি?
আমূল ফিল কী? কুরাইশ নামের উৎপত্তি
কার নাম থেকে এসেছে?
হালিমা কে?
সারসংক্ষেপ :
আরবভূমিসহ সমগ্র পৃথিবীতে যখন মানবতার মর্যাদা ভুলণ্ঠিত হচ্ছিল, মহান আল্লাহর একত্ববাদের পরিবর্তে শিরকসহ
নানা মতবাদের প্রসার ঘটেছিল, ঠিক তখনিই অখিরী নবী হযরত মুহাম্ম (সা.) মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ
করেন। জন্মের পূর্বে পিতা এবং শৈশবে মাতৃবিয়োগের মাধ্যমে কঠিন বাস্তবতায় জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর স্বভাব ও
মানবীয় বৈশিষ্ট্যাবলির মাধ্যমে জাহিলী সমাজে আল আমিন নামে খ্যাতি লাভ করেন। নবুয়াত লাভের পূর্বেই হিল্ফুল্
ফুযুল সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এবং যুব বয়সে কাবা ঘরের কালো পাথর স্থাপনের সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের আনুষ্ঠানিক আস্থা অর্জন করেন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
(ক) ৫৭০ (খ) ৫৭৩
(গ) ৫৭৯ (ঘ) ৫৮২
২। ‘আমুল-ফিল’ বা হস্তিবর্ষ বলা হয় কোন খ্রিস্টাব্দকে?
(ক) ৫৭০ (খ) ৫৭৩
(গ) ৫৭৯ (ঘ) ৫৮২
৩। মহানবী (সা.)-কে ‘আল-আমীন’ বলা হয় কারণ তিনি-
(ক) আমানত রক্ষা ও সত্য বলতেন (খ) কর্তব্যনিষ্ঠায় অটুট ছিলেন
(গ) সৎ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন (ঘ) বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করতেন
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন
একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদের উন্নয়নে অশংগ্রহণ নিয়ে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে বিরোধ বাধে। প্রতিটি পরিবার
নিজেরাই সম্পূর্ণ খরচ দিবে বলে দাবি করে। তখন মসজিদের ইমাম সাহেব তাদের মধ্যে উন্নয়ন কাজে সমান অংশীদারের
বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং পরবর্তীতে যেন গ্রামে এসব বিষয়ে অশান্তি না হয় সেজন্য কয়েকজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি
গঠন করে স¤প্রীতি স্থাপনের চেষ্টা করেন।
(ক) সিরিয়া ভ্রমনের সময় কিশোর মহানবী (স:) এর সাথে কোন খ্রীস্টান পাদ্রীর সাক্ষাত হয়? ১
(খ) হিলফুল ফুজুলের পরিচয় দিন। ২
(গ) বিরোধ নিষ্পত্তিতে ইমাম সাহেব কোন ঘটনাকে অনুসরণ করেছেন? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করুন। ৩
(ঘ) ইমাম সাহেবের পদক্ষেপ সমাজে শান্তি বজায় রাখতে পারে। আপনি কি এর সঙ্গে একমত? ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]