মুখ্য শব্দ নবুয়াত, ওয়াহী, জিব্রাইল,হিরা গুহা, বুহায়রা ও ওরাকা ইব্নে নওফল
নবুয়তের পরিচয়
‘নবুয়াত’ শব্দটি আরবী ‘নাবাআ’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে-সংবাদ। সে হিসেবে নবী শব্দের অর্থ
সংবাদ বাহক বা সংবাদ দাতা। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানব জাতির নিকট প্রয়োজনীয় খবরাখবর বা
সংবাদ তথা আল্লাহর নির্দেশসমূহ পৌঁছে দেয়ার জন্য যারা সংবাদদাতার ভূমিকা পালন করেছেন, তারাই নবী। প্রত্যেক নবী
রাসূলই মানবজাতিকে তাদের বিস্মৃত দায়িত্ব কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে দুনিয়াতে আগমন করেন। তাদের এক আল্লাহর
ইবাদত করতে বলেন। শিরক্-বিদআাত থেকে তাদের দূরে রাখেন। তাদের অজ্ঞতাপূর্ণ জাহিলী রসম-রেওয়াজ রহিত
করেন। আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করার পদ্ধতি শেখান। নির্ভূল ও সঠিক আইনের প্রচলন করে তা মেনে চলার
নির্দেশ দেন।
ওয়াহী পরিচিতি
ওয়াহী অর্থ ইশারা, ইঙ্গিত, মনে কোনো কথা নিক্ষেপ করা, গোপনে কোনো কথা বা বাণী পাঠানো। পারিভাষিক অর্থে
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীদের নিকট যা প্রত্যাদেশ হিসেবে প্রেরণ করেন তাকে অহী বলে। ওয়াহী দুই প্রকার, যথা: (ক)
ওয়াহী মাতলু: যার শব্দ ও অর্থ দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-অর্থাৎ কুরআন (খ) ওয়াহী গাইরি-মাতলু, যার ভাব
আল্লাহর পক্ষ থেকে তবে ভাষা রাসূল (সা.)-এর, অর্থাৎ হাদীস। আদম (আ:) থেকে শুরু করে মহানবী (সা.) সকল নবীরাসূলগনই আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহী বা প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হন।
প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়াহী
তাঁর বয়স যখন চল্লিশ বছর পূর্ণ হচ্ছিল, তখন মুহাম্মদ (সা.)-এর ভাবের আবেশ আরো গভীর হয়ে ওঠে। এ অবস্থায়
লোকালয়ের কোলাহল থেকে দূরে সরে গিয়ে নির্ভৃত নির্জন স্থানে ধ্যনমগ্ন থাকা তাঁর নিকট প্রিয় মনে হতে লাগল। মক্কা
থেকে তিন মাইল দূরে হিরা পর্বত, চারদিকে জনমানবহীন বিস্তৃত মরূপ্রান্তর। সে পাহাড়ের গুহায় তিনি মাসের পর মাস
অবস্থান করে ধ্যনমগ্ন থাকতেন। একদিন যখন তিনি পূর্বের অভ্যাসমতো হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন, তখন জিব্রাইল (আ)
অহী নিয়ে এসে তাঁকে বললেন, “ইকরা (পড়ুন)। তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। দ্বিতীয়বারেও একই নির্দেশে
রাসুল (সা.) নেতিবাচক জবাব দেন। একইভাবে তৃতীয়বার বললেন, পড়ুন। তখন রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কী
পড়তে হবে? বললেন: “পড়ুন, আপনার প্রভূর নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন
জমাটবদ্ধ রক্তপিন্ড থেকে। সে প্রভূর নামে পাঠ করুন, যিনি মহিমান্বিত; মানুষকে যিনি কলম দ্বারা জ্ঞান শিখিয়েছেন।”
(সূরা আলাক, ৯৬: ১-৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: আমি তাঁর থেকে শুনে শুনে শব্দ ও বাক্যগুলো উচ্চারণ করলাম। তিনি প্রস্থান করলে আমি ধ্যান
থেকে উঠে পাহাড়ের গুহা থেকে বর হয়ে আসলাম। যখন পাহাড়ের অর্ধ পথ নেমে এসেছি, তখন আকাশ থেকে কণ্ঠ’ শ্রæত
হলো- ‘হে মুহাম্মদ! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আমি জিব্রাইল। আমি মুহূর্তে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখলাম,
আকাশ জুড়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছেন- আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। তিনি দ্বিতীয় বার আমাকে বললেন, ‘হে মুহাম্মদ!
আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আমি জিব্রাইল। তারপর স্বপ্নের দৃশ্যাবলীর মতো তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরমুহূর্তে আমার
ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক হৃৎকম্প শুরু হলো। আমি দ্রæত বাড়ির দিকে চলতে লাগলাম।
বাড়ি ফিরে রাসূল (সা.) জ্বরাক্রান্ত রোগীর মতো কাঁপতে লাগলেন এবং খাদিজাকে বললেন, “আমাকে কম্বল দিয়ে
জড়াও।” যতক্ষণ না তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করলেন, ততক্ষণ তাঁকে কম্বল দিয়ে আবৃত রাখা হলো। কিছুটা প্রকৃতিস্থ হয়ে
রাসূল (সা.) হযরত খাদিজা (রা:) কে সার্বিক বিষয় ব্যক্ত করলেন। খাদিজা (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সান্ত¡না দিয়ে
বললেন: ভয়ের কারণ নেই, আল্লাহ আপনাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলবে না। কেননা আপনি সর্বদা মানুষের কল্যানে কাজ
করেন, দু:খীদের সাহায্য করেন এবং তাঁকে নিয়ে ওরাকা ইবনে নওফলের নিকট গমন করেন। তিনি হিব্রæ ভাষা জানতেন
এবং তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবের পÐিত ছিলেন। রাসূল (সা.) এর নিকট পূর্বাপর সকল ঘটনা শুনে তিনি উচ্ছ¡সিত কণ্ঠে
বলে উঠলেন, ‘কুদ্দুসুন’ (শুভ, শুভ)! তিনি ‘নামুসুল আকবার (স্বর্গীয় বাণীবাহক জিবরাইল)। যিনি আপনার নিকট আগমন
করেছিলেন, তিনি সেই দূত (ফিরিশ্তা), যিনি হযরত মূসা (আ) এর নিকট এসেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এভাবেই
চল্লিশ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ রমযান কদরের রাতে নবুয়ত লাভ করেন। নবুয়তপ্রাপ্তির এ ঘটনা হাদীসে একাধিক
জায়গায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকার ওহী
আল্লামা ইবনে কাইয়িম নিম্নোক্ত কয়েক প্রাকারের ওয়াহীর কথা উল্লেখ করেছেন১. সত্য স্বপ্ন। স্বপ্নের মাধ্যমে রাসূল (সা.)-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হতো।
২. ফেরেশতা তাঁকে দেখা না দিয়ে তাঁর মনে কথা বসিয়ে দিতেন। যেমন প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, রুহুল কুদ্দুস আমার
মনে একথা বসিয়ে দিলেন, কোনো মানুষ তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পাওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করে না। কাজেই
আল্লাহকে ভয় করো এবং ভালো জিনিস তালাশ করো। রিযিক পেতে বিলম্ব হলে আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে রিযিক
তালাশ করো না। কেননা, আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ছাড়া পাওয়া যায় না।
৩. ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে ওয়াহী নিয়ে আসতেন
৪. রাসূল (সা.)-এর কাছে ওয়াহী ঘণ্টাধ্বনির মতো টন টন শব্দে আসতো। এটি ছিল ওয়াহীর সবচেয়ে কঠোর অবস্থা। এ
অবস্থায় ফেরেশতা তাঁর সাথে দেখা করতেন এবং প্রচÐ শীতের মওসুম হলেও প্রিয়নবী (সা.) ঘর্মাক্ত হতেন। তাঁর
কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়তো।
৫. মহানবী (সা.) ফেরেশতাদের তাঁর প্রকৃত চেহারায় দেখতেন। সেই অবস্থাই আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর ওপর ওয়াহী নাযিল
হতো।
৬. ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলা। প্রিয় নবীর সাথে আল্লাহর কথা বলার প্রমাণ মিরাজের
ঘটনায় রয়েছে।
এভাবে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহী অবতীর্ণের মাধ্যমে মহানবী (সা.) নবী ও রাসূল হিসেবে আবির্ভুত
হলেন। তার উপর অহী প্রচারের দায়িত্ব বর্তায়। মহানবী (সা.) এর দাওয়াতী কর্মকাÐসমূহ তার জীবনের মতই সাধারণত
দুভাগে ভাগ করা যায়-প্রথমত: মক্কা জীবন, এসময়টি ৬১০ সাল থেকে ৬২২ সন পর্যন্ত মোট ১৩ বছর। দ্বিতীয়ত: মদীনা
জীবন, এ সময়টি ৬২২ থেকে ৬৩২ সন পর্যন্ত মোট ১০ বছর।
মহানবী (সা.)-এর নবুয়াতী ২৩ বছরে ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবানের তিনটি পর্যায় উল্লেখযোগ্য যথা:
১. গোপনে ইসলাম প্রচার: অহী নাযিলের পর থেকে প্রথম তিন বছর।
২. প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার: নবুয়াতের চতুর্থ বছর থেকে দশম সন পর্যন্ত।
৩. মক্কার বাইরে আরব ও সমগ্র বিশ্বে ইসলাম প্রচার: নবুয়াতের দশম বছর থেকে শুরু করে মহানবী (সা.) এর
ওফাতকাল পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীর কাজ ওয়াহী সম্পর্কে একটি ধারণা উপস্থাপন করুন।
ওয়াহী কী? ওয়াহী কোন ফেরেশতার মাধ্যমে
কার উপর অবতীর্ণ হয়?
ওয়াহী কত প্রকার ও কী
কী?
প্রথম ওয়াহী কোনটি?
সারসংক্ষেপ :
৪০ বছর বয়সে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ওয়াহী বা প্রত্যাদেশ লাভ করেন।
বিপদগামী মানব জাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য নাযিল করা হয় আল কুরআন। হেরা গুহায় নাযিলকৃত কুরআনের প্রথম
শব্দটি হচ্ছে ‘ইকরা’ বা পড়। ৬১০ থেকে ৬৩২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী নাযিলকৃত কুরআন বিশ্বমানবতার জন্য
একমাত্র অনুকরনীয় আদর্শ। কেয়ামাত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য পথ চলার পাথেয়। মানব জীবনের সকল
সমস্যা ও জিজ্ঞাসার জবাব আল কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমে জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণ লাভে মানব জীবন ধন্য
হতে পারে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। প্রথম অবতীর্ণ অহীর শব্দ কোনটি?
(ক) ই্করা (খ) ইখ্ফা
(গ) ইল্হাম্ (ঘ) কিরাঅ
২। ওয়াহী নিয়ে আসেন কোন্ ফিরিশ্তা?
(ক) মিকাইল (খ) জিব্রাইল
(গ) ইস্রাফিল (ঘ) আজরাইল
৩। প্রথম অবতীর্ণ আয়াতসমূহের সূরা কোনটি?
(ক) ফাতিহা (খ) ইখলাস
(গ) আলাক (ঘ) আনফাল
সৃজনশীল প্রশ্ন:
অধ্যাপক মো: আবুল কালাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি গল্প শোনান।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পথহারা মানুষদেরকে সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রদর্শন করতে একদা একজন বিখ্যাত লোকের আবির্ভার
ঘটে। তিনি দ্বীপ বাসীর জন্য নতুন বার্তা নিয়ে এলেন। মানুষের উপর অর্পিত সৃষ্টি কর্তার দেয়া দায়িত্বের ব্যপারে তিনি
তাদেরকে সতর্ক করলেন। প্রচলিত বিশ^াসের পরিবর্তে নতুন বাণীতে মানুষ অভিভূত হয়। ক্রমেই দ্বীপঞ্চল ছাড়িয়ে
বিশ^ব্যাপী সে আহবান ছড়িয়ে পড়ে।
(ক) ওয়াহী অর্থ কী? ১
(খ) ওয়াহী- এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন। ২
(গ) ওয়াহী নাযিলের ধাপগুলো বর্ণনা করুন। ৩
(ঘ) উদ্দীপকের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঘটনার সাথে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ঘটনার সাদৃশ্য তুলে ধরুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র