মুখ্য শব্দ মিরাজ, রজব মাস, মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আকসা
মিরাজুন্নবী
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার ইচ্ছায় দ্বীনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী সারওয়ারে কায়িনাত মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ (সা.) মর্ত্যজগৎ রেখে অসীম স্বর্গজগৎ, সাত আসমান, বায়তুল মামুরসহ সৃষ্টি রহস্য অবলোকন ও উপলব্ধি এবং
বেহেশত, দোযখ পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত যানে আরোহিত হয়ে সুদীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ
করেন এবং বান্দার জন্য অশেষ নেয়ামতসহ একাধিক ফরমান মর্ত্যরে ধরায় নিয়ে ফিরে আসেন। বিশ্ব মানবকুলকে অবাক
করে নবীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রাখতে সক্ষম, সিরাতে রাসূল (সা.)-এর এ মহান ঘটনাকে মিরাজুন্নবী (সা.) বলে অভিহিত
করা হয়।
মিরাজ সংঘটিত হওয়ার সময়
নবুয়তের দশম বর্ষে মহানবী (সা.)-এর ৫০ বছর বয়সে রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়। আবার কেউ
কেউ মিরাজের সময়কাল নবুয়তের একাদশ সন বলেও উল্লেখ করেন। সূরা বনি ইসরাঈলের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা
ইরশাদ করেন- “মহিমান্বিত সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের সামান্যতম সময়ের মধ্যে মসজিদুল হারাম থেকে
মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন, যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি; যেন আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলি
দেখাতে পারি, নিশ্চয়ই তিনি অধিক শ্রবণকারী ও অধিক জ্ঞানি।” (বনী ইসরাঈল-১) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এক রাতে কাবা
চত্বরে যমযম ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যখানে ঘুমিয়েছিলেন। এ সময় তিনি শুনতে পেলেন, কে যেন তাঁকে ডাকছেন।
জেগে দেখলেন জিবরাঈল (আ) তাঁর শিয়রে দÐায়মান, অদূরে ‘বুরাক’ নামক এক আজব বাহন অপেক্ষা করছে।
মিরাজের ঘটনাবলি
রাসূল (স.) মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৫২ বছর। তিনি কা‘বা শরীফের পার্শে¦ ঘুমিয়ে ছিলেন। হযরত
জিব্রাইল (আ.) হঠাৎ তাঁকে জাগিয়ে তোলেন। তারপর তাঁর কাছে একটি পশু আনা হয়, যার রং সাদা এবং উচ্চতা
খচ্চরের চাইতে একটু ছোট। এটি আলোর গতি সম্পন্ন ছিল বলে একে ‘বুরাক’ নামকরণ করা হয়। বুরাক শব্দের অর্থ
‘বিদ্যুৎ গতি সম্পন্ন’। মহানবী (সা.) যখন বুরাকের ওপর আরোহণ করতে গেলেন, তখন তা নিজেকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা
করে তাঁকে সওয়া হতে বাধা দেয়। কিন্তু পরে হযরত জিব্রাইল (আ.) বুরাককে কষে ধরে বলেন, সাবধান ইতঃপূর্বে মহানবী
(সা.) এর চেয়ে কোনো শ্রেষ্ঠ মানুষ তোমার ওপর আরোহণ করেনি। মহানবী (সা.) তাতে আরোহণ করেন এবং হযরত
জিব্রাইল (আ.) এর সাথে একসঙ্গে সফর আরম্ভ করেন।
মদিনায় তাঁরা প্রথম যাত্রা বিরতি করেন এবং সালাত আদায় করেন। জিব্রাইল (আ) বলেন, এটা আপনার হিজরতের স্থান।
মক্কা ত্যাগ করে পরে আপনাকে মদিনায় আসতে হবে। দ্বিতীয় বার যাত্রা বিরতি করেন সিনাই পাহাড়ে। মুসা (আ)
আল্লাহর সাথে এই পাহাড়ে কথা বলেছেন। তৃতীয় বার যাত্রাবিরতি করেন হযরত ঈসা (আ) এর জন্মস্থান পশ্চিম
জেরুসালেম বেথেলহেম। বায়তুল মোকাদ্দাস পৌঁছার পর তিনি বুরাককে মসজিদে আকসার পশ্চিম দেয়ালের সাথে
বাঁধেন। সেই দেয়ালের নাম হচ্ছে হায়েত আল-বুরাক বা বুরাক দেয়াল। তাঁর আগের নবীও এই একই দেয়ালে সাওয়ারী
বেঁধেছিলেন। যখন তিনি সুলাইমান (আ.)-এর তৈরি মসজিদে (আকসায়) প্রবেশ করেন। তখন পৃথিবীর শুরু থেকে ঐ
পর্যন্ত প্রেরিত সকল নবীকে উপস্থিত দেখতে পান। তাঁর উপস্থিতি উপলক্ষে সবাই জামায়াতে সালাত আদায় করেন। কে
ইমামত করে তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন। হযরত জিবরাঈল (আ) মহানবী (সা.)-কে হাত ধরে সামনে
ইমামতের জন্য এগিয়ে দেন। তিনি সবাইকে নিয়ে সালাত পড়েন।
সপ্তম আসমানে তিনি বিরাট এক প্রাসাদ এবং বায়তুল মামুর দেখতে পান। বায়তুল মামুরের চারদিকে অসংখ্য ফেরেশতা
তাওয়াফ করছে। বিরাট প্রাসাদের কাছে তিনি নিজের মতো এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম
(আ)। তারপর তাঁকে আরো ওপরে নেয়া হয়। তিনি ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ নামক স্থানে পৌঁছেন। এই স্থানটিকে আল্লাহর
আরশ ও তাঁর সৃষ্টিজগতের মধ্যে একটি শূন্য এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। রাসূল (সা.) লক্ষ্য করলেন, তাঁর
সাথে আগত ফেরেশতারা এই পর্যন্ত পৌঁছে প্রয়োজনীয় বার্তা নিয়ে আসেন। এর ওপরে যাওয়ার অনুমতি নেই। এ স্থানেই
রাসূল (সা.)-কে নেক লোকদের উদ্দেশ্যে তৈরি বেহেশত ও প্রতিশ্রæত পুরস্কার দেখানো হয়। ঐ বেহেশতী নেয়ামত
সম্পর্কে ইতঃপূর্বে কেউ কানে শুনেনি এবং চোখেও দেখেনি। এ স্থানেই হযরত জিবরাঈল (আ) থেকে গেলেন। এবার
রাসূল (সা.) একাকীই সামনে অগ্রসর হওয়ার পালা। যখন তিনি একটি উঁচু সমতল স্তরে পৌঁছেন তখন তিনি নিজেকে
মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামীনের দরবারে উপস্থিত দেখতে পান। তাঁকে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার বিশেষ সুযোগ
দেয়া হয়। এ রাতেই ৫ ওয়াক্ত সালাত বাধ্যতামূলক করা হয়।
সকাল বেলা উপস্থিত লোকদেরকে রাসূল (সা.) পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। মুখে মুখে রাসূল (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা
চারদিকে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু লোক হযরত আবু বকর সিদ্দিকের কাছে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চায়।
তাদের আশা ছিল হযরত আবু বকর (রা:) যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে ইসলামী আন্দোলন মক্কা থেকে সমূলে
উৎপাটিত হবে। হযরত আবু বকর (রা:) পুরো ঘটনা শোনার পর মন্তব্য করেন, যদি রাসূল (সা.) বলে থাকে, তাহলে তা
অবশ্যই সত্য হবে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমি প্রতিদিনই তাঁর কাছে ফেরেশতার আগমন ও আল্লাহর বার্তা
নাযিলের খবর শুনি এবং তা বিশ্বাস করি। সে দিনই হযরত আবু বকর (রা:) ‘সিদ্দীক’ (সত্যবাদী) খেতাবে ভূষিত হন।
কাফিরদের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনা প্রকাশ হলে কাফিররা তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিহিত করে। তাদের মধ্যে থেকে যারা বায়তুল মাকদাস ভ্রমণ
করেছিল তারা পরীক্ষামূলক অনেক প্রশ্ন করে, মহানবী (সা.) ঠিক ঠিকভাবে সে সব প্রশ্নের জবাব দেন। তখন তারা আবার
প্রশ্ন করল, পথে আমাদের বাণিজ্য বহর রয়েছে তা কোথায়, কখন আসবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফিরদের এ প্রশ্নেরও সঠিক
জবাব দেন, কিন্তু এরপরও তাদের রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রবণতা কমেনি।
মিরাজ কী সশরীরে অনুষ্ঠিত হয়
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, মিরাজ শারীরিকভাবে ঘটেছিল। পক্ষান্তরে কারো কারো মতে, এ উপলব্ধি আধ্যাত্মিকভাবে
ঘটেছিল। কুরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ মিরাজ বা নভোভ্রমণ
শারীরিকভাবেই ঘটেছিল। তিনি সচেতন অবস্থায় সশরীরই আকাশ ভ্রমণ করেছিলেন।
গুরুত্বের বিচারে মিরাজ
মিরাজ শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়াতী যিন্দেগির এক আত্মোপলব্ধি। কেবল সীমার মধ্যে বসে আমরা যেমন
অসীমকে সত্য করে চিনতে পারি না, শুধু অসীমের মধ্যে থেকেও সেরূপ সসীমকে চেনা যায় না। স্রষ্টাকে চেনার জন্য তাই
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টিতে আসতে হয়েছিল; আবার সৃষ্টিকে চেনার জন্য তাঁকে স্রষ্টার কাছে যেতে হয়েছিল। এ
জন্যই সৃষ্টি ও স্রষ্টা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান সম্পূর্ণ হতে পেরেছিল। এটাই মিরাজের তাৎপর্য। অন্যদিকে প্রত্যেক ব্যক্তি,
প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সমাজ, রাষ্ট্রে ঝবপৎবপু ও চৎরাধপু বলতে কিছু বিষয় থাকে, যা সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয় না।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে তা সংঘটিত হয়ে থাকে। মিরাজের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সেখানেই।
মিরাজের সার্থকতা বিচার
মিরাজের সার্থকতা কী? কেউ হয় তো এ প্রশ্নও করতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল এবং
পথপ্রদর্শক ও আদর্শ। সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ তাকেই বলে যার পূর্ণতা সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা মিরাজ রজনীতেই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি মানুষের শক্তি ও সম্ভাবনার শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছেন।
কাজেই আধ্যাত্মিক জীবনে যখন কারো আলোর প্রয়োজন হয়, তাকে বিশেষজ্ঞরূপে এ মরুভাস্করের চরণে শরণ নিতেই
হয়। স্থান, কাল ও গতির ওপর মানুষের যে অপরিসীম শক্তি ও অধিকার আছে, জড় শক্তিকে সে যে আয়ত্ত করতে পারে,
মানুষের মধ্যে যে বিরাট অতিমানুষ লুকিয়ে থাকতে পারে, মিরাজ সে কথাই প্রমাণ করে। মহানবী (সা.)-এর হযরত ও
আহমদ নামকরণের উদ্দেশ্য এবং সার্থকতাও মিরাজের মধ্যে নিহিত। এ নাম দুটি যে চরম সত্য, তা মিরাজের রাতে
প্রমাণিত হয়েছে। মিরাজ রজনীতে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পরম গৌরব দান করেন। কোনো ফেরেশতা
বা কোনো নবী-রাসূল যেখানে উপনীত হতে পারেননি, মুহাম্মদ (সা.) সেখানে উপনীত হয়েছিলেন।
মিরাজ সম্পর্কে অভিযোগ এবং তা নিরসন
রাসূল (সা.)-এর স্ব-শরীরে মিরাজের ওপর কাফিররা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোপ্রবীণ দার্শনিকরা আসমান ভেদ করে ওপরে গমণ করা অসম্ভব বলে মনে করে। পক্ষান্তরে নবীন দার্শনিকগণ আসমানের
অস্তিত্ব পর্যন্ত স্বীকার করে না। অতএব, যখন আসমানের অস্তিত্ব পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি, তবে দৈহিক মিরাজ কীভাবে সম্ভব?
সর্বোপরি নবীন এবং প্রবীণ দার্শনিকগণ এ কথার ওপর একমত হন যে, ভূ-পৃষ্ঠের কিছুটা ওপরে শৈত্যমÐল বিদ্যমান এবং
প্রবীণ দার্শনিকদের মতে সেখানে অগ্নিমÐল অবস্থিত। কোনো স্থুলকায় বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে এ দু’টি স্থান নিরাপদে অতিক্রম
করতে পার সম্ভব নয়। অতএব, নবী করীম (সা.)-এর স্ব-শরীর মিরাজ গমণের কথা বিবেক বিরুদ্ধ।
বাস্তব কথা হচ্ছে, এসব নিছক ধারণা মাত্র। জ্ঞান ও যুক্তির প্রেক্ষিতে এটা কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। সকল তাওহীদবাদী
ধর্মে আসমান ভেদ করে নবীদের জন্য আল্লাহর হুকুমে সহজ করা হয়েছে। ইহুদিদের মতে আম্বিয়ায়ে কিরামের স্ব-শরীর
জীবিত অবস্থায় আসমানে অবস্থান করা এবং খ্রিস্টানদের নিকট হযরত ঈসা (আ)-এর জীবিত অবস্থায় আসমানে
গমণপূর্বক তথায় অবস্থান করা এবং শেষ যামানায় আসমান থেকে অবতরণ করা স্বীকৃত।
মিরাজের শিক্ষা:
আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্ব মানা
মিরাজের প্রধান শিক্ষা হলো আল্লাহ রাব্বুলআলামীনের একত্ব ও সার্বভৌমত্ব এর স্বীকৃতি। সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টি, স্থায়িত্ব,
সংরক্ষণ, ক্রমবিকাশ এবং ক্রমোন্নতি একমাত্র আল্লাহর দান। যিনি অসীম জ্ঞান ও বিচক্ষণতার অধিকারী, যাঁর ইচ্ছা ও
আদেশ নিরঙ্কুশভাবে (ধনংড়ষঁঃবষু) আসমান ও যমীনের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণুর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে, যার হাতে
রয়েছে জীবিকার চাবিকাঠি, জীবন-মৃত্যুর রশি এবং যিনি সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। মানুষের আনুগত্য, দাসত্ব একমাত্র
আল্লাহর প্রাপ্য; এ ক্ষেত্রে অন্য কারো ইবাদত না করা, তার সাথে কাউকে শরীক না করা, অন্যকারো সার্বভৌমত্ব না মানা।
মূলতঃ এ হচ্ছে মিরাজের প্রধান ও প্রথম শিক্ষা। এ শিক্ষাকেই কুরআনের সূরা বনী ইসরাইলে এভাবে বলা হয়েছে-
তোমার রবের সিদ্ধান্ত যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা করবে না। (সূরা বনী
ইসরাইল, আয়াত-২৩১)
পিতামাতার অধিকার সংক্রান্ত
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের মৌল ইউনিট হলো পরিবার। তাই মিরাজের দ্বিতীয় শিক্ষায় তামাদ্দুনিক বিষয়ে পারিবারিক
ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সূরা বনী ইসরাইলে বলা হয়েছে-“পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।
যদি তাদের একজন অথবা দুজনই বৃদ্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকেন, তবে তাদের সঙ্গে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত করবে না। তাদের
তুচ্ছজ্ঞান করবে না, তাদের সঙ্গে মিষ্ট ভাষায় কথা বলবে।” (সূরা বনি ইসরাঈল-২৩)
প্রথম আদেশ : পিতামাতাকে ‘উহ্’ বলা যাবে না।
দ্বিতীয় আদেশ: ধমক দেয়া, এটা যে কষ্টের কারণ আহা বলাই বাহুল্য।
তৃতীয় আদেশ: তাঁদের সাথে স¤প্রীতি ও ভালোবাসার সাথে নম্রস্বরে কথা বলতে হবে।
চতুর্থ আদেশ: পিতামাতার সাথে নম্র ব্যবহার যেন নিছক লোক দেখানো না হয় এবং আন্তরিক মমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে
হতে পারে।
পঞ্চম আদেশ: তাঁদের প্রতি ভালো ব্যবহারের সাথে সাথে তাদের জন্য দোয়া করারও শিক্ষা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে“হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।”
ধনী-গরীবের পারস্পরিক সম্পর্ক
মিরাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, সমাজে যারা বিত্তহীন, বাস্তুহারা, মযলুম, বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে, কোথাও মাথা
গোজার জায়গা নেই, অপরের সাহায্যের মুখাপেক্ষী এদের সম্পর্ক বিত্তবানদে কর্তব্য সাহায্য ও সহযোগিতা করা। এ
সম্পর্কে সূরা বলা হয়েছে- “আপন আত্মীয়-স্বজনদের পাওনা বুঝে দাও এবং মিসকীন ও পথিকদের হক বুঝিয়ে দাও।
(সূরা বনী ইসরাইল-২৬)
মিতব্যয়িতা
মিরাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে- মানুষকে মিতব্যয়ী হতে হবে, যেন সে নিজের ব্যয়বাহুল্য দ্বারা নিজের ও অপরের
সর্বনাশ ডেকে না আনে, কার্পণ্য করে সম্পদের পাহাড় তৈরি করাও যাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- “তোমরা হাতকে
না একেবারে ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে ফেলবে, আর না একেবারে খুলে দেবে (কৃপণও হয়ো না এবং অমিতব্যয়ীও হয়ো না)
জেনে রেখো তা করলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।” (সূরা বনী ইসরাইল-২৯)
দারিদ্র্যের জন্য সন্তান হত্যা
মিরাজের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে দারিদ্র্যের ভয়ে, খাদ্যাভাব ও সাংসারিক অভাব-অনটনের আশঙ্কায় সন্তান হত্যা না করা।
বর্তমান বংশধরদের জীবিকার ব্যবস্থাপনা আল্লাহ যেভাবে করছেন, ভবিষ্যৎ বংশধরগণের জন্যও ঠিক তেমনি করবেন। এ
প্রসঙ্গে সূরা আল্লাহ বলেন-“তোমরা অভাবের তাড়নায় স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তাদের ও তোমাদের
জীবিকা দান করে থাকি।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩১)
ব্যভিচার ও অশ্লীলতা বর্জন করা
মিরাজের প্রধান শিক্ষা হচ্ছে উন্নত ও নৈতিক চরিত্রবান হওয়া, ব্যভিচার অত্যন্ত গর্হিত কাজ, তাই ব্যভিচার থেকে নিজে
বিরত থাকতে হবে এবং সমাজ থেকে এটিকে মূলোৎপাটন করতে হবে। যৌন উত্তেজক সকল প্রকার সম্ভাব্য পথ ও উপায়
উপাদান বিলুপ্ত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সূরা বনী ইসরাইলে আল্লাহ বলেন-“এবং তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না,
অবশ্যই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩২)
অন্যায়ভাবে হত্যা বন্ধকরণ
মানুষের জীবন আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পবিত্র। তাই অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা হারাম। তাই, শুধু আল্লাহ প্রদেয় নির্দিষ্ট
বিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো কারণে রক্তপাত করা চলবে না। আল্লাহ বলেন- “তোমরা ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া কাউকে
হত্যা করবে না এবং যে কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তবে নিশ্চয়ই আমি তার উত্তরাধিকারীকে অধিকার দিয়েছি। যেন
তারা হত্যা সম্বন্ধে সীমা অতিক্রম না করে।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩৩)
এতিম-অসহায়দের সম্পদ ভক্ষণ
এতিমের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রাপ্ত বয়স্ক মুমিনদের কর্তব্য। যতদিন পর্যন্ত না তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে
পারে। ততদিন তাদের অধিকার অক্ষুণœ রাখার দিকে বিশেষ নযর দিতে হবে। আল্লাহ বলেন-“এতিমের মাল ভক্ষণ ও
স্পর্শ করো না। একমাত্র তার কল্যাণ আকাক্সক্ষা ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩৪)
ওয়াদা পালন করা
আজকের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কূটনীতির নামে যে ভÐামী চলে মিরাজের এ শিক্ষার মাধ্যমে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
কারণ মানুষকে তার প্রতিটি অঙ্গীকার, চুক্তি ও প্রতিশ্রæতির জন্য একদিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ বলেন-“এবং অঙ্গীকারপূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩৪)
ব্যবসা নীতি
মিরাজের এ শিক্ষা ব্যবসায়-বাণিজ্য, লেনদেন ও পণ্য-ক্রয়-বিক্রয়কালে সঠিকভাবে ওজন করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিমাপ
যন্ত্রও নির্ভুল হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-“মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন
করবে। এটা উত্তম, এর পরিমাণ শুভ।” (সূরা বনী ইসরাইল-৩৫)
অহংকার বর্জন করা
মিরাজের সর্বশেষ শিক্ষা হচ্ছে মানুষকে গর্ব, অহংকার সহকারে চলাফেরা করা চলবে না। কারণ তার অহংকার না পারবে
পৃথিবীকে বিদীর্ণ করতে, আর না পারবে আসমানকে অতিক্রম করতে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-“পৃথিবীতে অহংকার ও
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র
ইউনিট তিন পৃষ্ঠা-৬৭
দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই তুমিতো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বতপ্রমাণ
হতে পারবে না।
‘মিরাজ’ কী? মিরাজের রাত্রিতে মহানবী (সা.)
কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাাদেশ লাভ
করেন?
আল-কুরআনের কোন্
সূরায় মিরাজের
আলোচনা এসেছে?
মিরাজে মহাবী (সা.) কয়জন
নবীর সাথে সাক্ষাত করেন?
সারসংক্ষেপ :
আল্লাহ তায়ালা তদীয় রাসূলকে তার অলৌকিক নিদর্শনাদী প্রদর্শনের জন্য পৃথিবীর সীমারেখা থেকে আরশে আযিমের
কাছে নিয়ে যান। তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বিশাল সৃষ্টিজগতের কুদরত দেখানোর মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে
চলমান কষ্ট-মুসিবতকে পায়ে মাড়িয়ে আল্লাহর হুকুমের উপর অবিচল থাকার প্রেরণা দান করেন। মিরাজের ঘটনার পর
পরই হিজরতের মাধ্যমে তার বাস্তব পর্যবেক্ষণ উদ্ভাসিত হয়।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। হযরত আবুবকর (রা:)-কে সিদ্দীক উপাধি দেয়ার কারণ হচ্ছে, তিনি-
(ক) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন (খ) ভÐ নবীদের দমন করেন
(সা.) যাকাত অস্বীকারকারীদের দমন করেন (ঘ) মিরাজের ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন
২। নবুয়াতের কোন সালে মিরাজ সংঘটিত হয়?
(ক) দশম (খ) দ্বাদশ
(গ) একাদশ (ঘ) ত্রয়োদশ
৩। মিরাজের রাত্রে মহানবী মক্কা থেকে কোন শহরে গমন করেছিলেন?
(ক) মদীনায় (খ) তায়েফ
(গ) কূফা (ঘ) ফিলিস্তিন
সৃজনশীল প্রশ্ন
প্রফেসর হায়দার একদিন শিক্ষার্থীদের এক অলৌকিক ঘটনার বিবরণ দেন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির ব্যাপারে বিজ্ঞানের স্পষ্ট
ধারণার অনেক আগেই একজন মহামানব পৃথিবী ও সৌরজগতের সীমা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। অনেকেই এ বিষয়টি
নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু তাঁর অলৌকিক এ ভ্রমন বিষয়ে সমসাময়িক ও পরবর্তী যুগের অনেকের নানা প্রশ্নের জবাব তিনি
তাৎক্ষণিক প্রদান করেছিলেন। বিজ্ঞানের আধূনিক আবিস্কারের কারণে তাঁর সেই ভ্রমণ বাস্তব সম্মতই মনে হয়।
(ক) মিরাজ অর্থ কী? ১
(খ) কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মিরাজের ঘটনা সংগঠিত হয়? ২
(গ) উদ্দীপকের ঘটনার সাথে পাঠ্য পুস্তকের কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করুন। ৩
(ঘ) উদ্দীপকের শেষ লাইন দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে। আলোচনা করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র