হুনায়ুনের যুদ্ধ (৬৩০ খ্রি. ৮ম হিজরী) হুনায়ুনের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে পারবেন।

মুখ্য শব্দ হুনাইন, বনু সাকিফ, বনু হাওয়াযেন, মালেক ইবনে আওফ, নাজরানের খ্রীস্টান,
সানাতুল অফূদ, যেমাম ইবনে সালাবা ও তায়েফ দূর্গ
হুনাইনের যুদ্ধ
মক্কা বিজয়ের পর অবশিষ্ট সমগ্র কুফরি শক্তি আরো একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিমদের পতনের প্রচেষ্টা
চালায়। তায়েফের হাওয়াযেন ও সাকিফ গোত্র এতে নেতৃত্ব দেয়। তাদের সংগঠিত বিশ হাজার সৈন্য
মুসলিমদের বিরুদ্ধে রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। অষ্টম হিজরীর শেষভাগে হুানাইন প্রান্তরে তাদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হয়।
ইতিহাসে এটাই হুানাইনের যুদ্ধ নামে খ্যাত।
হুনাইন যুদ্ধের কারণ
ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, “মক্কা বিজয়ের পর কাবা গৃহ মুসলিমদের হাতে চলে যায়। ফলে কাবা গৃহে সংরক্ষিত
প্রতিমাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে উৎখাত হয়। এ ঘটনা কাফিরদের কাছে অসহ্য ছিল। তাই তারা গোপনে গোপনে কাবা ঘর
পুন: দখলের চেষ্টা করছিল।” বনু সাকিফ, বনু হাওয়াযেন, বনু জুযাম, বনু নাসর ও বনু সাদ গোত্রসহ বেশ কিছু গোত্র মন
থেকে প্রতিমা পূজার মায়া ত্যাগ করতে পারছিল না। বিশেষ করে বনু সাকিফ ও বনু হাওয়াযেন গোত্রদ্বয় তাদের
পৌত্তলিকতা ও নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্য মালেক ইবনে আওফের নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মক্কার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত তায়েফের নিকটবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে তাদের বসতি ছিল। তারা নানা শাখা প্রশাখায়
পল্লবিত হয়েছিল। কুরাইশদের ন্যায় তারাও ছিল পৌত্তলিক। মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত নানাভাবে তারা আরবের বিভিন্ন
গোষ্ঠীকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধে সাহায্য করে আসছিল। এতদিন মক্কা ছিল কুরাইশদের হাতে। তাই তারা নিজেদের
নিরাপদ মনে করতো, কিন্তু যখন দেখল মুহাম্মদ (সা.) মক্কা জয় করে নিয়েছেন এবং কুরাইশ ও অন্যান্য পার্শ¦বতী গোত্রও
ইসলাম গ্রহণ করেছে, তখন তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপদাপন্ন দেখতে পায়। মুসলিম বাহিনী তাদেরও আক্রমণ করতে
পারে- এ আশঙ্কায় তারা কালবিলম্ব না করে মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানের আয়োজন শুরু করে। তায়েফের বনু
সাকিফ গোত্রও হাওয়াযিনদের সাথে যোগ দিয়ে কালবিলম্ব না করে তা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। ঐতিহাসিক হিট্টি
বলেন, “বেদুইন পৌত্তলিক গোত্রগুলো মুসলিমদের বিনাশ সাধনের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধাসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে
একচেটিয়া প্রাধান্য বজায় রাখার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল।” সর্বোপরি, মুসলিমদের সার্বিক উন্নতি দেখে বেদুইন গোত্রগুলো
বুঝতে পেরেছিল, তাদের মুসলিমদের কাছে হয়তবা আত্মসমর্পণ করতে হবে। এরূপ আশঙ্কা বোধ করে তারা মুসলিমদের
ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
হুনাইন যুদ্ধের ঘটনা
এ সংবাদ মহানবী (সা.)-এর নিকট আসলে তিনি বনু সাকিফ ও হাওয়াযিনের আক্রমণ প্রতিরোধকল্পে হুানাইন উপত্যকায়
বারো হাজার সৈন্য সমাবেশ করেন। শত্রæ সৈন্যরা হুানাইন উপত্যকায় সমবেত হয়েছিল। এবার মুসলমনাদের সংখ্যা শত্রæ
সংখ্যা থেকে অধিক। তারা সর্বমোট ছিল বারো হাজার, তন্মধ্যে দশ হাজার মুহাজির। যুদ্ধের প্রথমদিকে পাহাড়ের
উপত্যাকা ও চূড়া থেকে অতর্কিত আক্রমণ করে মুসলিমদের নাজেহাল করে। যদি না আল্লাহর সাহায্য আসতো, তবে এ
যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজয়ের গøানি বরণ করে নিতে বাধ্য হত। অবশেষে মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের বীরত্বে মুসলিমরা জয়লাভ করে।
হুনাইন যুদ্ধের ফলাফল
ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, “এ যুদ্ধে কাফিরদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ৭০ জন কাফির নিহত আর ৬,০০০ জন বন্দী
হয়। এ যুদ্ধে পরাজয় বরণের পর কাফিররা হতোদ্যম হয়ে পড়ে।” এ যুদ্ধে কাফিরদের অজস্র অস্ত্রশস্ত্রসহ ২৪,০০০ উট
এবং ৪১,০০০ তোলা স্বর্ণ-রৌপ্য মুসলিমদের হাতে চলে যায়। অপর পক্ষে ৪ জন অথবা ৫ জন মুসলিম মুজাহিদ
শাহাদাত বরণ করেন।” কাফিরদের শেষ অহংকারটুকুও এ যুদ্ধে বিলীন হয়। কারণ ২০ হাজার কাফির তাদের
সৈন্যসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মুসলমানের কাছে এবারও পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলিমদের জয়লাভ করার পর পরাজিত
শত্রæর অনেকেই তায়েফ দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে প্রতিশোধ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করে। মহানবী (সা.) আবু মুসার নেতৃত্বে
একটি বাহিনী প্রেরণ করলে তায়েফবাসী আতœসমর্পন করে।
আরব গোত্রসমূহের রাসূলের দরবারে আগমন
মক্কা বিজয় পরবর্তী হুনাইনের বিজয়ের পর বিভিন্ন গোত্র থেকে দূত দল এসে মদিনায় ইসলাম কবুল করে অথবা নিজেদের
লোকালয়ে মুসলিম হয়ে মদিনায় এসে তাঁর অনুমোদন নেয়। কোনো কোনো দূত দল রাজনৈতিক চুক্তির জন্য আসে, কিন্তু
মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করে। কেউ কেউ মুসলিম না হয়েই ফিরে যায়; পরে ইসলাম গ্রহণ করে।
সানাতুল অফূদ ঃ নবম হিজরীতে দূত দল আগমন শুরু হয়। এজন্য এ বছর ইতিহাসে ‘সানাতুল অফূদ’ বা ‘দূত দল
আগমনের বছর’ নামে খ্যাত। এ দূত দলের সংখ্যা একশর ওপর ছিল। দু’চারটি ছাড়া অধিকাংশ দলই মক্কা বিজয়ের পর
নবম হিজরীতে এসেছিল। এদের মধ্যে দু’একজন বাদে সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। নিম্নে কয়েকটি বিখ্যাত দূত দল সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো।
সাকিফ গোত্রের দূত দল ঃ তাবুক অভিযানের পরে সাকিফ গোত্রের দূত দল মহানবী (সা.)-এর দরবারে আগমন করে।
তিনি মসজিদে নববীর নিকট তাদের তাঁবু খাটানোর ব্যবস্থা করে দেন, যাতে তারা কাছে থেকে মুসলিমদের দেখতে এবং
কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পায়। কয়েকদিন মদিনায় থাকার পর এ দূত দল ইসলাম গ্রহণ করে। মহানবী (সা.) উসমান
ইবনে আবুল আসকে তাদের ইমাম নিযুক্ত করেন।
বিভিন্ন গোত্রের দূত দলের আগমন ঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন মসজিদে নববীতে বসে ছিলেন, এ সময় বনী সাদ গোত্রের
নেতা যিমাম ইবনে সালাবা উষ্ট্রে আরোহণ করে মসজিদের একেবারে দরজায় এসে বাহন থেকে নেমে সরাসরি মজলিসে
আসে এবং জিজ্ঞেস করে, আবদুল মুত্তালিবের পুত্র কে? সাহাবগণ মহানবী (সা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করেন। তখন সে
মহানবী (সা.)-কে বলল, “আপনার নিকট আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে।” মহানবী (সা.) বললেন, যে ধরণের প্রশ্নই হোক
জিজ্ঞেস করুন। অতঃপর তাঁকে ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করা হলে তিনি তার সন্তোষজনক উত্তর প্রদান
করেন। এতে সে তখনই ইসলাম গ্রহণ করে গোত্রে ফিরে গিয়ে সমগ্র গোত্রকে ইসলামে দীক্ষিত করে নেয়। এভাবে
ইসলামের প্রসার হতে থাকে। এরপর ক্রমান্বয়ে বনু ফাযারা, বনু তামিম, বনু আবদুল কায়স, বনু হানিফা, বনু কাহতান এবং বনু হারিস প্রমূখ গোত্রসমূহ ইসলাম গ্রহণ করে।
কত সালে হুনাইনের যুদ্ধ সংঘঠিত হয়?
হাওয়াযিন গোত্রের নেতার নাম কী?
‘সানাতুল-অফুদ’ অর্থ কী?
হুনাইনের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমাতের তালিকা লিখ?
সারসংক্ষেপ :
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ছিল বিধর্মী কাফিরদের নানা ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারে আকীর্ণ। মহান আল্লাহর
তায়ালার মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রচারের জন্য কাজ করতে গিয়ে শত্রæর ব্যপক বাধার সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্য
ছিল অনেক। মুসলিমদের জেহাদের ময়দানে অবিচল থাকার ফলে সরাসরি আল্লাহর যে সকল সাহায্য এসেছিল,
হুনাইনের যুদ্ধ তাদের মধ্যে অন্যতম। মক্কার নিকটবর্তী গোত্রসমূহ এ যুদ্ধের অব্যাহতি পরে ইসলামের ছায়াতলে আতœসমর্পন করে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. কোন ঘটনার পর হুনাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
(ক) বদর যুদ্ধের (খ) খন্দক যুদ্ধের
(গ) হুদায়াবিয়ার সন্ধির (ঘ) মক্কা বিজয়
২. কোন ঘটনার পর আরব গোত্রসমূহ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আসে?
(ক) ওহুদ যুদ্ধের (খ) খন্দক যুদ্ধের
(গ) হুদায়াবিয়ার সন্ধির (ঘ) হুানাইনের যুদ্ধ
৩. হুনাইনের যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
(ক) ৬৩০ (খ) ৬২৯
(গ) ৬২৮ (ঘ) ৬২২
সৃজনশীল প্রশ্ন
অভিযান ও যুদ্ধ মক্ক বিজয়:৬৩০ সাল -------------------যুদ্ধ: ৬৩০ সাল তাবুক অভিযান: ৬৩০ সাল
প্রতিপক্ষ কুরাইশ হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রদ্বয় রোমান স¤্রাট হিরাক্লিয়াস
(ক) হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নেতা কে ছিলেন? ১
(খ) সানাতুল অফুদ বলতে কী বুঝায়? ২
(গ) উদ্দীপকের ছকটির শূন্যস্থানে কোন যুদ্ধের ইংগিত দেয়া হয়েছে? যুদ্ধের কারণ বর্ণনা করুন। ৩
(ঘ) ‘ উক্ত যুদ্ধের পরে ইসলামের প্রচার বৃদ্ধি পায় ’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]