হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র ও কৃতিত্ব এবং সংস্কারসমূহ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা। পৃথিবীতে মহানবী (সা.) এর আগমনের মধ্য দিয়ে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ রুপ লাভ করে।
আরব উপদ্বীপের কুরাইশ গোত্রে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, বিচক্ষণ, প্রতিভাবান এই সমাজ সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে, যার
হাত ধরে আরব সমাজের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে তদস্থলে প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লাহর বিধান। গোত্রকলহের স্থান দখল
করে ভ্রাতৃত্ববোধ, দাসপ্রথার অবসান ঘটিয়ে সকল মানুষ সাম্যের কাতারে প্রতিষ্ঠিত হয়। যে সমাজ একদা কন্যা শিশুর
জীবন্ত কবর রচনা করেছিল, সেই সমাজ নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। নারীকে করে গৃহের সর্বময়
কর্ত্রী। সমাজের স্তরে স্তরে আঁকড়ে থাকা সুদ প্রথা, লুটতরাজ, আর্থিক দুরবস্থাকে মহানবী (সা.) করেন বিদুরিত। সকল
ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে মহানবী (সা.) সকলকে নিয়ে সৃষ্টি করেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র যেখানে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের
অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে। পরস্পর বিবাদমান গোত্রের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে তিনি সমগ্র আরববাসীকে একটি জাতি
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা এই ইউনিটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র, কৃতিত্ব এবং তাঁর আনীত সংস্কারসমূহ আলোচনা করব। মুখ্য শব্দ মূর্ত প্রতীক, আল-আমিন, আদর্শস্বরুপ, শান্তির দূত, জীবনচরিত, আত্মার
বিশুদ্ধতা, ¯েœহবঞ্চিত ও জীবনদর্শন
আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমানের মূর্ত প্রতীক ছিলেন মহানবী (সা.)। তিনি আল-আমিন (বিশ্বাসী) হিসেবে
সকলের নিকট সুপরিচিত হন। তাঁর মাঝে ছিল না কোন ক্রোধ, হিংসা; ছিল শুধু ক্ষমা, করুণা আর ¯েœহ। সততা, সাম্য আর সুবিচার ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ।
চরিত্র :
মহানবী (সা.) পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যার জীবনচরিত সমগ্র বিশ্বের মানুষের নিকট আদর্শস্বরুপ। তিনি ছিলেন
অনুপম চরিত্রের অধিকারী। মাত্র ছয় বছর বয়সে পিতা-মাতার ¯েœহবঞ্চিত হয়ে, জীবনের প্রারম্ভ হতেই সকল প্রকার সৎ ও
মানবিক গুণের অধিকারী হন। তিনি আল-আমিন (বিশ্বাসী) হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত হন। তিনি ছিলেন আদর্শ
রাষ্ট্র নায়ক, সমাজ সংস্কারক, বীরযোদ্ধা ও সমরনিপুণ। সর্বক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি ছিলেন
অসহায় ও মজলুমের ত্রাণকর্তা। তিনি বলেছেন, “শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার আগমন ঘটেনি, শান্তির দূত হিসেবে আমি
প্রেরিত হয়েছি।” আত্মার বিশুদ্ধতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার, কঠোর কর্তব্যপরায়ণতা আর পরোপকার ছিল মুহাম্মাদ (সা.)
এর চরিত্রের সর্বব্যাপি দিক। তিনি ছিলেন ন¤্র ও সরল জীবনযাপনকারী। ইসলামের অনুশাসন আর মহান আল্লাহর বাণী
প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর জীবনের চরম ও পরম আদর্শ। তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
মানুষের মাঝে সাম্যের বাণী প্রতিষ্ঠা, সত্যের উপর ভিত্তি করে জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করা আর সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠার
জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। তিনি পৃথিবীতে মানুষের জন্য ত্রাণকর্তারুপে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশ্বের রহমত স্বরূপ
মহানবী (সা.) এমন এক সময় পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, যখন সারা পৃথিবী জুলুম-অত্যাচার, অবিচার ও নির্যাতনে
নিষ্পেষিত ছিল। তাই তিনি ছিলেন বিশ্বের রহমতস্বরূপ। সভ্যতা বিবর্জিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরবজাতিকে ইসলাম ও
তাওহীদের আলোয় আলোকিত করে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূর করেন। বিশ্বমানবতার মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে
তিনি সর্বোৎকৃষ্ট মহাপুরুষ।
আল্লাহতে আস্থা ও বিশ্বাস
মহানবী (সা.) এর চরিত্রের সর্বোৎকৃষ্ট ভিত্তি আল্লাহতে আস্থা ও প্রগাঢ় বিশ্বাস। আল্লাহ সব সময় ধৈর্য্যশীলদের সাথে
আছেন এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী থাকার কারণে ইসলামের চরম দুর্দিনেও তিনি আল্লাহতে বিশ্বাস হারাননি। দরিদ্র এতিম বালক
অবস্থা হতে শুরু করে রাজ্য শাসকের মর্যাদায় উন্নীত হয়ে যেমন আরাম বিলাসিতায় গা ভাসাননি ঠিক তেমনি আল্লাহকে
এক মুহূর্তের জন্যও অবচেতন মনেও ভুলে যাননি। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, তা পরিপূর্ণভাবে পালন
করেছেন তিনি।
আল-আমিন উপাধি লাভ
মহানবী (সা.) নবুয়্যত প্রাপ্তির পূর্বেই আরব সমাজে আমানতদার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আরব সমাজে সে সময়
তাঁর বিশ্বস্থতার গুনে মুগ্ধ হয়ে শত্রæ-মিত্র নির্বিশেষে সকলে তাঁর নিকট তাদের ধন-সম্পদ, সোনা-দানা ও নগদ অর্থ গচ্ছিত
রাখতো। মহানবী (সা.) এ সকল গচ্ছিত সম্পদ চাহিবামাত্র তার মালিককে যথাযথভাবে ফেরত প্রদান করতেন। তাঁর এ
সত্যনিষ্ঠার জন্য সকলের নিকট থেকে ‘আল-আমিন’ উপাধি প্রাপ্ত হন।
সরল ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন
মহানবী (সা.) সরল ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করতেন। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজ থেকে অন্যায়, অত্যাচার, লুটতরাজ,
ব্যাভিচার, হত্যা ও কুসংস্কার দূরীভ‚ত করে সেখানে শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, অত্যাচারীকে প্রতিরোধ ও
অসহায়দের সাহায্য করা, গোত্রসমূহের মধ্যে যুদ্ধের পরিবর্তে সম্প্রীতি স্থাপন করে ‘হিলফুল ফুযুল’ বা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা
করে আরব যুবকদের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরও কখনো তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিলাসী হননি। আবার মদিনায় জাতিধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে আরবের শাহানশাহ হয়েও সকল কাজ-কর্ম নিজের হাতেই করতেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি সরল, অনাড়ম্বর, নিরহংকার ও কর্তব্যপরায়ন ছিলেন অধিক প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও। বিনয়ী ও ন¤্রতা
বিনয়, ন¤্রতা, কোমলতা, পরোপকারী মনোভাব ও কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর চরিত্রের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। দাস-দাসী ও অধীনস্থ লোকদের প্রতি তিনি কোনদিন রূঢ় ব্যবহার করেননি বা কটুবাক্য দ্বারা কষ্ট
দেননি। তাঁর ঘোরতর শত্রæকেও তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন সহাস্য বদনে। শোকার্ত ও দুঃখ পীড়িত মানুষকে সমবেদনা
প্রদর্শণের পাশাপাশি তাদের সাথে মানবোচিত আচরণ করতেন।
দৈনন্দিন ও ব্যবহারিক জীবনাদর্শ
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য
তাঁর সমগ্র জীবন মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছিলেন। মানুষের সাথে কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্ট, সাবলীল ও
প্রাঞ্জল ভাষায় কথা-বার্তা বলতেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা কখনো বলতেন না। চলাফেরায় কখনো তাঁর মাঝে চঞ্চলতা
কিংবা অলসতার ছাপ লক্ষ্য করা যায় না। খাদ্য-খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি যে নজীর রেখে গিয়েছেন তা অতুলনীয়। তিনি
কখনো পেট পূর্ণ করে খেতেন না। ক্ষুধা রেখেই খাওয়া শেষ করতেন। তিনি যেমন অতিরিক্ত খাবার খেতেন না ঠিক
তেমনি কোন খাদ্য-খাবার অপচয় করতেন না। তাঁকে এক নি:শ্বাসে পানি পান করতে দেখা যায়নি। তিনি ধীরস্থিরভাবে
পানি পান করতেন। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ বিধায় সদা-সর্বদা পুত:পবিত্র থাকতেন। মার্জিত ও রুচিশীল পোশাক-পরিচ্ছদ
ব্যবহার করতেন। তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। একটি অনুপম আদর্শ ও চরিত্রে যে সকল মহৎগুনের সমাবেশ থাকা উচিত, তার সবগুলোর সমাবেশ ঘটেছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনে।
সারসংক্ষেপ:
মানবজীবনের সকল প্রকার মহৎগুণের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে মহানবী (সা.) এর জীবনে। আল্লাহর প্রতি অবিচল
ঈমানের মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। সুদৃঢ় ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা আর সততাই ছিল তার জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র। তিনি ছিলেন
রাহমাতুল্লিল আল আমিন, বিশ্বের জন্য আর্শীবাদস্বরূপ।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. মহানবী (সা.) কত বছর বয়সে পিতা মাতাকে হারান?
ক) ৮ বছর খ) ৬ বছর
গ) ৫ বছর ঘ) ৯ বছর
২. সকল মুসলিম কেন মহানবী (সা.) এর জীবনদর্শন অনুসরণ করেন ?
ক) মহানবী (সা.) আমাদের নবী বলে
খ) মহানবী (সা.) এর নির্দেশিত পথই শ্রেষ্ঠ পথ
গ) অন্য মুসলিমকে অনুসরণ করে
ঘ) নিজের ইচ্ছায়
৩. মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করেন -
র) আল্লাহর বাণী
রর) ইসলামের অনুশাসন
ররর) অন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ
নিচের কোনটি সঠিক-
ক) র, রর, ররর খ) র, রর
গ) রর, ররর ঘ) র, ররর
৪. তিনি পৃথিবীতে মানুষের ত্রাণকর্তারুপে আবির্ভূত হয়েছেন। এখানে কার কথা বলা হয়েছে।
ক) হযরত উমর (রা.) খ) হযরত মুহাম্মদ (সা.)
গ) হযরত আবু বরক (রা.) ঘ) হযরত উসমান (রা.)
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন
সুজানার দাদা তাকে বলল যে, মহানবী (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। মানব জীবনের সকল প্রকার মহৎ গুণের অপূর্ব
সংমিশ্রণ ঘটেছে মহানবী (সা.) এর জীবনে। সহজ-সরল জীবনযাপন করে তিনি এক অপূর্ব জীবনাদর্শের উদাহরণ রেখে
গেছেন যা সবসময় অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
ক) কাকে ‘আল আমীন’ বলে ডাকা হতো ?
খ) মহানবী (সা.) কেমন জীবনযাপন করতেন তা ব্যাখ্যা করুন। ২
গ) মহানবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে আপনি কীভাবে সুন্দর জীবন গঠন করতে পারো লিখুন। ৩
ঘ) “সকল প্রকার মহৎ গুণের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে মহানবী (সা.) এর জীবনে” উক্তিটি ব্যাখ্যা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]