জাতি গঠনকারী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মহানবী (সা.) এর আচরণ কেমন ছিল?

মুখ্য শব্দ প্রজ্ঞা, শ্রেষ্ঠ সংগঠক, বংশ মর্যাদা, বিশ্বজনীন, হিজরত ও গণতন্ত্রের সূচনাকারী

সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংগঠক। পৃথিবীর সবচেয়ে বিশৃংখল জাতিকে তিনি
একই আদর্শের ছায়াতলে এনে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতি গঠনে তার বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক
দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
১) সুশৃংখল জাতিতে পরিণতকরণ : ইসলামের পূর্বে আরব জাতি ছিল বিশৃংখল, গোত্রে-উপগোত্রে বিভক্ত। তাদের মধ্যে
ছিল না পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ঐক্য। তিনি সকল বাধাকে অতিক্রম করে শত বিচ্ছিন্ন জাতিকে একটি সুসংবদ্ধ
সুশৃংখল জাতিতে পরিণত করেছিলেন।
২) একই আদর্শে একীভূতকরণ : আরব সমাজে রক্তের মর্যাদার মাধ্যমে সমাজ গঠিত হত। বংশ মর্যাদা, আভিজত্য ছিল
তাদের সমাজের ভিত্তি। কিন্তু মহানবী (সা.) একমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে একটি জাতিকে গড়ে তোলেন। মূলত আরবের
ইতিহাসে রক্তের পরিবর্তে শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের এটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা।
৩) বিশ্বজনীন জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা : মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের আদর্শের অনুসারে কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক, আঞ্চলিক,
সীমারেখা, দেশ, কাল, বর্ণ, ভাষা, গোত্র ইত্যাদি পেরিয়ে সার্বজনীন একক মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।
৪)মানবতাবোধের উন্মেষ : মহানবী (সা.) আরবের গোত্রপ্রথার মূলে কুঠারাঘাত করেন। গোত্র কিংবা রক্তের ভিত্তিতে নয়
বরং মানবতার আদর্শে তিনি জাতি গঠন করেন। যেখানে মানুষের কল্যাণকামিতাই ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রে মূল ভিত্তি।
৫) সমন্বিত জাতি গঠন : মহানবী (সা.) ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক, আনসার, মুহাজিরদের সমন্বয়ে মদীনা রাষ্ট্র সৃষ্টি
করেন যেখানে সকলের সামাজিক, রাজনৈতিক ধর্মীয় অধিকার স্বীকৃত ছিল। অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ
করত। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
৬) মদীনা সনদ : একক জাতি গঠনে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ ছিল মদীনা সনদ। হিজরতের কিছুদনি পরেই মহানবী সকল
জাতি, ধর্ম, বর্ণের অধিকার সম্বলিত ‘মদীনা সনদ’ প্রদান করেন। এতে ৪৭ টি ধারা ছিল। এই ৪৭ টি ধারার মাধ্যমে
মদীনা রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেকের অধিকার, কর্তব্য, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মুহাম্মদ (সা.) সকলের সমন্বয়ে
একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করেন।
৭) পররাষ্ট্রনীতি : পররাষ্ট্রের প্রতি মুহাম্মদ (সা.) শান্তি ও সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রে তার
দূত বিনিময় করেন, ইসলামের প্রতি আহবান জানান। তিনি রোমান ও পারস্য স¤্রাটের নিকট ইসলামের বাণী প্রেরণ
করেন।
৮) নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা : প্রাক-ইসলামী যুগের আরব সমাজে কোন রাজনৈতিক ঐক্য বা রাষ্ট্র পরিচালনার কোন
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না। সমাজ ও মানুষের জীবন আবর্তিত হতো গোত্রতন্ত্র বা শায়খতন্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু মহানবী
(সা.) মদীনা সনদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করেন। তিনি সকল মানুষের অংশগ্রহণে একটি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। তিনি ছিলেন সেই শিশু রাষ্ট্রের জনক।
৯) সংবিধান প্রণেতা : মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সংবিধান প্রণেতা। তাঁর রচিত ‘মদীনা সনদ’
পৃথিবীর ইতিহাসে রচিত প্রথম সংবিধান। ঐতিহাসিকগণ এই প্রসঙ্গে বলেন, “বিশ্বনবী (সা.) একাধারে ধর্মীয় নেতা,
রাজনীতিবিদ ও প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেন।”
১০) গণতন্ত্রের সূচনাকারী : মহানবী (সা.) এর রচিত শাসনব্যবস্থা ছিল গণতেন্ত্রর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাষ্ট্র পরিচালনায়
জনগণের মতামতকে গ্রহণ করেছেন। পারস্পরিক ভেদাভেদ ও বিদ্বেষকে দূর করে করেছেন, বহুধা বিভক্ত জাতিকে একই
রাষ্ট্রে বসবাস করার উপযোগী করে গড়ে তুলেন। এভাবে তিনি গণতন্ত্রের বীজ বপন করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
সারসংক্ষেপ:
মহানবী (সা.) ছিলেন একটি জাতির প্রতিষ্ঠাতা । তিনি বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র, বর্ণে বিভক্ত বিশৃংখল একটি জাতিকে সাম্য,
মৈত্রী ও গণতন্ত্রের আদর্শে একীভূত করেছেন। তিনি ছিলেন মদীনা রাষ্ট্রের সংগঠক ও সর্বাধিনায়ক। তিনি বিশ্বের
ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি ও রাষ্ট্র গঠন করেন। যেখানে সকল বৈষম্য ও ভেদাভেদ দূর করে সকলকে
একই আদর্শ ও চেতনায় আবদ্ধ করতে সক্ষম হন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. মহানবী (সা.) কত সালে বিভিন্ন দেশে দূত প্রেরণ করেন ?
ক) ৫২৮ সালে খ) ৬৩০ সালে গ) ৫৭০ সালে ঘ) ৬২৮ সালে
২. মহানবী (সা.) বিদেশে দূত প্রেরণ করেছিলেন -
ক) যুদ্ধের কথা জানান দিতে খ) আর্থিক সাহায্যের জন্য
গ) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ঘ) কোনটিই নয়
৩. মহানবী (সা.) ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছিলেন -
র) ইহুদীদের রর) হিন্দুদের ররর) খ্রিস্টানদের
নিচের কোনটি সঠিক
ক) রর, ররর খ) র, রর গ) র, ররর ঘ) র, রর, ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন :
ইসলাম বিষয়ক সেমিনারে একজন বক্তা মহানবী (সা.) এর জীবনী আলোচনার সময় বললেন, মহানবী (সা.) একজন
সফল জাতি গঠনকারী ছিলেন। তিনি মদীনায় সকল ধর্মের সমন্বয়ে অভিন্ন জাতি গঠন করেন এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করেন।
ক) মহানবী (সা.) কোথায় রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন? ১
খ) বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি মহানবী (সা.) এর আচরণ কেমন ছিল? ২
গ) ‘মহানবী (সা.) বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত’ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রদর্শিত পথ কি অনুসরণ করা উচিত? যুক্তি দিন? ৩
ঘ) “মহানবী (সা.) একজন সফল জাতিগঠনকারী ছিলেন” উক্তিটি মূল্যায়ণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]