খুলাফায়ে রাশিদীন, খলীফা ও খিলাফত

ভ‚মিকা
খিলাফত হচ্ছে একটি ধর্মীয়-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ইবনে-খালদুনের মতে, “ খিলাফত হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা
মহানবী (সা:)- এর মিশনের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই কারণে খলীফার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে ধর্মের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং
সাধারণভাবে রাষ্ট্রনীতি সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা ।” মহানবী (সা:)- এর পর যারা তাঁর আদর্শ ও দাওয়াত প্রচারণার দায়িত্ব
পালন করেছেন তাদেরকে বলা হয় খলিফা। এই খলীফা ও খিলাফতকে ঘিরেই মুসলিমদের ইতিহাস আবর্তিত হয়েছে।
সৃষ্টি হয়েছে একদিকে যেমন ইসলামের সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রসার, ঠিক অপরদিকে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব, অপব্যবহার,
রাজনৈতিক হত্যাকাÐ ও সর্বোপরি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। মহানবী (সা:)- এর মৃত্যুর পর খুলাফায়ে রাশিদীনের শাসন শুরু হয় যা
ছিল মূলত মহানবী (সা:)- এর শাসনতন্ত্রের সম্প্রসারিত রূপ। পরবর্তীতে খিলাফত একটি ইহলৌকিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত
হয়। সঠিক পথে পরিচালিত চার জন শাসনকাল কখনোই পুরোপুরি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। হযরত আবু বকর (রা.) এর
শাসনকাল (৬৩২-৩৪) ছিল পুরোটাই রিদ্দা যুদ্ধে পরিপূর্ণ। হযরত উমর ফারুক (রা.) এর সময় (৬৩৪-৪৪) পারস্য ও
বাইজান্টাইন সা¤্রাজ্য বিজিত হয় এবং সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠে। হযরত উসমান (রা.) এর শাসনকালের (৬৪৪-
৫৬) প্রথম পর্ব ছিল শান্তি ও বিজয়ের যুগ কিন্তু পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ¦, ব্যক্তিস্বার্থপরতা ও
গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। শেষ খলীফা হযরত আলী (রা:) এর সময়ে (৬৫৬-৬১) মুসলিমগণ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং
খিলাফতের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ধর্মভিত্তিক খিলাফতের
পরিবর্তে রাজতন্ত্র নির্ভর খিলাফতের আবির্ভাব ঘটে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা এই ইউনিটে খুলাফায়ে রাশেদীনদের ক্ষমতায়
আরোহণ, তাঁদের চরিত্র, কৃতিত্ব ও আনীত সংস্কারসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব। <মুখ্য শব্দ খলিফা, ‘বায়াৎ’, কুরাইশ বংশ, পরামর্শ সভা ও নির্বাচকমÐলী
খলীফা হচ্ছে মুসলিম শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। খলিফাকে ঘিরেই মুসলিম শাসনব্যবস্থা আবর্তিত হয়।
খলীফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী। অর্থাৎ মহানবী (সা.) এর মৃত্যুর পর যিনি বা যারা তাঁর
আদর্শকে বলবৎ রেখে শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন তাদের বলা হয় খলীফা বা প্রতিনিধি। প্রধান চারজন খলীফা হলেনহযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.), হযরত আলী (রা.)। মহানবী (সা.) এর মৃত্যুর পর
এই চার জন প্রসিদ্ধ সাহাবী রাসূল (সা.) এর দেখানো পথ অনুসারে মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন, এরাই
ইসলামের ইতিহাসে খুলাফায়ে রাশিদীন নামে পরিচিত। খিলাফত হল ধর্মীয়-রাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠান।
এক নজরে খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়কাল
খলিফা খিলাফতের সূচনা সমাপ্তি সময়কাল
হযরত আবু বকর (রা) ১৩ই রবিউল আউয়াল ১১হি. ২২ শে জমাদিউল উখরা ১৩হি. ২ বছর ৩ মাস ৯ দিন
হযরত উমর ফারুক (রা) ২৩শে জমাদিউল উখরা ১৩হি. ২৬শে যিলহজ্জ ২৩ হিজরি ১০ বছর ৬ মাস ৩ দিন
হযরত উসমান (রা) ১লা মুহাররম ২৪ হিজরি ১৮ই যিলহজ্জ ৩৫ হিজরি ১১ বছর ১১ মাস ১৭ দিন
হযরত আলী (রা) ২৪শে যিলহজ্জ ৩৫ হিজরি ১৭ই রমযান ৪০ হিজরি ৪ বছর ৮ মাস ২৩ দিন
হযরত ইমাম হাসান (রা) ২২শে রমযান ৪০ হিজরি রবিউল আউয়াল ৪১ হিজরি ৬ মাস ৮ দিন
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান খিলাফত
ঐতিহাসিক মজীদ খাদ্দুরী বলেন, “খিলাফত হচ্ছে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ইহলৌকিক নেতৃত্বের একটি প্রতিষ্ঠান।”
সুতরাং খিলাফত হচ্ছে মহানবী (সা.) এর আদর্শকে নেতৃত্বদানকারী এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। খলীফা হওয়ার জন্য অবশ্যই
কিছু গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কুরাইশ বংশোদ্ভুত, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, চারিত্রিক শুদ্ধতা,
প্রজ্ঞাবান, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
খলীফা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি ছিল সর্বসম্মত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। বিশিষ্ট জ্ঞানী ও আলেম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত
একটি পরামর্শসভার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হতো। নির্বাচকমÐলীর সুপারিশক্রমে কোন ব্যক্তি খলীফা নির্বাচিত হতেন এবং
সবশেষে জনগণ কর্তৃক ‘বায়াৎ’ অর্থাৎ আনুগত্যের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে খলীফা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতো।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত খলীফা মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করে যেতেন যা উমাইয়া যুগ থেকে রাজতন্ত্রে
পরিণত হয়।
খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগ ছিল ইসলামের ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়। এ সময় কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে পূর্ণ ইসলামী
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। কিন্তু উমাইয়া বংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ফলে ইসলামের শাসননীতি ও
আদর্শের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই. এ সময় হতে খিলাফত আমলের প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক শাসন
কাঠামোর পরিবর্তে বংশানুক্রমিক ও রাজতান্ত্রিক শাসন কাঠামোর সূত্রপাত ঘটে। এই সময় যে সমস্ত পরিবর্তন রাষ্ট্রের
কাঠামো ও শাসননীতিতে প্রবেশ করে তা হলোরাজতন্ত্রের আবির্ভাব
মহানবী (সা.) এর মৃত্যুর পর খুলাফায়ে রাশিদীনের চারজন খলীফা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত
হয়েছিলেন। কিন্তু উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া (রা.) ৬৭৬ খ্রিঃ তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী
মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের সূচনা করেন।
সারসংক্ষেপ:
মহানবী (সা.) এর আদর্শের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ছিল খিলাফত আর খলীফা ছিলেন তার কার্যনির্বাহক। আর খলীফা
নির্বাচিত হতেন যোগ্যতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. খলীফা শব্দের অর্থ কী?
ক) সর্বময় কর্তা খ) নেতা
গ) প্রতিনিধি ঘ) মালিক
২. “খলীফা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি গণতান্ত্রিক” কেননা-
ক) ঐতিহাসিকরা এটাকে গণতান্ত্রিক বলেন খ) এটি একটি নির্বাচন তাই
গ) খলীফা নির্বাচকমÐলী কর্তৃক নির্বাচিত ও জনগণ কর্তৃক আনুগত্য লাভ করেন
ঘ) কোনটিই নয়
৩. খিলাফত হচ্ছের) খলীফার দপ্তর রর) জনসমাবেশ স্থল ররর) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
নিচের কোন্টিসঠিক
ক) র, রর খ) রর, ররর গ) র, ররর ঘ) র, রর, ররর
৪. একজন মনীষীর ইন্তিকালের পর থেকে খিলাফতের কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে কোনটির ?
ক) হযরত আবু বকর (রা) খ) হযরত আলী (রা)
গ) হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘ) হযরত ওসমান (রা)
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
মোঃ জসীম উদ্দীন “যুবসংঘ” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁর তত্ত¡াবধানে প্রতিষ্ঠানটি চলতে থাকে। মৃত্যুর পূর্বে
তিনি বলে যান যে, যোগ্যতা অনুসারে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সংঘের প্রধান নির্বাচিত করতে হবে যেন যোগ্য ব্যক্তি এটি
পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে।
ক) খলীফা বলতে কী বুঝায় ? ১
খ) “খোলাফায়ে রাশেদীনে” মোট কতজন খলীফা ছিলেন? ২
গ) উদ্দীপকের যুবসংঘ ও খিলাফতের মধ্যে পার্থক্য কি? ৩
ঘ) খুলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে খলীফা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করুন? ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]