হযরত উসমান (রা.) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ উসমান (রা.) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অমূলক” ব্যাখ্যা করুন।

মুখ্য শব্দ এশিয়া মাইনর, স্বজনপ্রীতি, কুরআন সংকলন, বায়তুল মাল, সমাজতান্ত্রিক মতবাদ,
কাবাগৃহ সম্প্রসারণ ও ধর্মভীরু
হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফতকাল ছিল (৬৪৪-৬৫৬) অর্থাৎ ১২ বছর। এই ১২ বছরের খিলাফত
কালকে মোটামুটি দুইভাগে ভাগ করা যায়। এর প্রথম ছয় বছর (৬৪৪-৬৫০) খ্রিঃ তিনি পূর্বাঞ্চল ও মধ্য
এশিয়ায় অভিযান প্রেরণ করেন। পারস্যে বিদ্রোহ দমন করে মুসলিমরা খুরাসান, নিশাপুর, মার্ভ, বলখ, তুখারিস্থান প্রভৃতি
অঞ্চল জয় করতে সমর্থ হয়। অপর দিকে এই সময়ে এশিয়া মাইনর, আর্মেনিয়া , ত্রিপলী ও সাইপ্রাস মুসলিম অধিকারে
আসে। এই ছয় বছর ছিল শান্তি, সমৃদ্ধি ও বিজয়ের কাল। তাঁর শাসনকালের শেষের ছয় বছর (৬৪০-৬৫৬) ঠিক তার
বিপরীত ¯্রােত বইতে শুরু করে। রাজ্যময় অসন্তোষ, বিশৃংখলা দেখা দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ আরোপ করা হয়। অভিযোগগুলো নি¤েœ বর্ণিত হল ঃ
ক) স্বজনপ্রীতি
তাঁর বিরুদ্ধে আনীত প্রথম অভিযোগ ছিল স্বজনপ্রীতি। অভিযোগে বলা হয় যে, তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশিষ্ট
সাহাবী ও জ্ঞানী বিচক্ষণ ব্যক্তির পরিবর্তে তাঁর নিজ পরিবারের অযোগ্য আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ করেন। প্রখ্যাত পাশ্চাত্য
ঐতিহাসিকগণ- হিট্টি, মুইর, ভন ক্রেমার এবং সৈয়দ আমীর আলী ও মাসুদীও এই ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। এর ফলে
কুফা, বস্রা ও মিসরের লোকেরা তার উপর বিশেষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
১) কুফা ঃ পারস্য বিজয়ী সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসকে খলীফা উমর (রা.) কুফার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তাঁর স্থলে মুগীরাকে কুফার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু মৃত্যু শয্যায়
হযরত উমর (রা.) এর ইচ্ছা অনুযায়ী সাদ (রা.)কে পুনরায় তাঁর পূর্বপদে নিয়োগ দান করা হয়। কিছুকাল পরে বায়তুল
মালের অর্থ নিয়ে সাদ (রা.) ও কোষাধ্যক্ষ মাসুদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে, সাদ কিছুটা দোষী প্রমাণিত হয় এবং
খলীফা উসমান (রা.) তাকে পদচ্যুত করেন। তাঁর স্থলে ওয়ালিদ বিন ওকবাকে নিযুক্ত করেন। ঘটনাক্রমে ওয়ালিদ ছিলেন
খলীফার সৎ ভাই। তিনি মদ্যপানের দোষে সাব্যস্ত হলে, তাকে পদচ্যুত ও বেত্রাঘাত করা হয়। তার স্থলে জনগণ সমর্থিত
সাঈদ-আল-আসকে কুফার শাসনপদে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই সাঈদও ছিলেন খলীফার আত্মীয়। এভাবে
তিনি কুফাবাসীর বিরাগভাজন হন।
২) বসরা ঃ আবু মুসা আনসারী ছিলেন খলীফা উমর কর্তৃক নিয়োজিত বসরার শাসকর্তা। তিনি উসমান (রা.) এর
শাসনকালের ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা অতি নগণ্য একটি অভিযোগ পেশ করে,
যেটি ছিল অসাম্যের অভিযোগ। খলীফা তাকে পদচ্যুত করেন এবং তার স্থলে আবদুল্লাহ ইবনে আমীরকে শাসক হিসেবে
নিয়োজিত করেন। আব্দুল্লাহ ছিলেন খলীফার পিতৃব্য পুত্র। তিনি সুশাসক ছিলেন। তার সময়ে পারস্যের বিদ্রোহ দমন করা
হয়। মার্ভ, নিশাপুর প্রভৃতি অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসে। কিন্তু তিনি খলীফার পরিবারভুক্ত হওয়ায় বিদ্রোহীরা তাকে সুনজরে দেখেননি।
৩) মিসর ঃ মিসর জয় করার পর সেনাপতি আমর ইবন আল আস খলীফা হযরত উসমানের অধীনে ৬৪৮ খ্রিঃ পর্যন্ত
মিসরের শাসনকর্তা ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে মিসরের রাজস্ব কর্মকর্তা আাব্দুল্লাহ ইবন সাদ ইবনে আবি সারাহ এর
সাথে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দেয়। তখন খলীফা আমর এর স্থলে তার দুধভাই আব্দুল্লাহকে মিসরের গভর্ণর করে পাঠান।
যদিও আব্দুল্লাহ একজন সফল গভর্ণর ছিলেন, তাঁর সময়ে রোমান আধিপত্য খর্ব করে কার্থেজ পর্যন্ত মুসলিম অধিকারে
আসে তথাপিও বিদ্রোহীরা তাকে অপসারণের দাবী করে। তখন খলীফা বাধ্য হয়ে তার স্থলে বিদ্রোহীদের সমর্থিত মুহাম্মদ-
বিন-আবু-বকরকে শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
সিরিয়া ঃ এই সময় হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন সিরিয়ার গভর্ণর, যিনি হযরত উমর (রা.) আমলে নিয়োজিত হন। তিনি
ছিলেন বিচক্ষণ রাজনৈতিক ও যোগ্য শাসক কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনিও উমাইয়া বংশের লোক ছিলেন। হযরত উসমান (রা.)
তাঁর নিকট আত্মীয় ছিলেন। তাই হযরত উসমান (রা.) যখন মুয়াবিয়া (রা.) কে যোগ্যতার জন্য স্বপদে বহাল রাখেন তখন
বিদ্রোহীরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তারা এর প্রতিবাদ জানায়। সমালোচনা-পর্যালোচনা ঃ
ক) স্বজনপ্রীতি
হযরত উসমান (রা.) রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে তার নিজস্ব আত্মীয়কে নিয়োগ দান করলেও তারা সবাই ছিলেন উক্ত পদের
উপয্ক্তু ও সময়ের বিচারে অন্যদের তুলনায় অধিকতর যোগ্য। তিনি মূলত রাষ্ট্রের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই তাদের
উক্ত পদের জন্য নির্বাচন করেন। তিনি যদি স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিতেন তাহলে তিনি বিদ্রোহীদের কোন কথাই শুনতেন না।
তিনি তাদের চাহিদা মোতাবেক অনেক আত্মীয়কে পদ হতে অপসারণ করেছিলেন। জনগণের পছন্দের ব্যক্তিকে তাদের
শাসনকর্তারূপে নিয়োগ দিয়েছেন এমনকি মদ্যপানের অভিযোগে একজনকে বেত্রাঘাতের দÐ প্রদান করেছিলেন। তার
শাসনকালের প্রথম ৬টি বছর ছিল শান্তি ও শৃংখলার কাল। কিন্তু পরবর্তীকালে দুর্ভাগ্যবশত তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির
অভিযোগ উত্থাপিত হয় যা ছিল অমূলক।
খ) কুরআন শরীফ দগ্ধীভূত করণ
খলীফা উসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের একটি অভিযোগ হচ্ছে তিনি কুরআন শরীফ দগ্ধীভূত করেন। কিন্তু
যথাযথভাবে পর্যালোচনা করলে এই ঘটনার ভ্রান্তি আমাদের দৃষ্টিগোচর হবে। হযরত উসমান (রা.) এর খিলাফতের সময়
মুসলিম সা¤্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। ইসলামের সম্প্রসারণ হয়। এতে দেখা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল যেমনআর্মেনিয়া, আজারবাইজান, মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় কুরআন শরীফের পাঠ আবৃত্তি ও উচ্চারণ প্রণালীতে পার্থক্য সৃষ্টি
হয়। এই ব্যাপারে মত পার্থক্য দেখা দেয়। তাই এ বৈচিত্র্য দূর করার জন্য ও কুরআনের উচ্চারণের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য
হযরত উসমান (রা.) কুরআন সংকলনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। তিনি ৬৫১ খ্রি. যায়েদ বিন-সাবিত (রা.)এর
নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। কুরআনের বিশিষ্ট হাফিজগণ এই কমিটির সদস্য ছিলেন। এই কমিটির উদ্যোগে
সা¤্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিক্ষিপ্ত পাÐুলিপিগুলো হস্তগত করা হয়। কুরআনের মূল পাÐুলিপি রাসূল
(সা.) এর অন্যতম স্ত্রী ও হযরত উমর (রা.) এর কন্যা বিবি হাফসার নিকট থেকে গ্রহণ করা হয়। এতে দুই পাÐুলিপির
মধ্যে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। অত:পর এই সকল ভ্রান্তিপূর্ণ কুরআনের কপিসমূহ ভস্মীভূত করা হয়। সেই সাথে
মূল পাÐুলিপি সমগ্র সা¤্রাজ্যে এক কপি করে প্রেরণ করা হয়। এই ঘটনাকে বিদ্রোহীরা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং
খলীফার বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ আনে।
সমালোচনা ঃ কুরআন সংকলনের কাজ ছিল নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বপূর্ণ কাজ। সকলেই খলীফার এই কাজের প্রশংসা
করেন। এই জন্য খলীফা হযরত উসমান (রা.) এর উপাধি দেওয়া হয় ‘জামিউল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন সংকলনকারী।
কিন্তু অন্যায়ভাবে মুসলিমদের উত্তেজিত করার প্রয়াসে বিদ্রোহীরা তার বিরুদ্ধে কুরআন ভস্মীভূত করার মত অবান্তর অভিযোগ আনেন।
গ) বায়তুল মালের অর্থ আত্মসাৎকরণ
বিভিন্ন পাশ্চাত্য ঐতিহাসকিগণ খলীফা উসমান (রা.) এর উপর অমিতব্যয়ীতার অভিযোগ এনেছেন। তাদের মতে, তিনি
রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে অর্থ-সম্পদ নিজ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করেন। এর ফলে রাজকোষের অর্থের সংকট দেখা
দেয়। এই অভিযোগের ফলে জনগণ খলীফার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে বাস্তবতা এই যে, উমাইয়া বংশের
কতিপয় লোক যেমন-সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর সিরিয়ার সকল ভূ-সম্পত্তি ও জাতীয় সম্পদ নিজ
অধিকারভুক্ত করেন। তবে এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে খলীফার অজ্ঞাতসারে। খলীফা এটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তাই
মুয়াবিয়া (রা.) এর ব্যক্তিগত দোষের ভাগিদার খলিফাকে করা সমীচীন নয়।
সমালোচনা ঃ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, খলীফা ছিলেন তৎকালীন আরবের একজন স্বনামধন্য ধনী ব্যক্তি। তাঁর চরিত্র
ছিল সরল ও মহানুভব। তিনি তাঁর নিজস্ব সম্পদ হতে তাঁর আত্মীয়-স্বজনদেরকে সম্পদ বিলিয়ে দিতেন। অন্যদিকে তাঁর
চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। খলীফা বায়তুল মাল হতে কোন অর্থ গ্রহণ
করতেন না। তিনি তাঁর ও তাঁর পরিবারের সকল প্রয়োজন নিজস্ব সম্পদ হতে ব্যয় করতেন। তাই খলীফার বিরুদ্ধে
আনীত অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক।
ঘ) আবু জার আলÑগিফারীর নির্বাসন
আবু জার আল-গিফারী একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। তিনি ছিলেন ধর্মভীরু ও জ্ঞানতাপস। হযরত উসমান (রা.) এর
সময়ে এসে কতিপয় মুসলিম দুনিয়ার জীবনের প্রতি মোহ বিশিষ্ট হয়ে পড়ে। প্রভূত ধন-সম্পদ সঞ্চয় করতে আরম্ভ করে।
ফলে অনেকেই আরাম-আয়েশ ও অপচয়ের পথ বেছে নেয়। এতে করে আবু জার আল-গিফারী সম্পদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ
হন। তিনি প্রচার করেন যে, ধন সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য নয়, তা জনগণের প্রয়োজনে ব্যয় করার জন্য। যারা সম্পদ সঞ্চয়
করবে তাদের স্থান হবে নরকে। বস্তুত এটিই ছিল একটি গোঁড়া সমাজতান্ত্রিক মতবাদ। কৌশলী মুয়াবিয়া (রা.) তাকে
সিরিয়া হতে মদীনায় পাঠিয়ে দেন। এখানে তার এই মতবাদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে খলীফা তাকে বোঝাতে চাইলেন
যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ সঞ্চয় করা অন্যায় নয়। কিন্তু তিনি খলীফার সাথে দ্বিমত হলেন এবং
এই ধরণের উচ্চাভিলাষী পরিবেশে থাকতে অস্বীকার করলেন। এক পর্যায়ে খলীফা বাধ্য হয়ে তাকে ‘রাবাবা’ নামক স্থানে নির্বাসিত করেন।
সমালোচনা
দুর্ভাগ্যবশত নির্বাসনের মাত্র দুই বছর পর আবু জার আল-গিফারী সেখানে মারা যান। তাঁর জনপ্রিয়তা ও তাঁর মতবাদকে
সামনে রেখে বিদ্রোহীরা খলীফার বিরুদ্ধে জনগণকে উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু তখন খলীফা যা করছিলেন তা মূলত
মদীনায় শান্তি-শৃংখলা রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি শরীয়ত বিরোধী কোন কাজকে প্রশ্রয় দেননি। তাই আবু জার আল-গিফারীকে তিনি নির্বাসিত করেছিলেন।
সরকারী চারণভূমি ব্যবহার
সরকারী চারণভূমি ব্যবহার করা ছিল জনগণের এখতিয়ারের বাইরে। যুদ্ধে ব্যবহৃত উট, ঘোড়া ও অন্যান্য গবাদি পশুকে
এই সরকারী চারণভূমিতে চরানো হতো যা ছিল জনগণের জন্য নিষিদ্ধ। যুদ্ধে ব্যবহৃত এই সকল গবাদি পশু ছিল সরকারী
সম্পত্তি তাই খলীফা সরকারি চারণভূমি ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু বিদ্রোহীরা তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন যে, তিনি
ব্যক্তিগত গবাদি পশুর জন্য উক্ত চারণভূমি ব্যবহার করেছিলেন। এতে করে তাঁর বিরুদ্ধে জনগণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
সমালোচনা ঃ এই অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ অমূলক। খলীফার নিজস্ব পশু নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উক্ত চারণভূমি ব্যবহার করেছিলেন।
চ) কাবাগৃহ সম্প্রসারণ
খলীফা হযরত উমর (রা.) এর সময়ে কাবাগৃহের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়, এবং তা হযরত উসমান (রা.) এর আমলে
শেষ হয়। এই কাজের জন্য কাবাগৃহ সংলগ্ন অনেক ব্যক্তির জমি অধিগ্রহণ করা হয়। হযরত উমর (রা.) এর সময়ে কেউ
জমির মূল্য দাবি করেনি, কিন্তু হয়রত উসমান (রা.) এর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই জমির মূল্য দাবি করেন।
পরবর্তীতে খলীফা জমির মূল্য পরিশোধ করতে চাইলে জমির মালিকগণ তা নিতে অস্বীকার করে। তারা রাজ্যের মধ্যে
বিশৃংখলার সৃষ্টি করে। শান্তি বজায় রাখার জন্য খলীফা তাদের কারারুদ্ধ করেন। এতে করে বিদ্রোহীরা খলীফার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।
সমালোচনা
এই ছিল সম্পূর্ণরুপে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। খলীফা উসমান জমির মালিকদের উপয্ক্তু অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু
তারা বিশৃংখলা করার অভিসন্ধি করে এবং খলীফার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টি করে।
চ) ভাতা বন্ধ
তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি অমূলক অভিযোগ ছিল কতিপয় ব্যক্তির ভাতা বন্ধ করে দেওয়া যা ছিল কেবলমাত্র একটি ভুল
বোঝাবুঝির ঘটনা। আদুল্লাহ ইবনে মাসুদ ও হযরত উবাই (রা.)এর ভাতা ভুল বোঝাবুঝির কারণে বন্ধ করে দেন। তবে
খলীফা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের ইন্তিকালের পর তাঁর প্রাপ্য ভাতা তাঁর উত্তরাধিকারীকে পৌঁছে দেন। বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল মিথ্যা
এই সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নানা রকম অভিযোগ আসতে শুরু করলে খলীফা পরবর্তী হজ্ব মৌসুমে রাষ্ট্রের সকল
গভর্ণরকে মদীনায় এক হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই সভায় বিদ্রোহী ও অভিযোগকারীদেরও আসার জন্য বলা হয়।
যথাসময়ে প্রদেশিক গভর্ণররা মদীনার সভাতে উপস্থিত হলেও বিদ্রোহীরা কেউই উপস্থিত হলেন না। এতেই প্রমাণিত হয়
যে, বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ রুপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এই সময় সভার ব্যক্তিবর্গ খলীফার নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী ও পাহারাদার নিয়োগ ও বিদ্রোহীদের কঠোর হস্তে দমন
করার জন্য সুপারিশ করলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভীরু ও উদার প্রকৃতির। তাই তিনি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোন
ব্যবস্থা নিতে চাইলেন না। তাঁর জন্য কোন প্রকার দেহরক্ষীর প্রয়োজনীয়তাও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন।
সারসংক্ষেপ:
খলীফা হযরত উসমান (রা.) ছিলেন একজন আদর্শ খলীফা। যার প্রমাণ আমরা তাঁর শাসনকালের প্রথম ৬ বছরে লক্ষ
করি। তাঁর সময়ে মুসলিম রাষ্ট্র সম্প্রসারিত হয়। কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। কিন্তু তাঁর ধর্মভীরুতা
ও চারিত্রিক কোমলতার জন্য এই সময় তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ আসতে থাকে যার সবগুলোই ছিল ভিত্তিহীন।
শুধুমাত্র রাষ্ট্রে বিশৃংখলা ছিল তাদের দূরভিসন্ধি। তাইতো খলীফা তাদের দাবি মেনে নেয়ার পরও তারা বিদ্রোহ অব্যাহত রাখে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. আবু জার আল-গিফারির মতবাদ কোন ধরণের ছিল ?
ক) সমাজতান্ত্রিক খ) গণতান্ত্রিক
গ) রাজতান্ত্রিক ঘ) বৈপ্লবিক
২. হযরত উসমান (রা.) অমিল ও অসামঞ্জস্যহীন সমস্ত কুরআনের কপি পুড়িয়ে ফেলেন কেন ?
ক) রাষ্ট্রের কুরআনের আবৃত্তি নিয়ে দ্ব›দ্ব দূর করার জন্য
খ) সকলকে মূল কুরআনের অনুলিপি পাঠ ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করার জন্য
গ) হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও হযরত উমরের আদেশ মান্য করার জন্য
ঘ) সকলের মাঝে কুরআনের শিক্ষা সঠিকভাবে দান করার জন্য
৩. হযরত উসমান (রা.) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ
র) স্বজনপ্রীতি রর) বিলাসিতা ররর) বায়তুল মালের অর্থ আত্মসাৎ
নিচের কোন্টিসঠিক
ক) র, রর খ) র, রর, ররর গ) র, ররর ঘ) রর, ররর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
হোসেন আলী কলেজের অধ্যাপক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় একজন খলীফার খিলাফতকাল বর্ণনা করেন। তাঁর
খিলাফতকালে ইসলামের বিস্তৃতির সুসময় বলে মনে হলেও তাঁর খিলাফতকালের শেষের দিকে মদীনায় বিদ্রোহীরা
মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা খলীফার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অমূলক অভিযোগ এনে বিদ্রোহ শুরু করে। খলীফার বিরুদ্ধে এসকল
অভিযোগ ও বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত।
ক) ইসলামের তৃতীয় খলীফা কে ? ১
খ) উসমান (রা.) কে ‘জামিউল কুরআন’ বলা হয় কেন ? ২
গ) উপরে উল্লিখিত বর্ণনা যে খলীফার সময় নির্দেশ করে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করুন। ৩
ঘ) “উসমান (রা.) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অমূলক” ব্যাখ্যা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]