হযরত উসমান (রা.) এর চরিত্র ও কৃতিত্ব

মুখ্য শব্দ যুন্নুরাইন, জামিউল কুরআন, বায়তুল মাল, জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথা
হযরত উসমান (রা.) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা, মহানবীর ঘনিষ্ঠ সাহাবী। ইসলামের প্রতি তার ত্যাগ
ও খেদমত ছিল বর্ণনাতীত। তার শাসনকালের শেষ অংশটি বিবেচনা না করলে তিনি ছিলেন একজন সফল ও কৃতিত্বপূর্ণ শাসক।
চরিত্র ঃ
মহানবী (সা.) এর নিত্যসঙ্গী
হযরত উসমান ছিলেন রাসূল (সা.) এর ঘনিষ্ঠ সাহাবা, তার একজন নিত্যসঙ্গী, তিনি মহানবী (সা.) এর সাথে ইসলাম
প্রচারে সদা নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তিনি মহানবী (সা.) এর অন্যতম ওয়াহী লেখক ছিলেন। ইসলামের প্রতি খিদমত
হযরত উসমান (রা.) বিভিন্ন উপায়ে ইসলামের খিদমত করেন। ইসলামের জন্য তিনি তাঁর প্রচুর অর্থ সম্পদ বিলিয়ে দেন।
বহু অর্থ ব্যয়ে তিনি মদীনায় এক ইহুদির কাছ থেকে রূমা নামক কূপটি ক্রয় করে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করে দেন।
তিনি প্রায় দুই হাজার ক্রীতদাসকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন। মসজিদে নববী সম্পসারণের জন্য তিনি নিজ অর্থে জমি ক্রয়
করে দেন। তাবুক অভিযানের সময় তিনি এক তৃতীয়াংশ সেনা বাহিনীর ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। ১০০০ দিরহাম দান করেন
এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০০০ উট দান করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরের সময় তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে
কুরাইশদের সাথে সমঝোতা করতে তাদের নিকট গমন করেন।
যুন্নুরাইন উপাধি লাভ
তাঁর উপর রাসূল (সা.) এর ¯েœহ ছিল অত্যাধিক। রাসূল (সা.) তাঁর দুই কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে একজনের
মৃত্যুর পর অপর জনকে হযরত উসমান (রা.) এর সাথে বিবাহ দেন। এ জন্য তাঁর উপাধি হয় যুন্নুরাইন অর্থাৎ দুই
জ্যোতির অধিকারী।
ধৈর্য ও ন¤্রতা
খলীফা উসমান (রা.) ছিল কোমল চরিত্রের অধিকারী। তাঁর সত্যবাদিতা, নম্্রতা ও ভদ্রতা ইত্যাদি চারিত্রিক গুণাবলি তাকে
মহানবী (সা.) এর নিকট অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর নম্্র স্বভাবের কারণেই বিদ্রোহীদের অভিযোগের মুখে যখন তাঁর
জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল, তবুও তিনি তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করতে পারে নি।
তাঁর সরলতা ও ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে তাঁর নিকট আত্মীয়রা সর্বত্র বিশ্বাস ভঙ্গ করতে শুরু করে। তিনি তাঁর কোন
দুর্নীতিগ্রস্থ আত্মীয়র প্রতি কঠোর অবস্থান নিতে পারেন নি। তিনি অযথা রক্তপাত ঘটাতে চাননি। এটি পরবর্তীতে তাঁর
চারিত্রিক দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পায়।
সহজ-সরল জীবনধারী
বিশাল মুসলিম সা¤্রাজ্যের খলীফা হওয়া সত্তে¡ও হযরত উসমান (রা.) সরল ও অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। তাঁর
নিজস্ব অর্থ তিনি ইসলামের সেবায় বিলিয়ে দেন। বায়তুল মাল থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করতেন না। তিনি নিজ ব্যবসার আয় হতে সংসার পরিচালনা করতেন।
হযরত উসমান (রা.) এর কৃতিত্ব ঃ
সামরিক বিজয়
হযরত উসমান (রা.) সামরিক প্রশাসনের দিক থেকে একজন সফল খলীফা ছিলেন। তার শাসনামলের প্রথম ছয় বছর ছিল
মুসলিম বিজয় অভিযানের কাল। এই সময় মুসলিম সেনা বাহিনীর অগ্রযাত্রা সুদূর কাবুল ও বেলুচিস্তান হতে পশ্চিমে ত্রিপলী
পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।
নৌবাহিনী গঠন
হযরত উসমান (রা.) এর সময় সর্বপ্রথম মুসলিম নৌবাহিনী গঠিত হয়। এই আরব নৌবাহিনীর মাধ্যমে মুসলিমগণ
ভূমধ্যসাগরে, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরে আধিপত্য বিস্তার সক্ষম হয়। ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপ
যেমন- সাইপ্রাস, রোড্স, সিসিলি, ক্রীট প্রভৃতি দখল করা হয়। ভূ-মধ্যসাগরে বাইজানটাইন শক্তিকে কোণঠাসা করা হয়।
কুরআন সংকলন
হযরত উসমান (রা.) এর অন্যতম কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফকে ধারাবাহিক ভাবে সংকলন করা। এই
কাজের জন্য তিনি ‘জামিউল কুরআন’ উপাধিতে ভূষিত হন। কুরআন কে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব তিনি লাভ করেন।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা
তাঁর শাসনামলের প্রথমার্ধ ছিল শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার কাল। তিনি কুরআন ও হাদীস অনুসারে গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি অনুসরণ করেন। জনগণের মতামতকে তিনি গ্রহণ করতেন।
পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
হযরত উমর (রা.) ন্যায় হযরত উসমান (রা.) পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। মজলিস-আল-শূরার শাসন
প্রণালী তিনি টিকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাঁর রাজধানীতে বিশিষ্ট সাহাবীদের সঙ্গে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় বৈঠকে মিলিত হতেন।
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ
তিনি প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন। তার সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধিত হয়। তিনি সিরিয়ার মত বড় একটি
প্রদেশকে ৩টি প্রদেশে ভাগ করেন। প্রত্যেক প্রদেশে একজন গভর্ণর নিয়োজিত ছিল। তিনি ৩টি প্রদেশের জন্য একজন
গভর্ণরের উচ্চপদস্থ একজন গভর্ণর জেনারেল নিয়োগ করেন। সাইপ্রাস, রোডস দ্বীপসমূহ কে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হিসেবে
স্বীকৃতি দেয়া হয়। বৃহৎ পাঁচটি প্রদেশের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন যথাক্রমে ঃ সিরিয়া- মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান,
মিসর- আব্দুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ, বসরা- আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, কুফা- আবু মুসা আল আশ্সারী, কিন্নিসিরিন- মুসলিম ফেহরী।
বায়তুল মাল প্রশাসন
প্রথম দিকে বায়তুল মাল প্রশাসন ব্যবস্থার উপর খলীফার কড়া নযর ছিল। তিনি যোগ্য ব্যক্তিকে এর তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে
নিয়োগ করেন। উকবা বিন আমের ছিলেন এর তত্ত¡াবধায়ক, যায়িদ বিন সাবিত (রা.) ছিলেন বিচারপতি।
জনহিতকর কার্যাবলি
হযরত উসমান (রা.) ইসলামের খিদমতে নিজের প্রচুর সম্পদ বিলিয়ে দেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার জনকল্যাণমূলক কাজ
করেন। মদীনার মসজিদ সংষ্কার করে তাতে কাঠের ছাদ ও প্রস্তরের স্তম্ভ সংযোজিত করেন। মাহজুর বাঁধ নির্মাণ করে
মদীনাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করেন। মদীনায় অবস্থিত ‘বনাত লা’ ইলাহ নামক খাল থেকে আরমায় পানি সরবরাহের
ব্যবস্থা করেন। এতে উক্ত স্থান চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে। তিনি এছাড়া অসংখ্য রাস্তা-ঘাট সংস্কার, মসজিদ নির্মাণ, বাঁধ
নির্মাণও খাল খনন করেন।
সামরিক শক্তি বৃদ্ধি
সামরিক শক্তি হযরত উসমান (রা.) এর শাসনে বৃদ্ধি পায়। তিনি এক্ষেত্রে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর নীতি
অনুসরণ করেন। সেনা বাহিনীর ব্যারাক সংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধের সরঞ্জাম, ঘোড়া ও উট ইত্যাদির সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেন।
জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথার উদ্ভব
হযরত উসমান (রা.) মুসলিমদেরকে বিজিত দেশে জমি ক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। তা না হলে শহর ও গ্রামীণ
লোকদের সাম্যতা রক্ষা হত না। শহরের লোকদিগকে গ্রামে বসবাস করতে না দিলেও, গ্রাম থেকে লোকেরা এসে শহরে
বসবাস করছে, এতে করে অনেক অশালীন উপকরণ গ্রাম হতে শহরে চলে আসছিলো। এই আদেশের ফলে অতি অল্প
সময়ের মধ্যে জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রের জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথার সূত্রপাত হয়।
সারসংক্ষেপ:
খলীফা হযরত উসমান (রা.) এর চারিত্রিক কোমলতা, স্বভাবের বিন¤্রতা ও ধৈর্যের জন্য ইসলামের ইতিহাসে এক
স্বনামধন্য জায়গা দখল করে আছেন। তার মত নম্র সাহাবী আর কেউ ছিলেন না। তার শাসনের বিশৃংখলার সময়টুকু
বাদ দিলে তা ছিল পুরোপুরি ইসলামের বিজয় ও সমৃদ্ধির কাল। সুষ্ঠু প্রশাসন যন্ত্র, জনকল্যাণমুখী শাসন আর মুসলিম
বিজয় অভিযান ছিল তার শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। প্রথম আরব নৌবাহিনী গঠন ও সাফল্য অর্জন ছিল ইসলামের ইতিহাসে তাঁর অন্যতম কীর্তি।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. হযরত উসমান (রা.) কত বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন?
ক) ৯২ বছর বয়সে খ) ৮২ বছর বয়সে গ) ৭০ বছর বয়সে ঘ) ৭২ বছর বয়সে
২. খলীফা উসমান (রা.) খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ নির্ধারণ করতেন কিভাবে?
ক) নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খ) জনগণের মতামত অনুযায়ী
গ) কাজির পরামর্শ অনুযায়ী ঘ) মজলিস আল শূরার পরামর্শ অনুযায়ী
৩. খলীফা উসমান (রা.) মদীনা নগরীকে রক্ষা করেনর) বিদ্রোহীদের দমন করে রর) খাল খনন করে
ররর) বাঁধ নির্মাণ করে
নিচের কোন্টি সঠিক
ক) র, রর খ) র গ) র, রর, ররর ঘ) ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ
জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথার উদ্ভব কুরআন সংকলন
নৌবাহিনীগঠন
ক.‘জামিউল কুরআন’ কোন খলীফার উপাধি? ১
খ) উসমান (রা.) কেমন জীবনযাপনর করতেন ? ২
গ) উপরের উদ্ধৃতিতে যে খলীফার কৃতিত্ব তুলে ধরা হয়েছে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণে তার অবদান লিখুন। ৩
ঘ) জনকল্যাণে উসমান (রা.) এর কৃতিত্ব তুলে ধরুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]