হযরত আলী (রা.) এর পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে জানবে

মুখ্য শব্দ হাশিমী গোত্র, আবু তোরাব, অসি ও মসি, আমানত, হিজরত, মুসলিম পতাকাবাহী,
বীর যোদ্ধা ও কিংবদন্তী বীর।
জন্ম ও বংশ পরিচয় ঃ
হযরত আলী বিন আবু তালিব (রা.) ছিলেন ইসলামের ৪র্থ খলিফা। তিনি মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের
অন্তর্গত হাশিমী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সাল ছিল ৬০০ খ্রিঃ অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর নবুয়্যত লাভের ঠিক দশ
বছর পূর্বে। তাঁর পিতা ছিলেন আবু তালিব। সম্পর্কে তিনি রাসূল (সা.) এর চাচাতো ভাই। তার শৈশবে ডাক নাম ছিল
আবু তোরাব ও আবুল হাসান। রাসূল (সা.) এর শৈশবে যেমন তার চাচা আবু তালিব তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঠিক তেমনি
চাচার অস্বচ্ছল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.) এর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তাই রাসূল
(সা.) এর সকল চারিত্রিক আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য ছোট বেলা হতেই হযরত আলী (রা.) এর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু
করে।
ইসলাম গ্রহণ ঃ
৬১০ খ্রিঃ আলী (রা.) এর যখন মাত্র ১০ বছর বয়স তখন রাসূল (সা.) নবুয়্যত প্রাপ্ত হন। রাসূল (সা.) আহবানে হযরত
খাদীজা (রা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) ইসলাম কবুল করার পর, হযরত আলী (রা.) ছিলেন বালকদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি
যিনি শৈশবেই ইসলাম গ্রহণ করেন। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি নযিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
ইসলামের সেবা ঃ
হযরত আলী (রা.) খুবই বালক বয়সে ইসলাম কবুল করেন। তিনি অর্থ সম্পদ দিয়ে ইসলামের সেবা না করতে পারলেও
ইসলামের সেবায় তার কোন ঘাটতি ছিলো না। তিনি তাঁর জ্ঞান-বিদ্যা ও শৌর্য-বীর্য দ্বারা ইসলামের সেবা করে গেছেন।
তাঁর দশ বছর বয়স হতেই তিনি রাসূল (সা.) এর প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। এ
ক্ষেত্রে অর্থের পরিবর্তে অসি ও মসি ছিল তাঁর ইসলামের সেবার মাধ্যম।
তিনি রাসূল (সা.) এর সার্বক্ষণিক সাথী ছিলেন। মক্কায় কুরাইশদের অত্যাচার যখন চরম পর্যায়ে পৌছায় তখন মহানবী
(সা.) আল্লাহর পক্ষ হতে মদীনায় হিজরতের নির্দেশ প্রাপ্ত হন। তখন রাসূল (সা.) এর নিকট আমানত হিসেবে গচ্ছিত
কুরাইশদের বিভিন্ন সম্পদ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হযরত আলী (রা.) কে রাসূল (সা.) বিছানায় শায়িত
অবস্থা রেখে যান। কুরাইশরা রাসূল (সা.) এর বিছানায় হযরত আলী (রা.) কে দেখে বিস্মিত ও ক্রুব্ধ হয়। পরের দিন
হযরত আলী (রা.) মদীনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন।
বিবাহ ঃ
হিজরী প্রথম অথবা দ্বিতীয় বর্ষে ৬২৫ খ্রিঃ হযরত আলী (রা.) রসূল (সা.) এর কনিষ্ঠ কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.) কে
বিবাহ করেন। হযরত আলী (রা.) রাসূল (স.) এর জামাতা হলেন, এতে তাদের ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পেল। হযরত আলী
ও ফাতিমার পরিবারে হাসান, হুসায়ন ও মুহসীন নামে তিন পুত্র এবং জয়নাব ও উম্মে কুলসুম নামে দুই কন্যা সন্তানের
জন্ম হয়। তাদের মধ্যে মুহসীন বাল্যকালে ইন্তেকাল করেন। হাসান ও হুসাইনের বংশধর সৈয়দ (নেতা) নামে পরিচিত।
২৯ বছর বয়সে হযরত ফাতিমা (রা.) ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে হযরত আলী (রা.) হানাফীয়া গোত্রের এক নারীকে
বিবাহ করেন এবং এখানেও তার কয়েকজন পুত্র-কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইবনুল হানাফিয়া।
হযরত আলীর শোর্য-বীর্য ঃ
হযরত আলী (রা.) শৈশব থেকেই ছিলেন অসীম সাহসী। তাঁর তেজস্বীতা, শৌর্য-বীর্য তাঁকে বীর পুরুষ হিসেবে পরিচিত
করেছে। তিনি ছিলেন অসি চালাতে সিদ্ধ হস্ত, বীর যোদ্ধা, কৌশুলী সমর নায়ক। তাঁর নাম শুনলে কুরাইশদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হত।
রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায় সংঘটিত প্রায় সব কয়টি যুদ্ধেই বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাসূল (সা.) এর
পতাকাধারী সেনাবাহিনীর অন্যতম স্তম্ভ। বদরের যুদ্ধের সময় তিনি কুরাইশ বীর আমর ইবনে আবদুহকে পরাজিত ও নিহত
করেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ রাসূল (সা.) তাকে ‘জুলফিকার তরবারি’ উপহার দেন।
উহুদের যুদ্ধে মুসলিম পতাকাবাহী মুসাব ইবনে উমাইয়া নিহত হলে, হযরত আলী (রা.) পতাকা বহনের দায়িত্ব পালন
করেন। খন্দকের যুদ্ধেও তিনি অসম বীরত্বের পরিচয় দেন। খাইবার যুদ্ধে তিনি বনু সাদ গোত্রকে পরাজিত করেন, যারা
ছিল ইহুদীদের সমর্থক। হুনায়নের যুদ্ধেও তিনি বীরত্বের সাথে লড়াই করেন। তাবুক অভিযানের সময় রাসূল (সা.) এর
নির্দেশে তিনি মদীনায় অবস্থান করেন। তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল খাইবারে সুরক্ষিত কামুস দুর্গ বিজয়। এই
দুর্গের ফটক তিনি একাই ভেঙ্গে ফেলেন। যা পরবর্তীতে ৭০ জন যুবক মিলেও বহন করতে পারছিল না। এই বীরত্বপূর্ণ
কাজের পর রাসূল (সা.) তাকে ‘আসুদল্লাহ’ বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন। হযরত আলী (রা.) ছিলেন হুদাইবিয়ার সন্ধির
লেখক। মক্কা বিজয়ের সময় হযরত আলী (রা.) ইসলামী পতাকা বহন করেন। রাসূল (সা) এর নির্দেশে হযরত আলী
(রা.) ইয়েমেনে ইসলাম প্রচার করেন এবং সেখানে ব্যাপক সফলতা অর্জনের পর তিনি ইয়েমেনের কাজী হিসেবে নিয়োজিত হন।
পূর্ববর্তী খলিফাদের প্রতি আনুগত্য ঃ
হযরত আলী (রা.) তাঁর পূর্ববতী তিন খলীফার প্রতি সর্বদা আনুগত্য প্রদর্শন করতেন। হযরত আবু-বকর (রা.), হযরত
উমর (রা.) ও হযরত উসমান (র.) এর খিলাফত কালে তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। তিনি মজলিশউস-শুরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তিনি রিদ্দা যুদ্ধের সময় স্বধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন।
খিলাফতের নিরাপত্তার নিশ্চিত করে। তিনি নিজ কন্যা উম্মে কুলসুমকে হযরত উমর (রা.) এর সাথে বিবাহ দেন। হযরত
উসমান (রা.) এর গৃহ-শত্রæপক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজ পুত্রদ্বয়কে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করে। এভাবে তিনি
পূর্ববর্তী খলিফাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে এসেছেন।
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ ঃ
৬৫৬ খ্রিঃ ৭ই জুন বিদ্রোহীরা হযরত উসমান (রা.) কে হত্যা করলে মুসলিম রাষ্ট্রের চরম বিশৃংখলা দেখা দেয়। এটি ছিল
ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তগুলোর একটি। কেউই খিলাফত-এর দায়িত্ব গ্রহণে তখন এগিয়ে এলেন না।
মদীনাবাসী এই সময়ে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়লে কুফাবাসী যুবাইর (রা.) কে এবং বসরাবাসী তালহা (রা.) কে খলীফা
হিসেবে সমর্থন করলো। অপর দিকে এক দল লোক হযরত উসমান (রা.) এর বিচার দাবি করলো। এমতাবস্থায় মিসরের
বিদ্রোহীদলের নেতা ইবনে-সাবা হযরত আলীকে খিলাফতের জন্য মনোনীতি করলো। কুফা ও বসরার বিদ্রোহীরাও এই
দাবিকে সম্মতি জানালেন। অবশেষে ৬৫৬ খ্রিঃ ২৩ শে জুন সকল অবস্থা বিবেচনা করে হযরত আলী (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই প্রসংগে ঝুবফ অসববৎ অষর বলেন
সমালোচনা ঃ
হযরত আলী (রা.) এমন এক সংকটজনক মুহূর্তে খিলাফতের দায়িত্বগ্রহণ করেন, যখন মদীনা ছিল বিদ্রোহী ও
হত্যাকারীদের দখলে। একথা সত্য যে, হযরত আলী (রা.) খিলাফতের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। কিন্তু তাঁর খলীফা নির্বাচন
প্রক্রিয়াটি ছিল অগণতান্ত্রিক। তাই এর ফলাফল পরবর্তীতে ৩টি গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ করা যায়।
সারসংক্ষেপ:
হযরত আলী (রা.) ছিলেন রাসূল (সা.) এর জামাতা ও চাচাতো ভাই। অসামান্য বীর ও শোর্য বীর্যের প্রতীক।
ইসলামের সেবায় তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য ব্যক্তি। তিনি ছিলেন বীর যোদ্ধা ও কিংবদন্তী বীর। খিলাফতের প্রতি তাঁর
আনুগত্য ছিল অপরিসীম। হযরত উসামন (রা.) এর মৃত্যুর পর এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে ইসলামী রাষ্ট্রের ভবিষ্যত
চিন্তা করে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামে চতুর্থ খলিফা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১৪
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. আসাদুল্লাহ শব্দের অর্থ কি ?
ক) আল্লাহর তরবারী খ) আল্লাহর সিংহ
গ) আল্লাহর আর্শিবাদপ্রাপ্ত ঘ) আল্লাহর প্রিয়
২. হযরত আলী (রা.) ছিলেন একজন বীরপুরুষ কারণ-
ক) তিনি প্রচুর দৈহিক বলের অধিকারী ছিলেন খ) তিনি বিদ্বান ছিলেন
গ) তিনি সকল যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ঘ) তিনি অনেক হত্যাকাÐ সংঘঠিত করেন
৩. হযরত আলী (রা.) এর খিলাফত লাভের পূর্বে নি¤œ বর্ণিত কারনে মুসলিম রাষ্ট্রে বিশৃংখলা ছিল -
র) পূর্ববর্তী খলীফার হত্যার বিচার দাবি রর) মদীনাবাসীর দল বিভিন্ন দলে বিভক্ত
ররর) ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই
নিচের কোন্টি সঠিক -
ক) র, ররর খ) র, রর, ররর
গ) রর, ররর ঘ) র, রর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
‘অ’ নামক খলীফা ইসলামের এক দুর্যোগময় মুহূর্তে খিলাফত লাভ করেন। পূর্ববর্তী খলীফার মৃত্যুর পর সৃষ্ট বিশৃংখল
পরিবেশে তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই বীরপুরুষ ইসলামের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধে
কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ইসলামে তাঁর অবদান অনন্য হলেও নানা কারণে তাঁর খিলাফত লাভ প্রশ্নবিদ্ধ।
ক) সবচেয়ে কম বয়সে ইসলাম গ্রহণকারী খলীফা কে ? ১
খ) হযরত আলী (রা.) কে কেন ‘আসাদুল্লাহ’ উপাধি দেয়া হয় ? ২
গ) উপরে উল্লেখিত ‘অ’ খলীফার খিলাফত লাভ সম্পর্কে লিখুন । ৩
ঘ) ইসলামের সেবায় ‘অ’ খলীফার অবদান উল্লেখ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]