মুখ্য শব্দ উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐ, সংকটজনক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ,
জামালের যুদ্ধ, হেজাজ।
হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐকে কেন্দ্র করে ইসলামী রাষ্ট্রে সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়। হযরত আলী
(রা.) এই সময় বিদ্রোহীদের দ্বারা খলীফা নিযুক্ত হন, যদিও তার খিলাফতে সকলেই আনুগত্যের শপথ গ্রহণ
করে। এই সময় হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐের বিচার দাবি জানানো হয়। এবং এই প্রেক্ষিতে ইসলামে বেশ
কয়েকটি গৃহ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল উষ্ট্রের যুদ্ধ।
হযরত আলী (রা.) সংকটসমূহ ঃ
উসমান (রা.) হত্যার প্রতিশোধ দাবি
খিলাফত লাভ করেই হযরত আলী (রা.) ব্যাপক বিশৃংখলার সম্মুখীন হন। উত্তেজিত জনতা হযরত উসমান (রা.) এর
হত্যার প্রতিশোধ দাবি করে। কিন্তু কতিপয় কারণে এই হত্যাকাÐের প্রতিশোধ গ্রহণ করা তখন সম্ভব ছিল না। কারণ এটি
ছিল একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাÐ। এতে জড়িত ছিল কুফা, বসরা, মিসরের সংঘববদ্ধ একটি গোষ্ঠী। কোন
নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করা সম্ভবপর ছিল না। এছাড়া বিদ্রোহীদের দলনেতা ইবনে সাবা ছিলেন স্বয়ং আলী (রা.) কে
খিলাফতে নিযুক্তকারী। তাই তার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু এই পরিস্থিতি সকলে সমানভাবে বিবেচনায়
আনলেন না। তালহা (রা.), যুবায়ির (রা.), রাসূল (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়িশা(রা.) হযরত উসমান (রা.) এর
হত্যাকাÐের প্রতিশোধ গ্রহণের দাবি জানালেন।
প্রশাসনিক রদবদল
এই সময় প্রশাসনিক রদবদল সংকটজনক পরিস্থিতিকে আরো সংকটতর করে তোলে। এক্ষেত্রে খলিফা ইবন-উল-আব্বাস
ও আল-মুগীরার উপদেশ অগ্রাহ্য করেন। তিনি সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার স্থলে সুহাইল ইবনে হানিফাকে নিযুক্ত
করেন। বসরার শাসনকর্তা আব্দুল্লা ইবনে-আমীরের স্থলে উসমান বিন হানিফকে, মিসরের কায়েস বিন সাদকে ও কুফায়
নতুন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সিরিয়ার শক্তিশালী গভর্ণর মুয়াবিয়া নির্দেশ অমান্য করলো ও আনুগত্য প্রকাশে অস্বীকার
করলো। তিনি হযরত আলী (রা.) এর বিরুদ্ধচারণ করতে শুরু করেন।
উমাইয়া ও হাশেমী দ্ব›দ্ব
হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐ ও হযরত আলী (রা.) এর খিলাফত লাভ এই যুগপৎ ঘটনার পূর্বেই হাশিমী ও উমাইয়া
দ্ব›দ্ব আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর ফলে মুসলিমদের ৩টি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
মুয়াবিয়া (রা.) এর বিরোধিতা ও উচ্চাভিলাষ
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন খলীফা হযরত উসমান (রা.) এর চাচাতো ভাই। তিনি সিরিয়ার একজন কৃতিত্বপূর্ণ ও দক্ষ
প্রশাসক ছিলেন। উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐের পর তাঁর রক্তাক্ত জমা ও তাঁর স্ত্রী নায়লার কর্তিত আঙ্গুল তিনি সিরিয়ার
মসজিদে প্রদর্শন করেন এবং হযরত উসমান (রা.) এর হত্যার প্রতিশোধ দাবি করেন। মূলত এটি ছিল একটি রাজনৈতিক
¯েøাগান এবং এর নেপথ্যে ছিল মুয়াবিয়ার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ। যার প্রমাণ আমরা উষ্ট্রের যুদ্ধে দেখতে পাই।
উষ্ট্রের যুদ্ধ
এই প্রসংগে বলেন, æমুসলিমদের মধ্যে সংঘঠিত
প্রথম গৃহযুদ্ধ ছিল উষ্ট্রের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের বীজ হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐের মধ্যে নিহিত ছিল।
কারণ
বিশিষ্ট সাহাবীদ্বয় তালহা (রা.) ও যুবায়ির (রা.) যদিও হযরত আলী (রা.) এর কাছে আনুগত্য প্রকাশ করেন, কিন্তু
হত্যাকারীদের বিচারে খলীফার বিলম্ব তাদেরকে হতাশ ও অসন্তুষ্ট করেছিল; হযরত উসমান কর্তৃক নিযুক্ত প্রাদেশিক
শাসনকর্তাদের হযরত আলী (রা.) অপসারণ করলে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়; সৈয়দ আমীর আলীর মতে-তালহা
ও যুবায়ের যথাক্রমে বসরা ও কুফার শাসনভার গ্রহণের জন্য খলীফার নিকট প্রস্তাব করলে, খলীফা তাদের এই দাবি
নাকোচ করে দেন। এতে তারা খলীফার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়; কোন কোন ঐতিহাসিক ধারণা করেন যে, হযরত আলী (রা.) এর
সাথে হযরত আয়িশা(রা.) এর ব্যক্তিগত মনোমালিন্য ছিল। কিন্তু তা সঠিক নয়। যদিও তাদের মাঝে একদা ভুল
বোঝাবুঝি হয়, কিন্তু বিবি আয়িশাহযরত আলী (রা.) এর উপর কোন ব্যক্তিগত অভিযোগ ছিল না। তিনি পরিস্থিতির চাপে,
খলীফার শিথিল ভাব দেখে মক্কায় ফেরার পথে বিদ্রোহী তালহা ও যুবায়ের এর সাথে যোগ দেন। তিনি উসমান (রা.) এর
হত্যাকারীদের শাস্তি প্রদান করতে চেয়েছিলেন।
যুদ্ধের ঘটনাবলী
যুদ্ধটি ৬৫৬ খ্রিঃ সংঘটিত হয়। তালহা ও যুবায়ের মক্কা ও মদীনা হতে ৩০০০ সৈন্য নিয়ে বসরা দখল করেন। বিদ্রোহীদের
সাথে বিবি আয়িশাঅংশগ্রহণ করেন। বসরার শাসনকর্তা উসমান বিন হানিফকে হত্যা করা হয়। এখানে কতিপয় ব্যক্তিকে
যারা উসমান হত্যায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়। খলীফা আলী (রা.) কুফার পথে বিদ্রোহীদের প্রতিহত
করার জন্য একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কুফার শাসক আবু মুসা আনসারী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে খলিফাকে সাহায্য করতে
রাজি না হলে তিনি পদচ্যুত হন। ৯০০০ কুফাবাসী হযরত আলী (রা.) এর সাথে যোগদান করেন। বস্রায় হযরত আলী
তালহা, যুবায়ের ও বিবি আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করেন, এবং আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট এড়াতে উদ্যোগী হন। এতে
তালহা (রা.), যুবায়ির (রা.) ও বিবি আয়িশা (রা.) সম্মত হন। কিন্তু বিদ্রোহীরা বিচলিত হয়ে রাতের অন্ধকারে উভয়
শিবিরে অতর্কিত আক্রমণ চালালে, উভয় পক্ষ বিস্মিত হলেন। তারা পরস্পরকে আক্রমণের জন্য দায়ী করেন। প্রত্যত্তুরে
হযরত আলী (রা.) অশ্বপৃষ্টে এবং হযরত আয়িশা (রা.) উস্ট্রের পৃষ্ঠে আরোহণ করে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হন।
ইতিমধ্যে তালহা ও যুবায়ের বসরার উদ্দেশ্যে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন এবং পথিমধ্যে দুইজন আততায়ী দ্বারা নিহত হয়।
এবার যুদ্ধে হযরত আয়িশা(রা.) উস্ট্রকে লক্ষ করে বিপরীতপক্ষ আক্রমণ করলো। হযরত আয়িশা (রা.) যুদ্ধ থামাতে
অসমর্থ হলেন। হযরত আলী (রা.) এর আদেশে বিবি আয়িশা (রা.)এর উটের পা কর্তিত হয়, হযরত আলী (রা.) বহু কষ্টে
যুদ্ধ থামিয়ে বিবি আয়িশা(রা.)কে উদ্ধার করেন এবং তার ভ্রাতা মুহাম্মদ বিন আবু বকরের সাথে ৪০ জন মহিলার সহচার্যে
মদীনায় পাঠিয়ে দেন। এরপর হযরত আয়িশা (রা.) জীবনে আর কখনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। এই যুদ্ধে হযরত
আয়িশা(রা.) এর বাহন উটটি আক্রান্ত হয় বলে, ইতিহাসে এই যুদ্ধ উষ্ট্রের বা (জামালের যুদ্ধ) নামে পরিচিতি লাভ করে।
আরবীতে একে বলা হয় জংগে জামাল বা জামালের যুদ্ধ। আরবী জামাল অর্থ উট।
যুদ্ধের ফলাফল
উষ্ট্রের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত প্রথম গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই ইসলামে গৃহ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই
যুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুসলিম সৈন্য নিহত হয়। তবে এই যুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বসরা, কুফা, মক্কার
মুসলিমদের মধ্যে মতবিরোধের অবসান ঘটে। বসরা, কুফা ও মিসরে হযরত আলী (রা.) এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
তবে সিরিয়ায় তখনো মুয়াবিয়ার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বজায় থাকে। খলীফা কায়েস বিন সাদকে মিসরে, সুহাইল ইবনেহানিফকে হেজায এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বসরার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন।
অন্যদিকে বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রকে কেন্দ্রস্থল হতে শাসন করার জন্য এবং ইরাকীদের সমর্থনের প্রতিশ্রæতিতে খলীফা মুসলিম
রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা থেকে ৬৫৭ খ্রিঃ কুফায় স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে হযরত আলী (রা.) কে এই সিদ্ধান্তের জন্য
চরম মূল্য দিতে হয়। মদীনা রাষ্ট্র তার রাজধানীর মর্যাদা হারায়। আর খলীফা আলী হারালেন বিশিষ্ট সাহাবীদের সমর্থন।
সারসংক্ষেপ:
উষ্ট্রের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মূলত হযরত উসমান (রা.) হত্যাকারী ও
ষড়যন্ত্রকারীরাই জয়ী হয়েছিল। এই যুদ্ধটি ছিল মূলত ভুল বোঝাবুঝি এবং শত্রæপক্ষের প্ররোচনার ফল। হযরত আলী
(রা.) এবং তালহা (রা.), যুবায়ির (রা.) ও বিবি আয়িশা (রা.) কেউই এই অযথা রক্তপাত মূলক যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন
না। কিন্তু তাঁরা সকলেই পরিস্থিতির শিকার হন এবং এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা পরবর্তী ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রভাব
বিস্তার করেছিল।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১) উষ্ট্রের যুদ্ধে মহানবী (সা.) এর কোন স্ত্রী যুদ্ধ করেন।?
ক) খাদিজা (রা.) খ) হযরত আয়িশা (রা.)
গ) উম্মে সালমা ঘ) উম্মে কুলসুম
২) হযরত আলী (রা.) খিলাফত অধিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমেই উসমান (রা.) হত্যার বিচার করতে অস্বীকৃতি প্রদান করেন
কেন ?
ক) খিলাফতে ভাঙ্গন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায়
খ) খিলাফতে গৃহযুদ্ধ ও হানাহানি বৃদ্ধির আশঙ্কায়
গ) তার সন্তানদের বিপদে পড়ার আশঙ্কায়
ঘ) হত্যাকারীরা অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ায়
৩) উষ্ট্রের যুদ্ধের কারণর) হযরত উসমান (রা.) এর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের দাবী রর) আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন প্রকাশের দাবি
ররর) হযরত আয়িশা(রা.) এর সন্তুষ্টি
নিচের কোন্টি সঠিক-
ক) র খ) র, রর
গ) রর, ররর ঘ) র, ররর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রহিম ও করিম দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ বাধে। এক পর্যায়ে রহিমের মৃত্যু হলে তার
পরিবারবর্গ এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তীব্র প্রচেষ্টা চালায়। এতে ইন্ধন যোগায় গ্রামের মোড়ল ইসহাক। ফলে বিরোধ
চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।
১. মুসলিমদের মধ্যে সংগঠিত ১ম গৃহযুদ্ধ কোনটি? ১
২. “উস্ট্রের যুদ্ধ” নামকরণ করা হয় কেন ? ২
৩. উপরের উদ্দীপকটি যে যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয় সে যুদ্ধের কারণগুলো উল্লেখ করুন। ৩
৪. উষ্ট্রের যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করুন ? ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র