মুখ্য শব্দ মোড় পরিবর্তনকারী, রাজতন্ত্র, উসমানের রক্তাক্ত জামা, বাজেয়াপ্ত, মল্লযুদ্ধ,
অভিনব কৌশল, দুমাতুল জন্দল, খিলাফত বিভক্তি, খারেজী সম্প্রদায়।
হযরত আলী (রা.) এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ¦ সংঘাত ইসলামের ইতিহাসের অসংখ্য মোড় পরিবর্তনকারী
ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। আলী ও মুয়াবিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে ইসলামের আদর্শের চ্যুতি
হয় এবং ভ্রাতৃঘাতি দ্ব›দ্ব সংঘাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যা ছিল ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। মূলত
এই দ্বন্দে¦র সূত্র ধরেই খিলাফতের পবিত্রতা নষ্ট হয়, গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামোর সমাধি রচিত হয়। সেই সাথে সূত্রপাত হয়
রাজতন্ত্রের। যার জনক ছিলেন মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.)। তাঁর হাত ধরেই ইসলামে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই
সকল মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনার সূত্রপাত ঘটে সিফফিনের যুদ্ধের মাধ্যমে।
আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যকার দ্ব›দ্ব ঃ
প্রশাসনিক রদবদল
খিলাফতের শুরু হতেই হযরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) এর পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ততায় ভরপুর ছিল। কুফায়
রাজধানী স্থাপন করে খলীফা অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার অবসান করতে উদ্যোগী হন। তিনি বসরা, কুফা, মিসর ও
সিরিয়ার শাসনকর্তাদের রদবদল করেন। এটি মুয়াবিয়া (রা.)এর মত অপরাপর উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিকদের ক্ষুব্ধ করে
তোলে। তিনি খলীফার এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মুয়াবিয়া (রা.) এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে অনীহা
মুয়াবিয়া (রা.) ব্যতীত সকল প্রদেশের শাসনকর্তাগণ খলীফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তকে মেনে
নেন। কিন্তু মুয়াবিয়া (রা.) খলীফার প্রতি কোন প্রকার আনুগত্য প্রকাশ করলেন না। তিনি খলীফার ঠিকানাযুক্ত একটি
পত্রবিহীন খাম প্রেরণ করলেন এবং ঘোষণা করলেন- যতদিন উসমান (রা.) এর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ না করা হবে
ততোদিন তিনি খলীফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশে বিরত থাকবেন।
মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক উসমান (রা.) হত্যার প্রতিশোধ দাবি
খলীফা উসমান (রা.) এর হত্যাকারীদের শাস্তি প্রদান করা ছিল একটি সময়ের দাবি। কিন্তু এটি ছিল একটি পরিকল্পিত
রাজনৈতিক হত্যাকাÐ। কোন একক ব্যক্তি এই হত্যাকাÐের সাথে জড়িত ছিলেন না। বরং এতে কুফা, বস্রা ও মিসরের
কতিপয় ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। তাই তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রের এমন বিশৃংখল অবস্থায় হযরত আলী (রা.) এর পক্ষে
এই হত্যাকাÐের দ্রæত বিচার করা সম্ভবপর ছিল না। অপরদিকে মুয়াবিয়া (রা.) খলীফা উসমান (রা.) এর রক্তাক্ত জামা ও
তাঁর স্ত্রী নায়লার কর্তৃত আঙ্গুল সিরিয়ার মসজিদে প্রদর্শন করে জনতাকে উত্তেজিত করে তোলেন। তিনি খলীফার কাছে
অচিরেই এই হত্যার বিচার দাবি করেন নতুবা তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করবেন এই মনোভাব ব্যাক্ত করেন।
মুয়াবিয়া (রা.) এর উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতা লিপ্সা
মূলত উসমান (রা.) হত্যার প্রতিশোধ দাবি ছিল মুয়াবিয়ার একটি রাজনৈতিক কৌশল। তিনি ছিলেন উচ্চাভিলাষী,
ক্ষমতাকাক্সক্ষী। মুয়াবিয়া হযরত উমর (রা.) কর্তৃক সিরিয়ার গভর্ণর পদে নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক,
পাঠ-৬.১৬
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র
ইউনিট ছয় পৃষ্ঠা-১৭৯
সংগঠক, কৃতিত্বপূর্ণ শাসক। তার সময়ে ভূ-মধ্যসাগরে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া ও
এশিয়া মাইনরে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তার প্রাদেশিক রাজধানী দামেস্কে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হন।
এতে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বৃদ্ধি পায়। ফলে তিনি কেন্দ্রের ক্ষমতা দখলের জন্য উৎসাহিত হন।
উমাইয়া ও হাশেমী দ্ব›দ্ব
হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার দ্ব›েদ্ব পরোক্ষভাবে প্রাক-ইসলামী যুগের উমাইয়া ও হাশেমী দ্ব›দ্ব প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি
বনু উমাইয়া গোত্রভুক্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবেই বনু হাশিমী গোত্রের লোককে ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখতে চাইবেন না।
উমাইয়া স্বার্থহানি
হযরত উসমান (রা.) এর শাসনামলে উমাইয়াগণ খলীফার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহু সরকারী সম্পত্তি জায়গীর নিজেদের
অধিকারভুক্ত করেছিলেন এবং তা ভোগ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে হযরত আলী (রা.) খলীফা হয়ে এই সকল সরকারী
সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। এতে উমাইয়া পরিবারের সকল সদস্য মুয়াবিয়া (রা.) সহ তাদের সম্পত্তির অনেকাংশ হাত ছাড়া
হয়ে যায় যা ছিল তাদের জন্য ব্যাপক স্বার্থহানি। এটি ছিল তাদের মধ্যকার অন্যতম দ্ব›েদ্বর কারণ।
সিফফিনের যুদ্ধ (৬৫৭ খ্রিঃ)
খলীফা হযরত আলী (রা.) এর প্রতি মুয়াবিয়া (রা.) এর আনুগত্য প্রকাশে অনীহা, উসমান (রা.) হত্যার বিচার দাবি ও
সর্বোপরি মুসলিম সম্পদায়ের মধ্যে বিভক্তি ইত্যাদি কার্যকারণে মুয়াবিয়া (রা.) ও হযরত আলী (রা.) এর মধ্যে যুদ্ধ
অনিবার্য হয়ে ওঠে। মুয়াবিয়া (রা.) এর ধৃষ্টতা ও অবাধ্য আচরণের ফলে ৬৫৭ খ্রিঃ খলীফা একটি বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার
অভিমুখে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে মুয়াবিয়া (রা.) ৬০,০০০ সৈন্য নিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম তীরে সিফফিন নামে
স্থানে এসে শিবির স্থাপন করলেন। প্রথমে হযরত আলী (রা.) মুয়াবিয়া (রা.) কে দূত পাঠানোর মাধ্যমে ইসলামের স্বার্থে
খলীফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে আহবান জানান। কিন্তু মুয়াবিয়া (রা.) তার সিদ্ধান্তে অটল রইল। তারপর খলীফা
হযরত আলী (রা.) অযথা রক্তপাত এড়ানোর জন্য ব্যক্তিগতভাবে মুয়াবিয়া (রা.) কে মল্লযুদ্ধে আহবান জানালেন। কিন্তু
শোর্য-বীর্যের প্রতীক, আল্লাহর বাঘ হযরত আলী (রা) সাথে মল্লযুদ্ধে মুয়াবিয়া (রা.) নিজের প্রাণক্ষয় করতে চাইলো না
তাই এই প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়া হলো। অবশেষে যুদ্ধ অনিবার্য হয়েও উঠলো। দুই পক্ষ সম্মুখযুদ্ধে পরস্পরকে
মোকাবেলা করতে লাগলো। খলীফার সেনাপতি মালিক আল আসতার এর অপূর্ব রণকৌশলে মুয়াবিয়া (রা.) এর বাহিনী
ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিবসে মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর সেনাবাহিনীর নিশ্চিত পরাজয় দেখতে পেলেন।
আমর ইবনুল আসের কৌশল ঃ
যুদ্ধে মুয়াবিয়া (রা.) এর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী দেখা দিলো। তাই মুয়াবিয়া (রা.) তার প্রধান সেনাপতি ও উপদেষ্টা, শ্রেষ্ঠ
কূটনৈতিক আমর ইবন আল-আস (রা.) এর পরামর্শ গ্রহণ করলেন। আমর (রা.) মুয়াবিয়া (রা.) কে যুদ্ধের পরাজয় হতে
ফিরে আসার জন্য এক অভিনব কৌশল অবলম্বনের উপদেশ দিলেন।
কুরআনের মাধ্যমে মীমাংসা
আমরের পরামর্শে মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তাদের পতাকাশীর্ষে ও বর্শার অগ্রভাগে কুরআন শরীফের পবিত্র
পাতা ঝুলিয়ে চিৎকার করে বিরোধীদলীয় সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, “ এখানে আল্লাহর কিতাব - এটি আমাদের
মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করবে।” নিঃসন্দেহে এটি ছিল একটি অভিনব কৌশল। হযরত আলী সেনা বাহিনীর প্রায়
সম্মুখভাগের প্রায় সকলেই ছিলেন কুরআনে হাফিয। তাঁরা কুরআনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে যুদ্ধ বন্ধ করেন এবং হযরত
আলী (রা.) কে কুরআনের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য সকলকে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানান। এই ব্যবস্থা ছিল
একটি দূরদর্শী চিন্তার ফসল যা যুদ্ধের মোড়-পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছিল।
হযরত আলীর যুদ্ধ বন্ধে অনীহা
হযরত আলী (রা.) মুয়াবিয়া (রা.) এর এই কূটনৈতিক চালকে বুঝতে সক্ষম হন। তিনি এই য্দ্ধু বন্ধ করতে কোনভাবেই
ইচ্ছুক ছিলেন না। কারণ যুদ্ধে তাঁর জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাঁর সেনাপতি মালিক আল-আসতারও যুদ্ধ স্থগিত
করতে আগ্রহী হলেন না। এমন অবস্থায় হযরত আলী (রা.) এর সেনাবাহিনীর একাংশ হযরত আলী (রা.) কে যুদ্ধ বন্ধের
জন্য বার বার অনুরোধ করতে থাকেন এবং একটি সালিশের মাধ্যমে এই সংকটের নিষ্পত্তি কামনা করেন। অবশেষে
সকলের একান্ত ইচ্ছা ও চাপে পড়ে হযরত আলী (রা.) যুদ্ধ স্থগিত করেন।
এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট ছয় পৃষ্ঠা-১৮০
দুমার মীমাংসা (জানুয়ারী ৬৫৮ খ্রিঃ)
হযরত আলী (রা.) এর সাথে মুয়াবিয়া (রা.) এর যুদ্ধ এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, তাঁরা উভয় দল মধ্যস্থতাকারী
নিয্ক্তু করে আপোস করার চেষ্টা করবেন। খলীফা আলী (রা.) কুফার গভর্ণর আবু মুসা আশ্য়ারী (রা.) এবং মুয়াবিয়া
(রা.) আমর ইবনে আল-আসকে সালিশে নিষ্পত্তি করার জন্য স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত করলেন। সিদ্ধান্ত
হয় যে, উভয়পক্ষ সালিশের চারশত লোক সাথে নিয়ে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে মিলিত হবেন এবং কুরআনের
নির্দেশনা অনুসারে বিরোধ মীমাংসা করবেন।
দুমাতুল জন্দলের মীমাংসা ও আমরের কৌশল
নির্দিষ্ট দিনে মদীনা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী দুমাতুল জান্দাল (আজরুহ) নামক স্থানে সালিশের মজলিস বসলো। আমর ইবন
আল-আস, মুসা আল আশ্য়ারী (রা.) কে বুঝালেন যে ইসলামের স্বার্থে হযরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) উভয়কেই
নিজ নিজ পদ হতে অপসারণ করতে হবে এবং তৃতীয় কোন ব্যক্তি কে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। মূলত সিদ্ধান্ত
হয় যে, আবু মুসা হযরত আলী (রা.) কে খিলাফত থেকে অপসারণ ঘোষণা করবেন তারপর আমর ইবন আল-আস তাঁর
পূর্ব কথা অনুসারে মুয়াবিয়া (রা.) এর পদ থেকে অপসারণ ঘোষণা করবেন। সরলমনা ও অকপট আবু মুসা বেদীর উপর
দাড়িয়ে ঘোষণা করলেন - “ আমি হযরত আলী (রা.) কে খিলাফত হতে পদচ্যুত করলাম। এর পর আমর দাড়িয়ে
বললেন, “আমি আলীর পদচ্যুতি অনুমোদন করলাম এবং তদস্থলে মুয়াবিয়া (রা.)কে নিযুক্ত করলাম,”। এই রায়ে খলীফার
সমর্থকগণ ক্রোধান্বিত হয়ে উঠল। আমরের কূটকৌশল ফলপ্রসূ হলো। উভয় পক্ষের মধ্যে শত্রæতার তীব্রতা বৃদ্ধি পেল।
ফলাফল ঃ
মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা
দুমাতুল জন্দলের মীমাংসা ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি মোড়পরিবর্তনকারী ঘটনা। যার প্রভাব ছিল সদূরপ্রসারী।
খলীফার মর্যাদা লোপ
এই মীমাংসার মাধ্যমে খলীফা হিসেবে হযরত আলী (রা.) এর মর্যাদা লোপ পায়। মুয়াবিয়া, যিনি ছিলেন কেবলমাত্র
একজন প্রাদেশিক গভর্ণর ছিলেন। তাঁকে খলীফার সমমর্যাদা দান করা হয়। অথচ মুসলিম জাহানের খলীফার মর্যাদা
ছিল সকল কিছুর উর্ধ্বে।
খিলাফত বিভক্তি
এই মীমাংমার পর স্বভাবতই খলীফা হযরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে খিলাফতকে আপোষ-বন্টন করেন।
সিরিয়া, মিসর মুয়াবিয়া (রা.) এর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অপর দিকে হেজায, বস্রা, কুফা ও আরবের অন্যান্য অঞ্চল হযরত
আলী (রা.) এর অধীনস্ত থাকে।
মুয়াবিয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রাজতন্ত্র
মূলত এই মীমাংসার মাধ্যমে মুয়াবিয়া (রা.) এর শক্তি বৃদ্ধি পায়, তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির উচ্চাভিলাষ বাস্তবে
পরিণত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় রাজতন্ত্রের সূত্রপাত হয়। রাজতন্ত্রের বীজ এই সালিশের মীমাংসার মধ্যেই নিহিত
ছিল।
খারিজী সম্প্রদায়
দুমাতুল জন্দলের সালিশের মীমাংসায় হযরত আলী (রা.) এর পক্ষের ১২,০০০ সৈন্যের একটি দল তাঁর পক্ষ ত্যাগ করে
‘হারুরা’ নামক গ্রামে জমায়েত হয়। খারিজী মানে দলত্যাগী।
উৎপত্তি ঃ দলত্যাগী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও গোলযোগ সৃষ্টিাকারী এই দল খলীফার দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বা খারিজ হয়ে অস্ত্র
ধারণ করলে তাদেরকে খারিজী বা দলত্যাগী বলা হয়। হারুরায় বসবাস করতো বলে তাদেরকে হারুরী (ঐধৎঁৎরঃবং)
নামেও ডাকা হয়। তারা মানুষের বিচার মানতে অস্বীকার করে এবং প্রচার করতে থাকে যে , “আল্লাহর আইন ছাড়া আর
কোন আইন নেই” (লা হুকমাহ্ ইল্লালিল্লাহ)। খারিজী সম্পদ্রায়ই ইসলামের সর্বপ্রথম ধর্মীয়-রাজনৈতিক দল বলে পরিচিত।
খারিজীদের রাজনৈতিক মতবাদ
খারিজীগণ প্রথম দুই খলিফাকে ন্যায় সঙ্গত খলীফা হিসেবে গ্রহণ করেন। ৩য় খলীফা উসমান (রা.) ও আলী (রা.)
যেহেতু শত্রæর সাথে মীমাংসা করতে চেষ্টা করেছিলেন তাই তাঁদের বিরোধিতাকে তারা করেন। তারা উমাইয়া ও আব্বাসী
খলীফাদের গ্রহণ করেনি। তারা বংশ, গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীনতার ভিত্তিতে ইমাম বা খলীফা নির্বাচনে পক্ষপাতি ছিলেন।
তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলো। পার্থিব ভোগ-বিলাস তারা বরদাস্ত করতেন না। তারা ঘোষণা করেন যে- যোগ্যতাসম্পন্ন
আদর্শবান ও সৎ যে কোন ব্যক্তি খলীফা হতে পারবেন। এমনকি ভৃত্যও খলীফা হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারবেন। ধর্মের
ব্যাপারে তারা ছিল কট্টরপন্থী যারা ইসলামের মূল আদর্শ হতে বিচ্যুত তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করার অভিপ্রায় তারা পোষণ
করতেন।
নাহরাওয়ানের যুদ্ধ (৬৫৯ খ্রি)
খারিজীদের নেতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব আল-রাবিবী। তার নেতৃত্বে খারিজীগণ যারা তাদের মতবাদের বিরোধিতা
করতো তাদের হত্যা করে সর্বস্ব লুটপাট করে নিতো। খলীফা হযরত আলী (রা.) তাদেরকে দমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলেন। খলীফা নাহরাওয়ান নামক স্থানে খারিজীদেরকে মোকাবেলা করলেন। ১২০০০ মধ্যে মাত্র ১৮০০ জন যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করলো। যুদ্ধে খলীফা আলী (রা.) খারিজীদের পরাজিত করলেন। কেউ তওবা পড়ে হযরত আলী (রা.) এর
পক্ষে যোগদান করলো অবশিষ্টরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলো।
হযরত আলী (রা.) এর শাহাদাত বরণ
খারেজীগণ আমর ইবন আল-আস (রা.), মুয়াবিয়া (রা.) এবং হযরত আলী (রা.) কে সকল সমস্যার সৃষ্টিকারী হিসেবে
দায়ী করে এবং তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে। নির্দিষ্ট দিনে কুফা, সিরিয়া ও মিসরে তারা এই তিন ব্যক্তিকে হত্যার
ষড়যন্ত্র করে এবং নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষায় থাকে। সৌভাগ্যক্রমে নির্দিষ্ট দিনে ফজরের সালাতের সময় আমর অসুস্থতার
কারণে মসজিদে হাজির হয়নি। মুয়াবিয়া সামান্য আহত হলেও রক্ষা পেলেন, কিন্তু হযরত আলী (রা.) আব্দুল্লা ইবনে
মুলজামের বিষাক্ত ছুরির আঘাতে গুরুতর জখম হন (২৪ জানুয়রি, ৬৬১) এবং ৬৬১ খ্রিঃ ২৭ জানুয়ারী তিনি মৃত্যুবরণ
করেন। এরই মাধ্যমে খুলাফায়ে রাশিদীনের ৪র্থ খলীফার জীবনাবসান ঘটলো এবং খুলাফায়ে রাশিদীনের খিলাফতকালের
পরিসমাপ্তি ঘটলো।
হযরত আলীর ব্যর্থতার কারণ
মূলত উস্ট্রের যুদ্ধের মাধ্যমে আলী (রা.) এর সাথে তালহা (রা.) ও যুবায়ের (রা.) এর মত পার্থক্য ঘটে এবং এই দুই
বিশিষ্ট সাহাবীর মৃত্যু হযরত আলী (রা.) এর শক্তি অনেকাংশে হ্রাস পায়। তিনি তাদের নৈতিক ও সামরিক সমর্থন হারান।
ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা হতে কুফায় স্থানান্তরের ফলে আলী (রা.) বহুলাংশে মদীনাবাসীর সমর্থন হারান। মদীনা
ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী যা মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে যান ও পূর্ববর্তী ৩ জন খলীফা তাঁর অনুসরণ করেন।
তাই হযরত আলী (রা.) বিশিষ্ট সাহাবী ও সুন্নী মুসলিমদের সমর্থন হারান। অন্যদিকে কুফাবাসী ছিল অস্থির প্রকৃতির ও
চঞ্চলমতি। বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে হযরত আলী (রা.) তাদের পূর্ণসমর্থন পাননি। অপর দিকে সিরিয়ায় মুয়াবিয়া
(রা.) এর শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান ছিল। তিনি সবসময় সিরিয়াবাসীর অকুন্ঠ রাজনৈতিক সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হন।
যা তার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
সারসংক্ষেপ:
হযরত উসমান (রা.) এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রা.) খলীফা নিযুক্ত হন এবং সাথে সাথেই ভ্রাতৃঘাতি গৃহযুদ্ধে
জড়িয়ে পড়েন। হযরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) এর দ্ব›দ্ব সংঘাতের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল সিফফিনের যুদ্ধ। যার
নেপথ্যে ছিল মুয়াবিয়ার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকারীদের বিচার দাবি, প্রশাসনিক
রদবদল ও হযরত আমরের কূটনৈতিকচাল। অবশেষে দুমাতুল জন্দলে হযরত আলী (রা.)কে খিলাফত হতে পদচ্যুত
করা হয় এবং মুয়াবিয়া (রা.) কে খলীফা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যা ছিল খিলাফত ও খলীফার জন্য চরম
অপমানকর সিদ্ধান্ত। হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার দ্ব›েদ্বর ফলাফল স্বরুপ খারিজী ও শিয়া সম্পদ্রায়ের আবির্ভাব ঘটে যা
ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১৬
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. কোন খলীফার সময়ে সিফফিনের যুদ্ধ হয়?
ক) হযরত উসমান (রা.) খ) হযরত আলী (রা.)
গ) হযরত উমর (রা.) ঘ) হযরত আবু বকর (রা.)
২. হযরত আলী সিফফিনের যুদ্ধে পরাজিত হন। কারণ -
ক) শারীরিক দুর্বলতা খ) যুদ্ধে অনীহা
গ) রাজনৈতিক অদূরদর্শী ছিলেন ঘ) যুদ্ধে অদক্ষ ছিলেন।
৩. সিফফিনের যুদ্ধের কারণ ছিলর) মুয়াবিয়ার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ রর) প্রশাসনিক রদবদল
ররর) হযরত আমরের কূটনৈতিক চাল
নিচের কোন্টি সঠিক
ক) র, রর খ) র, রর, ররর
গ) রর, ররর ঘ) র
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
ভৈরব পৌর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন। পরবর্তীতে লোকমান এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে
নির্বাচিত হন। ইউনিয়নে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার জন্য লোকমান সাবেক চেয়ারম্যানের হত্যাকারীদের বিচার করতে
বিলম্ব করেন। এতে অন্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কৌশলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিচার বিলম্বিত করার অভিযোগ আন্দোলন
শুরু করে।
ক) সিফফিনের যুদ্ধ কতসালে ঘটে? ১
খ) ‘দুমাতুল জন্দলের মীমাংসার’ বর্ণনা দিন ? ২
গ) উদ্দীপকের ঘটনাটি কোন যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) উপরোক্ত ঘটনার পর সমাজের অবস্থা সিফফিনের যুদ্ধের আলোকে ব্যাখ্যা করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র