হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর প্রাথমিক জীবন ও উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা

খুলাফায়ে রাশিদীনের পতনের পর হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ৬৬১ খ্রিস্টব্দে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যে খিলাফত প্রতিষ্ঠা
করেন তা ‘উমাইয়া খিলাফত’ নামে পরিচিত। এই বংশটি ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে। এই বংশে
মোট ১৪ জন খলীফা ছিলেন। এই বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.)। সিরিয়ার দামেস্কে
ছিল তার রাজধানী। উমাইয়া বংশ কুরাইশ গোত্রের একটি শাখা। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পঞ্চম উর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন
আবদে মানাফ। আবদে মানাফের ৬ পুত্রের মধ্যে হাশিম, মুত্তালিব ও আবদে শামস ছিলেন সহোদর ভাই। হযরত মুহাম্মদ
(সা.) ছিলেন হাশিমের বংশধর। আর আবদে শামসের এক পুত্রের নাম ছিল উমাইয়া। উমাইয়ার সন্তানরাই উমাইয়া বা
বনী উমাইয়া বলে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা এই ইউনিটে উমাইয়া আমলের খলিফাদের ক্ষমতায় আরোহণ, তাঁদের চরিত্র, কৃতিত্ব ও আনীত সংস্কারসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব। মুখ্য শব্দ ওহী লেখক, হিমারীয় ও মুদারীয়, খারিজী, ইফ্রিকিয়া ও আল-মাগরিব
পরিচয় ও ইসলাম গ্রহণ
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন
পবিত্র কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের একজন আবু সুফিয়ান। তাঁর মাতা ছিলেন আবু জেহেলের কন্যা হিন্দা।
ইসলামের প্রাথমিস যুগে হযরত মুয়াবিয়া ও তাঁর পিতা-মাতা ছিলেন ইসলামের ঘোরতর শত্রæ। কিন্তু ৮ম হজরীতে (৬৩০
খ্রি:) রাসূল (সা.) কর্তৃক মক্কা বিজয়ের পর মুয়াবিয়া (রা.) ও তাঁর পিতা-মাতা ইসলাম কবুল করেন। এই সময়ে তার বয়স
ছিল ২৪ বছর। ইসলাম কবুলের পর তিনি নিজেকে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেন। রাসূল (সা.) এর একজন বিশিষ্ট
সাহাবায় পরিণত হন।

ওয়াহী লেখক : ইসলাম কবুলের পর রাসূল (সা.) মুয়াবিয়া (রা.) কে তাঁর ব্যক্তিগত ওয়াহী লেখক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
তিনি এই কাজে রাসূল (সা.) এর প্রশংসা লাভ করেছিলেন। রাসূল (সা.) তার ভগ্নি উম্মে হাবীবাকে বিবাহ করেন। এই
সূত্রে তিনি রাসূল (সা.) এর নিকট আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ হন। বাল্যকাল হতেই হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন জ্ঞানী,
সুবিবেচক ও ধৈর্যের অধিকারী। মহানবী (সা.) একদা তাকে লক্ষ করে বলেছিলেন যে, “তুমি রাজ্য লাভ করলে
জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করো”।

সিরিয়ার শাসনকর্তা : হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর রাজনৈতিক জীবনের শুভ সূচনা ঘটে ২য় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর
শাসনামলে। হযরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে রোমান সা¤্রাজ্যের অংশ সিরিয়া বিজয় সম্পন্ন হয়। হযরত মুয়াবিয়া (রা.)
সিরিয়া অভিযানে তার যোগ্যতার পরিচয় দেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন দূরদর্শী ছিলেন না। কিন্তু শাসনক্ষেত্রে তিনি ছিলেন
তী² মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি। খলীফা উমর (রা.) তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে ৬৩৮ খ্রি: সিরিয়ার শাসনকর্তারুপে নিযুক্ত
করেন। তাঁর শাসনকেন্দ্রের রাজধানী ছিল দামেস্ক। ধীরে ধীরে সমগ্র সিরিয়া তাঁর অধীনে চলে আসে। খলীফা হযরত
উসমান (রা.) এর খিলাফতকালে তাকে সমগ্র সিরিয়ার গভর্ণররুপে নিয়োগ করা হয় এবং তিনি সিরিয়ার রোমান বাহিনীর
বিরুদ্ধে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন।

নৌবাহিনী গঠন : খলীফা হযরত উসমান (রা.) এর শাসনামলে সিরিয়ার গভর্ণর হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর নেতৃত্বে
প্রথম মুসলিম নৌবাহিনী গঠিত হয়। এই নৌবাহিনীর সাহায্যে ভূ-মধ্যসাগরীয় কতিপয় দ্বীপ-সাইপ্রাস, ক্রীট, মেজর্কা,
মাইনর্কা ইত্যাদি মুসলিমদের অধীনস্ত হয়েছিল। তাই মুসলিম নৌশক্তি গঠনে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর কৃতিত্ব ছিল
সর্বাগ্রে।
হযরত আলী (রা.) এর সাথে দ্ব›দ্ব :সিরিয়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ধীরে ধীরে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হন। তিনি
সিরিয়াবাসীর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন এবং তাদের সমর্থন লাভে সফল হন। তাই চতুর্থ খলীফা হযরত আলী
(রা.) তাঁকে পদচ্যুত করতে গিয়ে সমস্যা ও বাঁধার সম্মুখীন হন। এই সময়ে হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাÐ সংঘটিত
হয় এবং এই হত্যার বিচারকে কেন্দ্র করে হযরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয়। এই দ্বন্দে¦র
ফলাফল স্বরুপ খলীফা আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু কূটনৈতিক
পাঠ-৭.১
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র
ইউনিট সাত পৃষ্ঠা-১৯৩
জ্ঞানসম্পন্ন মুয়াবিয়া দুমার সালিশের মাধ্যমে সমগ্র সিরিয়া ও মিসরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। খলীফা
হযরত আলী (রা.) এর শাহাদাতের পর তাঁর জ্যেষ্ঠ্যপুত্র ইমাম হাসান (রা.) এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে মুয়াবিয়া (রা.)
৬৬১ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করেন। এই প্রসংগে৪০ (৬৬০).”

রাজধানী স্থায়ীকরণ : মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ এবং অভিজ্ঞ প্রশাসক। খিলাফতে আসীন
হয়েই তিনি তাঁর সা¤্রাজ্যের রাজধানী কুফা হতে দামেস্কে স্থানান্তরিত করেন। উমাইয়া খিলাফতের রাজধানী হিসেবে
দামেস্ক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল।

খারিজী বিদ্রোহ দমন : রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর হযরত মুয়াবিয়া (রা.) সা¤্রজ্যের ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেকে
আত্মনিয়োগ করেন। হযরত উসমান (রা.) এর সময়কাল থেকেই সা¤্রাজ্যে বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। হযরত আলী
(রা.) এর সমগ্র শাসনামলে তা অব্যাহত থাকে। এই সময় উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে খারিজী বিদ্রোহ
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারিজীগণ হযরত আলী (রা.) এর নিকট পরাজিত হলেও, অতি অল্প
সময়ের ব্যবধানে তারা আবার সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে। খারিজীগণ কালদীয়া দখল করে ইরাকে প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা
করলে মুয়াবিয়া (রা.) কঠোর হস্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন।

হিমারীয় ও মুদারীয় দ্ব›দ্ব : প্রাচীন আরবের অধিবাসিগণ প্রধান দুটি বংশে বিভক্ত ছিল- যথাক্রমে মুদার বংশ এবং হিমার
বংশ। হিমারীয়রা ছিল দক্ষিণ আরবের ইয়েমেনের অধিবাসী। অপরদিকে মুদারীয়রা ছিল উত্তর আরবের হেজাযের
অধিবাসী। কাহতানগণ তাদের নৃপতি আব্দুস শামসের পুত্র হিমারের নামানুসারে নিজেদের ‘হিমারীয়’ হিসেবে পরিচিত
করে। তারা ইয়েমেনী হিসেবেও পরিচিত লাভ করে। উত্তর আরবের অধিবাসীগণ ছিল হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর পুত্র
হযরত ইসমাইল (আ.) এর বংশধর। সাদের পৌত্র মুদার হতে তাদের ‘মুদারীয়’ নামে চিহ্নিত করা হয়। দক্ষিণ আরবের
হিমারীয়রা ছিল সুসভ্য এবং মুদারীয়রা ছিল যাযাবর এবং তাদের জীবনযাত্রার মান ছিল নি¤œমানের। এর ফলে রাসূল (সা.)
এর আবির্ভাবের পূর্ব হতেই তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্ব›দ্ব সংঘাত বিরাজমান ছিল। পরবর্তীতে ইসলামের আর্বিভাবের ফলে
তাদের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। উমাইয়া খলীফা হযরত মুয়াবিয়া (রা.) তার রাজনৈতিক স্বার্থ
হাসিলের উদ্দেশ্যে তাদের মধ্যকার এই দ্ব›দ্বকে পুনরুজ্জীবিত করেন।

যোগ্য প্রশাসকদের নিয়োগ : মুয়াবিয়া (রা.) এর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ছিল কতিপয়
যোগ্য ব্যক্তিদের সমর্থন ও সহযোগিতা। যথা-

আমর ইবন আল-আস : ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ কূটনৈতিক আমর ইবনে আল আস ছিলেন মুয়াবিয়া (রা.) এর
অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা ও প্রত্যক্ষ সহযোগী। খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে মুয়াবিয়া তাকে মিসরের শাসনকর্তারুপে নিয়োগ
করেন।

আল মুগিরা : আল মুগিরাকে মুয়াবিয়া (রা.) কুফার শাসনকর্তা রুপে নিয়োজিত করেন। আল মুগিরার পরামর্শেই মুয়াবিয়া
(রা.) তদ্বীয় পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করেন।

যিয়াদ : যিয়াদ সম্পর্কে ছিল মুয়াবিয়ার সৎ ভাই। তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেও তিনি ব্যাপক বীরত্বের
পরিচয় দেন। মুয়াবিয়া (রা.) তাকে বস্রার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। এই প্রসংগে ঐতিহাসিক
সামরিক অভিযান সমূহ : অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠার পর মুয়াবিয়া (রা.) সা¤্রাজ্য বিস্তারে মনযোগ দেন। তিনি
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা বিস্তৃত করেন। তাঁর সময়ে অভিজ্ঞ সেনাপতিদের বিজয় অভিযানের ঘটনা ঘটে।
পূর্বাঞ্চল বিজয় : পূর্বাঞ্চলের সেনাপতি ছিলেন মুয়াবিয়া (রা.) এর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা যিয়াদ। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র
উবায়দুল্লা পূর্বাঞ্চলের শাসক নিযুক্ত হন। এই সময় সীমান্তবর্তী উপজাতিরা বিদ্রোহ সৃষ্টি করলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করেন।

গজনী, কাবুল, কান্দাহার, বুখারা দখল : ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিরাতে বিদ্রোহ দেখা দিলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এর
কিছুদিন পর গজনী, কাবুল, কান্দাহার উমাইয়াদের পদানত হয়। ৬৭৪ খ্রি: বুখারা ও ৬৭৬ খ্রি: সমরখন্দ ও তিরমিজ
অধিকারে আসে। সেনাপতি মুহাল্লাব ৬৬৫ খ্রি: সিন্ধু নদ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন। তবে এটি ব্যর্থ হয়।

পশ্চিমাঞ্চল বিজয় :
উত্তর আফ্রিকা অভিযান : মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ‘আল-মাগরিব (পশ্চিম)’ নামে ডাকা হত। হযরত
উমর (রা.) এর শাসনামলে সর্বপ্রথম উত্তর আফ্রিকায় অভিযান প্রেরিত হয়। রোমান স¤্রাটের আধিপত্য তখন এই অঞ্চলে
সর্বত্র বিরাজমান ছিল। হযরত উসমান ও আলী (রা.) এর খিলাফতের বিশৃঙ্খলার সুযোগ গ্রহণ করে রোমান স¤্রাট পুনরায়
বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নেয় এবং এই অঞ্চলের বার্বার অধিবাসীদের উপর ব্যাপক অত্যাচার শুরু করে। মিসরের
শাসনকর্তা আমর ইবন আল আসের মাধ্যমে অবহিত হয়ে মুয়াবিয়া (রা.) ১০,০০০ সৈন্যসহ ওকবা বিন নাফিকে ৬৭০ খ্রি:
উত্তর আফ্রিকার অভিযানে প্রেরণ করেন। ওকবা রোমান বাহিনীকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে সক্ষম হন। এই অঞ্চল উমাইয়া
খিলাফতের অধীনস্থ হয়।

কায়রোয়ান প্রতিষ্ঠা : ৬৭০ খ্রি: ওকবা কায়রোয়ান নামে একটি প্রসিদ্ধ শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এটি উত্তর আফ্রিকার
রাজধানীতে পরিণত হয়। তিনি এখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ওকবা আরো পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হতে
থাকেন এবং একের পর এক শহরে বন্দর জয় করেন। তাঁর বিজয়াভিযান সুদূর আটলান্টিক সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
মুয়াবিয়া (রা.) ওকবাকে তার বিজিত অঞ্চলগুলোর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি এই অঞ্চলে
মুসলিম শাসন সুসংহত করে যেতে পারেননি। ওকবার বীরত্ব ও কৃতিত্বের কথা স্মরণ করেই ঐতিহাসিকগণ তাকে আরব
আলেকজেন্ডার (অষবীধহফবৎ ড়ভ ঃযব অৎধনং) উপাধিতে ভূষিত করেন।

কনস্টান্টিনোপলে নৌ-অভিযান : মুয়াবিয়া (রা.) মুসলিম নৌ-বাহিনী গঠনে সর্বাপেক্ষা কৃতিত্বের দাবিদার। সিরিয়ার
গভর্ণর থাকা অবস্থায় তিনি নৌ-বাহিনী গঠন করেন এবং ভূ-মধ্যসাগরীয় দ্বীপ সিসিলি, রোডস, ক্রীট ইত্যাদি দখল করেন।
আরব নৌÑঅধ্যক্ষ (ধফসরৎধষ) আব্দুল্লাহ বিন-কায়েস এর নেতৃত্বে রোমানদের বিরুদ্ধে নৌ-অভিযান প্রেরণ করেন।
মুয়াবিয়া (রা.) সিরিয়ার উপকূল রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

আর্মেনিয়া দখল : ৬৬২ খ্রি: আর্মেনিয়ার রোমানদেরকে পরাজিত করে আর্মেনিয়া দখল করেন এবং আকব নামক স্থানে
একটি পোতাশ্রয় স্থাপন করেন। ৬৬৯ খ্রি: এই পোতাশ্রয় হতে মুয়াবিয়া বাইজানটাইন শক্তির রাজধানী কনস্টানিটনোপলে
নৌ-অভিযান প্রেরণ করেন। এই অভিযানের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ কিন্তু বেশ কিছুদিন
কনস্টান্টিনোপল অবরোধ রাখার পর মহামারী, খাদ্যাভাব, বিশৃঙ্খলা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে অভিযানটি ব্যর্থ হয়ে
যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, রোমানদের বিরুদ্ধে ভূ-মধ্যসাগরে টিকে থাকার জন্য মুয়াবিয়া ৫০০ রণতরী নিয়ে এক বিশাল
নৌ-বহর গঠন করেন। এর ফলেই ভূ-মধ্যসাগরে মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

শাসন ব্যবস্থা : মুয়াবিয়া একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। তিনি তার শাসন প্রণালীতে বাইজানটাইন
ও পারস্য সা¤্রাজ্যের রীতি প্রবর্তন করেন।

ডাক বিভাগ : মুসলিম প্রশাসকদের মধ্যে মুয়াবিয়া সর্বপ্রথম ডাক বিভাগ চালু করেন। সরকারী ও বেসরকারী তথ্য ও
সংবাদ ইত্যাদি আদান প্রদানের জন্য তিনি তার সমগ্র রাজ্যে ১২ মাইল অন্তর একটি ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিভাগকে
বলা হত ‘দিওয়ান আল-বারিদ’ (ডাক বিভাগ) এবং এর প্রধান পরিচালককে বলা হত সাহিব-আল-বারিদ। এই বিভাগ
সা¤্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতো।

দিওয়ান আল খাতাম : দিওয়ান আল-খাতাম ছিল সা¤্রাজ্যের রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন বিভাগ। খলীফা কর্তৃক ঘোষিত
প্রত্যেকটি বিধান এই বিভাগে রেজিস্ট্রি করা হতো এবং পরবর্তীতে তা সিল প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হতো।

রাজস্ব সংষ্কার : মুয়াবিয়া অর্থনৈতিক বিভাগকে একটি স্বকীয়রূপ দান করেন। মুয়াবিয়া (রা.) রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব
সাহিব আল-খারায নামক একজন বিশিষ্ট কর্মকর্তার হাতে ন্যস্ত করেন। তিনি স্বয়ং খলীফা কর্তৃক এই বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্ত
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র
ইউনিট সাত পৃষ্ঠা-১৯৫
হতেন। খলীফা উমর (রা.) এর নীতি অনুসারে যে বার্ষিক নির্ধারিত পরিমান ভাতা মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা হতো তা
তিনি দরিদ্র কর (যাকাত) হিসেবে কেটে রাখতেন।

কেন্দ্রীয় ও প্রশাসনিক সচিবালয় : শাসনকার্যে সুবিধার জন্য মুয়াবিয়া (রা.) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক রাজধানীগুলোতে
সচিবালয় স্থাপন করেন। কেন্দ্রে আরবী ভাষার প্রাধান্য ছিল এবং প্রদেশেগুলোতে নিজস্ব ও স্থানীয় ভাষার প্রচলন ছিল। এর
ফলে যাবতীয় সরকারী দলিলপত্র, সংরক্ষণ ও সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভবপর হয়।

নৌ-বাহিনী প্রতিষ্ঠা : মুয়াবিয়া (রা.) ছিলেন মুসলিম নৌ-বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সময় হতেই মুসলমানগণ নৌ
অভিযানে পারদর্শী হয়ে ওঠে। এছাড়া হযরত উমর (রা.) এর সময়ে প্রবর্তিত প্রশাসনের অন্যান্য শাখা যেমন- দিওয়ান
আল-জুনদ (সামরিক বিভাগ), দিওয়ান আল-কাজা (বিচার বিভাগ), দিওয়ান আল-রাসায়িল ইত্যাদি বিভাগ তিনি
পুন:প্রবর্তন ও বহাল রাখেন।

ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনয়ন : কুফার শাসনকর্তা ও মুয়াবিয়া (রা.) এর অন্যতম উপদেষ্টা আল-মুগীরার পরামর্শে
মুয়াবিয়া তার পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। তার এই দৃষ্টান্ত পরবর্তী উমাইয়া খলীফা ও
আব্বাসীয় খলীফাগণ অনুসরণ করেন। এইভাবে মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামের ইতিহাসে রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটান এবং
খুলাফায়ে রাশিদীনের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ইতি টানেন।
সারসংক্ষেপ:
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামের ইতিহাসে একজন দক্ষ ও দূরদর্শী নৃপতি হিসেবে পরিচিত। তিনিই
প্রথম ইসলামে রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটান এবং মনোনয়ন ভিত্তিক উত্তরাধিকারী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি অপর
পক্ষে মুসলিম সা¤্রাজ্য সম্প্রসারণ করেন। তাঁর সময়ে সমগ্র উত্তর আফ্রিকা মুসলিমদের পদানত হয়। তিনি প্রশাসন
ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন বিভাগ দিওয়ান আল বারিদ, দিওয়ান আল খাতাম
ইত্যাদি বিভাগ চালু করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম নৌ-বাহিনীর রূপকার।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.1
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. উমাইয়া খিলাফতের রাজধানী কোথায় স্থাপিত হয় ?
ক) কুফা খ) দামেস্ক গ) বসরা ঘ) ইয়েমেন
২. মুয়াবিয়া (রা.) কে ‘প্রথম রাজা’ বলা হয় । কারণ -
ক) তিনি এই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন খ) তাকে জনগণ এই উপাধি দিয়েছিল
গ) রাজপ্রসাদে বসবাস করতেন বলে ঘ) ইসলামে প্রথম রাজতান্ত্রিক শাসন চালু করেন
৩. মুয়াবিয়া (রা.) এর শাসন সংস্কারগুলো হলোর) ডাকঘর প্রতিষ্ঠা রর) সচিবালয় স্থাপন ররর) নৌ-বাহিনী প্রতিষ্ঠা
নিচের কোনটি সঠিক
ক) র, রর খ) র, ররর গ) রর, ররর ঘ) র, রর, ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
মহানবী (সা.) এর সাহাবীদের বর্ণনা দিতে গিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর কথা উল্লেখ করলেন।
তিনি চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) এর পর নতুন খিলাফত চালু করেন। তিনি রাজ্য বিস্তারে খুব মনোযোগী ছিলেন।
তিনি প্রশাসনকি সংস্কার সাধন করেন এবং রাজতান্ত্রিক শাসনের সূচনা করেন।
ক) মুয়াবিয়া (রা.) কত খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খিলাফত চালু করেন? ১
খ) মুয়াবিয়া (রা.) কে প্রথম রাজা বলা হয় কেন ? ২
গ) উদ্দীপকে হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর খিলাফত প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখুন। ৩
ঘ) “তিনি রাজ্য বিস্তারে খুব মনোযোগী ছিলেন ” কথাটি ব্যাখ্যা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]