খলীফা ওয়ালিদের ক্ষমতায় আরোহণ ও পরিচয় কৃতিত্ব বিচার করতে পারবেন।

> মুখ্য শব্দ মসজিদে নববী, মুহাম্মদ বিন কাসিম, সা¤্রাজ্যবাদীনীতি, নিষ্ফল বিজয়,
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্র, সামন্তরাজাগণ, ভূমিদাস ও জিব্রালটার
পরিচয় ও ক্ষমতায় আরোহণ
আল-ওয়ালিদ ছিলেন খলীফা আব্দুল মালিকের জ্যেষ্ঠ্য পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে আল-ওয়ালিদ
দামেস্কের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি হিজরী ৫০ সনে জন্মগ্রহণ করেন। আল-ওয়ালিদ পিতার পদাংক অনুসরণ
করেন। তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা হিসেবে বহাল রাখেন এবং তার ধর্মপ্রাণ চাচাতো ভাই ওমর
বিন আব্দুল আযীজকে হেজাযের গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ করেন। গৃহযুদ্ধের সময় মক্কা ও মদীনায় যে ক্ষতি সাধিত
হয়েছিলো তিনি তা পূরণে অগ্রগামী হন। তিনি উভয় শহরে ব্যাপক সংস্কার সাধন ও বহু অট্টালিকা, প্রাসাদ নির্মাণ করেন।
মসজিদে নববী সম্প্রসারণ করেন এবং পবিত্র কাবা ঘর পুণঃনির্মাণ করেন।

সা¤্রাজ্য বিস্তার
খলীফা আল-ওয়ালিদ মুসলিম সা¤্রাজ্য সম্প্রসারণ করে ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেন। তিনি
ছিলেন ইতিহাসের একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তার সময়ে মধ্য এশিয়া, সিন্ধু, স্পেন মুসলিম পদানত হয়। হাজ্জাজ বিন
ইউসুফ, মুহাম্মদ বিন কাসিম, তারিফ বিন জিয়াদ, মুসা ইবনে নুসাইর ও কুতায়বা বিন মুসলিম এই বীর যোদ্ধাগণ
অপরিসীম রণকৌশল ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

মধ্য এশিয়া বিজয়
কুতায়বা বিন মুসলিম এর পরিচালনায় মুসলিম
বাহিনী মধ্য এশিয়া বা অক্সিয়ানায় অভিযান
পরিচালনা করে। কুতায়বা বলখ, তুখারিস্তান,
বুখারা, খাওয়ারিজম প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে।
এই অঞ্চলে ছিল তখন তুর্কিদের আধিপত্য।
কুতায়াবা ৭০৬ খ্রি: একে একে বলখ, তুখারিস্তান
ও ফারগানা অভিযান পরিচালনা করেন। মুসলিম
বাহিনী এই সকল অঞ্চল তাদের পদানত করে।
৭০৯ খ্রি: তুখারিস্তানে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত
হয়। ৭১০ থেকে ৭১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সমরকন্দ
ও খাওয়ারিজম পদানত হয়। খাওয়ারিজমের শাহ
মুসলিমদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হন। কুতায়বা
৭১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খোজান্দা, শাশ্, র্ফাগনা ও
কাশ্গড় দখল করে চীন সীমান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হন।
কিন্তু ইতিমধ্যে খলীফা আল-ওয়ালিদের মৃত্যু সংবাদ পৌছালে তার অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।
অভিযানের কারণসমূহ :
আল-ওয়ালিদের সা¤্রাজ্যবাদী নীতি
মধ্যযুগের সকল শাসকের ন্যায় আল-ওয়ালিদ সিংহাসনে বসেই সা¤্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর রাজ্য বিস্তারের
অংশ হিসেবে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ভারতের ঐশ্বর্য
সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষ ধন-সম্পদে ঐশ্বর্যশালী। উপকূলীয় বাণিজ্য এই উপমহাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
তাই অর্থনৈতিক কারণেও এই অভিযান প্রেরিত হয়। এছাড়া কাবুল ও কান্দাহারের ভারতীয় রাজাগণ মুসলিম শক্তির
বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন।

দাহির কর্তৃক বিদ্রোহীদের আশ্রয়দান
আরব বিদ্রোহীগণ, বিশেষ করে হাজ্জজ বিন ইউসুফের অধীনে ইরাকের বিদ্রোহীগণ পালিয়ে সিন্ধু প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ
করলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহিরকে তাদের ফিরিয়ে দেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
আরব জাহাজ লুন্ঠন
সিংহলের রাজা কর্তৃক খলীফা আল-ওয়ালিদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জন্য প্রেরিত উপহার, উপঢৌকন সম্বলিত ৮ টি
জাহাজ সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুন্ঠিত হলে হাজ্জাজ এর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এই দায়
অস্বীকার করেন। এই সমস্ত কারণে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরিত হয়।

অভিযানের বর্ণনা
তুর্কিদের পূর্বেই সিন্ধু বা ভারতীয় উপমহাদেশ আরবদের পদানত হয়েছিল। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন খলীফার
পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা। তিনি খলীফার প্রতিনিধি হয়ে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে উবায়দুল্লাহ ও
বুদায়েলের নেতৃত্বে প্রেরিত অভিযান ২টি ব্যর্থ হয়। অবশেষে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জামাতা ও ভ্রাতষ্পুত্র মুহাম্মদ বিন
কাসিম কর্তৃক পরিচালিত অভিযানটি সফল হয়। মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১০-৭১২ খ্রি: সিন্ধু অভিযানটি পরিচালিত করেন।
এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে ৬০০০ উষ্ট্রারোহী, ৬০০০ সিরীয় অশ্বারোহী এবং ২০০০ ভারবাহী পশু। মুহাম্মদ বিন কাসিম
পাকিস্তানের মাকরান প্রদেশ দিয়ে দেবলের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। মাকরানের শাসক হারুন তাকে সৈন্যসামন্ত ও
প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন। দাহিরের কুশাসনে বহু নি¤œ হিন্দুজাত যেমন জাট ও মেঠ স্বেচ্ছায় মুসলিম সেনাবাহিনীতে যোগ
দেয়। মুহাম্মদ বিন কাসিম প্রথমে দেবলের শাসক রাজা দাহিরের ভ্রাতুষ্পুত্রকে পরাজিত করেন এবং দেবল অধিকার করেন
৭১১ খ্রিস্টাব্দে। এরপর মুহাম্মদ সিরওয়ান নামক শহরটি দখল করেন। আল-নিরুন (আধুনিক হায়দারাবাদ) সিস্তান শহর
দুটি দখল করা হয়। রওয়ার নামক স্থানে রাজা দাহিরের সাথে মুহাম্মদ বিন কাসিম সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। বিশাল
হস্তীবাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনী থাকা সত্তে¡ও এই যুদ্ধে রাজা দাহির শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। দাহির পতœী-রানী বাঈ
১৫,০০০ সৈন্য নিয়ে আরোরা দুর্গ থেকে যুদ্ধ করেন কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে অগ্নিকুÐে আত্মাহুতি দেন। এরপর
মুসলমানগণ বিনা বাধায় ব্রাহ্মণাবাদ দখল করেন এবং ৭১৩ খ্রি: মুলতান অধিকৃত হয়। কিন্তু এই সময় দামেস্ক হতে
খলীফার মৃত্যুর সংবাদ গিয়ে পৌছে এবং মুহাম্মদ বিন কাসিম তাঁর অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন।

সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল :
১. রাজনৈতিক ফলাফল
ঐতিহাসিক লেনপুল বলেন, “আরবদের সিন্ধু বিজয় প্রাক-ভারত এবং ইসলামের ইতিহাসে একটি আখ্যায়িকা মাত্র। এটি
ফলবিহীন বিজয় উল্লাসের নামান্তর। লেনপুলের এই অভিমত শুধু একদিক দিয়ে সত্য। সিন্ধুতে আরবদের শাসন বেশিদিন
স্থায়ী হয়নি এবং এ বিজয় শুধু সিন্ধু ও মুলতানে ছিল। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এ বিজয় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

২. ধর্মীয় ফলাফল
ধর্মীয় দিক হতে এই অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী, আরব সেনাবাহিনীর সাথে আরব বণিক ও সুফী দরবেশগণ
সিন্ধু অঞ্চলে আসেন। তাঁরা ইসলাম প্রচার করেন এবং অনেকে এই অঞ্চলে বিবাহ করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু
করেন। তাদের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রসার লাভ করে।

সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও এই অভিযানের সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল। আরবরা ভারতীয় গণিত, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রের সংস্পর্শে আসেন এবং গভীর পাÐিত্য অর্জন করেন। তাই এই বিজয় সম্পূর্ণভাবে নিষ্ফল ছিল বলা যায় না।

আফ্রিকা বিজয় :
হাসান বিন নুমানের মৃত্যুর পর মুসা ইবনে নুসাইর আফ্রিকা অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োজিত হন। বার্বারগণ তাঁর পূর্ববর্তী
শাসনকর্তাদের যুগে ব্যাপক বিদ্রোহ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছিল। তিনি তাদেরকে পরাজিত করে আটলান্টিক সাগরে পূর্ব
উপকূল পর্যন্ত মুসলিম আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। তিনি ভূ-মধ্যসাগরে বাইজানটাইনদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান এবং
নৌবহরের সাহায্যে মেজর্কা, মাইনরকা, ইভিকা প্রভৃতি ভূ-মধ্যসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ দখল করেন।

স্পেন বিজয়
বিজয় প্রাক্কালে স্পেনের অবস্থা :
১) রাজনৈতিক অবস্থা : স্পেনের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল গৃহবিবাদে পূর্ণ। উচ্চভিলাষী ও অত্যাচারী সামন্তরাজা ডিউক
রডারিক স্পেনীয় সিংহাসনের রাজা উইটিজাকে পদচ্যুত ও হত্যা করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন। স্পেনে তখন ছিল
গথিক রাজাদের শাসন। অভিজাত শ্রেণি ছিল আপন স্বার্থসচেতন ও পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল খুবই দুর্বল। তাদের মাঝে
কোন ঐক্য ছিল না।
২) সামাজিক অবস্থা : সমাজব্যবস্থা ছিল ৩টি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত।
র) আভিজাত্য সম্প্রদায় : রাজা, গীর্জার পাদ্রি ও সামন্তরাজাগণ। এদের কোন প্রকার কর দিতে হতো না।
রর) মধ্যবিত্ত শ্রেণি : যারা সমাজের মধ্যভাগে অবস্থান করতো। তাদেরকে সকল প্রকার করা প্রদানে বাধ্য করা হতো।
ররর) তৃতীয় শ্রেণি ছিল দাস : তারা ছিল ভূমিদাস (ঝবৎভ) এবং ব্যক্তিগত ক্রীতদাস। যাদের কোন স্বাধীনতা ছিল না।
তাদের-কে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত না।

৩) ধর্মীয় অবস্থা : সমাজে কোন ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ছিল না। ইহুদীরা ছিল নির্যাতিত। তাদের ধর্মীয় কোন স্বাধীনতা ছিল না।
চার্চের প্রাধান্য ছিল সবকিছুর উর্ধ্বে।

স্পেন বিজয়ের কারণসমূহ :
১. স্পেনের গথিক রাজার দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই উত্তর আফ্রিকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই সকল ক্রীতদাস,
ভূমিদাস ও অত্যাচারিত মানুষ মুসা ইবনে নুসাইরকে স্পেনে অভিযান প্রেরণে অনুপ্রাণিত করেন।
২. অপর দিকে স্পেন বিজয় ছিল খলীফা আল-ওয়ালিদের সা¤্রাজ্যবাদী নীতির একটি অংশ।
৩. সিউটার শাসনকর্তা কাউন্ট জুলিয়ান ছিল মৃত ও সিংহাসনচ্যুত রাজা উইটজার জামাতা। কাউন্ট জুলিয়ান তাই স্পেনের
সিংহাসনকে শত্রæমুক্ত করতে চেয়েছিলো এবং মুসা ইবনে নুসাইরকে স্পেনে আহবান করেন।
৪. এই অভিযানে কাউন্ট জুলিয়ান মুসলিম সেনাবাহনীকে সর্বাত্মক সাহায্য করেন। যুদ্ধ জাহাজ, প্রয়োজনীয় রসদ ও সঠিক
দিক নির্দেশনা দিয়ে তিনি মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করেন।
৫. কাউন্ট জুলিয়ানের সর্বাত্মক সহযোগিতার পেছনে রয়েছে তার কন্যা ফ্লোরিন্ডাকে রডারিক কর্তৃক অবমাননা। তাই এই
অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাউন্ট জুলিয়ান মুসা ইবনে নুসাইরকে স্পেন বিজয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

ঘটনা প্রবাহ :
মুসা ইবনে নুসাইর প্রথমে তার অনুচর তারিফকে স্পেনে প্রেরণ করেন। তারিফ ফিরে এসে তাঁকে আক্রমণের অনুকূল
পরিবেশের কথা ব্যক্ত করেন। এরপর মুসা আর একজন বিশ্বস্ত অনুচর ও সেনাপতি বার্বার যোদ্ধা তারিক বিন যিয়াদকে
৭১১ খি: স্পেন অভিযানে প্রেরণ করেন। এই সময় ৭০০০ সৈন্য নিয়ে তারিক যে পাহাড়ে অবতরণ করেন তা ‘জাবাল
আল তারিক’ (তারিকের পাহাড়) নামে পরিচিত হয়। ইউরোপীয়দের নিকট এটি জিব্রালটার নামে পরিচিত। ৭১২ খ্রি:
মেডিনা-সিডোনিয়া নামক স্থানে গোয়াদালকুইভার নামক নদীর তীরে তারিক রডারিকের বাহিনীর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
এই সময় মুসা ইবনে নুসাইর ৫০০০ সৈন্য সাহায্য পাঠালে তারিকের সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১২,০০০ এবং রডারিকের সৈন্য
সংখ্যা ছিল প্রায় ১,২০,০০০ যুদ্ধে রডারিক পরাজিত হন এবং পলায়নকালে গোয়া ডিলেট নদীতে নিমজ্জিত হয়ে মারা
যান। মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করলো। তারিক তাঁর সেনাবাহিনীকে চারভাগে বিভক্ত করে যথাক্রমে মালাগা, গ্রানাডা,
কর্ডোভায় পাঠালেন এবং নিজে রাজধানী টলেডো দখল করলেন। তারিকের সাফল্যে মুসা ঈর্ষান্বিত হয়ে ৭১২ খ্রি: তিনি
স্পেন আগমন করেন এবং সেভিল, মেরিডা, কারমোনা প্রভৃতি শহর জয় করে টলেডোর নিকট তারিকের সাথে মিলিত হন।
তাদের মিলিত বাহিনী সারাগোসা, টেরাগোনা, আরাগোনা, বার্সালোনা, লিও প্রভৃতি অঞ্চল জয় করে। এই সময়ে খলীফা
আল-ওয়ালিদের মৃত্যুসংবাদ তাদের নিকট পৌছালে তারা দামেস্ক অভিমুখে যাত্রা করেন।
স্পেন বিজয়ের ফলাফল :
সমাজে সমতা ও ন্যায়নীতির প্রবর্তন
আরবদের কর্তৃক স্পেন বিজয় ইউরোপীয় ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে। অত্যাচার-অবিচারের পরিবর্তে সমাজে
সাম্য ও ন্যায়বচিার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ধর্মীয় স্বাধীনতা
আরবদের কর্তৃক স্পেন বিজয়ের ফলে সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহুদী ও খ্রিস্টানগণ স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ
ধর্ম পালনে স্বীকৃত হয়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সকল অনাচার -অবিচার সমাজ হতে তিরোহিত করা হয়।

দাসদের মর্যাদা
সমাজে দাস ও ভূমিদাসগণ স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পায়। সামাজিকভাবে জীবনযাপন করার সুযোগ পায়।

যাজক শ্রেণির ক্ষমতা হ্রাস
সমাজের উচ্চ ও অভিজাত শ্রেণির বিশেষ করে যাজক শ্রেণির ক্ষমতার রাশ টেনে ধরা সম্ভব হয়। মুসলিম বিজয়ের পর
যাজক শ্রেণির শোষণের হাত থেকে স্পেনীয়রা মুক্তি পায়।

কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্য
মুসলমানগণ স্পেন বিজয়ের পর সেখানকার কৃষি ও ব্যবসায় বাণিজ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন এবং এই ক্ষেত্রে উন্নতি
সাধিত হয়।

মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
স্পেন বিজয়ের পর সেখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসা ইবনে নুসাইর তাঁর পুত্র আব্দুল আযিযকে স্পেনের,
আব্দুল্লাহকে ইফ্রিকিয়ার ও আব্দুল মালিককে মরক্কোর শাসনকর্তা হিসেবে নিয্ক্তু করেন।

শিল্প সাহিত্য ও জ্ঞান বিজ্ঞান
মুসলমান কর্তৃক স্পেন বিজয়ের ফলে এখানে শিল্প, সাহিত্যের ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিচর্চা ও বিকাশ ঘটে। শিক্ষা, সংস্কৃতি
গবেষণার ক্ষেত্রে গোটা ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

আল ওয়ালিদের মৃত্যু
খলীফা আল ওয়ালিদ ১০ বছর গৌরবের সাথে রাজত্ব করার পর ৭১৫ খ্রি: মৃত্যুবরণ করে। তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর
পুত্রকে উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করেন কিন্ত তাঁর পুত্র তার জীবদ্দশায় মারা যান। তাই তাঁর ভ্রাতা সুলায়মান তার মৃত্যুর পর দামেস্কের সিংহাসন আরোহণ করেন।
চরিত্র ও কৃতিত্ব :
দয়ালু ও সুযোগ্য শাসক
সৈয়দ আমীর আলী বলেন- তিনি যে তার পিতা আব্দুল মালিক ও পিতামহ মারওয়ান অপেক্ষা দয়ালু ছিলেন তাতে কোন
সন্দেহ নেই এবং এটা নিশ্চিত যে, তার বংশধরগণের অনেকের চেয়ে তিনি হৃদয়বান ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিকগণ তাঁকে
স্বেচ্ছাচারি বললেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন দয়ালু ও একজন সুযোগ্য শাসক।

উমাইয়া ইতিহাসের স্বর্ণযুগ
আল-ওয়ালিদ ছিলেন উমাইয়া বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ খলীফা যার রাজত্বকাল ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে খ্যাত। তিনি অভ্যন্তরীণ
ও বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করেন।
সর্বশ্রেষ্ঠ বিজেতা
আল-ওয়ালিদ কেবল উমাইয়া বংশেরই নন সমগ্র মুসলিমদের ইতিহাসে অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তিনি অক্সাস নদী
হতে সিন্ধু নদ, উত্তর আফ্রিকা হতে স্পেন পর্যন্ত তার সা¤্রাজ্য বিস্তার করেন। তিনি বিশাল সা¤্রাজ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা
করে সমসাময়কি রাজণ্যবর্গের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।

জনহিতকর কার্যাবলি
তিনি সা¤্রাজ্যের সর্বত্র রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন এবং কূপ খনন করেন। সীমান্ত রক্ষার জন্য দূর্গ নির্মাণ করেন । বিদ্যালয় ও
হাসপাতাল নির্মাণ করেন। দুস্থদের জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করেন। তিনি অসহায় ও দুস্থদের রাষ্ট্র হতে ভাতা প্রদান করতেন।
অসহায়, পঙ্গু, অন্ধ, পাগল, ও অক্ষম লোকদের জন্য তিনি আহার, বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এতিম বালক
বালিকার জন্য এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

স্থাপত্যবিদ্যা
আল-ওয়ালিদ ছিলেন যুগের একজন শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদ। দামেস্কের জামে মসজিদ তার স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নির্দশন।
এছাড়াও তিনি মক্কা ও মদীনায় মসজিদ সংষ্কার করেন যে শহরে মসজিদ ছিল না সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।

শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক
আল-ওয়ালিদ শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁর দরবারে কবি ও সাহিত্যিকদের বিশেষ সমাদার করা হতো।
কবি ফারায্দাক তার দরবার অলংকৃত করেন। খলীফা নিজে ছিলেন কবি ও সঙ্গীতানুরাগী। তাঁর সময়ে কুফায় ও বসরায়
জ্ঞান বিজ্ঞান ও হাদীস চর্চা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাঁর সময়ে মক্কায় কাগজের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

নৌ-বহরের উন্নতি
আল-ওয়ালিদ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সামরিক সংগঠক। তিনি নৌ-বহরের উন্নতি সাধন করেন যা ভূ-মধ্যসাগরে রোমানদের
বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করেছিলেন।
সারসংক্ষেপ:
আল-ওয়ালিদ আব্দুল মালিকের একজন যোগ্যতম উত্তরসূরি এবং উমাইয়া বংশের একজন শ্রেষ্ঠতম শাসক। তাঁর
সময়েই ইসলামী রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকা, স্পেন, সিন্ধু ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামী
পতাকা উত্তোলন করেন। শ্রেষ্ঠতম সেনাপতিগণ ছিলেন তার সাফল্যের কারিগর। স্থাপত্য ও প্রশাসনে তিনি ছিলেন
একজন প্রথম সারির নৃপতি। তাই তিনি শুধু উমাইয়া বংশের নয় তিনি ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ
নৃপতি ও বিজেতা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৫
১. আরবরা স্পেন বিজয় করে কত সালে ?
ক) ৭১৫ খ) ৭০৫ গ) ৭১২ ঘ) ৭১৩
২. খলীফা আল ওয়ালিদ স্পেনে অভিযান প্রেরণ করেন -
ক) অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য খ) সা¤্রাজ্যবাদীনীতির অংশ হিসেবে
গ) স্পেনীয়দের প্রতি বিদ্বেষ ছিল ঘ) সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে
৩. খলীফা আল ওয়ালিদের সময় মুসলিমরা জয় করে -
র ) সিন্ধু রর) চীন ররর) স্পেন
নিচের কোনটি সঠিক
ক) র, রর, ররর খ) র, ররর গ) র, রর ঘ) রর, ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
‘ইসলামের সম্প্রাসারণে খলীফাদের অবদান’ শীর্ষক সেমিনারে একজন বক্তা বলেন- খলীফা উমর (রা.) এর পরে উমাইয়া
খলীফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের সময়ে মুসলিম সা¤্রাজ্য অধিক বিস্তৃত হয়। তিনি তার সুযোগ্য গভর্ণরদের দ্বারা মধ্য
এশিয়া, সিন্ধু, উত্তর আফ্রিকা ও স্পেন জয় করতে সক্ষম হন। জনহিতকর কাজের জন্যও ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক চিরস্মরণীয়।
ক) ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের পূর্বাঞ্চলের গভর্ণর কে ছিলেন? ১
খ) “জনহিতকর কাজের জন্য ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক চিরস্মরণীয়”-ব্যাখ্যা করুন ? ২
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত খলীফার সময়ে সিন্ধু বিজয়ের ঘটনাটি তুলে ধরুন। ৩
ঘ) উদ্দীপকে উল্লেখিত খলীফার চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]