আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবুল আব্বাসের ভূমিকা আবুল আব্বাসের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন করতে পারবেন।

মুখ্য শব্দ উত্তরসূরী, রক্তপিপাসু, নিধনযজ্ঞ, ‘আল হাশিমীয়া’ ও উযীর, জল্লাদ
পরিচয় ও সিংহাসনে আরোহণ
আবুল আব্বাস ছিলেন আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলীফা। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। তিনি ছিলেন রাসূল (সাঃ) এর অন্যতম চাচা আল আব্বাস এর উত্তরসূরী।
জাব নদীর তীরে ৭৫০ খ্রিঃ আব্দুল্লাহর নিকট উমাইয়া বংশের শেষ খলীফা দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের মাধ্যমে
আব্বাসীয়গণ ক্ষমতা লাভ করে। কুফার জামে মসজিদে আবুল আব্বাস খলীফা হিসেবে ঘোষিত হন এবং জনগণ তাঁর প্রতি
আনুগত্য প্রদর্শন করে। তিনি আস-সাফফ্াহ বা রক্তপিপাসু উপাধি গ্রহণ করেন।
উমাইয়া নিধনযজ্ঞ
এরপর আব্বাসীয়গণ উমাইয়া বংশকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। আস-সাফফাহর পিতৃব্য
আব্দুল্লাহ প্যালেস্টাইনের আবু ফ্রুটস নামক স্থানে ৮০ জন উমাইয়া বংশের লোককে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা
করে। সেখানে যত উমাইয়া বংশীয় লোক ছিল সকলকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমনকি মৃত উমাইয়াদের দেহ কবর
হতে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কেবলমাত্র মুয়াবিয়া ও দ্বিতীয় উমরের কবর এই নিষ্ঠুরতার হাত হতে রক্ষা পায়।
এই নিষ্ঠুর আচরণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের উমাইয়া সমর্থকগণ বিশেষ করে দামেস্ক, হিমস, কিন্নিসিরিন, ফিলিস্তিন
এর লোকজন নিজেদের দাড়িগোঁফ কামিয়ে আব্বাসী বংশের বিরোধিতা করে। আস-সাফফাহ অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে এই
সকল বিদ্রোহ দমন করেন।
ইয়াজিদ বিন হুবায়রার পতন
২য় মারওয়ানের মৃত্যুর পরও ইরাকের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন হুবায়রা ওয়াসিতে নিজ কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। তিনি
আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান নামক জনৈক ব্যক্তিকে হযরত আলীর বংশধর হিসেব খলীফা ঘোষণা করেন। এই সময় আবুল
আব্বাস ইয়াজিদকে দমন করার জন্য তাঁর ভ্রাতা আবু জাফর ও সেনাপতি কাহতাবা কে প্রেরণ করেন। ইয়াজিদ দীর্ঘ ১১
মাস অবরুদ্ধ থাকার পর প্রাণরক্ষার প্রতিশ্রæতিতে আত্মসমর্পন করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর পুত্র ও বহু অনুচরসহ নিহত হন।
রাজধানী স্থানান্তর
আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ তাঁর রাজধানী ইরাকের কুফা হতে আল-আনবারে স্থানান্তরিত করেন। সেখানে তিনি ‘আল
হাশিমীয়া’ নামক একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন।
প্রশাসনিক কর্তা নিয়োগ
আবুল আব্বাস খলীফা হওয়ার পর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর নিকটাত্মীয় ও সমর্থকদের নিয়োগ করেন। এতে তাঁর প্রশাসনে
অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। খলীফা তাঁর ভ্রাতা আবু জাফরকে মেসোপটেমিয়ায়, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের শাসনকর্তা;
পিতৃব্য দাউদ ইবনে আলীকে হিজায, ইয়ামেন ও ইয়ামামায় , আব্দুল্লাহ ইবনে আলীকে সিরিয়ায়, সুলাইমান ইবনে আলীকে
বসরায়; আবু মুসলিমকে খোরাসানের এবং আয়ুনকে মিসরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। খালিদ ইবনে বার্মাককে অর্থমন্ত্রী
ও আবু সালমা খাল্লালকে উযীর হিসেবে নিযুক্ত করেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকারী মনোনয়ন
চার বছর তিন মাস রাজত্ব করার পর ৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ৩০ বছর বয়সে বসন্ত রোগে ইন্তিকাল
করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর ভ্রাতা আবু জাফরকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান এবং ভ্রাতুষ্পুত্র ঈশাকে
তৎপরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। আস-সাফফাহ এক পুত্র মুহাম্মদ ও রাইতা নামক এক কন্যা রেখে যান।
পরবর্তীতে আল-মাহদীর সাথে রাইতার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।
চরিত্র ও কৃতিত্ব
নিজ বংশের স্বার্থে আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। উমাইয়াদের প্রতি নৃশংস ও নির্মম
আচরণ তাকে ইতিহাসে রক্ত পিপাসু স্বীকৃতি দেয়। এসকল নিষ্ঠুরতার উর্ধ্বে তিনি ছিলেন একজন দারুণ সামরিক সংগঠক,
দক্ষ সৈনিক ও কর্তব্যপরায়ণ শাসক। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল নিষ্কলুষ। তিনি মাত্র একজন স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন (উম্মে
সালমা)। খলীফা তাঁর স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত অনুরুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীস্বজনকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ
পদে নিযুক্ত করেন। এতে তিনি পরিবারের সদস্যদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সমর্থ হন। তিনি কুফা হতে আনবারে
রাজধানী স্থাপন করেন। আব্বাসীদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করেন। তিনি অট্টালিকা, রাজপ্রাসাদ, কুফা
হতে মদিনা পর্যন্ত দীর্ঘ জনপথ তৈরি করেন এবং হজ্বযাত্রীদের সুবিধার জন্য তিনি এর স্থানে স্থানে সরাইখানা নির্মাণ
করেন। আব্বাসীয় প্রশাসন ব্যবস্থায় উযির ও জল্লাদের পদ তিনি প্রথম সূচনা করেন। তিনি একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক
বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
সারসংক্ষেপ:
মূলত তাঁর বংশের প্রতি উমাইয়াদের নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিশোধ হিসেবেই আবুল আব্বাস উমাইয়াদের প্রতি নিষ্ঠুর
আচরণ করেছিলেন। তিনিই ছিলেন আব্বাসীয় বংশের প্রথম খলীফা। অতি স্বল্প রাজত্বকালের মধ্যে তিনি রাজধানী
স্থাপন, প্রশাসনিক নিয়োগ ও উমাইয়া বিদ্রোহ দমন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.২
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. আস-সাফফাহ শব্দের অর্থ কী ?
ক) রক্তপাত খ) রক্তপ্রবাহ গ) রক্তপিপাসু ঘ) রক্তের প্রয়োজন
২.আবুল আব্বাস প্রশাসনে আত্মীয়স্বজন নিয়োগ দেন কেন?
ক) প্রশাসনকে অনুকূলে রাখতে খ) ভালোবাসার প্রতিদান দিতে
গ) প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে ঘ) আত্মীয়দের অধিকার আদায়ে
৩.আবুল আব্বাসের কৃতিত্ব-
র) রাজধানী প্রতিষ্ঠায় রর) উযির ও জল্লাদের পদ সৃষ্টি ররর) দূরদর্শী রাজনীতি বিশেষজ্ঞ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র খ) রর গ) র,রর ঘ) রর,রর, ররর
৪.তিনি ইতিহাসে আস্-সাফ্ফাহ বা রক্তপিপাসু হিসেবে পরিচিত। তিনি নিচের কোন শাসক?
ক) আবু জাফর খ) আবুল আব্বাস গ) আল মনসুর ঘ) মুয়াবিয়া
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
জোবায়দা আব্বাসীয় খিলাফতের কাহিনী পড়ছিল। ‘ী’ ছিল এই বংশের প্রথম খলীফা। তাকে আস্-সাফ্ফাহও বলা হয়। তাঁর চরিত্রে কঠোরতা ও কোমলতার সংমিস্রণ ঘটে। স্বল্প রাজত্বকালের মধ্যে তিনি রাজধানী স্থাপন, প্রশাসনিক নিয়োগ ও উমাইয়া বিদ্রোহ দমন করেন। ক) আব্বাসী বংশের ১ম খলীফা কে? ১
খ) আবুল আব্বাসকে আস-সাফফাহ বলা হয় কেন? ২ গ) উদ্দীপকের ‘ী’ খলীফার প্রশাসনিক সংস্কার উল্লেখ করুন। ৩ ঘ) উদ্দীপকের ‘ী’ খলীফার চরিত্র ও কৃতিত্ব পাঠ্যপুস্তকের আলোকে আলোচনা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]