হারুন-অর-রশিদের খিলাফত লাভ এবং তাঁর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি

মুখ্য শব্দ নরপতি, বাগদাদ নগরীর ¯্রষ্টা ও ‘আরব জোয়ান-অব-আর্ক’
পরিচয়
বিশ্বের ইতিহাসে যে সকল নরপতি গৌরবের ইতিহাস রচনা করেছেন, যারা ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয়
বাগদাদের আব্বাসীয় খলীফা হারুন-অর-রশিদ তাদের মধ্যে একজন। তিনি ছিলেন রূপকথার বাগদাদ নগরীর ¯্রষ্টা। তাঁর
খিলাফত আব্বাসীয় বংশকে এমনই এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল যা আর কোন শাসকের পক্ষে তেমনটি সম্ভব হয়নি। ৩৭
জন আব্বাসীয় খলীফার মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা সফল রাজনীতিবিদ, সমরনায়ক, শ্রেষ্ঠ শাসক, প্রজারঞ্জক,
বিদ্যানুরাগী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ছিলেন খলীফা আল-মাহদীর কনিষ্ঠ পুত্র এবং আল-হাদীর ভ্রাতা।

খিলাফত লাভ ও প্রাথমিক কার্যাবলি
ভ্রাতা আল-হাদীর মৃত্যুর পর ৭৮৬ খ্রি: ২৫ বছর বয়সে
হারুন-অর-রশীদ বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সিংহাসনে বসেই তিনি তাঁর মাতা খায়জুরানকে সকল
প্রকার সুবিধা প্রদান করেন। খলীফা তাঁর বাল্য শিক্ষক
বিখ্যাত ইয়াহিয়া বিন-খালিদ বার্মাকীকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত
করেন। তাঁর পুত্রদ্বয় ফজল ও জাফরকে উচ্চ রাজকার্যে
নিযুক্ত করেন।

অভ্যন্তরীণ নীতি
খারিজী বিদ্রোহ দমন : তার খিলাফতের শুরুতেই
খারিজীরা বিদ্রোহ শুরু করে। ৭৮৭-৮৮ খ্রিষ্টাব্দে মসুলে
প্রথম খারিজী উপদ্রব দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা মেসোপটেমিয়ার রাজধানী দখল করলে খলীফা তাঁর সেনাবাহিনীর সহায়তায়
বিদ্রোহ দমন করেন। ওয়ালিদ বিন তারিকের নেতৃত্বে অপর একটি বিদ্রোহ নাসিবিনে শুরু হয়। খারিজীগণ আর্মেনিয়া ও
আজারবাইজান আক্রমণ করেন এবং হলওয়ান পর্যন্ত তাদের প্রভাব বিস্তার করে। এক যুদ্ধে তাদের নেতা ওয়ালিদ নিহত
হলে তাঁর ভগ্নী লায়লা খারিজীদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। খলীফার বাহিনী তাঁর নিকট পরাজিত হয়। অবশেষে জনৈক
সেনাপতি তাকে অস্ত্র ত্যাগ করে পারিবারিক জীবনে ফিরে যেতে অনুরোধ করলে তিনি বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটান। তিনি
আরবীয় ইতিহাসে ‘আরব জোয়ান-অব-আর্ক’ (অৎধন ঔড়ধহ-ড়ভ-অৎপ) নামে পরিচিত। তিনি রূপসী ও সুপ্রসিদ্ধ কবি
ছিলেন।

মধ্য-এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা : খলীফা হারুন-অর-রশিদের সময় মধ্য এশিয়ায় সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালিত হয়েছিল।
৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে কাবুল ও কান্দাহার আব্বাসীদের অধীনস্ত হয় এবং সা¤্রাজ্যের সীমানা হিন্দুকুস পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ
করে। খলীফা দক্ষ সামরিক কর্মকর্তা এই অঞ্চলে নিয়োগ করেন।

আর্মেনিয়ার খাজার বিদ্রোহ দমন : ৭৯৯ খ্রি: খাজার উপজাতি আর্মেনিয়ায় বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। খলীফা তাদেরকে দমন
করার জন্য দুজন শ্রেষ্ঠ সেনাপতিকে প্রেরণ করেন। তারা এই অভিযানে সফলতা অর্জন করেন।

মুদারীয় ও হিমারীয়দের দমন : এই সময় সিরিয়া অঞ্চলে হিমারীয় ও মুদারীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের সূচনা
হয়। একই সাথে সিন্ধু প্রদেশেও অনুরূপ গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। খলীফা এই গৃহযুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাপতি মুসাকে
সিরিয়ায় ও সেনাপতি দাউদ মুহাল্লাবীকে সিন্ধু প্রদেশে প্রেরণ করেন।

আলী (রা.) এর বংশধরদের প্রতি আচরণ : আব্বাসীয় খলীফাগণ সর্বদাই আলী (রা.) এর বংশধরদের তাদের নিজ
বংশের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করতেন। খলীফা আল-মানসুর ইমাম হাসান (রা.) এর বংশধর মুহাম্মদ ও ইব্রাহিমকে হত্যা
করার পর তাদের ছোট ভাই ইয়াহিয়া দাইলামে আত্মগোপন করেন। খলীফা হারুনের খিলাফতকালে ইয়াহিয়া বিদ্রোহ
ঘোষণা করেন। ফজল বার্মাকী সুকৌশলে এই বিদ্রোহ দমন করেন। খলীফা আলী বংশীয় শ্রেষ্ঠ জ্ঞান সাধক মুসা আলকাযিমকেও কারাগারে বন্দী করেন। ৭৯৯ খ্রি: বন্দী অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলী আলরিজা পরবর্তী ইমাম নিযুক্ত হন।

আফ্রিকায় আঘলাবী শাসন প্রতিষ্ঠা : খলীফা আল-হাদীর সময়ে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে ইদ্রিসীয় বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন থেকেই উত্তর আফ্রিকা আব্বাসীয় শাসন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আব্বাসীয় খলীফাগণ বহুচেষ্টা করেও তা পুনরুদ্ধার
করতে ব্যর্থ হন। খলীফা হারুন-অর-রশিদ ৭৮৭ খ্রি: তাঁর সেনাপতি হারসামাকে উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা নিযুক্ত
করেন। হারসামা প্রায় ৩ বছর যোগ্যতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
এই প্রদেশের ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থার কথা চিন্তা করে খলীফা হারসামার পরামর্শে বাৎসরিক ৪০,০০০ দিনার কর প্রদানের
শর্তে ইব্রাহিম ইবনে আগলাবের উপর ইফ্রিকিয়া অঞ্চলের শাসনভার ছেড়ে দেন। তখন থেকে বংশানুক্রমিকভাবে
বাগদাদের খলীফার অনুমোদনক্রমে আফ্রিকায় আঘলাবীয় বংশের শাসন শুরু হয় যা ১০৯ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করে।

উত্তরাধিকারী মনোনয়ন : খলীফা হারুন স¤্রাজ্ঞী জুবাইদা ও তাঁর ভ্রাতা ঈসার চাপে তাঁর পুত্র মুহাম্মদকে (আল-আলআমিন) প্রথম উত্তরাধিকারী, আব্দুল্লাহ (আল-মামুন) কে দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী ও কনিষ্ঠ পুত্র কাসিম (মুতাসিন) কে পরপর
উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।

বৈদেশিক নীতি
বাইজান্টাইনদের সাথে যুদ্ধ : হারুন-অর-রশীদ ও বাইজান্টাইন শক্তির মধ্যকার বিরোধ ছিল তাঁর সময়ে সর্বাপেক্ষা
আলোচিত ঘটনা। খলীফা আল-মাহদীর সময় স¤্রাজ্ঞী আইরিন যে চুক্তি করেছিলো তা ভঙ্গ হয়। ৭৯১ খিস্টাব্দে আব্বাসীয়
অধীনস্ত রাজ্য আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে। মুসলিম সেনাবাহিনী বাইজানটাইনদের কাছ হতে মাতাবা ও আনসিরা শহর দুটি
এবং ভূমধ্যসাগরীয় সাইপ্রাস ও ক্রীট দ্বীপ দুটিও দখল করে নেয়। ৮০২ খ্রি: স¤্রাজ্ঞী আইরিন সিংহাসনচ্যুত হন এবং
কোষাধ্যক্ষ নাইসিফোরাস ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নাইসিফোরাস খলীফার নিকট অপমানসূচক পত্র প্রেরণ করেন এবং
স¤্রাজ্ঞী আইরিন প্রদত্ত করের দ্বিগুণ অর্থ দাবি করেন।
ক্ষুদ্ধ খলীফা তাঁর সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং নাইসিফোরাসকে পরাজিত ও কর প্রদানে বাধ্য করেন। চুক্তি ভঙ্গকারী
নাইসিফোরাস পরপর ৩ বার খলীফার সাথে চুক্তিভঙ্গ করেন এবং প্রতিবারই খলীফা তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে
তাকে পরাজিত ও কর প্রদানে বাধ্য করেন। এতে একদিকে খলীফা হারুন-অর-রশীদের উদারতা ও অপরদিকে তাঁর অদূরদর্শিতা প্রকাশ পেয়েছে।

কূটনৈতিক সম্পর্ক : হারুন-অর-রশীদের সুনাম সুখ্যাতি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি চীনা স¤্রাট ফাগফুরকে
দূত প্রেরণ করে তাঁর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ভারতবর্ষেও তিনি উপহার ও দূত প্রেরণ করেন। ফ্রান্সের রাজা
শার্লিমেনের সাথে তাঁর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। খলীফা শার্লিমেনকে অত্যন্ত দামী কারুকার্যময় একটি জলঘড়ি
উপহার দিয়েছিলেন।
৪০
সারসংক্ষেপ:
হারুন-অর-রশীদের রাজত্বকাল ইসলামের ইতিহাসে এক গৌরবজনক অধ্যায় সূচনা করে। তিনি কঠোর হস্তে খারিজী
বিদ্রোহ, খাজারে বিদ্রোহ, হিমারীয় মুদারীয় দ্ব›দ্ব ও মসুলের বিদ্রোহ দমন করেন। আলী পন্থীদের প্রতিও তিনি তাঁর
কঠোর অবস্থান নেন। তাঁর সময়ে মধ্য এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইফ্রিকিয়ায় আগলাবী বংশীয় শাসনের সূত্রপাত
হয়। তাঁর বৈদেশিক নীতি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কিংবদন্তী এই খলীফা ছিলেন বাগদাদ নগরীর ঐশ্বর্যের ¯্রষ্টা।
তাঁর সময়ে বাগদাদ নগরী বিশ্বে মর্যাদার আসন লাভ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.৬
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১.হারুন-অর-রশীদের মায়ের নাম কী?
ক. যুবাইদা খ. খাইজুরান
গ. গুলবদন ঘ. রাজীয়া
২. খলীফা হারুন-অর-রশীদ আলী বংশীয়দের দমন করেন কেন?
ক.খিলাফতের জন্য হুমকি স্বরূপ বলে খ.পূর্বশত্রæতা ছিল বলে
গ.যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল বলে ঘ. কোনটিই নয়
৩. খলীফা হারুন-অর-রশীদ
র) খারিজী বিদ্রোহ দমন করেন রর) রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেন
ররর) হিমারীয় ও মুদারীয়দের দমন করেন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র খ) রর, রর গ) র,ররর ঘ) র,রর, ররর
৪. মিরাজের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ, মিরাজ নিচের কোনটিকে নির্দেশ করে?
ক) মুয়াবিয়া খ) হারুন-অর-রশীদ
গ) আল-মাহদী ঘ) আল-আব্বাস
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন-১
চৌধুরী বংশের ইতিহাসে হাশিমের নামটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর শাসন আমলে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন।
তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ কূটনীতিক। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তাঁর কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। তাঁর বৈদেশিক নীতি ছিল
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ক) হারুন-অর-রশিদ কত সালে সিংহাসনে আরোহন করেন? ১
খ) কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের হারুন-অর-রশিদের কৃতিত্ব ছিল অসাধারণ। ব্যাখ্যা করুন। ২
গ) উদ্দীপকে যে শাসকের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর বৈদেশিক নীতি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) বিদ্রোহ দমনে খলীফা হারুন-অর-রশিদের কৃতিত্ব লিখুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]