মুখ্য শব্দ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ, তুর্কি সেনাবাহিনী, গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়, হালাগু খান, খলিফা
মুস্তাসিম, বাগদাদ ধ্বংস
৭৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত আব্বাসীয় বংশ প্রায় ৫০০ বছর শাসন করে এবং ১২৫৮ সালে এর চূড়ান্ত পতন ঘটে।
অষ্টম ও নবম শতকে এই বংশটি তার গৌরব বলয় বিস্তার করে ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণযুগের সৃষ্টি করতে
সক্ষম হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গৌরব রবি মোঙ্গল সেনাপতি হালাগু খানের হাতে অস্তমিত হয়।
আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণসমূহ :
পরোক্ষ কারণ
কেন্দ্রিয় শাসনের দুর্বলতা : আব্বাসীয়দের প্রথম একশত বছরের শাসনকালকে গৌরবের যুগ বলা হয়। এ সময় আলমনসুর, আল-মাহ্দী, হারুন-অর-রশিদ, আল-মামুন প্রমূখ খলিফারা যোগ্যতার সাথে কেন্দ্রিয় প্রশাসন যন্ত্রটি পরিচালনা
করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে আল-ওয়াসিকের (৮৪২-৪৭ ) পরবর্তী খলিফাদের অযোগ্যতা, নৈতিক অবক্ষয়,
জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি নানা কারণে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে রাষ্ট্রের
স্থায়ীত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। চ.) এর মতে, ৮২০ সালের দিকে যেখানে বাগদাদের
খলিফার হাতে পৃথিবীর অধিকাংশ ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত ছিল, সেখানে একশ বৎসর পর উত্তরসূরীদের ক্ষমতা এতটাই কমে
গেল যে, রাজধানীতেও এর বিন্দুমাত্র প্রভাব অনুভব করা যেতনা।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব : খলিফাদের দুর্বলতার সুযোগে সা¤্রাজ্যে বিভিন্ন স্থানের আঞ্চলিক প্রধানগণ স্বাধীন রাজবংশ
প্রতিষ্ঠা করে এবং আব্বাসীয় সা¤্রাজ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে শুরু করেছিল। চ. ক. ঐরঃঃর বলেন, “খিলাফত
নামক দুর্বল ব্যক্তিটি যখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়, তখন সিদেল চোরেরা দরজা খুলে সা¤্রাজ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে
বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।” এ সময় আব্বাসীয় সা¤্রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমে তাহিরী, সাফ্ফারী, সামানি, বুয়াইদ, সেলজুক,
গযনভী, ইদ্রিসী, আঘলাবী, তুলুনী, ইখ্শিদ, জঙ্গি, হামানিদ ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উদ্ভব ঘটে। এই আঞ্চলিক
রাজবংশসমূহ কালক্রমে খিলাফত থেকে অলাদা হবার কারণে কেন্দ্রিয় শক্তি দুর্বল হতে থাকে।
তুর্কী সেনাদের দৌরাত্ম্য : খলিফা আল-মুতাসিম বিল্লাহ (৮৩৩-৪২) কর্তৃক গঠিত তুর্কী সেনাবাহিনী পরবর্তীতে
আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বাহিনী ক্রমে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে, আব্বাসীয় খলিফাগণ
তাঁদের হাতের পুতুলে পরিণত হন। খলিফাদের নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষমতা তাদের হাতেই থেকে যায়।
তুর্কী সেনাদের দৌরাত্ম্যে খলিফা আল-মুতাসিম বিল্লাহ বাগদাদ হতে রাজধানী সামাররাতে স্থানান্তর করতে বাধ্য হন। কিন্তু
সেখানে গিয়েও খলিফাদের বন্দী জীবন-যাপন করতে হত। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ৫৬ বছর (৮৩৬-৯২) পর
বাগদাদে আবার রাজধানী ফিরিয়ে আনা হয়। খলিফা মুস্তাকফী (৯৪৪-৪৬) তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বুয়াইয়াদের
আমন্ত্রণ জানান। ফলে তুর্কীদের পরিবর্তে বুয়াইয়াদের প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর আবার সেলজুক ও খারিজম শাহের
আধিপত্য খলিফাদের স্বাধীনভাবে শাসন করার ক্ষমতা হরণ করে।
জাতিগত দ্ব›দ্ব : জাতিগত দ্ব›দ্ব আব্বাসীয় সা¤্রাজ্যের ভিত্তিকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে বড় কারণ ছিল। আরবীয়, অনারবীয়,
মুসলিম, নও-মুসলিম ও অমুসলিম যিম্মিদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিরাজ করছিল। আরবদের মধ্যে উত্তর আরবীয় ও
দক্ষিণ আরবীয়দের মধ্যে পুরানো বিভেদকামী মানসিকতা তখনও বজায় ছিল। পারসিক ও তুর্কী জাতি কখনও আরবীয় বা
সেমেটিক জাতির সাথে মিলেমিশে একটি অখÐ সত্তায় পরিণত হতে পারেনি। সংস্কৃতিবান পারসিকরা অপেক্ষাকৃত কম
সংস্কৃতিবান আরব শাসনের সাথে নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। ফলে জাতিগত কোন্দল আব্বাসীয়
রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে ফেলে।
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা : জাতিগত দ্ব›েদ্বর পাশাপাশি যোগ হয়েছিল ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত দ্ব›দ্ব। শিয়া, সুন্নী, খারিজি, আশারিয়া,
মুতাযিলা, গুপ্তঘাতক, কারামাতীয়, ঈসমাইলীয় ইত্যাদি ধর্মীয় মতবাদগুলি পরস্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মনোভাব
পোষণ করত। বিশেষ করে শিয়া-সুন্নী দ্ব›দ্ব আব্বাসীয় রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দেয়। ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর দ্ব›দ্ব
কখনও কখনও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিত।
ত্রæটিযুক্ত উত্তরাধিকার নীতি : উত্তরাধিকার দ্ব›দ্ব আব্বাসীয় খিলাফতের ঐক্যের প্রতি ছিল হুমকি স্বরূপ। উত্তরাধিকারীদের
অধিকার নিয়ে অন্তহীন দ্ব›েদ্বর কোন মীমাংসা হয়নি; বরং এই দ্ব›দ্ব দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আরও দুর্বল করে দিয়েছিল।
যখনই অসংখ্য ভাই-বোনদের মধ্যে একজন খলিফা হন, তখন খিলাফতের অন্যান্য দাবীদাররাও নির্বাচিত খলিফার বিপক্ষে
অবস্থান নিয়ে খলিফাকে কার্যত অকার্যকর করে ফেলত।
অর্থনৈতিক সংকট : অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও এই বংশের পতনের পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল। নতুন নতুন কর আদায় এবং কৃষি
ও শিল্পের প্রতি ক্রমাগত অবহেলার কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বারবার রক্তাক্ত সংঘর্ষে বহু
মানুষের প্রাণহানী হয়। এছাড়া প্লেগ, গুটি বসন্ত, ম্যালেরিয়া, জ্বর ইত্যাদি মহামারিতে বহু মানুষের প্রাণহানী ঘটে। আরবীয়
বর্ষপঞ্জিতে প্রথম চার হিজরি শতকে ৪০টি বড় ধরনের মহামারীর কথা লেখা আছে। জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় বহু আবাদী
জমি পতিত জমিতে পরিণত হয়। ফলে অর্থের অভাবে সেনাবাহিনীর বেতন-ভাতা প্রদান, সেনাবাহিনী সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্রের
নিরাপত্তা বিধান বিঘিœত হয়।
প্রত্যক্ষ কারণ :
হালাগু খানের আক্রমণ : ১২৫৬ সালে মোঙ্গল সেনাপতি হালাগু খান গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযানে সাহায্য
চাইলে খলিফা মুস্তাসিম (১২৪২-৫৮) তাতে কোন সাড়া দেননি। ১২৫৬ সালে হালাগু খান এককভাবে আক্রমণ চালিয়ে
গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে সমূলে ধ্বংস করেন। গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযানে সাহায্য না করার অযুহাতে এবং
খলিফা মুস্তাসিমের শিয়া উযির মুয়াহিদউদ্দীন আল-কামীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মঙ্গু খানের সেনাপতি হিসেবে হালাগু খান
বাগদাদ আক্রমণ করেন।
বাগদাদ ধ্বংসের ঘটনা ও ফলাফল :
হালাগু খানের বাহিনী ১২৫৮ সালের জানুয়ারী মাসে বাগদাদে প্রবেশ করে। বাগদাদ অবরোধ করা হয়। তিনি নির্বিচারে
বাগদাদের ২০ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে ১৬ লক্ষকে হত্যা করেন। বাগদাদ নগরীকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস্তুপে পরিণত করা হয়।
এখানে এতটাই হত্যাকাÐ চালানো হয় যে ইউফ্রেতিস ও তাইগ্রিস নদীর পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। খলিফাকে পরিবার
পরিজনসহ হত্যা করা হয়। এর ফলে মুসলিম বিশ্ব কয়েক বছরের জন্য খিলাফত শূণ্য হয়ে যায়। বাগদাদের পতনের ফলে
শুধু একটি সা¤্রাজ্যেরই পতন হয়নি; বরং একটি সভ্যতারও পতন ঘটে। কারণ সমসাময়িক বিশ্বে বাগদাদ শুধু মুসলিম
সভ্যতারই নয়, বিশ্ব সভ্যতারও প্রাণকেন্দ্র ছিল। আব্বাসীয় বংশের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আরবদের প্রাধান্য চিরতরে নি:শেষ
হয়ে যায় এবং মূল খিলাফত ইতিহাসের অবসান ঘটে।
সারসংক্ষেপ:
১২৫৮ সালে আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে। শেষ যুগের খলিফাদের অযোগ্যতা, সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব, তুর্কী
সেনাবাহিনীর উত্থান, স্বাধীন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক রাজবংশের উদ্ভব, বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্ব›দ্ব,
অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি নানা কারণে এই বংশের অধ:পতন নেমে আসে। অবশেষে মোঙ্গল সেনাপতি হালাগু খান
১২৫৮ সালে বাগদাদ নগরী ধ্বংস সাধন করেন এবং এর ফলে আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১৪
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. বাগদাদের সর্বশেষ আব্বাসীয় খলিফার নাম কী?
(ক) হারুন-অর-রশিদ (খ) আল-মুতাসিম বিল্লাহ
(গ) আল-মুস্তাসিম (ঘ) আল-মুতাওয়াক্কিল
২. বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের পতন ঘটে কত সালে?
(ক) ৭৫০ সালে (খ) ৮২০ সালে
(গ) ১২৫৬ সালে (ঘ) ১২৫৮ সালে
৩. বাগদাদ ধ্বংস করেন কে?
(ক) খলিফা মুস্তাসিম (খ) হালাগু খান
(গ) চেঙ্গিস খান (ঘ) মঙ্গু খান
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
সুলতান মাহমুদ গজনী থেকে এসে ১৭ বার ভারত অভিযান করে প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যান।
ইতিহাসের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সায়হান তার পিতার নিকট থেকে এ বিজয় অভিযান সম্পর্কে আরও জানার জন্য
বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিস্তারিত জানতে পারল।
ক. বাগদাদ নগরী কত সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়? ১
খ. বাগদাদ কীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়- ব্যাখা করুন। ২
গ. উল্লিখিত উদ্দীপকের সাথে আবাসীয় বংশের পতন বিশ্লেষণ করুন। ৩
ঘ. আব্বাসীয় বংশের পতনের ফলাফল বর্ণনা করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র