জাহিলিয়া যুগে আরব
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। মহান আল্লাহ্র মনোনীত
দ্বীন ইসলামের আবির্ভাবের প্রাক্কালে আরবসহ সমগ্র বিশ্ব ছিল জাহিলিয়ার ঘোর তমাসায় আচ্ছন্ন। এ যুগে আইন-কানুন,
নীতি নৈতিকতা, শিক্ষাসংস্কৃতি, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি, মানবতাবোধ, ধার্মিকতা, শুদ্ধতা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক
ব্যবস্থায় কোনো সুষ্ঠু নিয়ম-নীতি ছিল না। সর্বক্ষেত্রেই সর্বগ্রাসী বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য বিরাজ করছিল। ইসলামের আবির্ভাবে
এ ভুবনব্যাপী অমানিশার অবসান ঘটে এবং সত্যিকার সুন্দর প্রভাতের আলোকচ্ছটায় আরবসহ বিশ্বজাহান উদ্ভাসিত হয়ে
ওঠে।
মুখ্য শব্দ জাযিরাতুল আরব, আরবে বায়েদা, আরবে আরবা, হিজায ও যাযাবর
আরবের অবস্থান ও আয়তন
ইসলামের জন্মভূমি আরব দেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম উপদ্বীপ। এটি এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে
অবস্থিত। আরবের উত্তরে সিরিয়ার মরুভূমি, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বে পারস্য উপসাগর এবং পশ্চিমে
লোহিত সাগর রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে এটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের সংযোগস্থলে
অবস্থিত। এদেশের মাটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা। তাই আরবের মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ বা আদি নগরী বলা হয়েছে।
তদানিন্তন আরবের আয়তন ছিল ১০,২৭,০০০ বর্গমাইল। আয়তনে এটি ইউরোপের একচতুর্থাংশ এবং আমেরিকার একতৃতীয়াংশ। উত্তর আরবের সামান্য কিছু স্থানে মরূদ্যান আছে, সেখানে লোকবসতি গড়ে ওঠে। এছাড়া প্রায় সমগ্র আরব
অঞ্চল মরুময়। হিজায, নজ্দ্ এবং আল্-হাস্সা প্রদেশ নিয়ে আরব দেশ গঠিত। হাদ্রামাউত, ইয়েমেন ও ওমান নিয়ে
দক্ষিণ আরব গঠিত। এ এলাকা উর্বর এবং প্রাচীনকালে এটিকে অৎধনরধ ঋবষরী বা সৌভাগ্য আরব বলা হতো।
আরবের নামকরণ
আরবকে কেন আরব নামকরণ করা হয়েছে
সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন
মতামত রয়েছে। প্রসিদ্ধ কয়েকটি মতামত
নিম্নে বর্ণনা করা হলো১. আরব শব্দটির অর্থ হলো ‘পাÐিত্যপূর্ণ
ও সুন্দর ভাষায় কথা বলা’। যেহেতু
আরবের অধিবাসীরা নিজেদের ভাষা
ও পাÐিত্যের সম্মুখে সমগ্র পৃথিবীর
লোককে ‘আজমী’ (মূক, বোবা) বলে
ভাবতে, এজন্য তারা নিজেদের আরব
বা আরবি এবং পৃথিবীর অন্যান্য
জাতিসমূহকে আজম বা আজমি অর্থাৎ
কথা বলতে অক্ষম বলে মনে করতো।
ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি
তাদের আরব বা আরবি নাম ডাকতে
শুরু করে। ফলে তারা ‘আরব’ নামে
পরিচিতি লাভ করে। চিত্র: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সময় আরব
২. ‘আরব’ শব্দটি ‘আল-আরবাত’ু থেকে নির্গত হয়েছে যার অর্থ হলো ‘লতাগুল্মহীন মরুভূমি’। যেহেতু এ অঞ্চল
বৃক্ষলতাহীন মরুভূমি। তাই এ অঞ্চলটিকে আরব নামকরণ করা হয়েছে।
আবহাওয়া
আরব দেশের তিন দিক সাগরবেষ্টিত থাকার কারণে একে আরব উপদ্বীপ বা ‘জাযিরাতুল আরব’ বলা হয়। আরবে কোনো
নদ-নদী নেই। অধিকাংশ অঞ্চলের আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক। উচ্চভূমিতে গরমের সময় রাত নাতিশীতোষ্ণ হয়ে থাকে।
শীতকালে কোনো কোনো সময় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। আরবের পূবালি হাওয়া অতীব আরামদায়ক।
আরবের প্রাচীন কবিগণ তাঁদের রচিত কবিতায় পুবালি হাওয়ার প্রশংসা গেয়েছেন। আরবের একতৃতীয়াংশ মরুময় প্রকৃতির
রুদ্রলীলাস্থল এবং মনুষ্য বসবাসের সম্পূর্ণ অযোগ্য, শুষ্ক ও নিষ্করণ রৌদ্রতাপ পীড়িত, বৃক্ষলতাদিশূন্য এবং সেখানে লুহাওয়া প্রবাহিত হয়। তবে ওমান, ইয়েমেন, তায়েফ ও মদিনায় বছরে দু’বার বৃষ্টিপাত হয়। এ সকল অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন
ও আবহাওয়া মোটামুটি ভালো।
উৎপন্ন দ্রব্য : আরব দেশের উৎপন্ন দ্রব্যাদির মধ্যে প্রধান হলো খেজুর। তৎকালীন আরবে খেজুর গাছকে ছঁববহ ড়ভ
ঃযব ঃৎববং বা ‘গাছের রাণী’ বলে অভিহিত করা হতো। এ গাছ ধনী-দরিদ্র সকলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিল। খেজুর
ব্যতীত আরবদের জীবন কল্পনাই করা যেত না। আরবের উপকূল এলাকায় ফলমূল ও শাকসবজি জন্মাত। সেকালে
ইয়েমেন সর্বাপেক্ষা উর্বর প্রদেশ ছিল। তথায় গম ও কফি অত্যধিক ফলত। আম্মান প্রদেশের কোনো কোনো এলাকায়
ধানেরও আবাদ হতো। হাদরামাউত ও মিহ্রা নামক স্থানদ্বয় গুল এবং ধুনট গাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। আরব
বিস্তীর্ণ মরুভূমির দেশ হলেও এর বিভিন্ন স্থানে সবুজ-শ্যামল দৃশ্য চোখে পড়ত। পবিত্র কুরআনে ইবরাহীম (আ.)-এর
প্রার্থিত দোয়া-“হে আমার প্রভু! তুমি এ (আরব) নগরীকে নিরাপত্তার স্থান বানিয়ে দাও এবং এর অধিবাসীদের ফলফলারি
থেকে রিযিক দান কর।”(সুরা বাকারাহ,২:১২৬)
জীবজন্তু : অনেক প্রাচীনকাল থেকে আরবে উট, ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল ও দুম্বা গৃহপালিত জন্তু হিসেবে সমাদৃত ছিল।
আরবের বন্য জন্তুর মধ্যে হায়েনা, বাঘ, সরীসৃপ ও খেঁকশিয়াল প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। কবুতর, বাজপাখি, ঈগল,
হুদহুদ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পাখিও আরবে বিদ্যমান ছিল। জীবজন্তুর মধ্যে উট এবং বৃক্ষের মধ্যে খেজুর গাছ
আরববাসীর নিকট অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। মরুজীবনের একমাত্র সহায়-সম্বল ছিল উট। উট তাদের নিকট বা ‘মরুভূমির জাহাজ’ নামে পরিচিত ছিল। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি তাঁর গ্রন্থে এ
সম্পর্কে বলেন-.
আরব জাতি
আরব ভূমির প্রাচীন জাতিসত্তা সম্পর্কে কোনো সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে একথা ঠিক, বিভিন্ন সময়ে
আরব দেশে বিভিন্ন জাতির লোক বসবাস করতো। আরব উপদ্বীপের আদিম অধিবাসীদের সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য নিরূপণ
করা এখনো সম্ভব হয়নি। স্বকীয়তা এবং স্বাতন্ত্র্যবোধে উদ্দীপ্ত আরব জাতি প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. অধনা লুপ্ত
আরবে বায়িদা, ২. প্রকৃত আরব বা আরবে আরিবা ও ৩. আরবে মুস্তারিবা।
আরবে বায়িদা : আরবের সবচেয়ে প্রাচীন অধিবাসীদের আরবে বায়িদা বল হয়। বায়িদা বা বাদিয়া অর্থ জঙ্গল।
বায়িদাবাসীদের বেদুইন বলা হয়। তারা আরবের এত প্রাচীন বাসিন্দা, যাদের কোনো নিদর্শন এবং অবস্থার কোনো বিবরণ
ঐতিহাসিক গ্রন্থে পাওয়া যায় না। শুধু কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফ এবং আরবদের কিছু কবিতা ও পুরনো
ধ্বংসাবশেষ থেকে তাদের অস্তিত্বের যৎসামান্য ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন- আদ (অধফ), সামুদ (ঝধসঁফ), তাসম
(ঞধংস), জাদিস (ঔধফরং), আমালেকা (অসষবশধ), প্রভৃতি প্রাচীন আরব গোত্রগুলো। বিভিন্ন সময় এ গোত্রগুলোর উত্থান
ঘটেছিল, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন ও বিভিন্ন ধরনের পাপাচারের কারণে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রাচীন
আরবের এ সকল ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহকে বলা হয় আরবে বায়িদা।
আরবে আরিবা (প্রকৃত আরব বা বনু কাহতান) : আরবে আরিবা (অর্থ- প্রকৃত আরব। আরবে বায়িদা
জাতির বিলুপ্তির পর যারা প্রথম আরব দেশে আবাসস্থল গড়ে তোলে তাদের আরিবা বল হয়। তারা নিজেদের ইয়ারুব
ইবনে কাহতান বা কাহতানের বংশধর বলে মনে করতো। তারা ইয়েমেন বা দক্ষিণ আরবে বাস করতো বলে তাদের
ইয়েমেনিও বলা হতো।
আরবে মুস্তারিবা : হযরত ইবরাহীম এর সময় থেকে বিবি হাজিরা (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) মক্কায় বসবাস আরম্ভ করেন।
ইতোমধ্যে যমযম কূপের সৃষ্টি এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.)-এর নিরলস প্রচেষ্টায় পবিত্র কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণের
মাধ্যমে নতুন নতুন বসতি স্থাপিত হতে থাকে। অন্যদিকে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর সন্তান-সন্ততিদেরও বংশ বৃদ্ধি পেতে
থাকে। এরাই আরবে মুস্তারিবা নামে অভিহিত। আদনান নামক হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর এক বংশধর মুস্তারিবা গোত্রের
প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। হিজায, নজ্দ্, পেত্রা ও পালমিরা অঞ্চলে বসবাসকারী মুস্তারিবা গোত্রের নিযারি (ঘরুধৎর) শাখা থেকে
মুহাম্মদ (সা.)-এর কুরাইশ বংশের উদ্ভব হয়।
অধিবাসীদের শ্রেণিবিভাগ
ভূপকৃতির ভারতম্য অনুসারে আরবের অধিবাসীদের দু’শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা- শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ও মরুবাসী
যাযাবর।
ক.শহরবাসী (ঞড়হিংসবহ) : আরবের উর্বর তৃণ অঞ্চলগুলো স্থায়ীভাবে বসবাসের উপযোগী ছিল বিধায় সেখানে
অসংখ্য শহর জনপদ গড়ে ওঠে। স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় ছিল কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য
প্রভৃতি। বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের ফলে এরা মরুবাসী বেদুইনদের তুলনায় অধিকতর রুচিশীল ও মার্জিত স্বভাবের
ছিল। মরুবাসী আরবদেও অনেকেই যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে শহরে বসবাস করে। অন্যদিকে দারিদ্র্যের
কষাঘাত সহ্য করতে না পেরে শহরের কিছুসংখ্যক স্থায়ী বাসিন্দাও বাধ্য হয়ে যাযাবরবৃত্তি গ্রহণ করে।
খ.মরুবাসী (ঘড়সধফ) : আরবের অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল স্বাধীনচেতা, বেপরোয়া, দুর্ধর্ষ ও মরুবাসী বেদুইন।
বেদুইনগণ জীবনধারণের জন্য মরুভূমির সর্বত্র ঘুরে বেড়াত এবং তৃণের সন্ধানে এক চারণভূমি থেকে অন্য চারণভূমিতে
গমণ করতো। তাদের গৃহ ছিল তাঁবু, আহার্য ছিল উটের মাংস, পানীয় উট ও ছাগলের দুধ, প্রধান জীবিকা লুটতরাজ।
কঠোর জীবনসংগ্রামে লিপ্ত যাযাবররা অন্যদের ধনসম্পদ লুণ্ঠন করতে বাধ্য হতো। কখনো আবার তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে
বিত্তশালীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো। হিট্টি বলেন, যাযাবরবৃত্তি একটি বিজ্ঞানসম্মত জীবনব্যবস্থা।
প্রাচীন আরবের ভৌগোলিক গুরুত্ব
কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ আরব উপদ্বীপ যুগ যুগ ধরে বিশ্বের নাভিকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
আরবের পশ্চিমে লৌহিত সাগর ও সুয়েজ যোজক। পূর্বে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগর। দক্ষিণে ভারত মগাসাগর।
উত্তরের সীমারেখা আলেপ্পো রাজ্য ও ফোরাত নদী। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে আরব উপদ্বীপ এশিয়া, আফ্রিকা ও
ইউরোপ মহাদেশের মিলন স্থলে অবস্থিত। এশিয়ার মূল ভূখÐ ও আফ্রিকা মহাদেশের মাঝখানে অবস্থিত এ অঞ্চল ইউরোপ
মহাদেশ থেকেও বেশি দূরে নয়। তাই এ উপদ্বীপকে যথাযথভাবেই তিন মহাদেশের মিলনকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা
হয়। অতীতকাল থেকেই ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে এ অঞ্চল বহুজাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের চলাচল পথ বা
ক্যারাভান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উত্তর আরবের সামান্য কিছু স্থানে মরূদ্যান রয়েছে, সেখানে লোকবসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়া প্রায় সমগ্র আরব অঞ্চল
মরুময়। হিজায, নজদ এবং আল আহসা প্রদেশ নিয়ে আরব দেশ গঠিত। বর্তমানে সৌদি রাজবংশ কর্তৃক আরবের
শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। হাদরামাউত, ইয়েমেন এবং ওমান নিয়ে দক্ষিণ আরব গঠিত। আরব ভূখÐের এক-তৃতীয়াংশ
মরুময়। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের মিলনকেন্দ্র হিসাবে পরিগণিত হলেও
এদেশ যেন সমগ্র বিশ্ব হতে বিচ্ছিন্ন। উত্তর-ভাগে ‘নুফুদ’ মরুভূমি এবং নুফুদ হতে আরম্ভ করে দক্ষিণ ভাগ পর্যন্ত প্রায়
৬০০ মাইল এলাকা জুড়ে রয়েছে আরবের বৃহত্তম মরুভূমি ‘আল-দাহনা’ [আদ-রার, আল-খালি]।
আরবের প্রদেশসমূহ : ভৌগোলিক পরিবেশ বিবেচনায় আরবদেশ পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. হিজায, ২. নজদ, ৩.
ইয়ামেন, ৪. তিহামা, ৫. আরূজ।
হিজায : লৌহিত সাগারের পূর্বকূল ঘেঁষে সিরিয়া সীমান্ত হতে ইয়ামেন পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে হিজায বলে। এ হিজাযই
ইসলামের কেন্দ্রস্থল। এতে মক্কা, মদিনা তায়েফ, জেদ্দা প্রভৃতি প্রসিদ্ধ শহরগুলো অবস্থিত। মক্কা, মদিনা ও তায়েফের
সাথে রাসূল (সা.) এর গভীর সম্পর্ক ছিল। এই হেজাজের পবিত্র ভূমির বরকতে আরবগণ বিশ্বের ইতিহাসে অতূলনীয়
মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। জিদ্দা বিখ্যাত নদীবন্দর, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পানি পথে আগত সম্মানিত
হাজীগণ অবতরণ করেন। হিজায শব্দের অর্থ হলো- পৃথক ও বিরত করা। যেহেতু হিজায অঞ্চলটি নজদ ও তিহামাকে
মধ্যে পৃথক করেছে এজন্য এটি হিজায নামে অভিহিত হয়েছে। হিজাযের পশ্চিমাংশে লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী
এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফসলাদি উৎপন্ন হয়।
তিহামা : তেহামা আরবি শব্দটি ‘তাহমুন’ হতে নির্গত। অর্থ হলো প্রচÐ গরম বা তাপ। এ প্রদেশে অধিক গরম পড়তো
বলে একে তিহামা নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ প্রদেশটি লোহিত সাগরের তীর হতে সারাত পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরূজ : আরূজ প্রদেশটি নজদের দক্ষিণ হতে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। ইয়ামামা, বাহরাইন, উম্মান ও হাদরামাউত
ইত্যাদি এ প্রদেশে অন্তর্ভূক্ত।
ইয়ামেন : হিজায থেকে আদন (অফবহ) পর্যন্ত লোহিত সাগরের কিনারা বেয়ে বিস্তৃত অঞ্চলকে ইয়ামেন বলে। এর উত্তরে
হাদরামাউত, পূর্বে উম্মান এবং বাহরাইন, পশ্চিমে লোহিত সাগর অবস্থিত। এটি আরবের সর্বাধিক উর্বর ও চাষাবাদযোগ্য
প্রদেশ। অতীতে এটি উন্নত ও উর্বর অঞ্চল হিসাবে বিখ্যাত ছিল। ‘ইয়ামেন’ আরবি শব্দ ‘ইয়ামেন’ (দক্ষিণ) হতে নির্গত।
এটি আরব ভূখÐ এবং কা’বা ঘরের দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ার কারণে এ নামকরণ করা হয়।
নজদ : মধ্য আরবে ইয়ামেন হতে ইরা পর্যন্ত যে পাহাড়টি চলে গেছে তার পূর্ব অংশকে নজদ বলে। নজদের রাজধানী
রিয়াদ। এটা হিজাযের পূর্বে এবং সিরিয়া মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত। উঁচু ভূমিকে নজদ বলা হয়। এ অঞ্চলটি পার্শ্ববর্তী
হিজায হতে উঁচু বলে একে নজদ বলে। এই প্রদেশের উত্তরাঞ্চলেই সংগঠিত হয়েছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ ‘দাহিস’ ও ‘বাসুস্’
যুদ্ধ। প্রতিটি যুদ্ধই প্রায় চল্লিশ বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।
আরবের অক্ষাংশ ও
দ্রাঘিমাগত অবস্থান কত?
আরবের কয়েকটি প্রাচীন
অধিবাসীর নাম উল্লেখ
করুন।
প্রাচীন আরবরা
কয়ভাগে বিভক্ত?
‘জাজিরাতুল আরব’ অর্থ কী?
সারসংক্ষেপ :
অনুর্বর মরুভূমি ও সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে এ দেশটি কখনো আক্রমণকারীদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়নি। তবে
সর্বশেষ রাসুলের আগমনের প্রতীক্ষায় অনেকের ন্যায় ইহুদী-খ্রীস্টানরাও আরব ভূমিতে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। প্রাচ্য,
প্রাশ্চাত্য ও উত্তর দিক থেকে আগত সকল বাণিজ্যিক পথগুলো আরব ভূ-খÐের সাথে মিলিত হয়েছিল। ফলে আরব
ভূখÐ বিশেষত মক্কা, জিদ্দা, তায়িফ, মদীনা, ইয়ামবু ও দুমাতুল জান্দালের সাথে ভারত, চীন, ইরাক, মিসর, রোম ও
ইথিওপিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরবকে বিশ্ব সভ্যতার মিলনস্থলে পরিণত করে। ভৌগলিক পরিবেশ ও বসবাসকারী
জনগোষ্ঠির একটি চিত্র সামনে থাকলে আরব ভূমিতে রাসূলের আগমনের পরিপাশ্বিক বিষয়াবলী সম্পর্কে সাম্যক ধারণা
লাভ করা সহজ হবে।
১। ‘উম্মুল কুর’া বলা হয় কোন্ স্থানকে?
(ক) আরব (খ) মক্কা (গ) মদিনা (ঘ) বসরা
২। মুস্তারিবা গোত্রের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
(ক) কাব (খ) মুররা (গ) মা’আদ (ঘ) আদনান
৩। আরবে খেজুর গাছকে ছঁববহ ড়ভ ঃযব ঃৎববং বলে অভিহিত করার কারণর. এ গাছ ধনী-দরিদ্র সকলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিল;
রর. খেজুর ব্যতীত আরবদের জীবন কল্পনাই করা যেত না; ররর. খেজুর আরবদের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য;
নিচের কোন্টি সঠিক?
(ক) র. (খ) রর (গ) ররর (ঘ) র, রর ও ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেদে সম্প্রদায়কে প্রায়ই দেখা যায়। তারা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নৌকায় ঘুরে বেড়ায়।
নৌকা-ই হচ্ছে তাদের ঘর বাড়ী, সংসার সবকিছু। সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখানো, বিভিন্ন ঔষধি গাছের শিকড় বিক্রি
ইত্যাদি হচ্ছে তাদের পেশা। তারা নিদ্দিষ্ট স্থানে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ানোই তাদের জীবন।
(ক) জাজিরাতুল আরব অর্থ কী? ১
(খ) মরুভূমির জাহাজ বলতে কী বুঝায়? ২
(গ) উদ্দীপকের বেদে সম্প্রদায়ের সাথে প্রাক ইসলামী আরবের কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য খুজে পাও ? ব্যাখ্যা করুন। ৩
(ঘ) আরবের অধিবাসীদের জীবন যাত্রার উপর ভৌগলিক প্রভাব বিশ্লেষণ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র