ফাতিমিদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃষ্ঠপোষকতা ও জ্ঞানের জোতির্বিজ্ঞান, চক্ষু ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁদের অবদান আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ দারুল্ হিক্মাহ্, আল-আযিযের লাইব্রেরি, আলী বিন ইউসুফ, ইবনে হায়সাম, আল- বাব
আল-জাওয়িলা, বাব আল-নাসর ও বাব আল-ফুতুহ্
৯০৯ সালে উত্তর আফ্রিকায় ফাতিমি বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথমত তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শের
উপর ভিত্তি করে। পরবর্তীতে তাদের অস্তিত্বের জন্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাÐ পরিচালনাও তাদের
নিকট মুখ্য হয়ে ওঠে। পাশাপাশি প্রথম দিকের খলিফারা তাদের সাংস্কৃতিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ৯৬৯ সালে
মিসর জয় এবং ৯৭৩ সালে কায়রোতে রাজধানী স্থাপনের ফলে একই সময় বাগদাদ, কর্ডোভা ও কায়রো-এই ত্রিমাত্রিক
ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠে। কায়রো অন্যান্য দিক থেকে বাগদাদ এবং কর্ডোভার সমকক্ষ কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে
এগিয়ে থাকলেও সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বাগদাদ এবং কর্ডোভা থেকে পিছিয়ে ছিল। এর প্রধান কারণ
হল ফাতিমিরা তাদের রাজদরবারে জ্ঞানী-গুণীদের আকর্ষিত করতে পারেনি। কারণ ফাতিমি রাজদরবারে তাদের জীবনের
নিরাপত্তা কম ছিল। বিশেষ করে ফাতিমিদের শেষ যুগে এই ব্যাপারটি আরও বেশি প্রযোজ্য ছিল। ফাতিমি শাসনামলে
পারসিক সংস্কৃতির প্রভাবই ছিল বেশি।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃষ্ঠপোষকতা : ফাতিমিদের মধ্যে যিনি জ্ঞানের প্রথম এবং উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাঁর নাম ইবনে
কিল্লিস। তিনি একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে প্রতি মাসে ১ হাজার দিনার খরচ করা হত। প্রথম দিকের ফাতিমি
খলিফারা সংস্কৃতি-মনস্ক ছিলেন। খলিফা আল-আযিয নিজে একজন কবি এবং বিদ্যুৎসাহী ছিলেন। তিনি আল-আযহার মসজিদকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
দারুল্ হিক্মাহ্ : খলিফা আল-হাকিম ১০০৫ সালে শিয়া মতবাদ প্রচার ও শিক্ষার জন্য দারুল্ হিক্মাহ্ বা দারুল্ ইলম্
প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের জন্য তিনি একটি তহবিল তৈরি করেন।
এই তহবিল থেকে কিছু অর্থ পাÐুলিপির প্রতিলিপি তৈরি, সংস্করণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করা হত। এই
প্রতিষ্ঠানটি রাজপ্রাসাদের সাথে যুক্ত ছিল। এখানে পাঠাগার ছিল এবং সভার জন্য কক্ষ বরাদ্ধ ছিল। ইসলামী বিষয়সহ
জোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদি চর্চা করা হত এখানে। ১১১৯ সালে প্রচলিত ধর্ম বিরোধিতার অভিযোগে উযির মালিক
আল-আফজাল এটিকে বন্ধ করে দেন। পরে আবার চালু হয় এবং আইয়্যূবীদের উত্থান পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব ছিল।
রাজকীয় লাইব্রেরি : খলিফা আল-আযিযের সময় রাজপ্রাসাদে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়। সে সময় এই গ্রন্থাগারে ২
লক্ষ গ্রন্থ ছিল। সেখানে ছিল ব্যাখ্যাসহ কুরআনের বিভিন্ন গ্রন্থ। ইবনে মুকলা এবং অন্যান্য বিখ্যাত লিপিকাররা পাÐুলিপি
লিখতেন। আল-আযিয তাঁর এই গ্রন্থাগারের জন্য তাবারীর স্বাক্ষরিত তাঁর ইতিহাস বইয়ের একটি কপি সংগ্রহ করেন।
১০৬৮ সালে আল-মুস্তান্সিরের সময় তুর্কীরা কায়রোতে লুটতরাজ চালায় এবং তারা এই লাইব্রেরি থেকে মূল্যবান
পাÐুলিপি ২৫ টি উটের পীঠে চাপিয়ে নিয়ে যায়। এই মূল্যবান পাÐুলিপিগুলো তুর্কী অফিসাররা তাদের বাড়িতে আগুন
জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করেছিল। এসব বইয়ের মলাট তুর্কী অফিসাররা তাদের ক্রীতদাসদের জুতা মেরামতের কাজে
ব্যবহার করত। আল-মুস্তানসিরের বংশধররা এই লাইব্রেরির জন্য নতুন বই সংগ্রহ করেছিল। সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী
যখন মিসরে আইয়্যূবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন তখনও সেখানে লক্ষাধিক বই ছিল। সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী অন্যান্য সম্পদের
মত এই পাঠাগারের কিছু বই তাঁর লোকদের মধ্যে বিতরণ করেন।
জোতির্বিজ্ঞান : আল-হাকিম জ্যোতিষশাস্ত্রে আগ্রহী ছিলেন। তিনি জোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য আল-মুকাত্তাম নামক পর্বতে
একটি মানমন্দির স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সময়ে আলী বিন ইউসুফ মিসরের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জোতির্বিদ ছিলেন।
চক্ষু ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: ফাতিমিদের একজন বিখ্যাত চক্ষু বিজ্ঞানী ছিলেন ইবনে আল-হায়সাম। চক্ষু বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি
গণিত, জোতির্বিজ্ঞান, দর্শন ও চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর চক্ষু চিকিৎসা সংক্রান্ত বিখ্যাত
গ্রন্থের নাম ‘কিতাবুল মানাযির’। মধ্যযুগের চিকিৎসা সংক্রান্ত অধিকাংশ রচনাই ইবনে আল-হায়সামের কে ভিত্তি করে রচিত হয়। রজার বেকন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও কেপলারের উপর ইবনে আল-হায়সামের
প্রভাব সুস্পষ্ট। আল-হাকীমের আমলে আম্মার ইবনে আলী আল-মাওসিল নামক চক্ষুবিদ ‘আল-মুন্তাখাব ফি ইয়াজ আলআইন’ /চক্ষু চিকিৎসার উপর নির্বাচিত সামগ্রী) নামক একখানা
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি নলের সাহায্যে চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের বর্ণনা দিয়েছেন এবং এই নল তিনিই
আবিষ্কার করেছিলেন। মুহম্মদ আল-তামিমি চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি জেরুজালেমে জন্মগ্রহন করেন এবং ৯৭০ সাল নাগাদ মিসরে আগমন করেন।
শিল্পকলা ও স্থাপত্য : ফাতিমিরা শিল্প ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অবদান রেখেছিল। ফাতিমি যুগের স্থাপত্যের যেসব
নিদর্শন আজও রয়েছে এর মধ্যে প্রাচীনতম হল আল-আযহার মসজিদ। ৯৭২ সালে জওহর এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
৯৯০ সালে আল-আযিয আর একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন এবং ১০১২ সালে আল-হাকিম এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত
করেন। আল-হাকিমের এ মসজিদটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ১১২৫ সালে একজন আর্মেনীয় খ্রিস্টান স্থপতি কর্তৃক আলআকমার মসজিদ নির্মিত হয়। ১১৬০ সালে নির্মিত আল-সালিহ ইবনে রুজ্জিক মসজিদ গাত্রের শিল্প ও লিপিকলা
ফাতিমিদের শিল্পকলার খ্যাতি বৃদ্ধি করেছিল। ১০৮৫ সালে মসজিদের সাথে মসজিদ-প্রতিষ্ঠাতার কবর তৈরির প্রথা চালু
হয়। আল-মুকাত্তাম পর্বতে বদর আল-জামালী প্রতিষ্ঠিত সমাধি-মসজিদটি এ ধারার প্রথম মসজিদ। এ যুগের শিল্পশোভার
স্বাক্ষর বহনকারী তিনটি তোরণ আজও বর্তমান। এগুলো হল বাব আল-জাওয়িলা, বাব আল-নাসর ও বাব আল-ফুতুহ।
এডেসার স্থপতিরা এগুলো নির্মাণ করেছিলেন। কায়রোর এই তোরণগুলোর ধ্বংসবশেষ ফাতিমি মিসরের গৌরবের উল্লেখযোগ্য সাক্ষী।
নকশা ও খোদাই শিল্প : ফাতিমি যুগের কাঠের উপর খোদাইয়ের নানাবিধ কাজ রয়েছে। এতে নানা ধরনের পশুপাখির
নমুনা খোদাই করা হয়। ব্রোঞ্জের তৈরি আয়না ও হাতলওয়ালা জগের উপরও এ ধরনের কাজ দেখা যায়। বস্ত্র শিল্পে
ইরানের প্রভাব ছিল। এ যুগে মিসরের বস্ত্রে জন্তুদের নক্শা করা থাকত। সিরামিকের ক্ষেত্রেও মিসরীয় শিল্পিরা ইরানী
শিল্পশৈলীকে অনুসরণ করে। ঐতিহাসিক মাক্রিযি ফাতিমিদের শিল্প-সম্পদের তালিকায় মৃৎ শিল্প ও ধাতব সামগ্রীর কথা
উল্লেখ করেছেন। মিসরের তৈরী মাটির জিনিস এতই সুক্ষ¥ এবং স্বচ্ছ ছিল যে এর ভিতর দিয়ে হাত দেখা যেত।
এছাড়া ফাতিমি যুগের একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ইবনে সালমা আল-কুদাই, যিনি ১০৬২ সালে ফুস্তাতে মারা
যান। ফাতিমিগণ একদিকে কর্ডোভার উমাইয়া এবং অন্যদিকে বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের মধ্যস্থিত হওয়ায় ক্রমাগত
আক্রান্ত হবার ভীতি জ্ঞান-সাধকদের কায়রোমূখী হওয়া থেকে অনেকটা বিরত রেখেছিল। তদুপরি জোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা
বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও স্থাপত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর দেখতে পাওয়া যায়।
সারসংক্ষেপ:
ফাতিমিগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রথম দিকের খলিফাগণ তাদের সাংস্কৃতিক
মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। জ্ঞান চর্”ার জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। খলিফা আল-আযিয আল-আযহার
মসজিদকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা আল-হাকিম প্রতিষ্ঠিত দারুল্ হিক্মাহ্ ছিল জ্ঞান চর্চার
একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। খলিফা আল-আযিযের সময় রাজপ্রাসাদে একটি পাঠাগার জোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য একটি
মানমন্দির স্থাপন করা হয়। তার আমলে চিকিৎসা বিদ্যা, স্থাপত্য শিল্প ও সাহিত্যে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. ফাতিমিদের রাজধানী-
(ক) বাগদাদ (খ) কায়রো
(গ) কর্ডোভা (ঘ) দামেস্ক
২. আল-মুকাত্তাম পর্বতে একটি মানমন্দির স্থাপন করেন কে?
(ক) আল-মাহ্দী (খ) আল-আযিয
(গ) আল-মুইয (ঘ) আল-হাকিম
৩. আল-আযহার মসজিদকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন কোন্ খলিফা?
(ক) আল-মাহ্দী (খ) আল-আযিয
(গ) আল-মুইয (ঘ) আল-হাকিম
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বেলাল ও হেলাল পরস্পর যদু বংশের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান সম্পর্কে আলোচনা করার সময় উল্লেখ করে যে, এ বংশের
প্রথম দিকের শাসকরা সাংস্কৃতিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জ্ঞান ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় তাঁদের প্রতিভা বিকশিত হয়।
ক. ফাতিমি জ্ঞান-বিজ্ঞানে কোন্ কোন্ খলিফার অবদান বেশি? ১
খ. আল-আযিযের রাজকীয় লাইব্রেরির পরিচয় দিন। ২
গ. উদ্দীপকে ঊল্লিখিত যদু বংশ সদৃশ ফাতিমি বংশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান আলোচনা করুন। ৩
ঘ. শিল্পকলা, স্থাপত্য ও কারুকার্য শিল্পে ফাতিমিদের অবদান উল্লেখ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]