মুখ্য শব্দ নজমুদ্দিন আইয়্যূব, কুরুন হামার যুদ্ধ, হিত্তিনের যুদ্ধ, আস্-সালিহ, তুরান শাহ
ও শাজারুদ্বার
দ্বাদশ শতকে ইউরোপের ক্রুসেডারদের উপর্যপুরি আঘাতে পশ্চিম এশিয়া হতে ইসলাম যখন রাজনৈতিক শক্তি
হিসেবে নিশ্চিহ্ন হবার পথে তখন সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী ইসলামের গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিশেষ
ভূমিকা পালন করেন। তাঁর উত্থানের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ফাতিমিদের পতন ঘটে, অন্যদিকে তেমনি আইয়্যূবী
বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। এ বংশের মোট ৮ জন শাসক শাসন করলেও সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীই ছিলেন এ বংশের শ্রেষ্ঠ ও
সফল শাসক।
সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর পরিচয় : গাজী সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী ১১৩৮ সালে তাইগ্রীস নদীর তীরে তিকরিত নামক স্থানে
এক কুর্দি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পূর্ণ নাম সালাহ্উদ্দিন ইউসূফ বিন আইয়্যূব। ‘সালাহ্উদ্দিন’ শব্দের অর্থ
‘সততার প্রতি বিশ্বস্ত’। পিতা-মাতা ছিলেন কুর্দি। পিতা নজমুদ্দিন আইয়্যূব ইমামুদ্দিন জঙ্গী কর্তৃক বালাবাক্ক-এর সেনাপ্রধান
নিযুক্ত হন। সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর বাল্য, কৈশর ও প্রাথমিক দিনগুলি কেটেছে সিরিয়ায়। ১১৬৪ সাল পর্যন্ত জনসমক্ষে
তিনি পরিচিতি পাননি। ১১৬৪ সালে চাচা শিরকুহের সঙ্গে অনিচ্ছা সত্তে¡ও মিসরে যেতে বাধ্য হন। এটাই তাঁর প্রথম
অভিযান, আর এর মাধ্যমেই তাঁর সৌভাগ্যের সূচনা হয়। এখানে এসে তিনি দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন: ১. শিয়া
সম্প্রদায়ের পরিবর্তে সুন্নী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ২. ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে ফ্রাঙ্কদের প্রতিহত করা। বিশেষ করে ক্রুসেডারদের
বিরুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য লাভ করে তিনি গাযী উপাধি লাভ করেন এবং পরবর্তী ইতিহাসে তিনি একজন যোদ্ধা হিসেবে
খ্যাতি অর্জন করেন।
আইয়্যূবীয় বংশের উত্থান : ফাতিমি খলিফা আল-আদিদের (১১৬০-৭১) উযির সাওয়ার তুর্কীদের সাহায্যে উযির পদ
লাভ করলেও পরবর্তীতে ফ্রাঙ্কদের সাহায্যে তুর্কিদের সিরিয়ায় তাড়িয়ে দেন। তাদের প্রতিহত করার জন্য বিরাট অংকের
অর্থের বিনিময়ে তিনি ফ্রাঙ্কদের মিসরে আহŸান জানান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা। স্বয়ং খলিফা ও নগরের অভিজাত
রমণীদের আমন্ত্রণে সিরিয়ার নুরুদ্দীন জঙ্গি তাঁর সেনাপতি র্শিকুহ এবং সালাহ্উদ্দিনকে ফ্রাংকদের বিতাড়নের জন্য প্রেরণ
করেন। ১১৬৯ সালে মিসরে তুর্কী সেনারা বিজয়ীবেশে প্রবেশ করে। সালাহ্উদ্দিন এবং র্শিকুহের গতি রোধ করা তাদের
পক্ষে সম্ভব হয়নি। র্শিকুহ্কে উযিরের পদে নিয়োগ করা হয়। ২ মাস পরে র্শিকুহ্ মৃত্যুমূখে পতিত হলে র্শিকুহ্-এর
ভাইপো সালাহ্উদ্দিন উযির পদ গ্রহণ করেন। খুতবায় আব্বাসীয় খলিফার নাম পাঠ করা হয়। ১১৭১ সালে সর্বশেষ
খলিফা আল-আদিদের মৃত্যু হলে সালাহ্উদ্দিন আব্বাসীয়দের অনুকূলে আইয়্যূবী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ফাতিমি খলিফার
নাম বাদ দিয়ে খুতবায় আব্বাসীয় খলিফার নাম পাঠ করা হয়। এই পরিবর্তন ঘটেছিল বিনা প্রতিবাদেই এবং এর ফলে
আলোড়ন বা হৈ-চৈ এত কম হয়েছিল যে চ. ক. ঐরঃঃর (গ্রন্থ: ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব অৎধনং) বলেন,“এ নিয়ে দুটো ছাগলেও
গুঁতোগুতি হয়নি।” ১১৭৪ সালে নুরুদ্দীন জঙ্গীর মৃত্যু হলে তিনি সমগ্র মিসর, নুবিয়ার কিয়দংশ, হিজায ও ইয়ামেনে
স্বাধীনভাবে স্বীয় ক্ষমতা সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন এবং কায়রোতে রাজধানী স্থাপন করেন। আর এভাবেই আইয়্যূবী বংশের
উত্থান হয়। পিতা নজমুদ্দিন আইয়্যূবীর নামানুসারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশ আইয়্যূবী বংশ নামে পরিচিত।
মিসরীয় যুগ (১১৬৯-৭৪) : সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর শাসনকালকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়: ১. মিসরীয় যুগ (১১৬৯-
৭৪), ২. সিরীয় যুগ (১১৭৪-৮৬) এবং ৩. ক্রুসেডারদের সাথে সংঘর্ষ (১১৮৬-৯৩)। মিসরীয় যুগে তিনি ফাতিমি,
ক্রুসেডার, নুরুদ্দীন জঙ্গী ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক নীতি গ্রহণ করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন।
এসময় তিনি ক্রুসেডারদের আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং ১১৭৪ সালে সিসিলি হতে তাদের বিতাড়ন করেন। আফ্রিকার
কাফ্রী সৈন্যদের বিদ্রোহ দমন ও নির্বাসন করা হয়। মিসরীয় ও সুদানী কর্মচারীদের বিদ্রোহ দমনে তাদের নেতাদের হত্যা
ও ষড়যন্ত্রকারীদের দক্ষিণ মিসরে নির্বাসিত করা হয়। এ পর্বে তিনি কারাকুশ, বার্কা, ত্রিপলী এবং বড় ভাই তুরান শাহের
মাধ্যমে ইয়েমেন জয় করেন।
সিরীয় যুগ (১১৭৪-৮৬) : এ সময় তিনি আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেন। ১১৭৪ সালে নুরুদ্দীন জঙ্গী মারা গেলে তিনি
মিসরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত আইয়্যূবী বংশের উত্থান হয়। নুরুদ্দীন জঙ্গীর
পুত্র ঈসমাইলের সাথে তাঁর কুরুন হামার যুদ্ধ হয় এবং পরে সন্ধির মাধ্যমে এবং ঈসমাইলের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কারণে
দামেস্ক ব্যতীত অন্যসব অধিকৃত অঞ্চল তাঁকে ফিরিয়ে দেন। ১১৭৫ সালে তিনি আব্বাসীয় খলিফা কর্তৃক এতদ্বাঞ্চলের
বৈধ সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় তিনি ফ্রাঙ্ক রাজা বল্ডউইনের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করে সিরিয়া, মসুল ও
আলেপ্পো উদ্ধার করেন।
ক্রুসেডারদের সাথে সংঘর্ষ (১১৮৬-৯৩) : ১১৮৭ সালের ৪ জুলাই ফ্রাংকদের সাথে তাঁর হিত্তিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়
এবং এতে জয়লাভ করে জেরুজালেম দখল করে নেন। এর ফলে জার্মান স¤্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসা, ফ্রান্সের রাজা
ফিলিপ অগাস্টাস ও ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড তাঁর বিরুদ্ধে ৩য় ক্রুসেড আহŸান করেন। সম্মিলিত বাহিনী জেরুজালেম
উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ১১৯২ সালে তাঁর সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১১৯৩ সালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর উত্তরাধিকারীগণ : সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর মৃত্যুর পর তাঁর রাজ্য পুত্র ও ভাইদের মধ্যে ভাগ
হয়ে যায়। পুত্র আল-আযিয (১১৯৩-৯৮) কায়রো, মালিক আল-আফজাল দামেস্ক, আল-জাহির আলেপ্পো এবং ভাই আলআদিল কারাক ও শাবাকের শাসনভার লাভ করেন।
তবে মিসরের আইয়্যূবীরাই ছিল এই বংশের
প্রধান। সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর পুত্রদের মধ্যে
দ্ব›েদ্বর সুযোগে ১১৯৯ সালের মধ্যে আল-আদিল
মিসর ও সিরিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে
নেন। ফলে আল-আযিযের পর তাঁর পুত্র আলমনসুর মুহাম্মদের (১১৯৮-৯৯) শাসনের এক
বছরের মাথায় আল-আদিল কায়রো-কেন্দ্রিক তাঁর
শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তাঁর উপাধি ছিল
‘সাফাদিন’ বা সাইফ-আল-দীন (ধর্মের
তলোয়ার)। ৪র্থ ক্রুসেডে তিনি ক্রুসেডারদের
সিরিয়ায় গতিরোধ করেন এবং তাদেরকে শান্তি
চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করেন (১১৯৮)। ১২১৮ সালে আল-আদিলের মৃত্যুর পর তাঁর বংশোদ্ভুত আইয়্যূবীরা মিসর, দামেস্ক
ও ইরাক শাসন করে। আইয়্যূবী পরিবারের অন্যান্য শাখার শাসকরা হিমস, হামাহ ও ইয়ামেন শাসন করে। আল-আদিলের
পুত্র আল-কামিল (১২১৮-৩৮) ক্রুসেডারদের সথে যুদ্ধে আংশিক সাফল্য লাভ করলেও ১২৩৮ সালে জার্মান স¤্রাটের
নিকট জেরুজালেম হস্তান্তর করেন। আল-কামিলের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আল-আদিল (১২৩৮-৪০) ২ বছর শাসনকার্য
পরিচালনা করেন। এরপর আস্-সালিহ (১২৪০-৪৯) ক্ষমতা লাভ করেন। ১২৪৪ সালে খাওয়ারিজমের তুর্কীদের
সহায়তায় তিনি জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। ১২৫০ সালে এ বংশের শেষ শাসক তুরান শাহকে হত্যা করে তাঁর সৎ মা
ও আস্-সালিহের ক্রীতদাসী স্ত্রী সাজারুদ্বার মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং আইয়্যূবী শাসনের অবসান হয়।
সারসংক্ষেপ:
গাযী সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী ১১৩৮ সালে তাইগ্রীস নদীর তীরে তিকরিত নামক স্থানে এক কুর্দি পরিবারে জন্ম গ্রহন
করেন। ১১৭১ সালে সর্বশেষ ফাতিমি খলিফা আল-আদিদের মৃত্যু হলে তিনি আব্বাসীয়দের অনুকূলে আইয়্যূবী বংশ
প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৭৫ সালে তিনি আব্বাসীয় খলিফা কর্তৃক বৈধ সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ক্রুসেডারদের
বিরুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য লাভ করে তিনি গাযী উপাধি লাভ করেন। ১২৫০ সালে আইয়্যূবী শাসনের অবসান হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী জাতিতে-
(ক) পারসিক (খ) তুর্কি
(গ) কুর্দি (ঘ) বার্বার
২. কোন্ যুদ্ধের মাধ্যমে সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী ক্রুসেডারদের থেকে জেরুজালেম উদ্ধার করেন?
(ক) কুরুন হামার যুদ্ধ (খ) হিত্তিনের যুদ্ধ
(গ) কায়রোর যুদ্ধ (ঘ) এডেসার যুদ্ধ
৩. আইয়্যূবী শাসনের অবসান ঘটিয়ে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠা করেন কে?
(ক) তুরান শাহ (খ) আস-সালিহ
(গ) বাইবার্স (ঘ) শাজারুদ্বার
সৃজনশীল প্রশ্ন:
আ: করিম একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ‘ক’-বংশের ধ্বংসস্তুপের উপর ‘খ’-বংশের অনুকূলে ‘গ’-বংশের শাসন
প্রাতষ্ঠা করেন। পরে তিনি তাঁর সা¤্রাজ্য বিস্তৃতির মাধ্যমে স্বাধীন শাসকে পরিণত হন। ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ
সাফল্য লাভ করে তিনি গাযী উপাধি অর্জন করেন। ‘গ’-বংশের অন্যান্য শাসকরা ১২৫০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন।
ক. সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর জন্মস্থান কোথায়? ১
খ. সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবী কীভাবে ক্ষমতা লাভ করেন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত করিম পাঠ্যপুস্তকে যে যোদ্ধাকে নির্দেশ করে তাঁর যুদ্ধ-বিগ্রহের বর্ণনা দিন। ৩
ঘ. সালাহ্উদ্দিন আইয়্যূবীর পরবর্তী আইয়্যূবী শাসকদের সম্পর্কে আলোকপাত করুন। ৪
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.১ : ১. ক ২. ক ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.২ : ১. খ ২. ক ৩. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৩ : ১. গ ২. গ ৩. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৪ : ১. খ ২. ক ৩. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৫ : ১. গ ২. ঘ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৬ : ১. ক ২. ঘ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৭ : ১. খ ২. ঘ ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৮ : ১. ঘ ২. গ ৩. ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৯ : ১. গ ২. খ ৩. ঘ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র