মূখ্য শব্দ আমীরে তুজুক, দ্বিতীয় আলেকজান্ডার, জওহব্রæত, খিজিরাবাদ, রায়-রায়ান ও দেবগিরি
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সিংহাসনারোহণের প্রেক্ষাপট
সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন মুসলিম ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ও সফল শাসক। তিনি ছিলেন
খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজির ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা। তাঁর বাবার নাম ছিল শাহাবউদ্দিন।
পিতৃ বিয়োগের পর আলাউদ্দিন খলজি পিতৃব্য জালাল উদ্দিন ফিরোজের স্নেহে লালিত পালিত হন এবং যুদ্ধবিদ্যায় বিশেষ
পারদর্শিতা অর্জন করেন। পিতৃব্য জালালউদ্দিন সিংহাসনারোহণ করে আলাউদ্দিনকে ‘আমীরে তুজুক’ পদে অধিষ্ঠিত
করেন। আলাউদ্দিন খলজি কারা প্রদেশ এবং অযোধ্যায় শাসকের পদও অলংকৃত করেন। ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি
দেবগিরিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর ধন-রতœ হস্তগত করেন। ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে জুলাই আলাউদ্দিন খলজি
নিজ পিতৃব্য ও শ্বশুর জালালউদ্দিন ফিরোজকে হত্যা করে নিজেকে দিল্লির সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন।
বিজেতা হিসেবে আলাউদ্দিন খলজি
গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের ন্যায় সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ছিলেন একজন সাম্রাজ্যবাদী সমরনায়ক। তিনি নিজে মুদ্রায়
দ্বিতীয় আলেকজান্ডার উপাধিও গ্রহণ করেছিলেন। ডবিøউ হেগ-এর মতে, “আলাউদ্দিনের রাজত্বকাল হতেই দিল্লি
সালতানাতের যুগ শুরু হয় এবং অর্ধ শতাব্দির বেশীকাল তা বলবৎ ছিল।” সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৭ খ্রি. থেকে
১৩০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উত্তর ভারতের গুজরাট রণথম্ভোর, মেবার, মালব, উজ্জয়িনী, ধর, চান্দেরীসহ এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল
দখল করে তাঁর আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। অন্যদিকে, ১৩১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রামেশ্বর সেতু পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের এক
বিশাল অঞ্চলের উপর নিজ কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
উত্তর ভারতে রাজ্য বিস্তার:
গুজরাট অভিযান
১২৯৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি নিজ ভ্রাতা উলুঘ খান এবং মন্ত্রী নুসরাত খানকে গুজরাট অভিযানে প্রেরণ
করেন। গুজরাটের তৎকালীন রাজা ছিলেন দ্বিতীয় রায় কর্ণদেব। সুলতানের বাহিনীর আক্রমণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রাজা রায়
কর্ণদেব তার কন্যা দেবলাদেবীকে নিয়ে দাক্ষিণাত্যের দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র দেবের রাজপ্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
সুলতানের বাহিনী রাজধানী আনহিলওয়ারাসহ সমগ্র গুজরাট ও ক্যাম্বে হস্তগত করেণ। রানী কমলাদেবীসহ কাফুর নামক
একজন খোজাকে বন্দি করে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি রানী কমলাদেবীকে বিবাহ করেন। আর
খোজা কাফুর-পরবর্তীতে মালিক কাফুর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি আলাউদ্দিন খলজির প্রধান সেনাপতি ও অমাত্যের
পদ অলংকৃত করেন।
রণথম্ভোর বিজয়
দিল্লির দুর্বল শাসকদের অযোগ্যতার সুযোগে রাজপুতগণ পুনরায় রণথম্ভোর দখল করে নেয়। এই সময় রণথম্ভোরের শাসক
ছিলেন দ্বিতীয় চৌহানরাজ হামির দেব। সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী মুহাম্মদ শাহসহ অনেক নব মুসলমানকে তার
রাজ্যে আশ্রয় প্রদান করে হামির দেব সুলতান আলাউদ্দিন খলজির বিরাগ ভাজন হন। আলাউদ্দিন ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে উলুঘ
খান ও নুসরাত খানের নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরপর সুলতান নিজে এক বিশাল
সেনাবাহিনী নিয়ে রণথম্ভোরের উদ্দেশ্যে যুদ্ধযাত্রা করেন। সুলতানের বাহিনী দীর্ঘ এক বছর রণথম্ভোর অবরোধ করে রাখার
পর ১৩০১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে রণথম্ভোর দুর্গ জয় করে নেয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি রাজা হামির দেবকে
সপরিবারে হত্যা করেন। নব-মুসলমানদেরকেও হত্যা করা হয়। সুলতান তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি উলুঘ খানকে রণথম্ভোরের
শাসক নিযুক্ত করেন এবং বিপুল ধন রতœ সহকারে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
চিতোর বিজয়
রাজপুতনার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য ছিল মেবার। আর মেবারের রাজধানী চিতোর ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং দুর্ভেদ্য।
১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট আলাউদ্দিন খলজি স্বয়ং এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে চিতোর আক্রমণ করেন। রাজপুত
রাণা রতন-সিংহের পদ্মিনী নামে এক অনিন্দ্য সুন্দরী পতœী ছিল। জনশ্রæতি আছে যে, পদ্মিনীকে লাভের জন্য সুলতান
আলাউদ্দিন খলজি মেবার অভিযান করেন। কিন্তু ইতিহাসবিদেরা পদ্মিনী উপাখ্যানের ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে সন্দেহ
পোষণ করেছেন। উভয় বাহিনীর মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রাজপুত বীর গোরা ও বাদল বীরত্ব
প্রদর্শন করা সত্তে¡ও রাণা রতন সিংহ রাজকীয় বাহিনীর হাতে পরাজিত এবং বন্দী হন। রাজপুত রমনীগণ আত্মসম্ভ্রম
রক্ষার্থে ঝলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মবিসর্জন দেন। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এই প্রথা ‘জহরব্রত’ নামে
পরিচিত ছিল। আলাউদ্দিন খলজি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র খিজির খানকে চিতোরের শাসনভার অর্পণ করেন। যুবরাজ খিজির খানের
নামানুসারে চিতোরের নামকরণ করেন খিজিরাবাদ। ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে যুবরাজ খিজিরখান চিতোর ত্যাগ করলে সুলতান
জালোরের অধিপতি মালদেবকে চিতোরের শাসক নিয়োগ করেন। ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মৃত্যুবরণ
করেন। ১৩১৮ খ্রিস্টাব্দে চিতোরের শাসক মালদেবকে বিতাড়িত করে রাজপুত রাণা হামির চিতোর পুনঃদখল করেন।
মালব বিজয়
উত্তর ভারতের গুজরাট, রণথম্ভোর ও চিতোর বিজয়ের পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মালব বিজয়ে অগ্রসর হন। এসময়
মালবের শাসক ছিলেন রায় মাহল দেব। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি আইন-উল-মুলককে
সেনাবাহিনীসহ মালবের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। রাজকীয় বাহিনীর সাথে রায় মাহল দেবের বাহিনীর এক তুমুল যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রায় মাহল দেব পরাজিত ও নিহত হন। এরপর উজ্জয়িনী, চান্দেরী, মান্ডু, ধর প্রভৃতি অঞ্চল
রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন বিজয়ী সেনাপতি আইন-উল-মুলককে মালবের শাসক নিযুক্ত করেন। ১৩০৫
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র উত্তর ভারতে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
আলাউদ্দিন খলজির দক্ষিণ ভারত বিজয়
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য,ধনরতেœর প্রাচুর্য এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ প্রভৃতি সুলতান আলাউদ্দিন খলজিকে দক্ষিণ
ভারত তথা দাক্ষিণাত্য বিজয়ে উৎসাহিত করে। দাক্ষিণাত্য অভিযানে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির প্রধান সমর নায়ক
ছিলেন মালিক কাফুর।
দেবগিরি অভিযান
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসনামলে দেবগিরির শাসক ছিলেন রাজা রামচন্দ্র দেব। রামচন্দ্র দেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ছিল যে, তিনি প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ইলিচপুর প্রদেশের কর প্রেরণ করেননি এবং সুলতানের নিকট উপঢৌকন প্রেরণ বন্ধ করে
দেন। তবে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল যে, তিনি গুজরাটের পরাজিত রাজা কর্ণদেবকে তাঁর কন্যা দেবলা দেবীসহ আশ্রয়
প্রদান করেন। সুলতান আলাউদ্দিন ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সেনাপতি মালিক কাফুরকে দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র দেবের
বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। রাজা রামচন্দ্র দেব সুলতানের বাহিনীর নিকট পরাজিত হন এবং বশ্যতা স্বীকার করেন। তার এরূপ
ব্যবহারে খুশী হয়ে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি রাজা রামচন্দ্র দেবকে ‘রায়-রায়ন’ উপাধি প্রদান করেন। সেনাপতি মালিক
কাফুর বিপুল ধন সম্পদসহ গুজরাটের রাজকন্যা দেবলা দেবীকে নিয়ে রাজধানী দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন। সুলতান
আলাউদ্দিন খলজি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র খিজির খানের সাথে দেবলা দেবীর বিবাহ প্রদান করেন।
বরঙ্গল বিজয়
‘বরঙ্গল’ ছিল তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী। বরঙ্গলে এসময় কাকতীয় বংশের শাসন প্রচলিত ছিল। কাকতীয় বংশের
শাসক রাজা দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্র দেবের বিরুদ্ধে ১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন সেনাপতি মালিক কাফুরকে প্রেরণ
করেন। প্রায় দুই বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ১৩১০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজা দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্র দেব সুলতানের বশ্যতা
স্বীকার করেন। রাজা সুলতানের জন্য বিপুল উপঢৌকন প্রেরণ করেন এবং বাৎসরিক কর প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেন।
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ২ পৃষ্ঠা ৩৮
দেবগিরি এবং বরঙ্গল রাজ্য বিজয়ের পর আলাউদ্দিন খলজি দাক্ষিণাত্যের শেষ সীমা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করার দৃঢ়
সংকল্প ব্যক্ত করেন।
দ্বার সমুদ্র বিজয়
দাক্ষিণাত্যের হোয়সলরাজ তৃতীয় বীর বল্লালের রাজধানী ছিল দ্বার সমুদ্র। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে
বিখ্যাত সেনাপতি মালিক কাফুর এর নেতৃত্বে এক বিশাল সেনাবাহিনী তৃতীয় বীর বল্লালের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। সুলতান
আলাউদ্দিন খলজির মিত্র দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র, বরঙ্গলের রাজা দ্বিতীয় প্রতাপরুদ্র দেব এবং মালিক কাফুরের নেতৃত্বে
সুলতানের বাহিনী সম্মিলিতভাবে হোয়সলরাজকে আক্রমণ করলে রাজা বীর বল্লাল অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়ে যুদ্ধের
সমস্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন এবং সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করেন। ফলে হোয়সল রাজ্য দিল্লির সালতানাতের সরকারের
অধীনস্ত হয় এবং নিয়মিত করদানের প্রতিশ্রæতি প্রদান করে।
পান্ডরাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান
দ্বার সমুদ্রের দক্ষিণে অবস্থিত পান্ডরাজ্যের রাজধানী ছিল মাদুরা। পান্ডরাজ্যের রাজার মৃত্যুর পর বীর পান্ড ও সুন্ড পান্ডের
মধ্যে ভ্রাতৃদ্ব›দ্ব দেখা দেয়। ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সেনাপতি মালিক কাফুরকে পান্ডরাজ্যের বিরুদ্ধে
প্রেরণ করেন। ভ্রাতৃবিরোধের সুযোগে মালিক কাফুর অতিসহজেই পাÐরাজ্য অধিকার করেন। সেনাপতি কাফুর রামেশ্বর
পর্যন্ত দখল করেন। তিনি রামেশ্বরে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির নামানুসারে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৩১১
খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে মালিক কাফুর বিপুল ধনসম্পদসহ দিল্লিতে প্রত্যাবতন করেন।
শংকর দেবের বিরুদ্ধে অভিযান
দেবগিরির রাজা রামচন্দ্র দেব ছিলেন দিল্লি সালতানাতের প্রতি বিশেষভাবে অনুগত। ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর পুত্র
শংকর দেব সিংহাসনে আরোহণ করে দিল্লিতে কর প্রেরণ বন্ধ করে দেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি মালিক কাফুরের
নেতৃত্বে শংকর দেবের বিরুদ্ধে এক সমরাভিযান প্রেরণ করলে শংকর দেব যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। ফলে পুনরায়
দেবগিরি রাজ্য দিল্লির শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। এভাবে ১৩১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে সুলতান আলাউদ্দিন
খলজির কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ফলাফল
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৩১২
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যে প্রেরিত প্রায় সব অভিযান সফলতার সাথে সমাপ্ত হয়। দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলোর অভ্যন্তরীণ
কলহ ও বিবাদের সুযোগে সেনাপতি মালিক কাফুর দক্ষিণ ভারত জয় করতে সক্ষম হন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি উত্তর
ভারতের বিজিত রাজ্যসমূহ নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে
বিদ্রোহপ্রবণ দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলোকে সরাসরি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেননি। নিয়মিত কর দেওার শর্তে দক্ষিণ ভারতের
স্থানীয় শাসকদেরই ক্ষমতায় বহাল রেখেছিলেন তবে এই অভিযান থেকে সেনাপতি মালিক কাফুর বিপুল উপঢৌকন
সহকারে রাজধানী দিল্লিতে ফিরে আসেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বীরত্বের সেনাপতি মালিক কাফুরকে ‘মালিক নায়েব’
উপাধিতে ভূষিত করেন। দাক্ষিণাত্য হতে আহরিত অগণিত ধন সম্পদ উত্তর ভারতে মুদ্রাস্ফীতির সূচনা করে, বাধ্য হয়ে
সুলতান আলাউদ্দিন খলজি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে মূল্যনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
সারসংক্ষেপ :
দিল্লি সালতানাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক সুলতান আলাউদ্দিন খলজি পিতৃব্য ও শ্বশুর জালাল উদ্দিন ফিরোজ খলজি কে
হত্যা করে ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজ্য বিজয়ের এক দুর্বার প্রত্যাশা নিয়ে ১২৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে
শুরু করে ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উত্তর ভারতের গুজরাট, রণথম্ভোর, মেবার, মালব, উজ্জয়িনী, ধর, চান্দেরীসহ এক
বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করেন। ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৩১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুযোগ্য সেনাপতি মালিক কাফুরের
নেতৃত্বে দেবগিরি, বরঙ্গল, দ্বারসমুদ্র, পান্ডরাজ্য এবং শংকরদেবের রাজ্যসহ রামেশ্বর সেতুবন্ধ পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের এক
বিশাল অঞ্চলের উপর সুলতান আলাউদ্দিন খলজির কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের
ফলে বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ উত্তর ভারতে আনেন ফলে মুদ্রাস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করে। জনসাধারণের দুর্ভোগ
লাঘব করার জন্য বাধ্য হয়ে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। খলজি বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়-
ক. ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে খ. ১২৮৯ খ্রিস্টাব্দে গ. ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে ঘ. ১২৯১ খ্রিস্টাব্দে
২। খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ছিলেন-
ক. সুলতান জালাল উদ্দিন ফিরোজ খলজি খ. সুলতান আলাউদ্দিন খলজি
গ. সুলতান শাহাবুদ্দিন ওমর খলজি ঘ. সুলতান কুতুবউদ্দিন মুবারক খলজি
৩। গুজরাটের রাজা দ্বিতীয় রায় কর্ণদেবের স্ত্রীর নাম-
ক. রাণী দেবলাদেবী খ. রাণী কমলাদেবী গ. রাণী সুরমা দেবী ঘ. রাণী সূর্য দেবী
৪। মালিক কাফুরকে নিয়ে আসা হয়-
ক. গুজরাট থেকে খ. রণথম্ভোর থেকে গ. চিতোর থেকে ঘ. মালব থেকে
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সুরতানী আমলের ‘ক’ শাসক সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তিনি শ্বশুরকে হত্যা করে নিজেকে দিল্লির
সুলতান হিসেবে ঘোষনা করেন। তিনি ছিলেন গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের ন্যায় সা¤্রাজ্যবাদী শাসক। দক্ষিণ ভারতে বিজয়
অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।
১. খলজি বংশ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১
২. খলজি বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার বর্ণনা দিন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের উত্তর ভারতে রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে লিখুন। ৩
৪. আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযান সম্পর্কে আলোকপাত করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র